মার্চ ৩০, ২০২০
আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। একে অপরকে সাহায্য করুনঃ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি সাংবাদিক সম্মেলন করে। করোনা রুখতে সরকারের গ্রহণ করা নানা উদ্যোগের কথা বলেন তিনি।
তাঁর বক্তব্যের কিছু অংশঃ–
আমরা সাধারণত মানুষকে গরমকালে রক্তদান করতে বলি। এবার সেটা করতে সমস্যা হবে। পুলিশ কলকাতা সহ প্রতি জেলায় প্রতিদিন ৫০ ইউনিট রক্ত দিচ্ছে যা ব্লাড ব্যাঙ্কে জমা হচ্ছে। প্রতিদিন সকালে নেতাজী ইন্ডোর সহ অন্যান্য জেলার নির্দিষ্ট করা স্টেডিয়ামে রক্তদান চলছে। রক্তদানের আগে প্রতিটি স্টেডিয়াম সাফাই চলছে।
আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। যাদের হাঁপানি, হৃদরোগ, বহুমুত্র রোগ আছে, ডাক্তার দেখান। জেলা হাসপাতালকে অনুরোধ করবো, সমস্ত রোগীকে রাজ্যের হাসপাতালে না পাঠাতে। সাধারণ রোগ সেখানেই চিকিৎসা করতে।
এই লকডাউনেও সমস্ত সাধারণ পরিষেবা চালু আছে যাতে জনজীবন ব্যহত না হয়। মুদীর দোকান ও বাজার খোলা থাকছে, যাতে ভিড় না হয়। সকলে দূরত্ব বজায় রাখুন।
সমস্ত ওষুধের দোকান যাতে সারাক্ষণ খোলা থাকে ও ওষুধের জোগান অব্যাহত থাকে, আমরা সেটা নিশ্চিত করবো। সমস্ত দোকান ও দোকানের কর্মীদের নজর রাখা হবে। সমস্ত দোকানদারদের বলবো তাদের কর্মীদের লিখিত চিঠি দিতে যাতে নাকা চেকিং হলে তাদের অসুবিধায় না পড়তে হয়।
সমস্ত ইচ্ছুক হাউস সার্জেনদের হাসপাতালে কাজ করতে দেওয়া হোক। যারা স্বাস্থ্য পরিষেবায় স্বেচ্ছাসেবক হতে চান, ০৩৩-২৩৪১২৬০২ নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন। একজন নোডাল অফিসারকে এর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা এরকম স্বেচ্ছাসেবীদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো। এই নম্বরে ফোন করে ইচ্ছুকদের নাম, ফোন নম্বর ও কি পরিষেবায় যুক্ত হতে চাইছেন, জানাতে হবে।
আমি নিশ্চিত করছি বাংলায় ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর কোনও অভাব নেই। করোনা মোকাবিলায় যুক্ত সকলের ও তাদের পরিবারের জন্য রাজ্য সরকার বীমার পরিমাণ ৫ লক্ষ থেকে বাড়িয়ে ১০ লক্ষ করেছে এবং বীমার সময়সীমা ১৫ই এপ্রিল থেকে বাড়িয়ে ১৫ই মে করা হচ্ছে।
আমরা ১০ লক্ষ পিপিই চেয়েছি। এই রোগ হঠাৎ হানা দিয়েছে, আমরা সেভাবে তৈরী ছিলাম না। আমরা এর মোকাবিলায় যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। এর মধ্যে যত পিপিই পেয়েছি, বেশীরভাগ ডাক্তার ও নার্সদের বিলি করা হয়েছে। জোগানের কিছু ঘাটতি আছে, সেটা কাটাতে কোনও ইচ্ছুক ব্যক্তি সাহায্য করতে চাইলে করতে পারেন।
