মে ১১, ২০১৯
বিজেপি আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছেঃ হাড়োয়ায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ উত্তর ২৪ পরগণা জেলার হাড়োয়ায় নির্বাচনী জনসভা করেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাড়োয়া বসিরহাট লোকসভার অন্তর্গত।
তিনি বলেন, বিজেপির একজন নেতা বলছে ওরা ১০টি আসন জিতবে। আর একজন বলছে ২৩ টি আসন। আর গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসে বলেছেন ৪২ টি আসনই ওরা জিতবে। সব জায়গায় হারবে তাই তাই এসব বলছে। ওরা আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে।
ওনার বক্তব্যের কিছু অংশঃ
বসিরহাটকে নতুন স্বাস্থ্য জেলা ও পুলিশ জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আগামিদিনে বসিরহাট ও সুন্দরবন নতুন জেলা করা হবে, পরিকল্পনা চলছে। এই জেলা হয়ে যাওয়ার পর বসিরহাটের মানুষকে আর প্রশাসনিক কাজের জন্য বারাসাত যেতে হবে না
বিজেপির একজন নেতা বলছে ওরা ১০টি আসন জিতবে। আর একজন বলছে ২৩ টি আসন। আর গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসে বলেছেন ৪২ টি আসনই ওরা জিতবে। ওদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে, মাথার ঠিক নেই। ওরা আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে তাই এসব বলছে। সব জায়গায় হারবে তাই এখন বাংলায় ঘুরে বেড়াচ্ছে
বাংলায় বিজেপি-সিপিএম আর কংগ্রেস এক। পঞ্চায়েত নির্বাচনেও ওরা একসাথে কাজ করেছে। নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা একমাত্র তৃণমূল কংগ্রেসেরই আছে, আর কোন দলের নেই
সারা দেশকে ভয় দেখিয়ে চুপ করিয়ে রেখে। কোন মিডিয়া একটাও কথা বলতে পারে না। সব ইন্সটিটিউশনগুলোকে দখল করে নিয়েছে সিবিআই থেকে ইডি, নালন্দা থেকে কন্যাকুমারি সব আরএসএস আর বিজেপির দখলে।৫ বছরে ওরা এসব করেছে, দাঙ্গা আর ভাগাভাগি করেছে। ৫ বছরে কাউকে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান কিছুই দেয়নি
বসিরহাটের মানুষ দাঙ্গা করেনি। বিএসএফ বর্ডার এলাকা থেকে বহিরাগতদের ঢুকতে দিয়েছে, তারা এসে এখানে দাঙ্গা করেছে
হঠাৎ করে উনি নোটবাতিল করে দিলেন। ৩ কোটির বেশি মানুষ বেকার হয়ে গেল। কৃষি, শিল্প, ব্যবসা সব বন্ধ হয়ে গেল, ১২০০০ কৃষক আত্মহত্যা করল, ১০০ জন ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়ে মারা গেল। ওনাকে এর জবাব দিতে হবে
জনধন যোজনা বড় কেলেঙ্কারি, রাফাল আরও বড় কেলেঙ্কারি। কার টাকা কোথায় গেল কেউ জানে না। সব টাকা বিজেপির লকেদের কাছে চলে গেছে, ওরা লুঠ করেছে। ৫ বছরে ওরা শুধু পেট্রোল-ডিজেল আর জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়েছে। মূল্যবৃদ্ধি কেন্দ্রের বিষয়
