জুলাই ২৩, ২০১৯
সাংবাদিকদের চাকরির নিরাপত্তার জন্য আইন আনা হোকঃ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ কলকাতার প্রেস ক্লাবের ৭৫তম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষ্যে সেখানে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন এবং সেখানকার সকল কর্মী এবং বর্ষীয়ান সাংবাদিকদের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি তাঁর লড়াইয়ের দিনগুলিতে তাঁর পাশে থাকার জন্য সকল সাংবাদিকদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তাঁর বক্তব্যের কিছু অংশঃ
এখানে উপস্থিত সকল নবীন ও প্রবীণ সাংবাদিকদের আমি অভিনন্দন জানাই। এই ক্লাবে অনেক বিখ্যাত মানুষ, অনেক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, অনেক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, অনেক সামাজিক শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী অনেক বিশ্ববরেণ্য মানুষ এখানে পদার্পণ করেছেন।
সাংবাদিকদের কাজটা একটা বড় কাজ এবং আমাদের দেশে সংবাদমাধ্যম গণতন্ত্রের এক অন্যতম পীঠস্থান। আমরা সংবিধান মেনে চলি, আমাদের আইন সভা আছে, আমরা আইন পাস করি। নির্বাচন কমিশন আছে নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য। নির্বাচন কমিশন, সংসদ, সংবিধানের পরেই আসে সংবাদ মাধ্যম।
সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। অনেক বর্ষীয়ান সাংবাদিক আজও লেখার অভ্যাস, কাজ করার অভ্যাস ছাড়তে পারেননি। আমরা ছোটবেলায় কিছু সাংবাদিকের লেখা পড়তাম, খুব ভালো লাগতো। আজ অনেক ডিজিটাল মাধ্যম আবিষ্কার হয়েছে। তবে আগেকার খবর আর আজকের খবরের মধ্যে একটা পার্থক্য আছে। আগেকার খবরে সাংবাদিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, খবর যাচাই করে খবর করতেন, সত্য তথ্য প্রকাশ করতেন।
আজকাল জীবন কঠিন হয়ে গেছে কিন্তু সংবাদ সংগ্রহ করা সহজ হয়ে গেছে। আজকাল অনেক সংবাদ ফেসবুক, টুইটারের মাধ্যমে চলে আসে। এতে একটা সমস্যাও হয়েছে। কষ্ট করে খবর করলে তার মধ্যে হৃদয়ের যে ছোঁয়া থাকে, সেটা টাইপ করায় থাকেনা। আমি নিজে লিখতে বেশী ভালোবাসি। টাইপের মধ্যে আমার অন্তর থাকেনা। এটা একটা অভ্যাস।
আমি দুঘন্টা অন্তর মোবাইল দেখি খবরাখবর নেওয়ার জন্য। অনেক সময় রাতে আমি নির্দেশ দিই রাতে, এবং আধিকারিকদের বলি সকালে উঠে মোবাইল দেখে সেই কাজটা করতে।
আমি যখন রেলমন্ত্রী ছিলাম, তখন এখানে আসতাম। প্রেস ক্লাবের খারাপ অবস্থা দেখে কিছুটা সারিয়ে দিয়েছিলাম। রেলওয়ে কম্পিউটার রিজার্ভেশন সেন্টার করেছিলাম এখানে। সেই সময় আমি একটা প্রকল্প করেছিলাম সাংবাদিকদের জন্য যাতে তাঁরা বছরে দুবার ৫০ শতাংশ কম ভাড়ায় সারা ভারতে ঘুরতে পারেন তাঁদের পরিবারের সঙ্গে।
আমরা সাংবাদিকদের জন্য মাভৈ প্রকল্পে সাংবাদিকদের চিকিৎসার খরচ বহন করি রাজ্য সরকারের তরফে। এছাড়া, সাংবাদিকদের মাসে ২৫০০ টাকা করে পেনশন দিই। ইতিমধ্যেই আমরা ২৫১৪ জন সাংবাদিকের চিকিৎসার ব্যয় অন্তর্ভুক্ত করেছি।
অনেক চ্যানেল আজ আসছে, কাল চলে যাচ্ছে। সাংবাদিকরা কর্মহীন হয়ে পড়ছে। আমি একটা চ্যানেলকে সাহায্য করায় আমায় কেন্দ্রীয় সংস্থা চিঠি পাঠিয়েছে, কেন আপনি সাহায্য করেছেন? আমরা মানবিক, কোনও সাংবাদিক খারাপ অবস্থায় পড়লে, আমার কাছে সাহায্য চাইলে, আমরা সাহায্য করি।
প্রেস ক্লাব টেকনিকাল কমিটি তৈরী করে আইন তৈরী করুক, আমাদের পাঠাক। আমরা সেটা বিধানসভায় পেশ করব। যাতে এই আইন আগামী দিনে সাংবাদিকদের সাহায্য করে।
চিত্র সাংবাদিকরা এখনও এইসব সুযোগ পাননা। ৭৫ বছরে একটি সংশোধনী এনে চিত্র সাংবাদিকদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হোক। ওনারাও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন। এটাই আমি আপনাদের থেকে চাই।
আমাদের প্রথম সরকার আসার পর ২০১২ সালে প্রেস ক্লাব কমিটি আমার কাছে জায়গা চেয়েছিলেন স্থায়ী প্রেস ক্লাব বিল্ডিং নির্মাণ করার জন্য। পূর্ত দপ্তর রুবির সামনে সাড়ে তিন কাঠা একটা জমি জোগাড় করেছে। আপনারা জমি দেখে এসে রাজী হলে, আপনারা দিয়ে দেওয়া হবে।
প্রেস ক্লাব ভালো করে চলুক এটা আমি নিশ্চয়ই চাইব। সব জায়গাতে রাজনীতি করা উচিৎ না। খারাপ লোককে সংশোধন করে নিতে হয়। অনেক সৎ সাংবাদিক আছেন। যাদের এখনও থাকার জায়গা নেই। তাঁদের আমি রাজারহাটে একটা ১০ কাঠা জমি দিতে চাই। বাড়ি করার জন্য সমবায় ব্যাঙ্ক থেকেও ঋণের ব্যবস্থা করে নিতে পারেন, কেএমডিএ ও ঋণ দিতে রাজী আছে।
আমাকে চিফ মিনিস্টার হিসেবে বলবেন না, আমি আগেও লিখতাম এখনও লিখি। আমি আপনাদের ঘরের একজন সদস্য হিসেবে থাকতে চাই। আমি নিজের লেখা থেকে, গানের সিডি বেচে যে রয়্যালটি পাই সেই টাকা থেকে ১ লক্ষ ১টাকার চেক আমি আগামীকাল পাঠিয়ে দেব। ধন্যবাদ আপনাদের মেম্বারশিপ কার্ড আমাকে দেওয়ার জন্য। এটা আমি যত্ন করে রেখে দেব।