জুন ১১, ২০১৮
ঝড়কে হার মানিয়ে এগিয়ে যাও, কৃতী ছাত্রছাত্রীদের বললেন মুখ্যমন্ত্রী

এ বছর বিভিন্ন বোর্ড পরীক্ষায় কৃতী ছাত্রছাত্রীদের চা-চক্রে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ আজ নেতাজি ইন্ডোরে এই চা-চক্রে অংশ নেন ছাত্রছাত্রীরা।
গত বছরও মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে কৃতীদের সাথে একটি চা-চক্রের আয়োজন হয়েছিল উত্তীর্ণে। ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তিনি এই পরম্পরাটি চালু করেন।
আজকের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি সকল ছাত্রছাত্রীদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, আজকের এই প্রতিযোগিতার যুগেও মেধা তালিকায় নাম ওঠানোটা সহজ কাজ নয়। তিনি উপস্থিত ছেলেমেয়েদের বলেন যেন তারা মা-বাবা কিংবা শিক্ষকদের অবহেলা না করে।
তিনি বলেন যেন তারা নিজেদের পছন্দের বিষয় নিয়ে কেরিয়ার গড়তে পারে, সমস্ত ঝড়-ঝঞ্ঝা কে হার মানিয়ে।
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যঃ-
- আজকে যারা মেধা তালিকায় নিজের নাম সংযোজিত করতে পেরেছে, তাদের শুভেচ্ছা জানাই। এটা মোটেও সহজ কাজ না। আজকে কম্পিটিশানের যুগে আধা নম্বর এদিক ওদিক হয়ে গেলে রাঙ্ক এক থেকে দশ হয়ে যেতে পারে। আজকাল একই নম্বর দশ, কুড়ি জন পাচ্ছে।
- এটা ঠিক দিন বদলেছে, পড়াশুনোর ধরণ বদলেছে, আজকে পরিকাঠামো বেড়েছে, বই পাওয়া যাচ্ছে, কম্পিউটারের মাধ্যমেও পড়াশোনা হচ্ছে। এমনকি মোবাইলের মধ্যে দিয়েও অনেকে তথ্য দেখেন। সুযোগ সুবিধে যেমন বেড়েছে, প্রতিযোগিতাও তো বেড়েছে।
- হয়তো লাইফে সেই স্ত্রাগেলটা নেই অনেকেরই, যে ১টা বই কিনতে হবে। হয়তো অনেককেই একটা বই কেনার জন্য জীবনে সংগ্রাম করতে হয় না। কিন্তু অনেকেই আছে যাদের বাবা মা মুদীর দোকান থেকে বা কাগজের ঠোঙা বিক্রি করে, ছেলে মেয়েদের পড়ান। তেমনই অনেক পরিবার আছেন বাবা মা রা, তাদের নিজস্ব জীবন যৌবন পুরোটাই ব্যয় করেন তাদের ছেলে মেয়েরা কি করে ভালো হবে নিশ্চিত করতে।
- শিক্ষক শিক্ষিকারা তো ছাত্রছাত্রীদের তৈরী করেন। তাদের হাত দিয়ে মেধা তৈরী হচ্ছে। আমার মনে হয় যে মেধা শিক্ষকরা তৈরী করেন নিজের জীবন দিয়ে, তাদের কাছেও এটা একটা ডেডিকেশন, ডিটারমিনেশন, ডিভোশান, এটার কোনও তুলনা হয় না।
- আমার খুব ভালো লেগেছে, এবার বিশেষ করে, সংসদ যেভাবে মেধা তালিকা তৈরী করার কাজটা কমপ্লিট করেছে। এ টু জেড খুব সুন্দর ভাবে সুষ্ঠুভাবে তৈরী করেছেন। আমার ধন্যবাদ আপনাদের সকলের প্রতি থাকবে। আগামী দিনেও যেন এরকম বজায় থাকে এটা নজর রাখবেন।
- আমরা যখন ছোট ছিলাম, দেখতাম থার্ড ডিভিশনের নাম্বার দিতে গেলেও যেন হাত কাঁপত। আমি পার্থদা কে একটা কথাই বলতাম, শুনুন, এদের ন্যাশানাল ইন্টারন্যাশানাল লেভেলের কম্পিটিশনে যেতে হয়। আমাদের ছেলেমেয়েরা যদি ৮০ পায় কেটেকুটে, আর অন্যরা যদি ৯৯ পায়, তাহলে আমাদের ছেলেমেয়েরা যাবে কোথায়? এদের তো কম্পিটিশনে থাকতে হবে। অনেক সময় ১০-এ ১০ পেলেও ওটা দেওয়া হয় না, কেটে দেওয়া হয়।