গো-রক্ষার নামে ওরা উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত আর রাজস্থানে মানুষ মেরেছে। কিন্তু আমরা বাংলায় কারো গায়ে হাত দিতে দিইনি। কারণ এটা আমাদের রাজনীতি নয়। ওরা ভয়ঙ্কর ফ্যাসিস্ট অত্যাচারী রাজনৈতিক দল
নেতাজী প্ল্যানিং কমিশন করেছিলেন, আর নরেন্দ্র মোদী এসেই প্ল্যানিং কমিশন তুলে দিলেন কাউকে না জিজ্ঞেস করে, এটা নেতাজির অপমান নয়? তারপর নিজের ইচ্ছেমতো নীতি আয়োগ করলেন, না আছে নীতি না আছে আয়োগ। সেখানে কোন রাজ্য কোন প্ল্যানিং করতে পারে না, কেউ নিজেদের কথা বলতে পারে না
উনি বাংলায় এসে বলছেন বাংলার জন্য টাকা দিয়েছেন। উনি নিজের পকেট থেকে টাকা দিচ্ছেন? বাংলা থেকে ইনকাম ট্যাক্স, সেস, কাস্টমস দেখিয়ে হাজার হাজার কোটি কোটি টাকা তুলে নিয়ে যায়, আর রাজ্যের প্রাপ্য টাকা দেয় না। ওনার কোন লজ্জা নেই, জনগণের টাকা লুঠ করে নিজেদের টাকা বানিয়েছেন
যখন বাংলায় সাইক্লোন এসেছিল তখন আমি খড়গপুরে বসেছিলাম আর উনি তখন রাজস্থানে সভা করছিলেন। আর একটা ফোন করে নিউজ করে বলেছে আমি নাকি কথা বলিনি। উনি আমার মোবাইল নম্বর জানেন না? আমার সব কোল লিস্ট মেসেজ তো ওনারা ট্যাপ করেন
নির্বাচনের সময় কেন আমি ওনার সাথে মিটিং করব? উনি আমাকে না ডেকে মুখ্যসচিবকে ডেকে পাঠিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রিকে বাদ দিয়ে উনি মুখ্য সচিব আর অফিসারদের সঙ্গে মিটিং করছেন। এটা বেআইনি, আসাংবিধানিক। মুখ্যমন্ত্রী মে মানুষ নির্বাচিত করেছে, তাকে বাদ দিয়ে উনি এসব করতে পারেন না। কি audacity ওনার?
আগে যখন বন্যা হয়েছে, ক্ষরা হইয়েছে আমি ৬-৮ বার ওনার সঙ্গে দেখা করেছি, সাহায্য চেয়েছি। আমি নীতি আয়োগের মিটিং এও গেছি কিন্তু মোদী বাবু আমার কোন কথা শোনেনি
আমরা চেয়েছিলাম রাজ্যের নাম বাংলা করতে। আমাদের রাজ্যের নাম W দিয়ে শুরু; সব ক্ষেত্রে আমাদের অনেক পিছিয়ে থাকতে হয়। ওরা সেটাও করতে দেয়নি, ৩ বছর ধরে ফেলে রেখে দিয়েছে। যদি পাকিস্তান আর ভারতে পাঞ্জাব নামের ২ টো রাজ্য থাকতে পারে তাহলে বাংলাদেশের পাশাপাশি বাংলা কেন থাকবে না?
দেউচা পাচামি প্রকল্প ২ বছর হয়ে গেল, উনি একটা সই করার সময় পেলেন না। ভোর সাগরের কাজ এখনও শুরু করেনি, তাজপুর বন্দর করে দেয়নি। ওরা বাংলাকে শুধু বঞ্চনা করেছে আর এখানে দাঙ্গা করেছে
অনেক অজানা লোক এখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে, খেয়াল রাখুন। বাংলার নির্বাচনের সময় কেন বহিরাগতরা আসছে? আমি সবাইকে সতর্ক করছি – ওরা টাকা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, টাকা দিয়ে ক্ষতি করে চলে যাবে
