মার্চ ২১, ২০২০
আক্রান্ত রাজ্যের ট্রেন ঢুকছে! উষ্মা প্রকাশ মুখ্যমন্ত্রীর

ভিনরাজ্য থেকে এ রাজ্যে করোনা ভাইরাস যাতে না ছড়ায় তার জন্য আপাতত দূরপাল্লার ট্রেন বন্ধ রাখার জন্য রেল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানাল রাজ্য সরকার। ২২ মার্চ মধ্যরাত থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত দূরপাল্লার ট্রেন এ রাজ্যে যাতে না আসে তার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
শনিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ট্রেনগুলো হাজার হাজার লোক নিয়ে চলে আসছে। আমি মুখ্য সচিবকে বলেছি দূরপাল্লার ট্রেন চলাচল আপাতত বাতিল করে দেওয়া হোক। রেলওয়ে অথরিটিকে বলব অন্তত ১০ দিন দূরপাল্লার ট্রেন বন্ধ করতে। আগামী ২–৩ সপ্তাহ অত্যন্ত বিপজ্জনক।’
তিনি বলেন, ‘সমস্যা আমাদের বাংলাকে নিয়ে নয়। সমস্যা তো বাইরের। অন্য সময় আমরা স্পেশ্যাল ট্রেন চাইলে দেয় না। যারা বাংলার শ্রমিক বাইরে আছেন তাঁরা নিশ্চয় নিজেদের ঘরে ফিরতে পারেন। কিন্তু রেল তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে না। এক মাস ধরে এটা নিয়ে আমি চিৎকার করে যাচ্ছি। কিন্তু সলিউশন ইজ জিরো। না আছে পরীক্ষা ব্যবস্থা, না আছে চিকিৎসা ব্যবস্থা, না আছে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, ওষুধ। তার মধ্যেও আমরা আমাদের চিকিৎসক ও সাধারণ মানুষদের নিয়ে লড়ে যাচ্ছি। আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি এই বিষয়ে। অনেকেই ট্রেন থেকে নেমে চলে আসছেন।’
মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, ট্রেনে করে হাজার হাজার মানুষ এ রাজ্যে আসছেন। কিন্তু কোনও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো যাচ্ছে না। এর আগেও মুম্বই বিস্ফোরণের সময় ওই রাজ্য থেকে বাংলার শ্রমিকদের ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এখানকার মানুষ এ রাজ্যে ফিরে আসবে এটা তো স্বাভাবিক।
তিনি বলেন, বাংলায় যথেষ্ট কাজ আছে। ভিন রাজ্যে যাওয়ার কোনও দরকারই নেই। মহারাষ্ট্র, দিল্লিতে সোনা, জড়ির যে ধরনের কাজ হয়, সেরকম কাজ করার সুযোগ এখানেও যথেষ্ট রয়েছে। রাজ্যে অনেক কর্মতীর্থ করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে দোকান করেও দিব্যি রোজগার করা যায়। কিসান মান্ডিতে কিছু সবজি নিয়ে বসলেও আয় হবে। বাংলায় ভাল বাজার আছে। তাঁদের কাছে মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধ, ‘এখানে থাকুন, সুখে শান্তিতে থাকুন।’
তার কথায়,‘যাঁরা ভিনরাজ্য থেকে এ রাজ্যে চলে এসেছেন তাঁদের কাছে আমাদের অনুরোধ, বিদেশ থেকে এখানে এলে নিজেদের আইসোলেশনে রাখুন ১৪ দিন। বাড়িতে থাকুন, বাইরে বের হবেন না। যাঁরা এসে গেছেন তাঁদের এবং তাঁদের পরিবারের কাছে অনুরোধ করব বাড়িতে থাকতে। তাঁরা কেউ যেন বাড়ির বাইরে না বেরোন। কারও মধ্যে করোনার জীবাণু থাকলে, সেটা বোঝার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা করাতে হবে। তাঁকে বাড়ির আর কারওর সঙ্গে, বিশেষ করে ছোট এবং বয়স্কদের সঙ্গে মিশতে দেবেন না। সম্পূর্ণ আলাদাভাবে থাকতে হবে। অনেক গরিব মানুষ যাঁদের আলাদা ঘর নেই, তাঁদের মশারির মধ্যে থাকতে বলছি। এটা অস্পৃশ্যতার বিষয় নয়। যাতে এই রোগ সংক্রমণ না হয় তাই সাবধানতা অবলম্বনের জন্য সচেতন থাকা। যিনি বিদেশ থেকে আসছেন তাঁর পরিজন, পাড়া–প্রতিবেশীরাও যাতে ভাল থাকেন সেটা সবাইকে নজর রাখতে হবে। তাঁকে আলাদা থাকতে হবে, তাঁর জামাকাপড়, থালা–বাসন, বালতি, সাবান অন্য কেউ ব্যবহার করবেন না। বাড়ির লোকেদের গ্লাভস, মাস্ক ব্যবহার করা উচিত।’
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জেলাশাসকদের বলে দিয়েছি, ভিনরাজ্য থেকে আগতদের ওপর কেউ যেন ভয় পেয়ে আক্রমণ না করেন। কোনও অবস্থাতেই কেউ যেন আইন যেন নিজের হাতে তুলে না নেন। আবার এখানে এসে কেউ যেন ঘুরে না বেড়ান। সামাজিক মেলামেশা, ভিড় এড়িয়ে চলার জন্য বারবার রাজ্যবাসীকে অনুরোধ করা হচ্ছে। তাঁর অভিযোগ, এখনও অনেকেই এই সতর্কতা মানছেন না। অনেক সংস্থাই হাজার হাজার লোক নিয়ে এসে অনুষ্ঠান করছে।
অথচ চাকলায় লোকনাথের জন্মদিনে কোনও অনুষ্ঠানই বড় করে করা হয়নি। মতুয়াদের মেলাও নিজেরাই বন্ধ করে দিয়েছে।’ এর জন্য মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘সব কিছু একেবারে বন্ধ করে দিতে বলছি না। যা করবেন অল্প লোক নিয়ে করুন। কালীঘাট মন্দির কর্তৃপক্ষকেও আমি বলে দিয়েছি, যাঁরা পুজো দিতে আসছেন তাঁদের জন্যও যেন সতর্কতা অবলম্বন করা হয়।’
এদিনই মুখ্য সচিব রাজীব সিনহা মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রেল বোর্ডের চেয়ারম্যানকে চিঠি লিখে দূরপাল্লার ট্রেন বন্ধ রাখতে অনুরোধ করেছেন বলে নবান্ন সূত্রে খবর। এ ছাড়াও রাজ্যের সমস্ত বড় বড় রেলওয়ে স্টেশন স্ক্রিনিং এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখার অনুরোধ করা হয়েছে।