মে ৬, ২০১৯
সাইক্লোন নিয়ে রাজনীতি করছেন প্রধানমন্ত্রী: গোপীবল্লভপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ গোপীবল্লভপুরে প্রথম নির্বাচনী জনসভা করেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, সাইক্লোন নিয়ে রাজনীতি করছেন এক্সপায়ারি প্রধানমন্ত্রী।
ওনার বক্তব্যের কিছু অংশঃ
যখন এখানে দুর্যোগ হওয়ার খবর পেলাম তখন আমি কলকাতায় না থেকে খড়গপুরে বসে ছিলাম, যাতে আমায় দৌড়ে এসে রাজনীতি করতে না হয়
আমি বছরে ৫-৬ বার এখানে আসি, ২০১৭ আর ২০১২ তে যখন বন্যা হয়েছিল আমি এসেছিলাম
পঞ্চায়েত ভোটের সময় বিজেপি মিথ্যা কথা বলে, অপপ্রচার করে ভোটে জিতেছিল, কিন্তু ওরা মানুষের কোন কাজ করে না করতেও পারে না
বিজেপির একজন এক্সপায়ারি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের আগে এখন রাজনীতি করছেন। আজ ওনার এখানে একটা মিটিং ছিল আগে থেকেই তাই উনি গতকাল একটা চিঠি পাঠিয়ে দিয়েছেন। এখানে এসে কলাইকুণ্ডায় নেমে উনি আমাদের ডেকে পাঠাবেন আর রিপোর্ট চাইবেন। কারণ আমরা তো ওনার চাকর-বাকর। লোক দেখানো একটা মিটিং ডাকবে আর তারপর বলবে রাজ্য এল না কোনরকম সহযোগিতা করছে না
প্রথমত উনি যখন আমায় যখন চিঠি পাঠিয়েছেন আমি তখন খড়গপুরে ছিলাম কলকাতায় ছিলাম আর ওনারা তো চিঠি পাঠানোর আগেই টুইট করেন পাবলিসিটি করার জন্য
দ্বিতীয়ত, আপনি কলাইকুণ্ডায় নির্বাচনী সভা করতে আসছেন সেখানে আমি কেন আপনার সঙ্গে সরকারি মিটিং করতে যাব?
নির্বাচনের আগে আমি আপনার এক মঞ্চে থাকবো না কারণ আমি আপনাকে প্রধানমন্ত্রী মানি না, আপনি এক্সপায়ারি প্রধানমন্ত্রী। নির্বাচনের পর যিনি নতুন প্রধানমন্ত্রী হবেন আমি তার সঙ্গে কথা বলব
বাংলায় এসে বলছে দিদি নাকি শুধু রাজনীতি করেন, দিদি যা করেন তার পায়ের নখের যোগ্য কাজ আপনি করতে পারবেন?
যখন এখাকার মানুষ কাদঁছিল তখন উনি কোথায় ছিলেন? ২০ বছর ধরে এই এলাকায় এইসব চলছে, আজ ১২ বছর পর এসেছেন। ১৯৯৮-২০০১ সালে তো আপনাদের সরকার ছিল তখন একবারও এই সব এলাকার খোঁজ নিয়েছিলেন? নির্বাচন বড় বালাই, এখন এসেছেন ভোট চাইতে?
