সাম্প্রতিক খবর

ডিসেম্বর ২০, ২০১৯

সিএবি এতো ভালো হলে প্রধানমন্ত্রী কেন ভোট দেন নিঃ পার্ক সার্কাসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

সিএবি এতো ভালো হলে প্রধানমন্ত্রী কেন ভোট দেন নিঃ পার্ক সার্কাসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

কেন্দ্রীয় সরকারের অগণতান্ত্রিক অসাংবিধানিক ক্যাব ও এনআরসির বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলন চালাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার থেকে বুধবার পরপর তিনদিন তিনি কোলকাতা ও হাওড়ায় তিনটি মহামিছিলের নেতৃত্ব দেন। গতকাল রানি রাসমণি রোডে একটি জনসভা করেন তিনি। আজ পার্কসার্কাসেও তিনি একটি জনসভা করেন। সমাজের সব ধর্ম, বর্ণ জাতির, সাংস্কৃতিক কর্মী ও সাধারন মানুষকে এই প্রতিবাদে শামিল হওার আহ্বান জানান তিনি।

তাঁর বক্তব্যের কিছু অংশঃ

নো এনআরসি নো ক্যাব। শুধু ভাষণ নয়, সারা ভারতের সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে লড়াই করতে হবে, সেই লড়াইয়ে জিততে হবে।

লুকিয়ে লুকিয়ে ওরা কি করে দেয়, মধ্য রাতে এমন বিল বানিয়ে দেয় যে দেশবাসীরা বুঝতেই পারেনা।  বিলটা এতো গুরুত্বপূর্ণ ছিল কিন্তু কাউকে ভাববার টাইম দেয় নি। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সংসদে পাশ করিয়ে দিয়েছে।

মহারাষ্ট্রে রাতের অন্ধকারে সরকার গঠন করতে চেয়েছিল।

যদি  সিএবি এতো ভাল তাহলে আমি প্রশ্ন করতে চাই প্রধানমন্ত্রীজি আপনি কেন ভোট দেন নি? ঐদিন ক্যাব বিল পাশ করানোর সময় আপনি তো ছিলেন কিন্তু আপনি তো ভোট দেন নি। তার মানে এটা আন্দাজ করা যায় যে আপনিও এটার সমর্থন করেন না। যদি সমর্থন না করেন এটা বাতিল করে দিন।

দেশে পিঁয়াজের দাম ২০০টাকা, বেকারত্ব বাড়ছে, শিল্প বন্ধ হয়ে গেছে, টাকার দাম কমে গেছে কিন্তু এদের কোনও কাজ নেই, এরা শুধু ছুপারুস্তমের মতো একটা বিল নিয়ে এসেছে, আর যে আওয়াজ তোলে তাকে দেশদ্রোহী বলে দেয়।

আমরা দেশের নাগরিক, আমরা দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের পরে যারা দেশের নাগরিক হয়েছে, সব মানুষ ভোট দিয়েছিল। এরপর কত সরকার গঠন হয়েছে, কত সরকার চলে গেছে, আপনি সরকারে আছেন মানুষের ভোটে। আর আজ আপনি বলছেন আমরা নাগরিক নই? সবাই অনুপ্রবেশকারী? ওদের চোখে সবাই অনুপ্রবেশকারী।

১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হয়েছে আর আপনাদের দলের জন্ম হয়েছিল ১৯৮০ সালে আপনারা দেশের স্বাধীনতায় ছিলেন না। গান্ধীজির সাথে ছিলেন না, নেতাজীর সাথে ছিলেন না, বল্লভ ভাই প্যাটেলের সাথে ছিলেন না, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, আম্বেদকর-এর সাথেও ছিলেন না। গুরু নানক বা ভগৎ সিং, রাজেন্দ্র প্রসাদকেও দেখেন নি।

৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর আপনি বলে দেবেন কে এখানকার নাগরিক আর কে নয়? নাগরিক হিসেবে যদি আমরা জিজ্ঞাসা করি আপনি কে? যদি আমাদের মায়ের জন্ম সার্টিফিকেট দিতে হয়, তবে আপনাকেও দিতে হবে। আগে আপনি ঠিক করে নিন, আপনার সব ঠিক আছে তো? আপনাদের কি আছে সেটা কি গুজরাটে তদন্ত করব। ইউপিতে তদন্ত করব।

তোমাদের কোনও মানুষ চায় না। সব মিলিয়ে ৩২% ভোট পেয়েছ। ৬৮% তোমাদের বিরুদ্ধে এটাও বুঝে নাও।

ভারতের গনতন্ত্র সবথেকে মজবুত, মজবুর নয়। হিন্দুস্তান রহেগা, ইউনাইটেড ইন্ডিয়া রহেগা। সব লোক একসাথে থাকবে। এক সাথে কাজ করবে। সব মানুষ যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে যায় তবে বিজেপি তুমি কত খেলা দেখাবে বাবা?কত গুলি চালাবে? কত জেল ভরবে?

গতকাল ইউপিতে পুলিশের গুলিতে ছাত্র মারা গেছে আর ওখানকার মুখ্যমন্ত্রী বলছে আরও গুলি চালানো উচিৎ। ছাত্ররা জামিয়া মিলিয়াতে আন্দোলন করছে আর এক নেতা বলছে গুলি করে সব মেরে দাও! ছাত্ররা আন্দোলন করলেই তাকে গিয়ে মারছে। ঐতিহাসিক রামচন্দ্র গুহকে অপমান করা হয়েছে। এটা লজ্জাজনক।

যদি একটা আন্দোলন করার জন্য আপনি গুলি মারেন তো আমাকে গুলি করে দিন কিন্তু মনুষ্যত্বকে গুলি মারবে না, মানবিকতাকে গুলি মারবেন না, মানুষকে গুলি মারবেন না।

আমরা একসাথে থাকি। একসাথে জীবন রক্ষা করি। একসাথে দুর্গাপুজোতে যাই। একসাথে ঈদে যাই, একসাথে বড়দিনে যাই।

বিজেপি একটা ফেক নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। যেখানে অনেক টাকা দিয়ে ফেক ভিডিও বানায়। আর আপনাদের প্রভাবিত করে। ওরা চায় একটা ধর্মের মানুষকে অন্য ধর্মের মানুষদের বিরুদ্ধে লড়িয়ে দেবে। আমি এটা করতে দেব না। আমরা সবাই একসাথে আছি এক সাথে বাঁচব, একসাথে মরব।

আমরা বাংলার লোক সব ধর্মকে সম্মান করি। তুমি ধর্ম নিয়ে আসলে আমদেরও সব ধর্ম আছে। বাংলার সব সব ধর্ম জাতিকে নিয়ে চলি। আমাদের আন্দোলন ততই জোরালো হবে যত এটা শান্তিতে হবে।