সাম্প্রতিক খবর

জুলাই ২১, ২০১৮

প্রধানমন্ত্রীর পদে মমতাকে চান শহীদ পরিবারের সদস্যরা

প্রধানমন্ত্রীর পদে মমতাকে চান শহীদ পরিবারের সদস্যরা

একুশের শহীদ পরিবারের সদস্যরা একবাক্যে চাইছেন –অনেক হয়েছে আর না। দিল্লির রাজপাটে এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চাই, তবেই ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই কলকাতার রাস্তায় যে ১৩ জন নিরস্ত্র মানুষ শহীদের আত্মবলিদান দিয়েছিলেন, তা সার্থক হবে।

হাতিবাগানের ৭৫ বছর বয়সী ধর্মী রবিদাস, বরাহনগরের ক্ষেত্রমোহনের ব্যানার্জি লেনের মিতালী রায় বা কসবার সুইনহো লেনের মিনতি রায়-আরতি রায় এবং তাঁদের সন্তান-সন্ততিরা মনেপ্রাণে এটা চাইছেন। একুশে শহীদ তর্পণ অনুষ্ঠানে গত ২৫ বছর ধরে আমন্ত্রিত এই শহীদ পরিবারগুলির কাছে এবারেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজের হাতে সই করা আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে গেছে। তিনি নিজে বিনীত আবেদন জানিয়েছেন প্রতিটি শহীদ পরিবারকে।

কেমন আছেন এই শহীদ পরিবারগুলি

দলনেত্রীর প্রতি আপ্লুত মানুষগুলো সকলেই বলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই ভালোবেসেই ২৫বছর আগে তাঁদের প্রিয়জনরা কেউ ধর্মতলা কেউ বউবাজার কেউ মেয়ো রোড আবার কেউ ব্রেবর্ন রোডের সভায় ছুটে গিয়েছিলেন। কেউ জোর করেনি, কেউ ভয় দেখায়নি, কেউ যেতেও বলেনি। তবু তাঁরা গিয়েছিলেন ভালবাসার টানে। কিন্তু, সেদিন দুপুর গড়াতে সিপিআইএম নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্টের পুলিশ ‘মব ডিসবার্স’ করার নামে তাঁদের পেট মাথা বুক লক্ষ করে যেভাবে গুলি চালিয়ে খুন করেছিল তা আজও ভাবলে শিউরে উঠতে হয়। তারপর থেকে ‘দিদি’ই তো ভরসা। তিনি না দেখলে বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে সপরিবারে রাস্তায় দাঁড়াতে হতো। মমতাময়ীর সেই মমতা এবার সর্বভারতীয় স্তরে বর্ষিত হোক। দেশের সব গরীব মানুষ, অসহায় মানুষ দেখুক, বাংলায় পরিবর্তনের কান্ডারি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনদরদি রূপ।

ধর্মী দেবী

হাতিবাগানের কাছে কলকাতা পুরসভার কর্মী আবাসনের অধিকাংশই ঝাড়খন্ডের কোডারমা জেলার বাসিন্দা। এই আবাসনের একটি বাড়ির চারতলায় ছোট্ট এক কোয়াটার্সে দুই পুত্রকে নিয়ে থাকেন ধর্মী দেবী। বয়সের ভারে শরীরে নানা ব্যাধি দেখা দিয়েছে, চোখের দৃষ্টিও কমেছে, ব্লাডপ্রেসার, সুগার সবই হয়েছে। ২৫ বছর আগের স্মৃতি হাতড়ে এই বৃদ্ধা বললেন, তাঁর স্বামী প্রবাসী রবিদাস, শ্বশুর বানোয়ারী রবিদাস সকলেই পুরসভার ড্রেনেজ দফতরের কর্মী ছিলেন। স্বামীর মৃত্যুর পর বড়োছেলে মুকুল হরিদাস বাবার কাজটা পায়। মেজোছেলে বন্ধন রবিদাস তখন ২৩/২৪ বছরের যুবক। ছোটো অনুপ রবিদাস মাত্র ২ বছরের। কী জানি কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মনে মনে ঈশ্বরের আসনে বসিয়েছিল মেজোছেলে বন্ধন। সেদিন ২১ জুলাইয়ের সমাবেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে তাই সকাল থেকেই সে বেরিয়ে পড়ে। কতবার বললাম, কিছু খেয়ে যা। বললো, দেরি হয়ে যাবে। সেই না খেয়ে ছেলেটা বেরিয়ে গেল তারপর আর খোঁজ নেই। দুপুরবেলা শুনলাম মিটিংয়ে হাঙ্গামা হয়েছে, গুলি চলেছে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো, সন্ধে নামলো, রাত হলো। ছেলে বাড়ি ফিরলো না। রাত ১০টা বাজতে দু-বছরের অনুপকে কোলে নিয়েই দৌড়ে গেলাম মেডিক্যাল কলেজ, মর্গ, লালবাজার, কেউ কোনও হদিস দিতে পারলো না।

