সাম্প্রতিক খবর

জুলাই ২১, ২০১৯

একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ২১টি বার্তা

একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ২১টি বার্তা

প্রতি বছরের মত এবছরেও আজ শহীদ দিবস উপলক্ষ্যে ধর্মতলায় তৃণমূল কংগ্রেস শহীদ তর্পণের আয়োজন করে। এই সমাবেশের মুখ্য বক্তা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

দেখে নেওয়া যাক ২১শের মঞ্চ থেকে কোন ২১টি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়:

১ . প্রতি বছর এই দিনে বৃষ্টি হয়। কিন্তু আজ সূর্য হাসছে। সূর্য আজ আমাদের তেজ দিচ্ছে, রুখে দাঁড়ানোর শক্তি দিচ্ছে। জাগো, অন্যায়ের কারাগার ভাঙো।

২. আজ কয়েকটা আমাদের সমর্থকরা আসার সময় ওদের বাস থেকে নামিয়ে মারধোর করা হয়। আগামীকাল ওইসব জায়গায় পাল্টা মিছিল হবে।আজ ২৬ বছর ধরে তৃণমূল কংগ্রেস এই বার্ষিক অনুষ্ঠান করে। আপনাদের নেতারা স্টেটমেন্ট দিয়ে বলছে বাস থেকে নামিয়ে মারবে। তৈরি থাকুন, এই একই আচরণ যদি আপনাদের সঙ্গে আমাদের নেতারা করেন, রুখতে পারবেন তো? শুধু বড় বড় কথা। সৌজন্যতা করি তাই বাংলায় ঘুরে বেড়াতে পারেন

৩. উত্তরপ্রদেশে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে ঢুকতে দেয়নি, তৃণমূলের প্রতিনিধি দলকে ঢুকতে দেয়নি। বাংলায় যখন ১৪৪ ধারা জারি করা হলেও ৫০টি গাড়ি নিয়ে জোর করে ঢোকেন

৪. লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা দিয়ে নির্বাচন করেছে – কোথা থেকে এল? দিল্লিতে ফাইভ স্টার হোটেলে পার্টি অফিস, সারা বাংলায় কত ফ্ল্যাট, কত সম্পত্তি কিনেছ নোট বন্দির পরে? জনগণের সব ফিরিয়ে দাও। এক একজন নির্বাচনে কত করে টাকা নিয়েছ? ফিরিয়ে দাও – এটাই আমাদের আন্দোলন। বিজেপি আগে কালো টাকা ফেরত দাও। কোটি কোটি টাকা খরচ করে নির্বাচন করেছে তার হিসেব দাও।

৫. আগামী ২৬ ও ২৭ তারিখ আমরা “বিজেপি কালো টাকা ফিরিয়ে দাও” এই নিয়ে কর্মসূচী করব। প্রত্যেক ব্লকে ব্লকে অনুষ্ঠান হবে। মানুষের যত কালো টাকা নিয়েছে, কাট মানি নিয়েছে সব ফিরিয়ে দিতে হবে

৬. আমরা হিংসা মারামারি গুন্দাগিরি বরদাস্ত করব না। শুধু মিথ্যে কথা আর ধর্ম নিয়ে ভাগাভাগি – উত্তরপ্রদেশে ১০ জন দলিতকে গুলি করে হত্যা করেছে। বাংলায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর সাংবাদিকরা কত আওয়াজ তুলল অথচ রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশে, ত্রিপুরায় কত শতাংশ তা নিয়ে সাংবাদিকরা কোন প্রচার করেনি। কারণ অনেকের রাগ তৃণমূল কংগ্রেসের ওপর, তৃণমূল গরীবের দল তাই সহজেই আক্রমণ করা যায়

৭. কেন্দ্রে আমি অনেক সরকারকে দেখেছি। আজ ভারতবর্ষে গণতন্ত্র নেই। মধ্যরাতে যা ইচ্ছে বিল আনা হচ্ছে, দেখতে দেওয়া হচ্ছে নয়া, কেউ জানে না কি হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামকে নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে, ভয় দেখান হচ্ছে কিন্তু মানুষ এর প্রতিবাদ করবে।

৮. কেন্দ্রে আমি অনেক সরকারকে দেখেছি। আজ ভারতবর্ষে গণতন্ত্র নেই। মধ্যরাতে যা ইচ্ছে বিল আনা হচ্ছে, দেখতে দেওয়া হচ্ছে নয়া, কেউ জানে না কি হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামকে নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে, ভয় দেখান হচ্ছে কিন্তু মানুষ এর প্রতিবাদ করবে।

৯.  কর্ণাটকের সরকার ভাঙতে হবে ঘোড়া কেনাবেচা করে, গোয়া ভাঙতে হবে, রাজস্থান ভাঙতে হবে, মধ্যপ্রদেশ ভাঙতে হবে। এখানে গ্রামসভার সদস্যকে বলছে ২০ লক্ষ দেব, বিধায়ককে বলছে ২ কোটি টাকা আর পেট্রোল পাম্প দেব, টাকা নিয়ে রাজনীতি করা যায়না। এই ভাঙতে ভাঙতে একদিন বিজেপির কোমরটাও ভেঙে যাবে।

১০. আগে ছিল খেলো ইন্ডিয়া এখন হয়েছে বেচো ইন্ডিয়া, সব কিছু বিক্রী করে দাও। এখন বলছে ১.২ লক্ষ কোটি টাকার বিলগ্নীকরন করবে, ৪২টা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বন্ধ করে দাও, বিএসএনএল, চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ, অ্যালায়েড ষ্টীল, বার্ন স্ট্যান্ডার্ডের মজুররা কাঁদছে। তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনকে বলব লাগাতার আন্দোলন করুন।

