জুন ১৭, ২০১৮
ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানে কানাকড়ি দেয়নি কেন্দ্র, দিল্লিকে চিঠি দেবে রাজ্য

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পর ঘাটালবাসীকে বন্যার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য সেচদপ্তরকে একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেচদপ্তর সেই মাস্টার প্ল্যান তৈরি করে ২০১৪ সালের শেষের দিকে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে জমা দেয়। অবশেষে সেই মাস্টার প্ল্যান প্রযুক্তিগতভাবে অনুমোদন করলেও ১২৩৮ কোটি টাকার ওই ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানে একটি টাকাও বরাদ্দ করেনি কেন্দ্রীয় সরকার।
গত সপ্তাহে দিল্লিতে এক বৈঠকে রাজ্যের সেচদপ্তরের কর্তাদের সেই কথা জানিয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় জলমন্ত্রকের প্রধান সচিব। তাতে হতবাক রাজ্য সরকার। তাহলে কি পুরো টাকাই রাজ্য সরকারকে খরচ করতে হবে? চিন্তায় পড়েছেন নবান্নের কর্তাব্যক্তিরা। তবে আর্থিক সাহায্য চেয়ে জন্য কেন্দ্রীয় জলমন্ত্রকের কাছে চিঠি পাঠাবে সেচদপ্তর।
নবান্নের অফিসারদের মতে, এটা কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনা ছাড়া কিছু নয়। আগে সেচদপ্তরের বিভিন্ন প্রকল্পে ৭৫-২৫ শতাংশের আনুপাতিক হারে আর্থিক অনুদান দিত কেন্দ্রীয় জলমন্ত্রক। কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেই আনুপাতিক হার কমিয়ে দেওয়া হয়। তারা জানিয়ে দেয়, যে কোনও প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকার দেবে ৫০ শতাংশ টাকা, আর বাকি ৫০ শতাংশ টাকা দেবে রাজ্য সরকার। কিন্তু ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের প্রস্তাবিত ব্যয় ১২৩৮ কোটি টাকার এক টাকাও অনুমোদন করেনি কেন্দ্রীয় জলমন্ত্রক।
ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানে কী আছে?
সেচদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রবল বর্ষণে শীলাবতী নদীর জল ছাপিয়ে ঘাটাল এলাকাকে ছাপিয়ে যায়। দীর্ঘদিন জলবন্দি হতে হয় ঘাটালবাসীকে। গত বছর ডিভিসি’র জল ছাড়ার জন্য এমন বন্যা হয়েছিল যে হেলিকপ্টার নামিয়ে আটকে পড়া মানুষকে উদ্ধার করতে হয়েছিল। একটানা বৃষ্টি হলেই ঘাটাল পুরসভার ২১টি ওয়ার্ড দীর্ঘসময়ের জন্য জলের তলায় চলে যায়। ঘাটাল সংলগ্ন চেতুয়া এবং দাসপুর ১ এবং ২ ব্লকও জলমগ্ন হয়ে যায়। ঘাটাল সহ গোটা এলাকাকে জলবন্দির হাত থেকে রক্ষা করতে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান তৈরি হয়। ওই প্ল্যান অনুযায়ী, শীলাবতী নদীর উপর কমপক্ষে ছ’মিটার বাঁধ তৈরি করা হবে। যাতে ভরা বর্ষায় শীলাবতী নদী ছাপিয়ে জল ঘাটালকে না ভাসিয়ে দেয়। সেই সঙ্গে ঘাটাল এলাকার মধ্যে পাঁচ হাজার কিউসেক ক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প বসানো হবে। সেই পাম্পের মাধ্যমে জমা জল পাম্প করে নদীতে ফেলা হবে। এছাড়াও ওল্ডকোশি, নিউকোশি, দুর্গাচটি প্রভৃতি মজে যাওয়া নদীর নাব্যতা বাড়ানোর জন্য পলি কেটে তোলা হবে। একইরকমভাবে কয়েকটি খালও সংস্কার করা হবে।
ঘাটালকে ঘিরে রেখেছে শীলাবতী, রূপনারায়ণ সহ কয়েকটি নদী ও খাল। এগুলির জলধারণ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান তৈরি হয়েছে। প্রথমে ২০১৪ সালে ২৫৫০ কোটি টাকার বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) তৈরি করে সেচদপ্তর। কিন্তু তাতে আপত্তি জানায় কেন্দ্রীয় জলমন্ত্রক। ২০১৫ সালে তা কমিয়ে ১২১৪ কোটি টাকার ডিপিআর নতুন করে জমা দেয় তারা। তা নিয়ে দীর্ঘ টালবাহানা চলে। ফলে প্রকল্প খরচও বেড়ে যায়। বর্তমানে প্রস্তাবিত খরচ দাঁড়িয়েছে ১২৩৮ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় বঞ্চনার এটা নতুন নজির বলেই মনে করছেন রাজ্য সরকারের কর্তাব্যক্তিরা।