আবার মেডিকেল কলেজে এলাম। পুরো হাসপাতাল চত্বর মানুষের ভিড়ে ঠাসা। কে একজন বলল, বন্ধন নেই। সেটা শুনে বারবার হাসপাতালে ঢুকতে চাইলাম। আমায় ঢুকতে দেবার জন্য যুব কংগ্রেসের ছেলেরা বারবার সিকিউরিটিকে বললো, পুলশকে বললো, কিন্তু কিছুতেই ঢুকতে দিল না। রাত কেটে ভোর হোল, ঠায় হাসপাতালে বসে। পরদিন ২২ জুলায় বেলা ২টো নাগাদ শুনলাম মর্গ থেকে বডি নিতে হবে। পুলিশের অনুমতিতে। এই শুনেই তখন, অতীন ঘোষ, সাধন পান্ডে এবং অজিত পাঁজার লোকজন তুমুল বিক্ষোভ জানালো। তারপর ওড়াই আমায় বাড়ি পৌঁছে দিল। সন্ধ্যার মুখে ডালিমতলা লেনে ফুলেফুলে ঢাকা আমার মেজো ছেলের মরদেহ এলো। মানুষের ভিড় সামলানোই দায়। পুলিস হিমসিম খেতে লাগলো। তারমধ্যেই আমায় ধরে কারা যেন ছেলের কাছে নিয়ে গেল। দেখলাম মুখটা কালো হয়ে গেছে। ডান পায়ের থাই ও তলপেটের কাছে মোটা ব্যান্ডেজে বাঁধা। আর পারিনি, অজ্ঞান হয়ে যাই। বলতে বলতে দু-চোখের কোল জড়িয়ে জল পরতে লাগলো ধর্মী দেবীর।

বন্ধন চলে যাওয়ার পর ‘দিদি’ অনেক দিয়েছেন। ব্যাঙ্কে ১ লক্ষ টাকা ডিপোজিট করে দিয়েছেন।ছোটো ছেলে অনুপের চাকরী হয়েছে মেট্রো রেলে। ক-দিন আগেই কমিশনের ডাক পেয়ে গেছিলাম। তারপর আরও দু-লক্ষ টাকা দিয়েছেন। ২৫ বছর ধরে শহিদ দিবসের দিন শাড়ি-টাকা-উত্তরীয় দিয়ে উনি আমাদের সম্মান জানান। খাওয়া -পড়ার অভাব নেই। এই সব কিছুই তো বন্ধনের জন্য। এখনও ছেলেটার কথা বড্ড মনে পড়ে। সন্তানহারা মায়ের এই যন্ত্রণা কি করে বোঝাই? একটু থেমে পঁচাত্তর বয়সী এই প্রবীণা বলে উঠলেন, এবারেও যাবো ২১ জুলাইয়ের সভায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে সই করে চিঠি দিয়েছেন। আমি যাবই।

মিনতি রায়-আরতি রায়

কসবার সুইনহো লেনের বাসিন্দা মিনতি রায়-আরতি রায় এবং তাঁদের সন্তানসন্ততিরাও দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেখতে চান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ১৯৯৩-র ২১ জুলাই, রায় বাড়ির একমাত্র রোজগেরে সদস্য প্রদীপ রায় পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান। মেয়ো রোডের কাছে মিতিং শুনতে গেলে গুলি ছুটে এসে তার তলপেটে লাগে। পেট ফুঁড়ে বেড়িয়ে আসে কিডনি। সেই অবস্থাতেই কোনওমতে পেট চেপে যুবকংরেস কর্মীদের সাহাজ্যে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও শেষরক্ষা হয় নি। প্রদীপ রায়ের দুই স্ত্রী মিনতি দেবী এবং আরতি দেবী। একসঙ্গেই থাকেন। তাঁদের তিন সন্তান, দুই মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়ে দীপার বিয়ে হয়েছে, এক কন্যার জননী সে। ছেলে সন্দীপ বেসরকারী সংস্থায় কর্মরত। ছোটমেয়ে কলি সাইকোলজি নিয়ে এম.এ পড়ছে।মিনতি দেবী এবং আরতি দেবী দুজনেই ইস্টার্ন রেলে চাকরী পেয়েছেন।

