মে ১০, ২০১৯
বিজেপির নেতারা পুলিশের গাড়িতে করে টাকার বাক্স নিয়ে যাচ্ছে: অশোকনগরে বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ বারাসাত লোকসভা কেন্দ্রের অশোকনগরে এক নির্বাচনী সভা করেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ন্যাশানাল মিডিয়া এখন মোদী বাবুর মাউথ পিস, তোতা পাখি। মোদী যা বলবে, ওরাও তাই বলবে।
তিনি অভিযোগ করেন, সিআরপিএফ, সিআইএসএফ, জেড প্লাস, ওয়াই প্লাসের সুযোগ নিয়ে বিজেপির নেতারা পুলিশের গাড়িতে করে টাকার বাক্স নিয়ে যাচ্ছে। আর নির্বাচনের আগে সেই টাকাগুলো সমাজের দুষ্কৃতীদের বিলিয়ে দিয়ে বলা হচ্ছে ভোট লুঠ করতে।
তাঁর বক্তব্যের কিছু অংশঃ
কেন নির্বাচনে এত টাকা খরচ হবে? কেন হাওয়ালার মাধ্যমে এত টাকা এধার ওধার যাচ্ছে? কালকেও আপনারা দেখেছেন বিজেপির এক প্রার্থী কয়েক কোটি টাকা নিয়ে ধরা পড়েছে। আজকেও শুনলাম সিআরপিএফ, সিআইএসএফ, জেড প্লাস, ওয়াই প্লাসের সুযোগ নিয়ে বিজেপির নেতারা পুলিশের গাড়িতে করে টাকার বাক্স নিয়ে যাচ্ছে।
আর নির্বাচনের আগে সেই টাকাগুলো সমাজের দুষ্কৃতীদের বিলিয়ে দিয়ে বলা হচ্ছে ভোট লুঠ করতে।
আমরা যখন কোথাও হেলিকপ্টার থেকে নামি নির্বাচনের সময়, যে কেউ ছবি তুলতে পারে। কিন্তু, নরেন্দ্র মোদী যে জায়গাতে নামছে, সেখানে কোনও সংবাদমাধ্যমকে ঢুকতে দেওয়া হয় না কেন? এমনকি নির্বাচন কমিশনের ফটোগ্রাফাররাও ঢোকে না। একদিন বেরিয়ে গেছিল যে ওখান দিয়ে বাক্স যাচ্ছে।প্রচারের পরেই রাতে টাকা বিলি করা হচ্ছে। বাক্স ছড়িয়ে বাংলায় ভোটে জেতা যায় না।
বিজেপির কাছে এত টাকা এল কোথা থেকে? এটা কি নোটবাতিলের টাকা? রাফেল থেকে কত টাকা কামিয়েছেন? জন ধনের নামে কত টাকা করেছেন? জবাব দিতে হবে।
নোটবাতিল করলেন রাত্তির আটটায়। পরের দিনেই সব কাগজে পেটিএম বিজ্ঞাপন দিল কিকরে?
ন্যাশানাল মিডিয়া এখন মোদী বাবুর মাউথ পিস, তোতা পাখি। মোদী যা বলবে, ওরাও তাই বলবে।
বিদেশী টাইম পত্রিকায় দেখলাম মোদীকে বলছে বিভাজন করা প্রধানমন্ত্রী।
গরমের মাত্রা বেড়ে চলেছে। কাল বাঁকুড়ায় যা গরম ছিল, আজ এখানেও দেখছি সেই একই গরম। এর মাঝেও যে হাজার হাজার মা ভাই বোনেরা এখানে এসেছেন, তাতে বোঝা যায় তৃণমূল ৪২ শে ৪২ পাবে। আমাদের লোক আনতে কনট্রাক্টর লাগে না।
দেশের নেতা সে হয় যাকে দেশের মানুষ ভালবাসে। মোদীবাবু পাঁচ বছর প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তাঁকে কেউ ভালবাসে না।
নির্বাচনের আগে সব দলই ইস্তেহারে প্রতিশ্রুতি দেয়। বিজেপি বলেছিল পাঁচ বছরে ১০ কোটি চাকরি দেবে, সকলের অ্যাকাউন্টে ১৫লক্ষ করে টাকা দেবে। কিছুই করেনি। মোদী বাবুর পাঁচ বছরে দেশে ৪৫ বছরের মধ্যে সবথেকে বেশী বেকার বেড়েছে। সেখানে বাংলায় একমাত্র ৪০ শতাংশ বেকার কমেছে।
এটা বাংলার নির্বাচন নয়। আমাদের নির্বাচন হলে আমরা বলব আমরা কি কাজ করেছি। এটা দিল্লীর নির্বাচন। আপনার দেশের কাছে জবাব দেওয়া উচিৎ আপনি কি করেছেন? সেখানে মোদী বাবু বলছেন বাংলায় কিছু হয়নি।
