সাম্প্রতিক খবর

মার্চ ৪, ২০২০

এদেশে গণহত্যা করার অধিকার বিজেপিকে কে দিল?ঃ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

এদেশে গণহত্যা করার অধিকার বিজেপিকে কে দিল?ঃ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বুনিয়াদপুরে একটি জনসভা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই সভা থেকে তিনি সিএএর বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়ার আহ্বান জানান।

মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের কিছু বিষয়ঃ

মানুষের বিপদে মানুষের পাশে সবসময় থাকে তৃণমূল কংগ্রেস

দিল্লীর মতন একটা ছোট মিউনিসিপালিটি সেখানে শুধু মৃতদেহের পাহাড়, নালার মধ্যে মৃতদেহ ভেসে উঠছে, প্রাণের আশঙ্কায় হাজার হাজার মানুষ ঘরছাড়া, এখনও পায় ৭০০ মানুষ নিখোঁজ, অনেক মৃতদেহ শনাক্ত করা যায়নি। ৫০ টির বেশী মৃতদেহ পাওয়া গেছে, আর যাদের খোঁজ পাওয়া জাছহে না তারা হিন্দু না মুসলমান না এ এশের নাগরিক এর উত্তর বিজেপিকে দিতে হবে

বিজেপি শুধু ঘৃণার রাজনীতি করে, দিল্লীর মতন একটা ছোট মিউনিসিপালিটির মতন জায়গায় গণ্ডগোল থামাতে পারছে না। একটার পর একটা মানুষ খুন হয়ে যাচ্ছে। আর বাংলায় কিছু না হতেই চিৎকার করে বেড়ায়। লজ্জা করে না বাংলার কথা বলে
কাশ্মীর থেকে বাঙালি শ্রমিকদের মৃতদেহ এল। ১৩০ জনকে কাশ্মীর থেকে ট্রেনে করে নিয়ে এসেছিলাম, তাদের আর্থিক সাহায্য করা হয়েছে। নোটবন্দির সময় অনেকের চাকরি চলে গিয়েছিল, আমরা আর্থিক সাহায্য করেছিলাম।

করোনা একটি রোগ যা নিয়ে সারা পৃথিবী চিন্তিত। প্যানিক করবেন না। নিশ্চয়ই সতর্ক করবেন। কিন্তু কোন কোন চ্যানেলে আমি দেখছি, দিল্লীর আসল ঘটনাকে ভুলিয়ে দেওয়ার জন্য করোনা সংক্রান্ত প্রচার চালানো হচ্ছে। দিল্লীতে যে মানুষ গুলো মারা গেল তারা কিন্তু করোনার মতন মারণ রোগে কিংবা বিজেপির ডেঙ্গু বা সোয়াইন ফ্লু তে মারা যায়নি। জ্যান্ত মানুষগুলোকে পুড়িয়ে মেরে ফেলল। একবারও ক্ষমা চাইল না এত অহংকার। উল্টে মিছিল করে বলছে গোলি মারো
বাংলা আর দিল্লী এক নয়, বাংলা আর উত্তরপ্রদেশ এক নয়, বাংলা আর বিজেপি রাজ্য এক নয়। বিজেপি ত্রিপুরা, আসামে জিতে আদিবাসীদের অপর অত্যাচার করছে, ঝাড়খণ্ডে যখন ক্ষমতায় ছিল আদিবাসীদের জমি কেড়ে নিয়েছিল। আর বাংলায় আদিবাসীদের জমি কেউ যাতে কেড়ে নিতে না পারে সেজন্য আইন চালু করা হয়েছে। এটাই ওদের সাথে আমাদের তফাৎ
মানুষ ভালো থাকলে তবেই আমরা ভালো থাকব। আজ ক্ষমতায় থেকেও আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে হচ্ছে। তবু বাংলা মাথা নত করে না।

যাদের হৃদয়ে সুর নেই তার কণ্ঠ তর্জন গর্জন আর খুনের কথা বলে, তারা দেশের আতঙ্ক তাদের মানুষ কখনো ভালোবাসে না।
গণতন্ত্রকে আমাদের শক্তিশালী ও সমৃদ্ধশালী করতে হবে।

বিজেপি-সিপিএম-কংগ্রেস পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনেও জোট বেঁধেছিল আবার এখন জোট বাঁধছে। বিজেপির নেতা বলছে বাংলায় ২৯৪ টি আসন কিন্তু ওরা টার্গেট করবে ২০০ টি আসন, মানে সিপিএম-কংগ্রেসের আসনগুলোকে ছেড়ে দিয়ে টার্গেট শুধু তৃণমূল।

বাংলায় এসে যারা গোলি মারো স্লোগান দিয়েছিল তাদের পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এখানে কোনরকম অন্যায় সহ্য করা হবে না।

বলছে গদ্দারদের গোলি মারো – কে গদ্দার? গদ্দারদের সর্দার কারা? কে দেশ বিক্রি করছে? কারা ভাগাভাগি করছে? কারা এনপিয়ার, এনআরসি, ক্যা ক্যা করে চিৎকার করছে? আগে দিল্লী সামলাও তারপর বাংলা নিয়ে ভেবো।