ইতিমধ্যেই ৩৮ হাজার এন৯৫ ও ১৬ হাজার সার্জিকাল মাস্ক, ২০ হাজার গ্লাভস বিলি করা হয়েছে। ৩০০ ভেন্টিলেটরের অর্ডার দিয়েছি। ২১৫ টি ইতিমধ্যেই এসে গেছে। কিছু মোবাইল ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বাংলার ২ লক্ষ শ্রমিক ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে কাজ করেন। আমি ও আমাদের মুখ্য সচিব ১৮ রাজ্যে চিঠি লিখেছি যাতে ওদের দেখাশোনা করা হয়।
আমাদের রাজ্যেও ৪০ হাজার ভিন রাজ্যের শ্রমিককে আমরা দেখাশোনা করছি। আমাদের একে অপরকে সাহায্য করা উচিৎ।
আমি অর্থ সচিবকে অনুরোধ করবো যাতে সমস্ত সরকারি কর্মচারী ঠিক সময়ে মাইনে পায়, সেটা লক্ষ্য রাখার। প্রয়োজনে আমরা অগ্রিম দিতে পারি যদি তারা আবেদন করেন।
এপ্রিল ও মে মাসের সামাজিক পেনশনের টাকা দিচ্ছি। লকডাউন চলবে ১লা বৈশাখ অর্থাৎ ১৪ই এপ্রিল পর্যন্ত। তাই ওইদিন আমরা কিছু ছাড় দেব। ১৩ তারিখে আমরা সেটা ঘোষণা করবো। সকলকে বলবো ওষুধ মজুত না করতে।
সকলকে অনুরোধ করবো মুখ্যমন্ত্রী ত্রাণ তহবিলে সাহায্য করতে। যারা দেবেন, তারা করে ছাড় পাবেন। যে কোনো অঙ্কের অনুদান করতে পারেন।
আমাদের সকল সাংসদ প্রত্যেকে ৫০ লক্ষ টাকা করে দিয়েছেন। অনেক শিল্পপতি, ডাক্তার এবং আরও অনেকে সাধারণ মানুষ এই তহবিলে সাহায্য করছেন।
সমস্ত মুদীর দোকান ও রেশনের দোকান চালু থাকবে। যাদের রেশন কার্ড নেই, প্রয়োজনে তাদের অস্থায়ী কার্ড করে দেওয়া হবে যাতে তারা প্রয়োজনে খাদ্য সামগ্রী তুলতে পারেন। ২০ লক্ষ প্রান্তিক মানুষদের জন্য সরকার ৫ কিলো অতিরিক্ত চাল দেবেন।
বয়স্ক মানুষদের জন্য যারা খাবারের হোম ডেলিভারি করেন তাদের বলবো পরিষেবা চালু রাখতে। স্থানীয় পুলিশ তাদের বিশেষ পাসের ব্যবস্থা করবে।
দুধের জোগান অব্যহত থাকবে। মিষ্টির দোকান দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত খোলা থাকবে।
যারা ফেক নিউজ ছড়াচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে পুলিশকে বলবো কড়া ব্যবস্থা নিতে। যাদের ডাক্তার বলেছেন ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে, তাদের বলবো সেটা মেনে চলতে।
পুলিশের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ থাকলে, উচ্চ পদাধিকারীকে জানান। টুইটারেও জানাতে পারেন। পুলিশ যথাসাধ্য চেষ্টা করছে।.
বেসরকারি সংস্থাদেরও বলবো তাদের কর্মীরা যাতে ঠিক সময়ে বেতন পায়, সেদিকে নজর রাখতে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উচিৎ মানুষকে সাহায্য করা।
ডাক্তারদের বলবো যথাযথ পরীক্ষা না করে কোনও অসুস্থ বা মৃত ব্যাক্তিকে করোনা হয়েছে, বলবেন না। ডবলুএইচও, আইসিএমআর ও কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশিকা অনুসারে, এরকম ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মেটিয়াব্রুজের হাব, তন্তুজের মত বস্ত্রশিল্পের সঙ্গে যুক্তরা পিপিই তৈরীতে নিরলস অনেক কাজ করছেন। এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে আমাদের একে অপরকে সাহায্য করতে হবে।