সাম্প্রতিক খবর

জুলাই ২৮, ২০১৮

তৃণমূল মানুষের সিন্ডিকেট তৈরী করেছে: অভিষেক বান্দ্যোপাধ্যায়

তৃণমূল মানুষের সিন্ডিকেট তৈরী করেছে: অভিষেক বান্দ্যোপাধ্যায়

আজ মেদিনীপুরের সভা থেকে তৃণমূলের ‘সিন্ডিকেট’ বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রধানমন্ত্রীর ‘সিন্ডিকেট’ অভিযোগের জবাব দেওয়ার জন্য এদিন মেদিনীপুর কলেজ মোড়ের সভাকেই বেছে নিলেন ডায়মন্ড হারবার সাংসদ। ব্যাখ্যা দিলেন ‘সিন্ডিকেট’ শব্দটার। সাফ জানালেন তৃণমূল কংগ্রেস কীসের ‘সিন্ডিকেট’ করে সেই বিষয়ে।

অভিষেকের বক্তব্যের কিছু অংশ:

  • আমরা বিজেপির মত আর্থিক ভাবে শক্তিশালী পার্টি নই, আমরা ছাউনির ব্যবস্থা করতে পারিনি। তাদের মত টাকা আমাদের নেই যে দেশ বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা খরচা করে একটা প্যান্ডেল বাঁধতে পারে না, তাঁরা আবার বাংলা দখল করার হুঙ্কার দিচ্ছে। মেদিনীপুরের মাটি আন্দোলন, সংগ্রাম, লড়াইয়ের মাটি। মিথ্যার ভার এই মেদিনীপুরের মাটি নিতে পারে না। মেদিনীপুরের মানুষ মাথা নত করতে জানে না।
  • যারা রোদ, ঝড়, জলকে উপেক্ষা করে সভায় আসে, তারা রাজনৈতিক বক্তব্য শুনতে আসে না, তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে আসে যে দিল্লীর বুক থেকে বিজেপিকে উৎখাত করার সিদ্ধান্ত আমরা নিচ্ছি।
  • গত ১৬ইজুলাই প্রধানমন্ত্রী এই মাঠে সভা করেছিলেন। কিন্তু, সেদিন তিনি প্রধানমন্ত্রীসুলভ বক্তব্য তিনি রাখেন নি। সভার নাম ছিল কৃষি কল্যাণ সমাবেশ, অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়েও এই মাঠে একজন কৃষককে খুঁজে পাওয়া যায় নি। উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, উড়িষ্যা ও ১০টা জেলা থেকে লোক এনেছে। সব রাজ্যের গাড়ির নাম্বার প্লেটের নম্বর আমার কাছে আছে।
  • কোনোদিন কৃষকের দুঃখ, কষ্ট এরা বুঝতে পারেনি। যদি রাজনৈতিক ভাবে লড়ার ক্ষমতা থাকে, বর্ষাকালে রাজ্যের যে কোনোও প্রান্তে ছাউনি ছাড়া এত বড় মাঠে একটা সভা করে দেখান। মহারাষ্ট্রে, মধ্যপ্রদেশে সবথেকে বেশী কৃষক মারা গেছে। যদি প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা থাকে, মধ্যপ্রদেশ-উত্তরপ্রদেশ-মহারাষ্ট্রের বুকে এমন একটি কৃষক কল্যাণ সমাবেশ করে দেখান। গত ৬ মাসে ১২০০০ কৃষক প্রাণ হারিয়েছে। ৭ জন কৃষককে নন্দীগ্রামের থেকেও নির্মম ভাবে বন্দুকের গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়েছে। গোরক্ষপুরে ৮০ জনের বেশী শিশু অক্সিজেনের অভাবে মারা গেছে। নোটবন্দীর জন্য ১২০ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন লাইনে দাঁড়িয়ে।
  • উন্নয়ন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কোনও কথা বলতে পারেননি, একের পর এক মথ্যে কথা বলে গেছেন। একনায়কতন্ত্র চলছে আমাদের দেশে। রোজ স্টেশনের নাম পাল্টে দেওয়া হচ্ছে। লালকেল্লার অংশ বিক্রী করে দেওয়া হচ্ছে। তাজমহলকে অসম্মান করা হচ্ছে, কৃষকদের আত্মহত্যা করতে হচ্ছে। এরপরেও প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি বড় বড় কথা বলছে।
  • তিনি বলেছেন, তৃণমূল কংগ্রেস সিন্ডিকেট তৈরী করেছে। তৃণমূল মানুষের সিন্ডিকেট করেছে, ৩৪ বছরের বাম অপশাসনকে ভাঙার সিন্ডিকেট করেছে, জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের দাপাদাপি মিটিয়ে শান্তি ফেরানোর সিন্ডিকেট করেছে, দার্জিলিঙে পর্যটন ও শান্তি ফেরানোর সিণ্ডিকেট করেছে। আর আগামী দিনে বিজেপি ভারত ছাড়ো সিন্ডিকেট করছি। এই সিন্ডিকেট মানুষের সিন্ডিকেট।