কয়েকজন মিথ্যে মিথ্যে আমার বক্তৃতাকে distort করছে, আমার বক্তব্য পুরোটাই রেকর্ড হয়। আমি গতকাল একবারও বলিনি যারা বাংলাদেশে আছে তারা সবাই আমাদের দেশের নাগরিক। যারা বাংলাদেশে আছেন তারা বাংলাদেশের নাগরিক, যারা ভারতে আছেন তারা ভারতের নাগরিক। কিন্তু একটা ইতিহাস মনে রাখতে হবে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ভারতবর্ষ আর পাকিস্তান এক ছিল, দেশ ভাগের পর অনেকে পাকিস্তান আর বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে এসেছিল তখন নেহেরু-লিয়াকত চুক্তি হয়েছিল, সেই চুক্তি অনুযায়ী তখন যারা বাংলাদেশ থেকে এসেছিল তারা ভারতীয়। আর ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তখন যারা এপারে এসেছিল ইন্দিরা গান্ধী আর শেখ মুজিবর রহমানের চুক্তি অনুযায়ী তারাও এদেশের নাগরিক, আমি তাদের কথাই বলেছি। কোন জিনিস যথাযথভাবে স্টাডি করে করবেন, নাহলে আমার কথা distort করা হলে আমি Law will take it’s own course।

আমাদের সরকার উদ্বাস্তুদের জমি ফিরিয়ে দিয়েছে, বাংলায় পানীয় জলের জন্য কোনও টাকা দিতে হয় না।

আগামীকাল মালদায় তিনশো আদিবাসী মেয়ের গণবিবাহ করানো হবে। সেখানে আমরা সমস্ত আয়োজন করেছি এবং সেখানেই রুপশ্রীর টাকা তাদের তুলে দেওয়া হবে।

আমরা নিজেদের রাজ্যের জনসেবামূলক প্রকল্প চালাতে কেন্দ্রের ভিক্ষা নিই না।

আমরা চাষির থেকে চাল কিনে মানুষকে ২ টাকা কিলো দরে দিই। এতে চাষিও উপকৃত হয়, মানুষও উপকৃত হয়।

সরকারি পরিষেবা না পেলে জেলাশাসককে অভিযোগ জানান।

দারিদ্র দূরীকরণে বাংলা এক নম্বরে আছে। বিজেপির কাছে এর কোনও জবাব আছে? বিজেপির থোঁতা মুখ ভোঁতা করে দেওয়ার জন্য মানুষই যথেষ্ট। গণতন্ত্রের মাধ্যমে তারা সেটা করবে।

দেশে আজ বেকারের সংখ্যা সবথেকে বেশী। কারখানা বন্ধ, আগামী দিনে ব্যাঙ্কে রাখা টাকা পাবেন কিনা নিশ্চয়তা নেই, রেল বিক্রী করে দিচ্ছে, বিএসএনএল এয়ার ইন্ডিয়া বিক্রী করে দিচ্ছে।

পারিবারিক সূত্রে জন্ম থেকেই আমাদের নাম, পদবী আছে। বিজেপির ওপরে হিন্দু, আর অসমে হিন্দু হঠাও। বাঙালী ও রাজবংশীর মধ্যে ঝামেলা লাগাচ্ছে। আমি কি খাবো, সেটাও ওরা ঠিক করে দিচ্ছে। বিমান থেকে আমিষ উঠিয়ে দিচ্ছে।

সবাইকে ক্যার ভয় দেখাচ্ছে। যারা উদ্বাস্তু, তারা আগে থেকেই আছে, নতুন করে আইনের কি দরকার ছিল? এনপিআর সিএএ এনআরসি এক বৃন্তে তিনটে কুসুম, একতার সঙ্গে আরেকটা জড়িত। বিজেপির নেতারা বাবার জন্মস্থান, জন্মতারিখের প্রমাণ চাইলে দিতে পারবে না, তাহলে অন্যকে চাইছ কেন? আমি ভারতকে ভালোবাসি কিনা, তোমায় প্রমাণ দিতে হবে?

যারা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করলো, তারাই ভাবছে এদেশে থাকতে পারবে কিনা। এরা স্লোগান দিচ্ছে গোলি মারো। কেউ এরকম স্লোগান দেয় না। বিজেপি আমাদের হিন্দু ধর্ম শেখাবে? আমরা পুজো করি না?

বিজেপি কৈফয়েত দিক, এদেশে গণহত্যা করার অধিকার তাদের কে দিল? মানুষ বিচার চাইবেই। বিচার হবেই আজ নয় কাল। দিল্লীর গণহত্যা হল কেন? জবাব চাই জবাব দাও। এই দেশে বিজেপির স্থান নেই। জোট বাঁধুন, শক্তিশালী হোন। আমার নেতা জনগণ, জনগণের নেতা জোড়া ফুল।