জুলাই ৩১, ২০১৮
এনআরসি ইস্যুতে সংসদে সরব তৃণমূল

গতকাল অসমে প্রকাশিত হয় রাষ্ট্রীয় নাগরিক পঞ্জীর চূড়ান্ত খসড়া তালিকা। এই তালিকায় নেই প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষের নাম। এর ফলে দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে এবং বিভিন্ন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
এই ইস্যুতে সরব হয়েছে তৃণমূলও। গতকাল নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে বিভেদের রাজনীতি ও ‘বাঙালি খেদাও’ এর দুরভিসন্ধির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সংসদেও বিক্ষোভ করেছেন দলের সাংসদরা।
গতকাল লোকসভাতে মুলতুবি প্রস্তাব দেন সৌগত রায়। আজ রাজ্যসভায় কার্যপ্রণালী নিলম্বনের প্রস্তাব আনেন ডেরেক ওব্রায়েন। আজ সকালবেলা সংসদে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে ধর্ণাও দেন সাংসদরা। অন্যান্য বিরোধীদলের সাংসদরাও অংশ নেন তাতে।
তৃণমূলের চারজন সাংসদ এই বিষয়টি নিয়ে বক্তব্য রাখেন লোকসভা ও রাজ্যসভায়।
গতকাল, ডেরেক ও’ব্রায়েন ২৬৭ নম্বর ধারায় রাজ্যসভায় বিষয়টি তোলেন। তিনি বলেন, এটি মানবাধিকারের প্রশ্ন ও একটি মানবিক বিষয়। তিনি আরও বলেন, এটি শুধু অসমের বিষয় না, এর সাথে অন্যান্য রাজ্যের স্বার্থও জড়িয়ে আছে। দফায় দফায় বিক্ষোভের ফলে রাজ্যসভার সারাদিনের মত মুলতুবি করে দেওয়া হয়।
লোকসভায় সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, এই ৪০ লক্ষ মানুষ কোথায় যাবে? এটা অমানবিক। এটা মানসিক অত্যাচার। তিনি আরও বলেন, এই মানুষদের যেকোনো মূল্যে ন্যায় পাওয়া উচিত। তিনি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এই তালিকা সংশোধনের কথা বলেন। তিনি বলেন প্রয়োজনে আইনে সংশোধন এনে এই মানুষদের আশ্রয় দেওয়া উচিত।
আজ সুখেন্দু শেখর রায় রাজ্যসভায় এই বিষয়ে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, কলমের এক খোঁচায় ৪০ লক্ষ মানুষ রাষ্ট্রহীন হয়ে গেল। এরকম ঘটনা পৃথিবীর বুকে আজ পর্যন্ত কোথাও কখনও ঘটেনি।
তিনি দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তোলেন এই পরিপ্রেক্ষিতে। প্রথম, ৩১ শে ডিসেম্বর ২০১৭, ছয় মাস আগে সরকারি হিসেবে অসমে ২ লক্ষ ৪০ হাজার লোক D-Voter হিসেবে ঘোষিত হয়েছিল। D-Voter মানে Doubtful Voter, ৬ মাসের মধ্যে ২ লক্ষ ৪০ হাজার সংখ্যাটা ৪০ লক্ষতে কীভাবে গিয়ে পৌছালো, কোন জাদুবলে, কোন মায়াবলে? তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অনুযায়ী, যারা অসম রাজ্যের বাসিন্দা অ যারা নয়, তারা দুজনেই এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। মানে তাদের অধিকার পদদলিত করছে ভারত সরকার।
দ্বিতীয়ত, ভারতবর্ষের যে কোনও জায়গায় বসবাস করার অধিকার – আর্টিকেল ১৯-কে যে হরণ করা হচ্ছে constituionally শুধু নয়, citizenship সংক্রান্ত আর্টিকেল ১০, আর্টিকেল ১১-কেও violate করা হচ্ছে, এবং আমাদের citizenship act এর যে আধার – ‘jus soli and just sanguinis’ – সেই principle-কেও এখানে পদদলিত করা হচ্ছে।
লোকসভায় সৌগত রায় বিষয়টি তোলেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, এটা কেন্দ্রীয় সরকারের বিভেদের রাজনীতির নিদর্শন।