১১. আমি বানতলায় কর্মদিগন্ত তৈরী করেছি, ৫ লক্ষ মানুষকে চাকরি দেওয়া হবে, ৮০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ করা হচ্ছে। এখানে কানপুর থেকে চেন্নাই থেকে সবাই চাকরি করতে চলে আসছে। বীরভূমের দেওচা পচামিত যা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লা খনি সেখানে কাজ শুরু হবে, সেখানেও ১ লক্ষ মানুষের চাকরি হবে।

১২. ২০১৯ সালের নির্বাচন একটি রহস্য। যে আসন পাবে বলেছিল, সেই আসনই পেল, অঙ্কটা মিলে গেল কি করে? ইভিএম চাই না, ব্যালট চাই। আমেরিকা, ইউকে, ইউরোপীয় দেশে কেন ইভিএমে ভোট হয় না? কেন ব্যালটে হয়?

১৩. বাংলার বদনাম করতে ওরা বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছিল। আমরা মূর্তি তৈরী করেছি। স্বাধীনতা আন্দোলনে পথ দেখিয়েছিল বাংলা। নবজাগরণে পথ দেখিয়েছিল বাংলা। বিধবা বিবাহ চালু করেছিল বাংলা, বাল্য বিবাহ রোধ করেছে বাংলা, ভেদাভেদ ঘুচিয়ে দেওয়া শিখিয়েছে বাংলা। বাংলার সাথে তুলনা করতে যাবেন না। এই বাংলা মাথা নত করবে না। মনিষীদের গায়ে হাত দিলে আমরাও বিপদসীমা অতিক্রম করে যাব। বিজেপি আগে বাংলার সভ্যতা, সংস্কৃতি জানুক, শিখুক।

১৪. ভোট শেষ হতেই শতাব্দী রায়কে, প্রসেনজিতকে ইডি ডাকছে। সোজা বলছে, বিজেপির সঙ্গে এসো, নয়ত, সিবিআই, ইডিকে দিয়ে গ্রেপ্তার করাব। আমাদের দলের এক কর্মীকে বলছে কোনও নেতার নাম বললে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে।

১৫. ২৯শে জুলাই থেকে আমরা জন-সংযোগ কর্মসূচী পালন করব। গ্রামে গ্রামে, স্থানীয় স্তরে, সারা রাজ্যের নেতারা এতে অংশ নেবেন। শহর হোক বা গ্রাম, সকলে একসঙ্গে মিলে মানুষের কাজ করুন। ঐদিন আমরা বুথ স্তরে কর্মসূচী ঘোষণা করব। বুথ স্তরের কর্মীরাই দলের সম্পদ।

১৬. এছাড়া আরও অনেক কর্মসূচী আছে। ২৭ তারিখ নানুর দিবস পালন হবে। ৯ই আগস্ট আমরা বিজেপির অত্যাচারের বিরুদ্ধে ‘ভারত ছাড়ো’ কর্মসূচী পালন করব। ১৪ই আগস্ট মধ্যরাতে আমরা স্বাধীনতা দিবস পালন করব। ২৮ আগস্ট আমরা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস পালন করব। ২ই সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবসে আমরা নিজেদের গুরুদের শ্রদ্ধা জানাব। ২৬শে সেপ্টেম্বর আমরা পন্দির ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ২০০তম জন্মবার্ষিকী পালন করব এবং ওনার জন্মস্থানে যাব। এই দিনটি সারা রাজ্যে বুথস্তরে পালিত হবে। ২রা অক্টোবর আমরা গান্ধীজীর ১৫০তম জন্মবার্ষিকী পালন করব।

১৭. ধর্মীয় অনুষ্ঠানও পালিত হবে। রাখি বন্ধন অনুষ্ঠান পালিত হবে, সেখানে সকল মানুষ ধর্ম বর্ণ জাতি নির্বিশেষে সকলকে রাখি পরাবে। আমরা এখানে ভেদাভেদ করিনা, এখানে সব ধর্মের সব অনুষ্ঠান পালন করা হয়।

১৮. বিজেপি-র দূর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে আমি জয় হিন্দ বাহিনী আর বঙ্গ জননী বাহিনী তৈরি করে দিয়েছি। ওরা কিষাণ, মজদুর, সংখ্যালঘু, তৃণমূল ছাত্র পরিষদ এবং তৃণমূল মহিলা কংগ্রেসের সাথে কাজ করবে। যেখানে যেখানে থেকে মানুষ টাকা নিয়েছে সেসব জায়গা চিহ্নিত করুন।সবাই একসাথে কাজ করুন। আমরা আবার বিজয়ী হব।

১৯. আমি ২৬-এ জুলাই থেকে প্রশাসনিক বৈঠক করব। আগামী তিন মাসের জন্য কর্মসূচী তৈরি করে দেব। আমি সমস্ত মানুষকে যোগ দিতে আহ্বান জানাচ্ছি। কর্মীরা সাধারণ মানুষকে বোঝান আমাদের দলটার আদর্শ আর তাদের কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করুন।

২০. আমরা রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের যতদুর সম্ভব বেতন দিই। ডী এ বাড়ানো হয়েছে ১২৩ শতাংশ। আমরা অনেক কিছুতে আজ এক নম্বর যেমন কৃষি, ১০০ দিনের কাজ ইত্যাদি।

২১. আমি কোনদিন আক্রমণকে ভয় পাই নি। তৃণমূল সবসময় অবিচারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এসেছে। আপনারা ঘুষ নেবেন না তাহলে মানুষ ঠকানো হবে। আপনারা আজ জনগণের সাথে কাজ করার অঙ্গীকারবদ্ধ হোন। প্রত্যেক ব্লকের প্রতিটি বুথে মানুষের সাথে মাথা উঁচু করে কাজ করুন।