ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২০
বিজেপির সব মেসিনারি ভোকাট্টা হয়ে গেছেঃ বাঁকুড়ার কর্মীসভায় দিদি

আজ বাঁকুড়ায় এক কর্মীসভা করেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি তাঁর বক্তৃতায় সমস্ত স্তরের নেতা কর্মীদের মানুষের পাশে থেকে মানুষের স্বার্থে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সিপিএম তার ভোটটা লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির হাতে তুলেদিয়েছিল। ভেবেছিল বিজেপি ওদের ঘর দখল করতে সাহায্য করবে। মুখোসটা খুলে গেছে ঝোলা থেকে বেড়াল বেরিয়ে পড়েছে। যে হার্মাদরা দীর্ঘদিন ধরে বাঁকুড়ার বুকে অত্যাচার সন্ত্রাস করেছে, সেই হার্মাদরা আজ বিজেপিতে রুপান্তরিত হয়েছে। এলাকায় এলাকায় সন্ত্রাস কায়েম করেছে। বাকঁড়া মালদায় ওদের জায়গা ছিল, পুরো জঙ্গলমহল মাওবাদীদের হয়েগিয়েছিল। একটাও ছেলে মেয়েরা রাস্তায় বেরোতে পারত না। আজকে রায়পুর, সাঁকরাইল, খাদরা, মুকুট্মণিপুর, সোনামুখী, বিষ্ণুপুর, ওন্ডাতে রাস্তায় বেরোতে গেলে চিন্তা করতে হয় না। আগে মেদিনীপুরের চমকাইতলা দিয়ে সাঁকরাইল বেরোত। খুন খারাপের এলাকা ছিল বাকঁড়া, জঙ্গলমহল, ঝাড়গ্রাম। মেদিনীপুর জুড়ে সন্ত্রাস আর আতঙ্কের কাহিনী ছিল।
আমাদের সরকার মানুষকে দু’মুঠো ভাত দিতে পেরেছে। ২টাকা কিলো চাল দিয়েছে। জঙ্গলমহল-এর অনেক উন্নয়ন করেছে। সিপিএম-এর ৩৪ বছরে কোনও উন্নয়ন হয়নি। আর বিজেপিকেও তো ভোট দিয়ে দেখলেন, না ঘরকা না ঘাটকা। মানে আপনার এখন বাবা-মায়ের জন্মের ঠিকানা দিতে হবে। তবে আপনাকে এখানে থাকতে দেবে। না হলে থাকতে দেবে না। আপনাদের ভোট নিল বিজেপি এনআরসি দিল। ভোট নিল বিজেপি আপনাদের অধিকার কেড়ে নিল, ভোট নিল বিজেপি আপনার ঠিকানা কেড়ে নিল। ভোট নিল বিজেপি আপনার গনতন্ত্র কেড়ে নিল। ভোট নিল বিজেপি এনপিআর চাপিয়ে দিল। ভোট নিল বিজেপি সিএএ চাপিয়ে দিল। ভোট নিল বিজেপি ভাগাভাগি করে দিল, গন্ডগোল করে দিল। আবার জঙ্গলমহলে রক্তের রাজনীতি করা শুরু করল।
তৃণমূলকে বাঁকুড়া, জঙ্গলমহলের মানুষ জিতিয়েছিল। তৃণমূল আপনাদের শান্তি ফিরিয়ে দিয়েছে। মনে রাখবেন তৃণমূল দুর্বল হলে আবার ওরা গন্ডগোল লাগাবে। তৃণমূল দুর্বল হলে আপনার ঘর, পেটের ভাত, অধিকার কেড়ে নেবে। আর তৃণমূল থাকলে আপনার ধান, ভাত, আপনার মাথার উপরে একটা ছাউনি থাকবে। তৃণমূল থাকলে আপনার শিক্ষা, সংস্কৃতি, সভ্যতা থাকবে।
আমি সেই কর্মীকে ভালোবাসি যে মাটির ঘরে থাকে। আমি সেই বুথকর্মীকে ভালোবাসি যে মাটির ঘরে যায়, মানুষের কাছে যায়, চায়ের দোকানে বসে আড্ডা মারে। ডোর টু ডোর ঘোরে। আমি তাদের ভালোবাসি না যারা নিজেদের ছাড়া কাউকে বোঝেনা, মনে রাখবেন তারাও আমার নজরে থাকে। হাতে গুনে চার জন হলেও তারাও আমার নজরে থাকে। সবাই খারাপ হয় না।
