সাম্প্রতিক খবর

জুলাই ১৫, ২০১৮

ভালো মানের বীজ, কৃষি ঋণ ও কৃষি বীমার মাধ্যমে বেড়েছে শস্য উৎপাদন

ভালো মানের বীজ, কৃষি ঋণ ও কৃষি বীমার মাধ্যমে বেড়েছে শস্য উৎপাদন

খাদ্যশস্য উৎপাদনে নজির গড়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল সরকার। ভালো মানের বীজ, কৃষি ঋণ ও কৃষি বীমার মাধ্যমে বেড়েছে শস্য উৎপাদন। বেড়েছে কৃষকদের গড় বার্ষিক আয়ও।
এখন দেখে নেওয়া যাক খাদ্যশস্য উৎপাদনের কোন কোন ক্ষেত্রে নজির গড়েছে বাংলা-

বীজ

খাদ্যশস্য উৎপাদনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যোগান হল বীজ। উন্নতমানের বীজ উৎপাদন ও ব্যবহারকে এক অন্যমাত্রা দিয়েছে তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকার। বিভিন্ন সরকারি খামারে নানাধরণের শস্যের বীজ উৎপাদন বৃদ্ধি করা হয়।
এই মুহূর্তে রাজ্যে ১৯৩টি সরকারি খামার আছে। এর মধ্যে ৩টি খামার ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট সীড কর্পোরেশন লিমিটেডকে দেওয়া হয়েছে। এই খামারগুলির কাজ অভিযোজিত ট্রায়াল ও উৎপাদন করা যাতে ধান, গম, ভুট্টা, তৈলবীজ, পাট, ডাল, আলু, আখ, ধঞ্চার বীজ উৎপাদন করা যায়। এই খামারগুলির উন্নয়নে ৭.২১ কোটি টাকা ও যন্ত্রপাতির মেরামত ও সংস্কারের জন্য ৩.০২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

বীজ সার্টিফিকেশন কর্মসূচী

· খাদ্যশস্য – ধান, গম, শঙ্কর ভুট্টা
· ডাল – মুগ, কলাই, গ্রাম, অড়হর, খেসাড়ি, মসূর
· তৈলবীজ – সর্ষে, তিল, বাদাম
· অন্যান্য – পাট, আলু, পশুখাদ্য

২০১৩-১৪ সাল থেকে সরকারি খামারে মূল আলুর বীজের উৎপাদন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে সারা রাজ্যে যে আলু উৎপাদন হয়, তা গুনমানে সেরা হয়। কিছু রেশনের দকানেও এই বীজ মিলবে।

নতুন ধরনের শস্য যেমন ধান, গম, সর্ষে, বাদাম, আলু, পাট উৎপাদনে জোর দেওয়া হচ্ছে।

তৈলবীজ, ডাল, পাট ও আলুর বীজ উৎপাদনে জোর দেওয়া হয়েছে। চাষিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এবং সরকারি প্রকল্পের আওতায় আনা হবে।

পাঁচটি বীজ পরীক্ষাকেন্দ্র এই মুহূর্তে রাজ্যে আছে, টালিগঞ্জ, বর্ধমান, মালদা, বাঁকুড়া ও কৃষ্ণগড়ে। দপ্তর জোর দিচ্ছে প্রতি জেলায় একটি করে বীজ পরীক্ষাগার খোলার।

নতুন উদ্যোগ

সরকারি খামারগুলির অর্থনীতির অবস্থা বদলাতে ও তাদের স্বনির্ভর করতে নিম্নলিখিত বিশয়গুলিতে নজর দেওয়া হয়েছে-
· চুক্তি-ভিত্তিক, দৈনিক, ভাগের ভিত্তিতে নিযুক্ত শ্রমিকের মাধ্যমে সরকারি সমস্ত জমির মধ্যে চাষযোগ্য জমির পরিমান বাড়াতে।
· ১০০ দিনের কাজের মাধ্যমে ও স্প্রিঙ্কলার বসিয়ে ও কুয়ো খনন করে, পুকুর খনন বা সংস্কারের করে জমিতে সেচের সম্ভবনা বাড়ানো।
· সরকারি খামারগুলিকে উন্নতমানের যন্ত্রপাতি প্রদান করা হবে, যেমন, ট্র্যাক্টর, রোটোভেটর, কাল্টিভেটর, জিরো টিলেজ সীড কাম ফার্টিলাইজার ড্রিল, পাওয়ার টিলার, পাওয়ার রিপার, পাওয়ার স্প্রেয়ার, ড্রাম সীডার।
· কৃষি শ্রমিক ছাড়াও ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে ২লক্ষ শ্রমদিবস তৈরী করা হয়েছে বীজ উৎপাদন কর্মসূচীর জন্য।
· সরকারি খামারের অন্তর্গত পুকুরে মাছ চাষ শুরু করা হবে যাতে মৎস্য দপ্তরের আয় বাড়ে।
· স্থানীয় অঞ্চলের বিভিন্ন ধরণের চালের ধরনের সংরক্ষণ করা হবে সরকারি খামারে।

