জুলাই ৩১, ২০১৮
বিভেদের রাজনীতি মানি না: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লীর কনস্টিটিউশন ক্লাবে একটি কনক্লেভে অংশগ্রহণ করেন। এই কনক্লেভের আয়োজক CBCI office for Education & Culture and Pilar Fathers (Delhi Province)। এই কনক্লেভের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল ‘Love your neighbour’।
তার বক্তব্যে, মুখ্যমন্ত্রী জোর গলায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পক্ষে সওয়াল করেন। কেন্দ্রীয় সরকারের বিভেদমূলক রাজনীতির তীব্র নিন্দাও করেন তিনি। অসমে রাষ্ট্রীয় নাগরিক পঞ্জিতে যাদের নাম ওঠেনি, সেই নাগরিকদের দুর্দশার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিভেদের রাজনীতি তিনি মানেন না।
সারা বিশ্বে, সারা দেশে, সারা রাজ্যে, সব জেলায়, জাতি, বর্ণ, ধর্ম নির্বিশেষে একজোট হয়ে ভালোবাসার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী।
তার বক্তব্যের কিছু অংশ:
- আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ ও সম্মানিত যে আমায় “Love your neighbour” বিষয়ে বক্তব্য দিতে আমন্ত্রণ করা হয়েছে। এটি খুবই সুন্দর বিষয়। আমরা সবাই নিজের প্রতিবেশীকে ভালোবাসি।
- খ্রিস্টান মিশনারিরা সামাজিক ও শিক্ষা ক্ষেত্রে অসাধারণ কাজ করছে। তারা ৫৪,৯৩৭ স্কুল চালাচ্ছেন যেখানে ছ’কোটি শিশু পড়াশোনা করে। তাদের স্কুলে ৩০ লক্ষ কর্মচারী আছে। এছাড়া মিশনারিরা ১০০০টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালায়। আপনারা ভালো কাজ করছেন।
- আপনারা সমাজের নিপীড়িত, গরীব, উপেক্ষিত লোকেদের নিয়ে কাজ করেন। আমি উত্তরবঙ্গ এবং কলকাতায় মিশনারিদের দেখেছি। তাদের কাজ দেখে আমি অভিভূত।
- মাদার টেরেজার সাথে আমার পরিচয় ছিল। আমি তাঁর সঙ্গে ঘটা কিছু দুর্ঘটনার কথা জানি। তার সাথে আমার বেশ কিছুবার সাক্ষাৎ হয়েছিল। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর কলকাতায় যখন দাঙ্গা হয়েছিল তখন আমি ওনাকে দেখেছিলাম শিয়ালদায় মানুষের পাশে থেকে কাজ করতে।
- যীশু খ্রীস্ট আমাদের শিখিয়েছেন নিজেদের প্রতিবেশীকে ভালোবাসতে। তিনি এর মাধ্যমে কি বলতে চেয়েছেন? তিনি বলেছিলেন সকলকে ভালবাসতে হবে। তুবিভেদের রাজনীতি করা উচিত না।
- কোনও ব্যাক্তিবিশেষ যদি কোনও খারাপ কাজ করে, তার জন্য মিশনারিজ অফ চ্যারিটিকে কেন একটি রাজনৈতিক টার্গেট করছে?
- অসমে কি হচ্ছে? রাষ্ট্রীয় নাগরিক পঞ্জী সমস্যা। এএই সমস্যা শুধু বাঙালি, সংখ্যালঘু, হিন্দু, বিহারীদের নয়। ৪০ লক্ষ নাগরিক কাল যারা শাসক দলকে ভোট দিয়েছিল, আজ রাতারাতি তারা নিজের দেশেই উদ্বাস্তু হয়ে গেলেন।
- এমনকি প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ফকরুদ্দিন আলি আহমেদের পরিবারের নাম নাগরিক পঞ্জীতে নেই। এর জবাব কি তারা দেবে? এটাই কি প্রতিবেশীকে ভালোবাসার নিদর্শন?
- আজকাল চারপাশে যা হচ্ছে, তা উদবেগের কারণ। মানুষ ন্যায় পাচ্ছে না। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো, তাদের নিরাপত্তা প্রদান করাই আমাদের কর্তব্য।
- আদিবাসী, দলিত, সংখ্যালঘুদের সঙ্গে যা করা হচ্ছে, আমরা সমর্থন করি না। যারা lynching করে, আমরা কি তাদের সমর্থন করব?
- আমার প্রথম লক্ষ্য মানুষের পাশে থাকা। কেন খ্রীস্টান, মুসলমান, দলিত, আদিবাসীদের একঘরে করা হবে?
- আপনারা অসহায় মানুষের দাঁড়ান। কিছু লোকের কি ঔদ্ধত্য। তারা বলছে, এখন যা অসমে করা হচ্ছে, পড়ে তা বাংলায় করা হবে। তারা কে ঠিক করার কে এদেশে থাকবে আর কে নয়?
- ভারতবর্ষ আমাদের মাতৃভূমি। যেকোনো প্রান্তের মানুষ দেশের যেকোনো প্রান্তে থাকতে পারে। আমরা একটা পরিবার। আমাদের একসঙ্গে থাকতে হবে। যদি বাঙালীরা বলে বাংলায় বিহারিরা থাকতে পারবে না, দক্ষিণ ভারতীয়রা যদি বলে এখানে কোনও উত্তর ভারতীয় থাকতে পারবে না, আবার যদি উত্তর ভারতীয়রা বলে এখানে কোনও দক্ষিণ ভারতীয় থাকতে পারবে না, দেশের অবস্থা কি হবে?
- যতদিন আমি বেঁচে আছি, ততদিন আমি মানুষের ন্যায়ের জন্য লড়ব। পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর মানুষ বঞ্চিত করা হবে না। আমি ঐক্যবদ্ধ ভারতে বিশ্বাসী, আমি বিভেদমূলক রাজনীতিকে প্রশ্রয় দেব না।
- শুধু কি ক্ষমতাসীন দল (বিজেপি) সমর্থকরা ভারতে থাকতে পারবেন? ঝাড়খন্ডে যা ঘটেছে তা ছত্রিশগড় এবং বিহারে ঘটতে পারে কিন্তু বাংলায় ঘটবে না, আমরা সেখানে সুরক্ষা প্রদান করছি।
- শুধুমাত্র নির্বাচনে জয়লাভ করার জন্য মানুষকে হয়রান করা যায় না। যাদের নাম এই তালিকায় নেই, তারা কি পরিচয় হারালো না? মনে রাখবেন, ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশ বিভাজনের আগে এক দেশ ছিল। বাংলাদেশ থেকে মার্চ ১৯৭১ সাল পর্যন্ত যারা এদেশে এসেছেন তারা সবাই ভারতীয় নাগরিক।
- ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। আমি ক্ষমতায় আছি বলে আমি সবকিছুই ধ্বংস করব, তা হতে পারে না! এটা তো নিজেকে বড় বা শক্তিশালী বলে ভাবার বাতিক। শুধুমাত্র নির্বাচনী রাজনীতির জন্য মানুষকে হয়রান করা যাবে না। আমার রাজ্যের অনেক মানুষকে আটকে রাখা হয়েছে। তারা কি ভারতীয় নয়?
- আসুন আমরা সবাই একজোট হয়ে ভালোবাসার বার্তা ছড়িয়ে দিই, সারা বিশ্বে, সারা দেশে, সারা রাজ্যে, সব জেলায়, জাতি, বর্ণ, ধর্ম নির্বিশেষে।