২৫ বছর আগের স্মৃতি রোমন্থনে মিনতি দেবী বললেন, মিটিঙয়ে গুলি চলার খবর সেদিন প্রদীপ রায়ের সঙ্গী বাচ্চু রায় প্রথম জানান। শুধু বলা হলো, এখন অপারেশন চলছে, ভবেতরে যাওয়া যাবে না। তারপর আর কিছুই জানি না। রাত বাড়তে জানলাম সব শেষ। প্রদীপবাবুর বড়ো মেয়ে দীপা জানালোসেদিন তাঁর মামা একটি নতুন ট্যাক্সি কিনে তারকেশ্বরে পুজো দিতে গেছিল। বাবারও যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মিটিঙয়ে যাবে বলে যায়নি। পরের দিন এলাকার লাহার মাঠে প্রদীপবাবুর ফুলে ঢাকা মরদেহ এলো। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে ছিলেন। তাঁর তদারকিতেই যথাচিত মর্যাদায় শেষকৃত্য হলো। দীপা, কলি এবং মিনতি দেবী জানালেন, সেই দিন থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের সবসময়ের সঙ্গী। রায় বাড়ির দুই বউকে রেলে চাকরি দিয়েছেন। তাতে সংসারটা বেঁচে গেছে, ছেলেমেয়েদের পড়াশুনো হয়েছে।

প্রদীপবাবুর গড়িয়াহাট বাজারে মাছের দোকান ছিল। মারা যাবার পর দোকান বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময় থেকে ‘দিদি’ না দেখলে সব ভেসে যেত। শহিদ দিবসের মঞ্চে প্রতি বছর আমাদের সপরিবারে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে গিয়ে যে সম্মান উনি দেন, তার সঙ্গে শাড়ি-টাকা-উত্তরীয়- এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেই সম্ভব। দু-চোখ বয়ে জলের ধারা নামলো মিনতি দেবীর। টিকিয়াপাড়ার ক্যারেজ ডিপার্টমেন্টের কর্মী এই বিধবা। ৯ জুলাই,২০১৮ লাইন পার হতে গিয়ে পড়ে গিয়ে ডান পায়ে ভালোই চোট পান। ব্যান্ডেজ বাঁধা পা নিয়েই তিনি যাবেন বলে দীপ্ত কন্ঠে জানালেন। পাশাপাশি এটাও জানালেন, যত বয়স হচ্ছে, স্বামীর ওপর কেমন একটা অভিমান হচ্ছে। আমার শরীর ভালো নেই, সুগার-থাইরয়েড সব আছে। তবু চাকরি করতে হচ্ছে। আরতিও কাজ করছে যাদবপুর স্টেশনের রিজার্ভেশন দপ্তরে। ও থাকলে তো আমাদের এতটা কষ্ট হত না, যা আসত তাই দিয়েই দুবেলা চালিয়ে নিতাম। মায়ের কথায় দীপা-কলির চোখেও ছলছলিয়ে উঠলো।

মিতালি রায়

বরাহনগরে ২ ক্ষেত্রমোহন ব্যানার্জি লেনের বাসিন্দা মিতালি রায়ও মিনতি দেবীর মত বললেন, বয়স যত বাড়ছে নানা রোগব্যাধি দেখা দিচ্ছে। সিরোসিস অব লিভারে ভুগছি, তাই নিয়েই চাকরি করতে হচ্ছে, কি করব, সংসারটা তো চালাতে হবে। মিনতি দেবীর স্বামী বিশ্বনাথ রায় ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাইয়ের অন্যতম শহীদ। ধর্মতলায় ডোরিনা ক্রসিংয়ের সভায় গিয়েছিলেন তিনি। বয়স তখন মাত্র ২৮বছর। পুলিশের গুলি মাথার দেন দিকে আর গলার নীচের বা দিকের চোয়াল ঝাঁঝরা করে দে। তারপর থেকেই এই অসহায় বিধবা ছেলে রাজীব আর মেয়ে মহুয়াকে নিয়ে কোনওমতে সংসার চালান।