কিষাণ ক্রেডিট কার্ড

কিষাণ ক্রেডিট কার্ড কৃষি ঋণের ক্ষেত্রে ও কৃষকদের আয় বৃদ্ধিতে ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রাজ্য সরকার তাই কৃষি ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই উদ্দেশ্যে রাজ্য সরকারের ব্যাঙ্কের কমিটি, যার মধ্যে তালিকাভুক্ত বেসরকারি ব্যাঙ্ক, গ্রামীণ ব্যাঙ্ক, সমবায় ব্যাঙ্ক এবং ফসল বীমা কোম্পানিগুলি কাজ করে চলেছে। এই ব্যাঙ্কগুলি সরকারের সঙ্গে সহযোগিতায় ২০১৭ সালের মে জুন মাসে চার দিনের কিষাণ ক্রেডিট কার্ড দিবস পালন করে খারিফ মরশুমে সমস্ত ব্যাঙ্কের সমস্ত শাখায়।
বিশেষ কর্মসূচী নেওয়া হয়েছিল পুরুলিয়া, মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ দিনাজপুর, উত্তর দিনাজপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় যেখানে সদর দপ্তরের আধিকারিকরা প্রত্যন্ত ব্লকে যায়। রাজ্য সরকারের ব্যাঙ্কের কমিটি তাদের ১৩৮তম বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই কিষাণ ক্রেডিট কার্ডে ঋণের পরিমান বাড়ানো। আগে যা ছিল ৪২ হাজার টাকা, তা বাড়িয়ে ১ লক্ষ করা হয়েছে।
২০১৭-১৮ (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর) ৯.২ লক্ষ কিষাণ ক্রেডিট কার্ড বিলি করা হয় যা এই একই সময়ে গত বছরে ছিল ৮.৫ লক্ষ। ৩৫.৪২ লক্ষ কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের বিনিময়ে ১৪৮৬০ কোটি টাকা বাকি আছে ৩০সে সেপ্টেম্বর ২০১৭ পর্যন্ত। ৩০ সে সেপ্টেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত ৩৪.৭৯ লক্ষ কার্ডের জন্য ছিল ১২১৯৩.৫৬ কোটি টাকা।

ফসল বীমা

২০১৬ খারিফ মরশুম থেকে বাংলা ফসল বীমা যোজনা শুরু করা হয়। এ রাজ্যে একমাত্র আখ ও আলুর চাষের বীমার প্রিমিয়াম যা মাত্র ৪.৮৫ শতাংশ, অন্য সমস্ত ফসলের বীমার পুরো প্রিমিয়াম সরকার দিয়ে থাকে। এ ছাড়া চাষের প্রক্রিয়া চয়ালাকালিন কোনও ভাবে ফসল নষ্ট হলেও চাষিরা বীমার রাশি পেয়ে থাকেন নথিভুক্ত ফসলের ক্ষেত্রে।
২০১৬ ও ২০১৭ সালের খারিফ মরশুমে নথিভুক্ত ফসল ছিল পাট, আউস ধান, আমন ধান, ভুট্টা। রবি মরশুমে নথিভুক্ত ফসল ছিল বোরো ধান, গম, সামার মেজ, গ্রাম, মসূর, মুগ ডাল, শর্ষে, তিল, সামার গ্রাউন্ড নাট, আখ ও আলু।
২০১৭-১৮ রবি মরশুমের কাজ হয়ে গেছে, এবং খারিফ মরশুমের জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া চলছে। ২০১৫ সালের খারিফ মরশুমের তুলনায় ২০১৬ সালের খারিফ মরশুমে বীমা রাশির পরিমান প্রায় তিনগুণ করা হয়েছে।