জুলাই ১৫, ২০১৮
কৃষিতে অনলাইন-ব্যবস্থা, তথ্য এবং প্রচার – কিছু উদ্যোগ

২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জোর দিয়েছেন বাংলাকে কৃষিক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ রাজ্য হিসেবে গড়ে তুলতে। এর জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে একদিকে যেমন উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করেছে রাজ্য সরকার, তার পাশাপাশি, কৃষকদের আয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে।
অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে একদম তৃণমূল স্তর পর্যন্ত তথ্য পৌঁছে দিতে কৃষি দপ্তর আয়োজন করে কৃষকদের প্রশিক্ষণ শিবির। এছাড়াও ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মাধ্যমে কৃষি-সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্যের প্রচারও করা হয়।
দেখে নেওয়া যাক, সরকারের নেওয়া কিছু পদক্ষেপ:
এই মুহূর্তে রাজ্যের সমস্ত ব্লকের কৃষি দপ্তরে অন্তত তিনটি করে ইন্টারনেট পরিষেবা যুক্ত কম্পিউটার আছে। এছাড়া ল্যাপটপ, প্রোজেক্টর ও ট্যাবলেট আছে ই-গভর্নেন্স প্রকল্পের অধীনে। এছাড়া মহকুমা, জেলা, রেঞ্জ ও রাজ্য কৃষি দপ্তরগুলিও উপযুক্তভাবে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট পরিষেবা পাচ্ছে।
মাটির কথা: চাষিদের জন্য এই ইন্টারনেট নির্ভর প্রকল্পের সূচনা হয় ২০১৪-১৫ সালে, সারা রাজ্যে এই প্রকল্প শুরু হয় ২০১৫-১৬ সালে। এই পরিষেবা পেতে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট প্রয়োজন শুধু। এই অ্যাপ্লিকেশনে ৯৩টি শস্যের জন্য সমস্ত বিজ্ঞানসম্মত উপায় বাতলানো হয়। এখানে এই চাষ সংক্রান্ত নানারকম প্রশ্নও করা যায়, যেমন সার ও কীটনাশক কি ব্যবহার করা উচিত। সমস্ত উত্তর পাওয়া যাবে এসএমএস মারফত। এ পর্যন্ত ২,৬০,০০০ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়েছে। ওয়েবসাইটটি হল: www.matirkatha.gov.in
২০১৭-১৮ সালে কৃষকদের অ্যাপ্লিকেশন ‘মাটির কথা কৃষকের কথা’ চালু হয় বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে মাটির কথা পোর্টালের মাধ্যমে। একটি টোল ফ্রি ফোন নম্বর আছে, 18001031100, যা সোম থেকে শনি সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যে ৭টা পর্যন্ত খোলা।
সদ্য, ‘মাটির কথা অনলাইন লাইসেন্সিং’ সিস্টেম শুরু করেছে। উদ্যোগপতিরা বীজ, সার, রাসায়নিক নিয়ে ব্যবসায় আগ্রহী। পুরো লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া হল স্বয়ংক্রিয়। আবেদনকারীকে শুধু ১ বার যেতে হবে দপ্তরে নথী যাচাই এর জন্য। ১ মাসের মধ্যে লাইসেন্স পাওয়া যাবে।
২০১৬-১৭ সাল পর্যন্ত রাজ্য ১৯.৪০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে কৃষিতে ই-ব্যবস্থার জন্য। ২০১৭-১৮ সালে আরও ৪.৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে এই বাবদ।
২০১৮ সালের ২রা থেকে ৮ই জানুয়ারি মাটি তীর্থ কৃষি কথা প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয় মাটি উৎসব ২০১৮। সারা বছর ধরে এই উৎসব পালন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
২০১৭ সালের ২৫শে নভেম্বর থেকে ২৫শে ডিসেম্বরের মধ্যে ব্লক ও মহকুমা স্তরে কৃষি মেলার আয়োজন করা হয়। এই এক মাস ব্যাপী মেলায় খরচ হয় ৭৩২.৬ লক্ষ টাকা। এই আয়োজন হয় ৩৩৩টি ব্লকে কৃষি ও কৃষি সংলগ্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন সাফল্য ও কর্মসুচীর কথা তুলে ধরতে। এই মেলাগুলিতে চাষিদের অভাবনীয় সাফল্যের জন্য তাদের প্রদান করা হয় কৃষক সম্মান ও কৃষক রত্ন সম্মান। এছাড়াও দপ্তর বিভিন্ন গ্রামীণ মেলাকে সাহায্য করেছে, বিশেষত অনগ্রসর ও উপজাতি অঞ্চলগুলিতে।
বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও চেম্বার অফ কমার্স দ্বারা আয়োজিত অনেক মেলা ও আলোচনাসভায় অংশ নিয়েছে দপ্তর।
লাইভ ফোন-ইন স্পনসর্ড অনুষ্ঠান ‘আমরা চাষ করি আনন্দে’ সম্প্রচারিত হয় অল ইন্ডিয়া রেডিওর মাধ্যমে। এখানে চাষি ও কৃষি বিশেষজ্ঞরা সরাসরি আলোচনা করতে পারেন। রাজ্যের চাষিদের সচেতন করতে সারা বছর ধরে অল ইন্ডিয়া রেডিওর কলকাতা ও শিলিগুড়ি ষ্টেশনে সম্প্রচারিত হয় ‘এগ্রিকালচারাল অ্যাওয়ারনেস স্পটস।’
কৃষি অধিকর্তারা দূরদর্শন ও অন্যান্য কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেলে সম্প্রচারিত হওয়া সাপ্তাহিক ‘কৃষি দর্শন’ অনুষ্ঠানে অংশ নেয়।