অশোকনগরে একটা ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট তৈরী হচ্ছে ৫০ একর জমিতে। ওটা হলে ওখানে ২০ হাজার ছেলেমেয়ের কর্মসংস্থান হবে।
আর্সেনিক মুক্ত জল থেকে ঝকঝকে রাস্তা, হাসপাতাল থেকে সেতু, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পলিটেকনিক কলেজ আমাদের সরকার সবই করেছে।
এখানকার প্রার্থী কাকলি ঘোষ দস্তিদার সংসদে পেট্রোল ডিজেলের দাম বাড়ার, গোরক্ষার নামে লিঞ্চিঙ্গের, দলিতদের ওপর অত্যাচারের প্রতিবাদ করেছে। তৃণমূলের সব সাংসদরাই প্রতিবাদ করেছে।
একটা ওয়ার্ডের পৌরপিতা হওয়ার যোগ্যতাও প্রধানমন্ত্রীর নেই।
মোদী বাবু টেলিপ্রম্পটার দেখে দেখে ভাষণ দেন। আমি ওনাকে চ্যালেঞ্জ করছি কোনও টেলিপ্রম্পটার ও কাগজ না দেখে যে কোনও চ্যানেলে আমার সঙ্গে মুখোমুখি তর্কে বসতে।
প্ল্যানিং কমিশন ছিল নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু মস্তিষ্ক প্রসূত। মোদী বাবু সেটা তুলে দিয়ে আরএসএসের কজনের সঙ্গে নিতি আয়োগ খুলেছে।
মোদী বাবু শুধু বোঝেন দাঙ্গা, লিঞ্চিং আর গোরক্ষা।
তিনি নোটবাতিল করে বলেছিলেন এতে সন্ত্রাসবাদ শেষ হবে। কি হল? ওনার আমলে সন্ত্রাসবাদ ২৬০ শতাংশ বেড়েছে।
বঙ্গভঙ্গের সময় কবিগুরু সম্প্রীতির জন্য রাখী বন্ধন শুরু করেন। আর আজ বিজেপি ধর্মের নামে মানুষকে ভাগ করছে।
আমি যখন পুরীর মন্দিরে পুজো দিতে গেছিলাম, আমায় মন্দিরে আটকাতে চেষ্টা করেছিল। আমাকে শিকাগোতে স্বামীজির বক্তৃতার ১২৫ বছরের অনুষ্ঠানে যেতে দেয়নি। দিল্লীর সেন্ট স্টিফেন্স কলেজে বক্তৃতা দিতে দেয়নি।
আমি অনেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাজ করেছি। কিন্তু, এরকম মিথ্যেবাদী প্রধানমন্ত্রী কখন দেখিনি।
বিজেপি বাংলায় এসে বলছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখানে দুর্গা পুজো করতে দেয়না। রাজ্য সরকার যখন ২৮ হাজার দুর্গা পুজো কমিটিকে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করল, ওরা কোর্টে গিয়ে মামলা করল। ৪০টা দুর্গা পুজো কমিটিকে আয়কর দপ্তর নোটিশ দিচ্ছে।
ওরা নিজেদের হিন্দু ধর্মের ধারক ও বাহক বলে, ওরা মা কালির সব কটা রূপের নাম করতে পারবে? ওরা কোনও পুজোর মন্ত্র জানে? আমরা সব মানুষ মিলে মিশে বাস করি, এটাই আমাদের সংস্কৃতি। এখানে সব ধর্মের উৎসব হয়। আমরা কেন বিজেপির সংস্কৃতি নেব?
নির্বাচন কমিশন এখানে যে পর্যবেক্ষক পাঠিয়েছে সে অবসরপ্রাপ্ত। ওরা এখানে ১০০ শতাংশ বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করাচ্ছে। ওরা যাই করুক, মানুষ তৃণমূলের সঙ্গে আছে।
উনি বলছেন আমি নাকি তাকে থাপ্পড় মারব বলেছি। অনার আগে আমাদের ভাষা বোঝা উচিৎ। আমি বলেছি আমরা ওনাকে গণতন্ত্রের থাপ্পড় দেব। গণতন্ত্রে একটি ভোট মানে একটি থাপ্পড়। মানুষ তাদের ভোটের মাধ্যমে অনাকে থাপ্পড় মারবেন।
দাঙ্গা চাইনা, গুন্ডামি চাই না, অশান্তি চাইনা। আমরা শান্তি, উন্নয়ন চাই।