সাম্প্রতিক খবর

মে ১৩, ২০১৯

কেন্দ্র বাংলাকে শুধু বঞ্চনা করেছেঃ নামখানায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

কেন্দ্র বাংলাকে শুধু বঞ্চনা করেছেঃ নামখানায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার মথুরাপুর লোকসভার অন্তর্গত নামখানায় নির্বাচনী জনসভা করেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, কেন্দ্র বাংলাকে শুধু বঞ্চনা করেছে। মুড়িগঙ্গায় লোহার ব্রিজ তৈরী করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কিন্তু চার বছরে কোনও কাজই করল না।

ওনার বক্তব্যের কিছু অংশঃ

আমি প্রতিবার গঙ্গাসাগর মেলায় আসি। কথায় আছে ‘সব তীর্থ একবার, গঙ্গাসাগর বারবার’। আগে গঙ্গাসাগরে কিছুই ছিল না, থাকার জায়গাও নয়। এখন এখানে অনেক উন্নয়ন হয়ে অনেক সুন্দর হয়ে গেছে। গঙ্গাসাগরকে নতুন করে তৈরী করে রাজ্য সরকার মানুষকে উপহার দিয়েছে।

আজকের দিনটি আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। ২০১১ সালের এই দিনে ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট সরকারের পরিবর্তন হয়েছিল। এই দিন নির্বাচনের ফলাফল বেরিয়েছিল। ৩৪ বছরের একটা জগদ্দল পাথরকে সরিয়ে খুন, সন্ত্রাস, রক্তের সন্ত্রাস থেকে মা মাটি মানুষ এই পরিবর্তন এনেছে। আমি তাদের অভিনন্দন জানাই।

আমরা সাইক্লোন শেল্টার তৈরী করেছি। যাতে আয়লার মতন ঝড় এলে আমরা তা প্রতিরোধ করতে পারি

আমাদের সুন্দরবন ও বসিরহাট নতুন জেলা করার পরিকল্পনা আছে। এই দুই জেলা হয়ে গেলে মানুষকে আর প্রশাসনিক কাজের জন্য অনেক দূর যেতে হবে না। আমরা হাতানিয়া দোয়ানিয়া নদীর ওপর ব্রিজ তৈরী করে দিয়েছি, এর ফলে মানুষকে আর বেশী ঘুরতে হবে না।

কেন্দ্রকে অনেকবার বলা হয়েছে ভোর সাগর, ঢেউ সাগর পোর্ট তৈরী করার। চার বছর হয়ে গেছে এখনও কোনও কাজ করল না। ওরা তাজপুর পোর্ট করার জন্য আমাদের থেকে ৭৪% চাইল, আমরা বলেছিলাম আমরা রাজি আছি, শর্তে আমরা বলেছিলাম মুড়িগঙ্গায় লোহার ব্রিজ তৈরী করে দিতে, ওরা রাজি হল। কিন্তু চার বছরে কোনও কাজই করল না। তাই আমরা নিজেরা টাকা দিয়ে এই ব্রিজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

মুড়িগঙ্গা নদীর ড্রেজিং করার জন্য আমরা ১০০ কোটি টাকা দিয়েছি।

এখানে ‘সুন্দরীনী’ স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মেয়েরা মধু এবং অন্যান্য প্রোডাক্ট তৈরী করে, আমি চাই সুন্দরবনে আরও বেশী করে মানুষ আসুক।

আগে মৎস্যজীবীরা মাছ ধরতে গিয়ে হারিয়ে যেতেন তাই এখন তাদের জন্য একটা করে পরিচয়পত্র করা হয়েছে। তাদের জন্য পেনশন চালু করেছি। তাদের মাছ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দেওয়া হয়। আমরা চাই মৎস্য চাষে সাগর আরও এগিয়ে আসুক, যাতে রপ্তানি ভাল করে হয় সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।

আমাদের সরকার কৃষকদের কৃষি জমির খাজনা ও কৃষি জমির মিউটেশন মুকুব করে দিয়েছে। আমরা ‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্প চালু করেছি, এই প্রকল্পের আওতায় কৃষকরা বছরে ৫০০০ টাকা আর্থিক সাহায্য পাবে। ১৮-৬০ বছর বয়সের মধ্যে কোন কৃষক মারা গেলে তাদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়।

কেন্দ্র কয়েকদিন আগে ব্যাঙ্ক থেকে চিঠি পাঠিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর ছবি দিয়ে, সব মিথ্যে কথা। কেন্দ্র এক পয়সাও দেয়নি। কৃষকদের শস্য বীমার পুরো টাকা রাজ্য সরকার দেয়, আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের ভিক্ষে চাই না। নরেন্দ্র মোদীর ভিক্ষা নিয়ে বাংলা চলবে না। কৃষকদের ফসল নষ্ট হলে সরকার তাদের সব রকম সাহায্য করে, ক্ষতিপূরণ দেয়

