মার্চ ৩, ২০২০
ওদের কাজ আগুন জ্বালানো আর আমাদের কাজ আগুন নেভানোঃ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ কালিয়াগঞ্জে এক পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বক্তব্য রাখেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্যের কিছু অংশ:-
বিজেপি লোকসভা নির্বাচনে জেতার পরেও আপনারা তাদের হারিয়ে দিয়েছেন। আমরা আপনাদের এই হিম্মতকে প্রণাম জানাই, সালাম জানাই। যতদিন মা মাটি মানুষের দল সরকারে থাকবে ততদিন মানুষের উপর কোনও অত্যাচার আমরা হতে দেব না। আর মানুষে মানুষে ভেদাভেদ করতে দেব না। যাতে গরিব মানুষ মাথা তুলে দাঁড়ায় তার জন্য আমরা সাহায্য করব।
আপনারা সবাই এদেশের নাগরিক। বিজেপির মিথ্যে কথায় ভুলবেন না। আপনি ভোট দেন, আপনার রেশন কার্ড আছে, আপনার ভোটার কার্ড আছে। জন্মের প্রমাণপত্র হিসেবে ভোটার কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, বাড়ির ঠিকানা আছে, এর জন্য নতুন করে বিজেপির কার্ডের কোনও প্রয়োজন নেই।
যারা যারা বাংলাদেশ থেকে এসেছে, তারা নাগরিকত্ব পেয়েছে। নতুন করে দেওয়ার কি আছে? নাগরিক মানে তো জনগণ। সবাই ভোট দিয়েছেন? ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, বিধানসভা, জেলাপরিষদ নির্বাচিত করবেন আর ওরা বলবে আপনি নাগরিক নন, এটা আপনারা বিশ্বাস করবেন না। আপনারা সবাই নাগরিক। এখান থেকে কাউকে তাড়াতে দেব না। বাংলা থেকে একটা মানুষকে তার অধিকার কাড়তে দেব না।
রাজবংশী ভাইবোনেরা আপনারাও যারা ৬০বছরের আছেন অথচ কোনও পেনশন পান না, তারাও কিন্তু পেনশন পাবেন। আপনাদের জন্য আমি রাজবংশী অ্যাকাডেমি করে দিয়েছি। পঞ্চাননবর্মা ইউনিভার্সিটি করে দিয়েছি। আমি আপনাদের ভাষায় বই তৈরি করছি। আমরা রাজবংশী ভাষা, কূর্মি ভাষা, কুর্মালি ভাষা, কুজুর ভাষা, চাবাগানে অনেক ভাষা আছে সেগুলোককে স্বীকৃতি দিয়েছি। আমরা হিন্দি ভাষা, উর্দু ভাষা অলচিকি, গুরুমুখি, নেপালি ভাষাকে স্বীকৃতি দিয়েছি। রাজবংশী ভাইবোনেরা আপনারা চিন্তা করবেন না, আপনাদের পাশে আমাকে সব সময় পাবেন। আপনার পরিবার মানে আমার পরিবার।
আসামে কি চলছে দেখেছেন? নির্বাচনের আগে ওরা বলল, রাজবংশীরা থাকবে বাঙালিদের তাড়িয়ে দেব। ভোট নিয়ে ওরা পালিয়ে গেল। আর আসামে দেখেছেন রাজবংশীকে খুন করতে পেছপা হয়নি আর বাঙালিকেও খুন করতে পেছপা হয়নি। সেখানে রাজবংশীর নাম কাটা গেছে, বোড়ো -র নামও কাটা গেছে, হিন্দুর নামও কাটা গেছে, মুসলমানের নামও কাটা গেছে, বিহারীর নামও কাটা গেছে। আমারা যারা বাংলায় থাকি তারা সম্মানে থাকি, আমরা ভালোবাসায় থাকি, আমরা নিজেরা আমাদের অধিকার নিয়ে বাঁচি।
আমি দুঃখিত দিল্লীতে যা ঘটেছে। অনেক মানুষ মারা গেছে। এখনও নর্দমা থেকে মৃতদেহ পাওয়া যাচ্ছে। অথচ কেন্দ্রীয় সরকার আজও একবার বলল না আমরা লজ্জিত। আমরা মর্মাহত। আমরা দুঃখিত। ক্যা-এর প্রতিবাদ করায় কেন এতো মানুষকে মেরে দেওয়া হল?
এটা বাংলা। দিল্লীতে যা হয় বাংলায় তাই হয়না। কাশ্মীরে যখন গন্ডগোল চলছিল তখন কাশ্মীর থেকে ট্রেনে করে ১৩০জনকে নিয়ে এসেছিলাম।তাদের ৫০হাজার টাকা করেও দিয়েছি এখানে ব্যবসা করার জন্য। উঃ দিনাজপুর, দঃ দিনাজপুর, কালিয়াগঞ্জ-এর অনেকে ছিল। মুর্শিদাবাদ জেলার মানুষ কাশ্মীরে কাজ করতে গিয়েছিল, ৬জনের মৃতদেহ পেলাম আমরা। তাদের পরিবারের টাকা দিয়েছি ও চাকরি দিয়েছি। আমরা সবাইকে বিপদের সময় সাহায্য করি।
আপনার ভোটার কার্ড আছে এটাই আপনার অধিকার। কাউকে অধিকার কাড়তে দেবেন না। আমরা সবাই নাগরিক।
আমরা ভাত চাই, আমরা কর্মসংস্থান চাই, আমরা দাঙ্গা চাই না। আমরা গরিব মানুষকে দাঙ্গার হাত থেকে বাঁচাতে চাই, আমরা দিল্লী চাই না, আমরা ইউপি চাই না। আমরা বাংলা মা চাই। ভাই বোনেরা এই বাংলা মাকে রক্ষা করবেন। আমরা বাংলার মাটিকে কাউকে কাড়তে দেব না। আজ বাংলা যা ভাবে কাল ভারত তা ভাবে। মাগো তোমায় প্রণাম জানাই। শুভেচ্ছা দিও দোয়া দিও, যাতে এইভাবে আমরা সবাইয়ের পাশে থাকতে পারি।
ভাইবোনেরা নজর রাখবেন কেউ বাইরে থেকে এসে যাতে আগুন না লাগাতে পারে, দাঙ্গা না লাগাতে পারে। ওদের কাজ আগুন জ্বালানো আর আমাদের কাজ আগুন নেভানো। আমরা দাঙ্গা চাইনা আমরা শান্তি চাই। আমরা মৃত্যু চাই না। আমরা জীবন চাই। যারা অন্যায় করেছে তাদের বিরুদ্ধে চরমতম শাস্তি চাই।