আগের বার বন্যার সময় আমি নিজে ওনার কাছে টাকা চেয়েছিলাম, ২ বার দিল্লীতে গিয়ে দেখা করলাম, উনি একটাও টাকা দেন নি, আর আজ যেটুকু ক্ষতি হয়েছে তা সামলাবার ক্ষমতা আমার সরকারের আছে। ৫০০০ বাড়ির ক্ষতি হয়েছে, আমরা তা তৈরি করে দেব
নরেন্দ্র মোদীর কোন কাজ করার ক্ষমতা নেই। কারণ আপনি এখন আর প্রধানমন্ত্রী নন।
আপনি কি করে মুখ্যমন্ত্রী কে বাদ দিয়ে মুখ্য সচিব আর অফিসারদের নিয়ে মিটিং করেন? এটা সংবিধান এর বিরোধী, গণতন্ত্র বিরোধী। একজন মুখ্যমন্ত্রী মানুষের দ্বারা নির্বাচিত সেটা ভুলে যাবেন না। মুখ্যমন্ত্রীকে বাদ দিয়ে আপনি এসব মিটিং করছেন ছবি তুলছেন, নাটক করছেন
আপনি রোজ একটা করে প্লেন নিয়ে বাংলায় চলে আসছেন। লোকে গরমে কষ্ট পাচ্ছে আর আপনি ঘুরে বেড়াবেন বলে ৩ মাস ধরে নির্বাচন করছেন। আপনার জন্য মানুষের এত ভোগান্তি। এখন ভোটের আগে দয়া দেখাতে এসেছেন? আপনাদের ভিক্ষে আর দয়া আমরা চাই না
আমরা ঝাড়গ্রাম নতুন জেলা, নতুন পুলিশ জেলা করেছি। হাসপাতাল, মাল্টি সুপার হাসপাতাল, স্টেডিয়াম, আর্চারি আকাদেমি আমরা তৈরি করেছি, কেন্দু পাতার দাম বাড়িয়েছি, যারা এই পাতা সংগ্রহ করে তাদের পেনশনের ব্যবস্থ করেছি। ২ টাকা কিলো চাল, আদিবাসীদের সামাজিক সুরক্ষা, অল চিকি ভাষাকেস্বীকৃতি দেইয়া, বিনা পয়সায় চিকিৎসা, কৃষকদের খাজনা মুকুব, তাদের বীমা, শস্য বীমা, পেনশন সব কিছুর ব্যবস্থা করেছি। এখানে অনেক নতুন সেতু, রাস্তা তৈরি হয়েছে।
মোদী সরকার কিছু করেনি। ওরা শুধু মানুষকে বঞ্চিত করেছে
৩ বছর আগে আমরা তাজপুর পোর্ট করতে চেয়েছিলাম, বলেছিল গঙ্গাসাগরে একটা ব্রিজ করে দেব, আজ ৩ বছর হয়ে গেল কিছু করে দেয়নি। আমরা করতে চেয়েছিলাম আপনার সরকার করতে দেয়নি
বীরভূমের দেওচা পাচামি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লা খনি তার একটা মৌ সাক্ষর করে দেয়নি, বাংলা বলে সহ্য করে অন্য রাজ্য হলে ওদের বের করে দিত। একটা বাংলা নাম করতে দেয়নি, এত ঘৃণা ওদের বাংলার ওপর
ঝাড়খণ্ডে আদিবাসীদের জমির অধিকার ওরা কেড়ে নিয়েছে আর আমরা বাংলায় আদিবাসীদের জমির অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছি, ঝাড়খণ্ডে বিজেপি যখন আদিবাসীদের ওপর অত্যাচার করছিল তখন আমি ওখানে লোক পাঠিয়েছিলাম আন্দোলন করার জন্য। আজ ওখানকার মানুষ বাংলায় আসে চিকিৎসা করতে। বিজেপি এবার ওখানেও হারবে
বিজেপি নির্বাচনের সময় ঝাড়খণ্ড আর পুরুলিয়ার বর্ডার দিয়ে মাওবাদীদের ঢোকায়
ঝাড়গ্রাম মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকা তাই তার উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ১০০-১৫০ কোটি টাকা দিত, মোদীবাবু সেটাও ৫ বছর ধরে বন্ধ করে দিয়েছেন। আমরা এখন এই এলাকার উন্নয়নের জন্য টাকা দিই
কিছু সি আর পি এফ বর্ডার এলাকায় পাহারা দিচ্ছিল তাদের তুলে নিয়ে গেছে
এটা পঞ্চায়েত নির্বাচন নয়, সেই সময় বিজেপি টাকা নিয়ে ভোট কিনেছিল আর সাথে ছিল সিপিএম। কিন্তু এবার আমরা আর ওদের এক ইঞ্চি জমিও ছেড়ে দেব না, এবার আর টাকা দিয়ে ভোট আমরা করতে দেব না, আর প্রশাসনের কারো কোন যোগ থাকলে তার বিরুদ্ধেও আমরা ব্যবস্থা নেব
এটা রাজ্যের নয়, এটা কেন্দ্রের নির্বাচন। মোদী ৫ বছরে কি কাজ করেছেন তার জবাব ওনাকে দিতে হবে
আগের বার উনি বলেছিলেন তার সরকার ক্ষমতায় এসে কালো টাকা ফিরিয়ে আনবেন, সবাইকে ১৫ লক্ষ টাকা ফেরত দেবেন। দিয়েছে?