- আমি পার্থকে প্রথমেই বলেছিলাম, আমাদের দেখতে হবে যাতে আমাদের ছেলেমেয়েরা ভালো নম্বর পায়। ICSE-CBSE এর ছেলেমেয়েরা কত নম্বর পায়, আমাদের মাধ্যমিকের ছেলে মেয়েরা কেন এই জায়গায় পিছিয়ে থাকবে? তাদের মানটাও আমাদের উঁচু করতে হবে, এগিয়ে দিতে হবে। এটা ওদের জীবনের প্রথম ও দ্বিতীয় পরীক্ষা, এবং আমি এখনও মনে করি, আমাদের মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকের ছেলেমেয়েরা খুব ভালো রেজাল্ট করেছে। ICSE CBSE WBJEE রাও খুব ভালো রেজাল্ট করেছে।
- প্রতিভাটা বিকশিত হোক বিভিন্ন কাজে, নিজের যেটা ভালো লাগবে। আত্মবিশ্বাস আছে, সেটাকেই আঁকড়ে নিয়ে বাঁচবে। তবে যে মাটিটা তোমায় জীবনে বড় করেছে, যে মা, যে টিচার্স, তাদের কোনোদিন অবহেলা করবে না, তারাই তোমাদের আসল মনুষ্যত্ব শিখিয়েছে।
- আমরা খুব সাধারন ঘরে জন্ম নিয়েছি, এটা বলতে আমার গর্ব হয়, এখন ছেলেমেয়েরা যা সুযোগ পাচ্ছে, আমরা তা পাইনি, হয়তো ভালো স্কুলে পড়াতে পারেনি, ভালো কলেজে পড়াতে পারেনি, আমাদের বাবা মা আমাদের জন্য টাকা রেখে দিয়ে যেতে পারেনি, গাড়ি বাড়ি ফ্ল্যাট করে দিয়ে যেতে পারেনি, কিন্তু, আমাদের বাবা মারা ১টা কাজ করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ কাকে বলে নজরুল কাকে বলে বা স্বামী বিবেকানন্দর, নেতাজীর চিন্তাধারা কি, অথবা দেশাত্মবোধ কি, সংহতি কি এগুলো তারা শিখিয়েছিলেন আমাদের।
- একটু চেতনা, বিবেক, আবেগ দিয়ে আমাদের চৈতন্যের উদয় করতে সাহায্য করেছিল এই শিক্ষা। সেইটা দিয়ে সারা জীবন সংগ্রাম করতে করতে আজ এই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি। আজও ঝড় এলে মাথা নত করি না, ঝড়ে কখনও কখনও বিদ্যুৎ চমকায়, অনেক প্রাণ চলে যায়, তা সত্ত্বেও আমি মনে করি, মাথা উঁচু করে চলাটাই আমাদের কাজ।
- নিজস্ব মেধায় এগিয়ে যেতে হবে, এখনও বাংলার ছেলেমেয়েরা বিশ্বসেরা, তাদের মেধা বাংলার গ্রামে গ্রামে লুকিয়ে আছে। আজ যারা শহরেও থাকি, সকলের গ্রামে কোনও না কোনও ঠিকানা ছিল বা আছে। গ্রাম থেকেই শহর তৈরী হয়। তাই বলি, তোমাদের গর্ব তোমাদের মেধা, তোমাদের উৎকর্ষতা তোমাদের আকাশ ভরা সূর্য তারা। এগিয়ে যাওয়ার নামই জীবন। তোমাদের এই সচেতনতা জ্ঞ্যান, বুদ্ধি, সবই তোমাদের নতুন আশা, ভাষা, দিশা। আগামী দিন তোমরা এগিয়ে যাবে, এখন অনেক সুযোগ তৈরী হচ্ছে।
- আমাদের সরকারের আমলে নতুন ২২টি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরী করেছি, আরও ৬টা হচ্ছে, ৪৭টা নতুন কলেজও করে দিয়েছি। ৭ টা মেডিক্যাল কলেজ করেছি, আরও ১৩টি হচ্ছে। এভাবে মেডিক্যালের সিটও অনেক বাড়ানো হচ্ছে।
- গ্রন্থন, কলা বিভাগের একটা ছেলে দেখিয়ে দিল যে আর্টস পড়েও ১০০ তে ১০০ পাওয়া যায়।