জুলাই ১৫, ২০১৮
কৃষি ক্ষেত্রে সামগ্রিক উন্নয়নে ব্রতী মা, মাটি, মানুষের সরকার

২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জোর দিয়েছেন বাংলাকে কৃষিক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ রাজ্য হিসেবে গড়ে তুলতে। এর জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে একদিকে যেমন উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করেছে রাজ্য সরকার, তার পাশাপাশি, কৃষকদের আয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে। চাষযোগ্য জমিতে উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি পতিত জমিকে সেচযোগ্য করে তোলার চেষ্টাও করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি জমির স্বাস্থ্যের প্রতিও নজর দেওয়া হচ্ছে।
দেখে নেওয়া যাক এই মুহূর্তে রাজ্যে ফসল উৎপাদনের হাল হকিকত।
শস্য উৎপাদনের হাল হকিকত
ফসলের উৎপাদন ও কৃষকদের আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে দপ্তর নানা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়েছে। ফসল-নির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে বাড়ানো গেছে উৎপাদন।
কৃষি ও আনুষাঙ্গিক ক্ষেত্রে ব্যয় বেড়েছে ৬ গুনেরও বেশী। ২০১০-১১ সালে ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৩,০২৯ কোটি টাকা, তা ২০১৭-১৮ সালে বেড়ে হয়েছে ২০,২৮৩ কোটি টাকা। ২০১০-১১ সালে কৃষকদের বার্ষিক আয় ছিল ৯১,০০০ টাকা, যা ২০১৭-১৮ সালে বেড়ে হয়েছে ২.৯ লক্ষ টাকা।
চালঃ অল্প খরচে চালের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সিস্টেম অফ রাইস ইন্টেন্সিফিকেশন গ্রহণ করা হয়েছে। রাজ্য সরকার গোবিন্দভোগ ও তুলাইপঞ্জির মত জিআই ট্যাগপ্রাপ্ত সুগন্ধী চালের উৎপাদন ও উৎপাদনের ক্ষেত্র দুইই বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। ২০১০-১১ সালে চালের বার্ষিক উৎপাদন ছিল ১৩৪ লক্ষ মেট্রিক টন, যা ২০১৭-১৮ সালে বেড়ে হয়েছে ১৫৯ লক্ষ মেট্রিক টন।
ডালঃ ধান চাষের জমিকে ডাল চাষের জমি হিসেবে ব্যবহার করায় ডালের উৎপাদন যা ২০১০-১১ সালে ছিল ১.৭৭ লক্ষ মেট্রিক টন, ২০১৭-১৮ সালে বেড়ে হয়েছে ৪.৪৪ লক্ষ মেট্রিক টন।
তৈলবীজঃ এনএমওওপি উচ্চমানের বীজ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী যোগান দিয়ে থাকে, এছাড়া কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় যাতে তৈলবীজের উৎপাদন ও তৈলবীজ উৎপাদনের স্থান বৃদ্ধি পায়। এর ফলে রাজ্যে চাহিদা ও উৎপাদনের মাঝে ব্যবধান কমবে। সূর্যমুখী ও বাদাম উৎপাদনে জোর দেওয়া হয়েছে। ২০১০-১১ সালে তৈলবীজের উৎপাদন হত ৭ লক্ষ মেট্রিক টন, যা ২০১৭-১৮ তে বেড়ে হয়েছে ১১ লক্ষ মেট্রিক টন।
পাটঃ পাট একটি উল্লেখযোগ্য ক্যাশ ক্রপ। ৫.২২ লক্ষ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়। ২০১৬-১৭ সালে ৮১.৮৭ গাঁট পাট উৎপাদন হয়, সেখানে প্রতি হেক্টরে উৎপাদন হয় ১৫.৬৭ গাঁট। ২০১৭-১৮ সালে পাট চাষের জমি বেড়ে হয় ৫.৬০ লক্ষ হেক্টর ও মোট উৎপাদন বেড়ে হয় ৮৪ লক্ষ গাঁট।
আলুঃ রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফসল আলু। ২০১৬-১৭ সালে উৎপাদন ছিল ১৪৪.৪৮ লক্ষ মেট্রিক টন। জোর দেওয়া হয়েছে উন্নতমানের রোগমুক্ত আলুর কন্দ জোগানের।
সুন্দরবনের চাষিদের সুবিধা
৩ লক্ষ ছোট ও প্রান্তিক চাষিদের রাঙ্গালু ও সূর্যমুখীর বীজ, ভেরিকম্পোস্ট দিয়ে সাহায্য করা হয় এবং ১.০৮ লক্ষের বেশী কৃষি যন্ত্র – যেমন পাম্প, স্প্রেয়ার ইত্যাদি – প্রদান করা হয়েছে।
জৈব চাষ
জৈব চাষের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। গত তিন বছরে ১৩টি জেলাতে ১২০টি জৈব ক্লাস্টার গঠন করা হয়েছে।
সয়েল হেলথ কার্ড প্রকল্প
২০১১ সালে এই প্রকল্পের উপকৃতের সংখ্যা ছিল ২২,১৭৭ যা ২০১৭ সালে বেড়ে হয়েছে ৫৩.৪৬ লক্ষ।
এই প্রকল্পের বৈশিষ্ট:
• প্রতি তিন বছরে সমস্ত কৃষককে সয়েল হেলথ কার্ড প্রদান করা।
• ক্ষমতা উন্নয়নের মাধ্যমে মাটি পরীক্ষা কেন্দ্রগুলি শক্তিশালী করা।
• মাটির উর্বরতা বিচার করে সেইমতো সার ব্যবহার করতে নিদান দেওয়া।
• মাটির পরীক্ষা নির্ভর পুষ্টির ব্যবস্থাপনার প্রক্রিয়া তৈরী করা।
• পুষ্টির ব্যবস্থাপনার কাজে চাষিদের ও কর্মীদের তৈরী করা।
কৃষি দপ্তর এই প্রকল্প সাফল্যের সঙ্গে বাস্তবায়িত করে চলেছে। এই প্রকল্প দুবছরের চক্রে হয়ে থাকে। ২০১৫-১৭ সালের প্রথম চক্রে আনুমানিক ১৩ লক্ষ মাটির নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করা হয়। আনুমানিক ৪২ লক্ষ সয়েল হেলথ কার্ড, সঙ্গে শস্য বিশেষে পুষ্টি ও সার ও সঙ্গে অন্যান্য পরামর্শ সহ বিলি করা হয়ে গেছে।
২০১৮-১৯ সালে লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে ৬.৫ লক্ষ মাটির নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করার। পাশাপাশি আরও ২৫ লক্ষ কার্ড বিলির লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।