উনি বলেছিলেন আচ্ছে দিন আনবেন। আচ্ছে দিন কোথায় গেল? গত ৫ বছরে নোটবাতিলের নামে সব ব্যবসা, কৃষি, শিল্প বন্ধ করে দিয়েছে, ১২০০০ কৃষক আত্মহত্যা করেছে, ২ কোটি বেকার হয়েছে, ১০০ জন মারা গেছেন ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়ে। পেট্রোল ডিজেল সহ সব জিনিসের দাম বেড়েছে। এই কি ওনার আচ্ছে দিন?
আগেরবার বলেছিল গরীব ঘরের ছেলে আমি চা ওয়ালা – কত বড় মিথ্যে কথা। এখন উনি হয়েছেন চৌকিদার। ওনার নিজের স্ত্রীর কথা ওনার জানা নেই, স্ত্রী চাকরি করেন কিনা তাও জানা নেই। উনি ভালো থাকুন, ওনার ৫৬ ইঞ্চি বেড়ে ১১২ ইঞ্চি হোক আমি খুশি হব
নরেন্দ্র মোদী সারা ভারতে হারছেন, আগের ৪ দফায় হেরেছেন আজ ও হারবেন। আগে দিল্লী সামলান তারপর বাংলা নিয়ে ভাববেন
আর যদি জিজ্ঞেস করে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন তাহলে বলবেন আগামী দিনে দিল্লী পথ দেখাবে, সবাইকে নিয়ে একসাথে মানুষের কাজ করবে কারণ এই বাংলা স্বাধীনতা আন্দলনের বাংলা। এই মেদিনীপুর অত্যাচারীদের স্তব্ধ করে দেয়
আমরা দাঙ্গা চাই না, আমরা চাই এই মিথ্যেবাদী ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হোক। অত্যাচার, অশান্তি, যুদ্ধ, মৃত্যু এসব বন্ধ হোক
এই জেলার উন্নয়নের জন্য অনেক টাকা দেওয়া হয়েছে। আমাদের সঙ্গে থাকবেন, আমাকে সাহায্য করবেন। বাংলা মাথা উঁচু করে এগিয়ে যাবে
আপনারা আমাদের ভুল বুঝবেন না, গত নির্বাচনে বিজেপি টাকা দিয়ে সিপিএম-এর সঙ্গে মিথ্যে কথা রটিয়েছিল
আমাদের তৃণমূল কংগ্রেসের স্লোগান বন্দে মাতরম। আমরা ধর্মের নামে স্লোগান দিয়ে কোন ধর্মকে অশ্রদ্ধা করি না
আর বিজেপি নির্বাচনের সময় ধর্ম বিক্রি করে আর টাকা বিলিয়ে ভোট কেনে। তাই এবার ওদের বিরুদ্ধে ভোট দিয়ে যোগ্য জবাব দিন, বুঝিয়ে দিন যে বাংলা অত সহজ নয়