ওরা বলছে আমরা নাকি গরু পাচার করি। আমরা ওসব করি না। বিএসএফ বর্ডার এলাকা সামলায়। উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান থেকে গরু বাংলায় কিভাবে ঢুকছে? বিএসএফ কি করছে? ওরা কেন এসব করতে দেয়? বিএসএফ, সিআরপিএফ, সিআইএফ কেন্দ্রীয় সংস্থা। আমার কাছেও পেন ড্রাইভ আছে কে গরু পাচার করছে তার, এই মিডিয়া ভীতু এরা কেউ সেই রিপোর্ট করবে না
ওনার ভাষা শুনলে ধিক্কার দিতে ইচ্ছে করে
বাইরে থেকে লোক আসছে ব্যাগ ভর্তি, বাক্স ভর্তি, প্লেন ভর্তি, হেলিকপটার ভর্তি টাকা নিয়ে। বিজেপির কথা শুনে কাজ না করে বিএসএফ এর উচিৎ এইসব কাজ বন্ধ করা
আসাম থেকে একজন মন্ত্রী (যিনি সাদার থাকা লুঠ করেছেন) এসে বলছেন উনি সিআরপিএফ কে ম্যানেজ করবেন
বাইরে থেকে সব নেতারা বাক্স ভর্তি করে টাকা নিয়ে আসছেন। আমরাও নজর রাখছি, রাত জেগে পাহারা দিচ্ছি। ওরা এখন তাই জেড প্লাস, ওয়াই প্লাস পুলিশের গাড়ি করে টাকা আমদানি করছে
কলকাতার পুলিশ কমিশনার বদল করল কারণ এই সব জায়গায় হাওয়ালা হলে যাতে ধরতে না পারে। বিমানবন্দরে টাকার বাক্স নিয়ে নামলে যাতে ধরতে না পারে তাই কলকাতা আর বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট বদল হল
আমি আমার সব অফিসারদের নির্দেশ দিয়েছি আমার গাড়ি, হেলিকপ্তার সব কিছু চেক করার। পাশাপাশি সব দিল্লীর নেতাদের গাড়িও চেক করবেন। প্রধানমন্ত্রীর হেলিকপ্টার থেকে একবার কালো বাক্স বের করার ছবি ধরা পরে গেছিল তাই এখন উনি যেখানে প্লেন বা হেলিকপ্টার থকে নামেন সেখানে কেন প্রেসকে ঢুকতে দেন না, ক্যামেরা ঢুকতে দেন না
গুণ্ডামি আর দাঙ্গা করে ওনার হাতেখড়ি। ওনার হাতে মানুষের রক্ত লেগে আছে। অটল জি ওনাকে বলেছিলেন ‘রাজধর্ম করতে শেখ’
উনি ইতিহাস বদলে দিয়েছেন, সংবিধান বদলে দিয়েছেন। সব ইন্সটিটিউশন, মিডিয়াকে কন্ট্রোল করে নিয়েছেন
আমি আমার জীবন দিতে রাজি কিন্তু আমি বাংলা ভাগ করতে দেব না। আমরা সবাই মিলেমিশে একসাথে থাকব। এটাই তৃণমূল জোড়াফুলের আদর্শ
ওরা অনেক টাকা নিয়ে নেমেছে, অনেক টাকা বিলোচ্ছে। ওরা আবার এসে এখানে সভা করে মিথ্যে কথা বলবে, উত্তেজনা ছড়াবে, প্ররোচনা দেবে, হিন্দু মুসলমানে ভাগাভগি করবে। ওদের মিথ্যে ফাঁদে পা দেবেন না। ওরা দেশের সর্বনাশ করে দিয়েছে, ওদের নেতাদের দেখে মানুষ শ্রদ্ধা করে না ভয় পায়
এনআরসি করে অসমে ২২ লক্ষ হিন্দু বাঙালি, ২০ লক্ষ মুসলিমের নাম বাদ দিয়ে দিয়েছে। আমরা বাংলায় এনআরসি করতে দেব না। নাগরিক বিলের নাম করে ওরা মানুষকে বিদেশি বানিয়ে দেবে
মোদী নিরামিষাশী তাই ওরা জোর করে সবাইকে নিরামিষ খেতে বাধ্য করছে। এয়ার ইন্ডিয়ার সব খাবার নিরামিষ করে দিয়েছে। গায়ের জোরে যা ইচ্ছে তাই করছে
নেতাজীর জয় হিন্দ আমাদের স্লোগান। বন্দে মাতরম, মা মাটি মানুষ জিন্দাবাদ, জয় বাংলা আমাদের স্লোগান। মোদীর স্লোগান আমি মরে গেলেও বলব না