বাংলার সাড়ে ৮ কোটি মানুষকে আমরা ২ টাকা কিলো দরে চাল দিই, যা একমাত্র বাংলায় আছে।

বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি আমরা ‘স্বাস্থ্য সাথী’ স্মার্ট কার্ড চালু করেছি বাড়ির মহিলা অভিভাবকের নামে। বাংলার প্রায় সাড়ে ৭ কোটি মানুষ এই প্রকল্পের আওতায় রয়েছে। এর মাধ্যমে প্রাইভেটে চিকিৎসা করার জন্য বছরে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ করতে পারবেন পরিবারের সদস্যদের জন্য।

আমাদের সরকার মানবদরদী সরকার, সকলের জন্য কাজ করে।

নরেন্দ্র মোদী নোটবাতিল করেছেন, চাষ , কৃষি, শিল্প বন্ধ হয়ে গেছে। চাকরি নষ্ট হয়ে গেছে, কৃষকরা আত্মহত্যা করেছে। ৩ কোটি বেকার হয়েছে। যারা বেকার হয়েছেন তাদেরকে আমরা ট্রেনিং দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি যাতে এরপর তারা চাকরি পায়। আমাদের ‘উৎকর্ষ বাংলা’ সেরার শিরোপা পেয়েছে।

মোদী বাবুর আমলে বেকারত্বের হার গত ৪৫ বছরে সর্বোচ্চ। আমরা বাংলায় ৪০% বেকারত্ব কমিয়েছি।

আমরা হোম ট্যুরিজমের ওপর জোর দিচ্ছি। এর ফলে অর্থনীতির উন্নতি হবে। আমরা লক্ষ লক্ষ মুরগী হাঁসের ছানা দিয়েছি মেয়েদের ক্ষমতায়নের জন্য। যাতে তারা পোলট্রি তৈরী করে আয় করতে পারে, সরকার সেই জন্য অনেক সাবসিডি দিচ্ছে। অনেক কাজ হয়েছে।

বিজেপি একটা অপদার্থ দল। ওদের কাজ শুধু দাঙ্গা করা, মানুষে মানুষে ভাগাভাগি করা আর মানুষের ওপর অত্যাচার করা।

আমি কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সম্মান করি। একজন অবসরপ্রাপ্ত অফিসার (মালদা দক্ষিণের বিজেপি প্রার্থীর স্বামী) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে বসে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগ করছে। নিয়ম মেনে সংবিধান অনুযায়ী কাজ করুন। গ্রামে ঢুকে, বুথে ঢুকে লোক মারতে যাওয়া আপনার কাজ নয়। কাকে ভয় পাচ্ছেন? যে যা ইচ্ছে বলছে তাদের কথা শুনে চলা আপনাদের কাজ নয়। আইন শৃঙ্খলা রাজ্য পুলিশের বিষয়। সংবিধান অনুযায়ী কাজ করুন, ভয় পাবেন না।

শুধু বড় বড় কথা। শুধু চমকাচ্ছে, ধমকাচ্ছে, একটাও টাকা দেয় না, আর নির্বাচনের সময় ভোট চাইতে আসে।

বাংলায় সিপিএম আর বিজেপি এক, তাই সিপিএমকে ভোট দিয়ে বিজেপিকে আর শক্তিশালী করবেন না। মানুষকে ভালো রাখতে হলে বিজেপিকে উৎখাৎ করতে হবে।

একটা বুড়ো খোকা দেশ ভাঙলে তাকে ভোট দিয়ে দেশ থেকে উৎখাত করতে হয়।

আচ্ছে দিনের নাম করে নোট বাতিল করেছে। রান্নার গ্যাস, পেট্রোল ডিজেল সব কিছুর দাম বাড়িয়েছে। দলিত, আদিবাসী, তপশিলি, সাংবাদিক, পুলিশ, সাধারণ মানুষ সহ সকলকে খুন করছে সকলের ওপর অত্যাচার করছে।

আগের বার নির্বাচনের সময় লোককে ধোঁকা দিয়ে বলেছিল উনি চা-ওয়ালা আর এখন হয়েছে চৌকিদার। কিন্তু মানুষ বলছে ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’

সোশ্যাল মিডিয়ার যেমন ভালো দিক আছে, তেমন খারাপ দিকও আছে। কোনও কুৎসা অপপ্রচার নয়, সোশ্যাল মিডিয়া ফেকবুক দেখে খারাপটা নয়, ভালোটা নেবেন