  • প্রয়োজনে রক্ত দিতে প্রস্তুত কিন্তু, ভাঁওতাবাজদের বাংলায় অশান্তি লাগাতে দেব না। কিছু হলেই হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে একটা দাঙ্গা লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমি স্বামী বিবেকানন্দের হিন্দুত্বে বিশ্বাস করি, যোগী আদিত্যনাথদের হিন্দুত্বে বিশ্বাস করি না। আমার হিন্দুত্ব কোনওদিন বিভাজনের কথা, ভেঙে-গুঁড়িয়ে-জ্বালিয়ে দেওয়ার কথা শেখায় না। রামভক্ত তোমার দলেও আছে, আমার দলেও আছে। বিজেপির রামভক্তরা তলোয়ার নিয়ে মিছিল করে, তৃণমূলের রামভক্তরা হিন্দু-মুসল্মানের ঐক্য একতা নিয়ে বাঁচে। এটাই দুই দলের তফাৎ। তাঁরা ধর্মের নামে মানুষের বিভাজন করে, আমরা ধর্ম মানুষকে এক করতে শেখায়, এটাই তৃণমূল কংগ্রেসের কাজ।
  • আমি বিজেপিকে জিজ্ঞেস করতে চাই, তারা হিন্দু ধর্মের জন্য কি কাজ করেছে? প্রধানমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করতে চাই, হিন্দুদের জন্য তিনি কোন প্রকল্পটি নিয়েছেন? একটাই প্রকল্প শুরু করেছে, ৩০০০ কোটি টাকা বাজেটে গঙ্গা পরিষ্কার করার প্রকল্প, গঙ্গা সাফ তো দুরের কথা, একটা পুকুরও সাফ করতে পারেনি। হিন্দু ধর্ম বিক্রি করে এরা রাজনীতিও করে দুর্নীতিও করে।
  • আমরা সিপিএমের মত নাস্তিক নই আর বিজেপির মত ধর্ম বিক্রী করে আমাদের রাজনীতি করতে হয় না। যারা ভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংখ্যালঘু তোষণ করছে, আমি দায়িত্ব নিয়ে বলি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন ইমাম ভাতা, মোয়াজ্জেন ভাতা, ফুরফুরা শরীফের উন্নতিকরন করেছেন, তেমন হিন্দুদের জন্য গঙ্গাসাগরের আমুল পরিবর্তন, দক্ষিণেশ্বরে স্কাই ওয়াক, তারকেশ্বরে মন্দিরের উন্নয়ন করেছেন।
  • প্রধানমন্ত্রী বলেছে, এরা দুর্গাপুজো বন্ধ করতে চায়; তিনি জানেন না, দুর্গাপুজোর বিসর্জনকে রেড রোডে কার্নিভ্যালের রূপ দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিলীপবাবুদের বলি, আগে প্যান্ডেল সামলা, তারপর ভাবিস বাংলা। ২০১৮য় প্যান্ডেল ভেঙেছে, ২০১৯-এ বিজেপির সরকার ভাঙবে।
  • ২১শে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে আমাদের নেত্রী আমাদের লক্ষ্য স্থির করে দিয়েছে। তিনি বলেছেন, আগামী দিন ৪২ শে ৪২, ২০১৯ বিজেপি ফিনিশ। এই হোক আমাদের মূলমন্ত্র। সিপিএমকে যেমন আমরা জমি ছাড়িনি, বিজেপিকেও ছাড়ব না।
  • আসুন এই সভা থেকে আমরা ঠিক করি, বাংলার একতা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, জীবন দিয়ে রক্ষা করে আমরা বিজেপির যে কটা আবর্জনা এদিক ওদিক ছিটিয়ে পড়েছে, তাদের ঝেটিয়ে বিদায় দিয়ে দেব গণতান্ত্রিক ভাবে।
  • ক্ষমতা থাকলে রাজনৈতিক ভাবে লড়ুন। ধর্মীয় মেরুকরণ করে কেউ যদি ভাবে রাজনৈতিকভাবে ফায়দা তুলতে পারবে, তাদের বলি, বাংলার মানুষ অর্থের বিনিময়ে কখনও মাথানত করবে না। এটাই আমাদের বাংলা, এটাই আমাদের গর্ব।
  • যারা বলেছে আগামী দিন ২২টা আসন পাব, আমাদের নিশ্চিত করতে হবে ২২টা বুথেও যেন বিজেপি না জিততে পারে। এই হোক আমাদের অঙ্গীকার। আগামী দিনে ভারতবর্ষের বুকে এক ধর্মনিরপেক্ষ সরকার তৈরী হবে, যারা মানুষের কথা, কৃষকের কথা ভাববে, যারা শিক্ষা-শিল্প-স্বাস্থ্যের উন্নতি করবে।
  • এখানে যদি দাঙ্গা হয়, ১০ কোটি বঙ্গবাসীর সঙ্গে বিজেপির দাঙ্গা হবে, হিন্দু-মুসলমানের দাঙ্গা হবে না।
  • আজ মহাশ্বেতা দেবীর প্রয়াণ দিবস, তিনি ওতপ্রতভাবে আমাদের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং এই জেলার সঙ্গে তাঁর নিবিড় সম্পর্ক ছিল। তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা জানাই।