মিতালি দেবী জানলেন, আমার ছেলে তখন নার্সারি থেকে ক্লাস ওয়ানে উঠেছে, মেয়েটাও ছোট। বিশ্বনাথবাবুর সোনা-রূপোর দোকান ছিল গড়ানহাটায়। পরে বরাহনগরে একটি দোকান ভাড়া নিয়ে চালাতেন। হঠাৎ এমন বজ্রপাতে সব গেল।গড়ানহাটার দোকান বিশ্বনাথবাবুর ভায়েরা নিয়ে নিলো, কিছুই দিল না। বরাহনগরের দোকানটাও বন্ধ হয়ে গেল। ওই সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অজিত পাঁজারা পাশে না দাঁড়ালে পথে বসতে হত. ২১ জুলাই ১৯৯৩ বিশ্বনাথ রায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেলেন। ৫ দিন পর ২৭ জুলাই ১৯৯৩ অজিত পাঁজা মিতালি দেবীকে সাউথ ইস্টার্ন কোলফিল্ডের ডেসপ্যাচ ডিপার্টমেন্টে চাকরি করে দেন. কিন্তু অসুস্থ অশক্ত শরীরে রোজ কাজে যাওয়া হয়ে ওঠে না। বার্ষিক পাওনা ছুটি কেটে যাবার পরেও আরও ছুটির দরকার হয়. তাতে বেতনে কোপ পড়ে। কিন্তু বিশ্বনাথ রায়ের স্ত্রী এটাও জানালেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে একবার ২০ হাজার টাকা, একবার ২৫ হাজার টাকা পেয়েছেন। ১ লক্ষ টাকার ইউটিআই বন্ড করে দিয়েছেন দিদি। এছাড়া প্রতি বছর শহীদ দিবসের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়ে শাড়ি-টাকা-উত্তরীয় দেন। সেই সম্বল করেই মেয়ে মহুয়ার বিয়ে দিয়েছেন।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা উঠতেই দু হাত জোর করে এই মহিলা ‘সাক্ষাৎ মা দুর্গে বলে সম্বোধন করলেন। কদিন আগেই ২১ জুলাই গুলি চালানোর তদন্ত কমিশনে ডাক পেয়ে গিয়েছিলেন মিতালি দেবী তারপর গত মাসে সরকার থেকে আরও ২ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে। এখন একমাত্র চিন্তা ছেলে রাজীবকে নিয়ে। তার একটা চাকরির ব্যবস্থা হলে তিনি শান্তি পান। ২৫ বছর আগের সেই অভিশপ্ত দিনের স্মৃতি উসকে এই মহিলা জানালেন, পরোটা আর বাধাকপির তরকারি করেছিলাম, খুব ভালোবাসতো। সেদিন গোকুলবাজার থেকে সকাল ৯ টায় মিছিল হবার কথা ছিল। বললাম, খেয়ে যাও, শুনলো না। বললো দেরি হয়ে যাবে। খবরের কাগজে ছবি দেখেছি আমার স্বামী কপালে গুলি লেগে পড়ে রয়েছে, তাকে পুলিশ চ্যাংদোলা করে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।

সে তো পরের দিনের কথা। সেদিন রাতে স্বামীর খোঁজ করতে কোথায় না গেছি। হাসপাতাল থেকে মর্গ সারারাত দৌড়েছি। সরকারি কেউই কোন কথা বলতে চায়নি। তবে অতীন ঘোষ এবং অজিত পাঁজার লোকজন আমার স্বামীর দেহ শনাক্ত করে আমার বাপের বাড়ির পাড়া কোম্পানি বাগানে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ক্ষেত্রমোহন ব্যানার্জি যেন ঘুরে শব দাহ হয় রতনবাবুর ঘটে। বডি কোম্পানি বাগানে গেছে শুনে দৌড়ে সেখানে যাই।দেখি লোকে লোকারণ্য, বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে আছে আমার বাবা বিশ্বনাথ দাস, মা রেবারানী দাস পাথরের মতো বসে।আমায় ছুটে আসতে দেখে বাবা মুখ ঘুরিয়ে নিলেন।সেখান থেকে বরাহনগর। নিজের বাড়ির পাড়ায় এসে ওকে দেখতে পেলাম। গোটা মুখে ব্যান্ডেজ বাঁধা, শুধু চোখ আর নাক দেখা যাচ্ছে। পাথরের মতো শক্ত হয়ে যাওয়া লাশটা বরফের ওপর শোয়ানো। বিশ্ববাবুর ছেলে রাজীব আজ যুবক।

সেদিনের ছোট্ট রাজীবের মনে আজও বাবার মুখাগ্নি করার ছবিটা উজ্জ্বল। সে জানালো, যতটুকু মনে আছে, বাবার কপালে, মাথায় আর গলার নীচে জমাট বাঁধা চাপ চাপ রক্ত। আর কিছু জানিনা। সবাই বললো, বাবা চলে যাচ্ছে, প্রণাম করো। আমি মাটিতে শুয়ে প্রণাম করলাম।