আমি চাই তৃণমূলের ঝান্ডা ধরে পুরনো কর্মী যারা তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য সংগ্রাম করেছেন তারা কোর পয়েন্টে সামনে থাকবেন। এবং যারা নতুন করে আমাদের দলে এসেছেন তারাও নিশ্চয়ই থাকবেন। কিন্তু গুরুত্ব পাবে যে বুথ কর্মীটা সাইকেলে চড়ে বুথে এজেন্ট হয়ে বসে। সেই ছেলেটাকে আমি সবচেয়ে ভালবাসি। যে মা-বোনেরা আমার ডোর টু ডোর ঘুরে কখনও আইসিডিএস করে, কখনও আশা করে, কখনও গ্রামে গ্রামে যায় কখনও পঞ্চায়েতে ভাল কাজ করে আমি তাদের ভালবাসি।
আমার সারাজীবন মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছি। তৃণমূল কংগ্রেস মানুষের দল এখান থেকে কাউকে সরানো যাবে না। সিপিএম বিজেপির সাথে হাত মিলিয়ে যতই ফন্দি করো, জগাই মাধাই গদাই সকাল বেলায় সিপিএম জগাই, দুপুর বেলা কংগ্রেস গদাই, আর রাতে বিজেপি মাধাই এই তিন ভাই মিলে তৃণমূল কংগ্রেসকে যত আঘাত করার চেষ্টা করবে তৃণমূল কংগ্রেস তত বাড়বে এগিয়ে যাবে। জয় করবে। বিজেপির থেকে টাকা নিয়ে লোকসভা ভোটে সিপিএম এই ভাবে তাদের সাইনবোর্ডটা উঠিয়ে দেবে এটা আমরা ভাবতে পারিনি।
একদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের পতাকা অন্যদিকে কয়েক হাজার কোটি টাকা, আমাকে কেউ যদি বলে কোনটা তুমি নেবে আমি বলব তৃণমূল কংগ্রেসের পতাকা। আমি টাকা চাই না। টাকা আসবে ফুরিয়ে যাবে, আর নোটবন্দীর মতো সব টাকা কেড়ে নেবে। ব্যাঙ্কে যা টাকা আছে তাও আগামীদিন মানুষ পাবেন কিনা তাও জানেন না।
আমরা একসাথে কাজ করি। বিজেপি সব মেসিনারি, টাকার হোস পাইপ, এমনকি সব এজেন্সি নিয়েও ভোকাট্টা হয়েগেছে, একেবারে ভরাডুবি হয়েগেছে। বড় রাজ্যের মধ্যে ইউপি কর্ণাটক ছাড়া সব জায়গায় ভরাডুবি হয়েছে বিজেপি। আর শেষ কলসি ডুবিয়ে দেবে আগামী ২১শে বাংলা। তৈরী থাকুন এর জন্য। টাকা দিয়ে বিজপি কিছু করতে পারবে না, বিজেপির টাকার থেকে আমাদের মা-বোনেদের শঙ্খে, উলুধ্বনি, ধামসামাদোল, আমাদের বাউলের গানের জোর, আজানের ধ্বনির জোর, জয় জগন্নাথের দাম অনেক বড়। হিন্দু মুসলীম শিখ ঈশাই আপোস মে রহেনা ভাই ভাই- এটাই আমাদের মন্ত্র।
আমরা সবাই এদেশের সন্তান, এদেশের নাগরিক। বিজেপি শুধু আজ দিল্লীতে হারেনি, এর আগে মহারাষ্ট্র, ঝাড়খন্ড-এ নির্বাচন হয়েছে হেরেছে। যত জায়গায় নির্বাচন হয়েছে বিজেপি হেরেছে। একেবারে ভোকাট্টা। এই হারের কারণ ছাত্রদের উপর অত্যাচার, মা-বোনেদের উপর অত্যাচার করছে। শ্রমিকদের সব কারখানা বন্ধ। রেল, বিএসএনএল, এয়ারইন্ডিয়া, বার্নস্ট্যান্ডার্ড বেচে দিচ্ছে। পুরো দেশটাকেই বেচে দিচ্ছে। বাজেট-এ বিজেপি কাউকে কিছু দেয় নি। আমরা ১লক্ষ কোটি টাকার উপরে পাব। আমাদের টাকা দেয় না।
দিদিকে বলোতে আপনারা বলেছিলেন আপনারা কি কি পাচ্ছিলেন না! আমি আপনাদের সবটা করতে না পারলেও আমি ৭০-৮০% কাজ করে দিয়েছি। যেটা আমার হাতে আছে সেটা আমি ইতি মধ্যেই করে দিয়েছি। এর জন্য কোনও লবি করার প্রয়োজন নেই। আমি ডাইরেক্ট করে দিয়েছি।