সাম্প্রতিক খবর

জুলাই ১, ২০১৯

স্কুলে যৌন হেনস্থা রুখতে কড়া নির্দেশিকা রাজ্যের

স্কুলে যৌন হেনস্থা রুখতে কড়া নির্দেশিকা রাজ্যের

স্কুলে যৌন নিগ্রহ রোধে নির্দেশিকা জারি করল স্কুল শিক্ষা দপ্তর। এই নির্দেশিকা শুধু সরকারি, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত এবং পোষিত স্কুলগুলির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়, রাজোর প্রতিটি বেসরকারি স্কুলের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

এই নির্দেশিকা রাপায়ণে রাজা, জেলা ও মহকুমা স্তরে তিনটি “নোডাল কমিটি” গড়া হয়েছে। আইসিএসই বা সিবিএসই বোর্ড বা রাজ্যের অধীন কোনও স্কুল এই নির্দেশিকা না মানলে “নোডাল কমিটি” আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবে। স্কুলস্তরে এই নির্দেশিকা রূপায়ণের জন্য ‘স্টুডেন্ট সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি মনিটরিং কমিটি’ গড়ার কথা বলা হয়েছে।

প্রকাশিত নির্দেশিকাটির দুটি ভাগ:

১) স্কুলে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কী কী ব্যবস্থা নিতে হবে।

২) কোনও ঘটনা ঘটে গেলে বা অভিযোগ উঠলে কী কী পদক্ষেপ করতে হবে।

অনেক সময় কোনও ঘটনা ঘটলে পড়ুয়ারা তা প্রকাশ্যে বলতে ভয় পায়। তার জন্য প্রতিটি স্কুলে “সাজেশন বক্স” রাখার কথা বলা হয়েছে। নির্যাতিত বা নির্যাতিতার তার পছন্দের যে-কোনও স্কুলে ভর্তি হওয়ার স্বাধীনতা থাকবে। সে চাইলে ওই নির্দিষ্ট স্কুলেও পড়তে পারবে বলে নির্দেশিকায় বলা হয়েছে।

স্কুলস্তরে যৌন হেনস্থা রুখতে নির্দেশিকায় যে যে পদক্ষেপ করার কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি হল:

১) স্কুলে শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী নিয়োগের তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। নিযুক্ত ব্যক্তিকেই হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে তার বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থা বা অন্য কোনও অপরাধমূলক অভিযোগ আছে কি না।

২) যারা ইতিমধ্যেই স্কুলে শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী হিসেবে কর্মরত, এই হলফনামা এবার তাদেরও দিতে হবে।

৩) বছরে একবার স্কুলের প্রতিটি পড়ুয়াকে নিয়ে স্পর্শের ভাল-মন্দ এবং বয়ঃসন্ধি কালে তাদের যে মানসিক ও শারীরিক বদল ঘটে, তা নিয়ে কর্মশালা করতে হবে।

8) যৌন নির্যাতন বিষয়ে শিক্ষক ও কর্মীদের সচেতন করতেও বছরে একবার কর্মশালা করতে হবে।

৫) হঠাৎ করে কোনও পড়ুয়ার আচরণে অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করলে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। যদি কোনও আয়া বা কর্মী দেখেন, তা হলে স্কুলের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। তিনি অভিভাবককে জানাবেন।

৬) প্রত্যেক পড়ুয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য স্কুলে থাকতে হবে। যেমন, বাড়ির ঠিকানা, ফোন নম্বর ইত্যাদি।

৭) স্কুলটি যে এলাকায় অবস্থিত, সেখানকার থানা, হাসপাতালের নম্বরও রাখতে হবে। এবং এই নম্বরগুলি অভিভাবকদেরও জানাতে হবে।

৮) পড়ুয়াদের যৌন ও মানসিক নির্যাতন নিয়ে মাঝেমধ্যেই আলোচনা করবে স্কুল। কী ধরনের আলোচনা হল, তা কোথাও লিখে রাখতে হবে।

৯) স্কুলের সময় শেষ হওয়ার পর কোনও অনুষ্ঠানের মহড়া চললে, সেখানে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপস্থিত থাকতে হবে। স্কুলস্তরে এই নির্দেশগুলি মানা হচ্ছে কি না তা দেখবে ‘স্টুডেন্ট সেফটি আ্যান্ড সিকিউরিটি মনিটরিং কমিটি’। এই কমিটিতে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা ছাড়াও উঁচু ক্লাসের পড়ুয়া ও অভিভাবকেরা থাকবেন।

কোনও ঘটনা ঘটে গেলে বা অভিযোগ উঠলে যে-পদক্ষেপ করার কথা বলা হয়েছে সেগুলি হল:

১) যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠলে সঙ্গে সঙ্গে তার সমস্ত রকম তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করে তা নিরাপদ জায়গায় রাখতে হবে। এবং পুলিসকে দিতে হবে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পুলিসকে জানাতে হবে।

২) অভিযোগকারী বা কারিণী এবং অভিযুক্ত-কারও নামই প্রকাশ্যে আনা যাবে না।

৩) অভিযোগকারী বা কারিণীর শারীরিক পরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজনে পুলিসকে খবর দেওয়ার আগেই তা করতে হবে। এবং কোনও সরকারি হাসপাতালে করতে হবে। যদি পড়ুয়াটিকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে সমস্যা হয়, সেক্ষেত্রে স্কুলে যাতে এই পরীক্ষা করা যায় তার ব্যবস্থা রাখতে হবে।