সাম্প্রতিক খবর

জুলাই ১৪, ২০১৮

বন সংরক্ষণ - পথ দেখাচ্ছে বাংলা

বন সংরক্ষণ - পথ দেখাচ্ছে বাংলা

বন সংরক্ষণের জন্য রাজ্যের বন দপ্তর নিয়েছে বহু পদক্ষেপ। প্রতি বছর ১৪ই জুলাই থেকে এক সপ্তাহ ব্যাপী বনমহোৎসব পালন করা হয়। এই পদক্ষেপ প্রাকৃতিক সম্পদ ও বনাঞ্চলের গুরুত্ব প্রচারে খুব অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।

এই বছর বনমহোৎসব উপলক্ষে রাজ্য সরকার ৫০ লক্ষ গাছের চারা বিতরণ করবে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দেওয়া হবে এই চারা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় সংস্থাদের সহযোগিতায় করা হবে বৃক্ষরোপণ।

বন সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বন দপ্তরের কিছু উল্লেখযোগ্য সাফল্য তুলে ধরা হল:

বনবান্ধব উৎসবঃ রাজ্যে বনাঞ্চল সুরক্ষিত রাখার জন্যে জয়েন্ট ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট কমিটিগুলোকে নিয়ে পালন করা হয় বনবান্ধব উৎসব। এই উৎসবে বন রক্ষা কমিটিদের স্বীকৃতি প্রদান ও শেয়ার বিতরণ, মেধাবী পড়ুয়াদের বই প্রদান, সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন করা হয়।

সবুজশ্রীঃ এই প্রকল্পে সদ্যোজাত শিশুদের বাবা-মায়েদের গাছের চারা প্রদান করে রাজ্য সরকার। এই প্রকল্প চালু হয় ২০১৬ সালে। শিশুর সঙ্গে প্রকৃতির নিবিড় যোগাযোগ তৈরী করতে এই উদ্যোগ। এখনও পর্যন্ত ১৭ লক্ষ সদ্যোজাত শিশুর মা-বাবাকে চারা প্রদান করা হয়েছে।

জলতীর্থঃ এই প্রকল্প পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার কিছু অংশে চালু করা হয়েছে। এই প্রকল্প সেইসব অঞ্চলে চালু যেখানে জলের খুব অভাব। বড় বড় নদীর গতি নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি ভূমিক্ষয় আটকাতে ও নিচু জায়গায় বন্যা ঠেকাতে নদীর বিভিন্ন স্থানে চেকড্যাম তৈরী করা হয়েছে। বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার বনাঞ্চলে ৩৬টি প্রকল্প বাস্তবায়িত করা হয়েছে।

ওয়েস্টবেঙ্গল ফরেস্ট অ্যান্ড বায়োডাইভার্সিটি কনজারভেশন প্রোজেক্টঃ ওয়েস্ট বেঙ্গল ফরেস্ট অ্যান্ড বায়োডাইভার্সিটি কনজারভেশন প্রোজেক্ট শুরু হয় ২০১২ সালে। ৬০০টি জয়েন্ট ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট কমিটিতে এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবর্ষ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে ১৮৭৭৫ হেক্টর প্লানটেশন তৈরী করা হয়েছে। ২০১৮ সালে লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে ২৯৯৫ হেক্টর প্লানটেশন তৈরী করার। এই প্রকল্পের অধীনে বায়োডাইভার্সিটি সমীক্ষা শুরু করা হয়েছে। হাতি, চিতা, বাঘ ও বাইসনের সংখ্যা, গতিবিধি ও বসবাস সম্বন্ধে সম্যক ধারণা তৈরী করতে। ২১০টি জয়েন্ট ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট কমিটিতে পরিকাঠামো উন্নয়ন, সম্পদ তৈরী, ও মাইক্রো ফিনান্সের মাধ্যমে কমিউনিটি ডেভেলপমেন্টের কাজ করা হচ্ছে।

ওয়েস্টবেঙ্গল ফরেস্ট ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেডঃ ওয়েস্ট বেঙ্গল ফরেস্ট ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড কয়েকটি ক্ষেত্রে হাইটেক হয়েছে ও কাজের ক্ষেত্র বাড়িয়েছে। গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় গত ১০ বছরে দক্ষিণবঙ্গের ৩০,০০০ হেক্টর পতিত জমিতে বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে। প্রান্তিক মানুষদের জীবিকা নির্বাহের জন্য লাক্ষা চাষ করা হয়েছে। এর ফলে ৪০০০ পরিবার উপকৃত হয়েছে। এই নিগম রাজ্যজুড়ে ১৯টি ইকো ট্যুরিজম পার্ক চালায়; আরও নতুন ইকো ট্যুরিজম পার্ক তৈরী করা হয়েছে সামসিং, তাজপুর, লোধাসুলিতে। বীরভূমের ইলামবাজারে নেচার ইন্টারপ্রিটেশন পার্ক তৈরী করা হয়েছে যেখানে প্রাচীন গাছের ফসিল রাখা আছে।

ওয়েস্টবেঙ্গল ওয়েস্টল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেডঃ দি ওয়েস্টবেঙ্গল ওয়েস্টল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড ইকো পার্কের উন্নয়ন করেছে এবং বিবেকানন্দ যুবভারতী স্টেডিয়ামের ও মা উড়ালপুলের নীচে, ইসিএল, ডিভিসি, মেঝিয়া ও রঘুনাথপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সৌন্দর্যায়নের কাজ করেছে। কলকাতা বন্দরের এবং বনবিতানের সৌন্দর্যায়নের কাজও করেছে।

ঔষুধী গাছের সংরক্ষণঃ বন দপ্তরের গবেষণা, মনিটরিং এবং উন্নয়ন শাখা ঔষুধী গাছের সংরক্ষণের জন্য ১৪টি কেন্দ্র তৈরী করেছে। ঔষুধী গাছের মাধ্যমে জয়েন্ট ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট কমিটিগুলির আর্থ সামাজিক উন্নয়নের জন্য প্রকল্পও চালু করেছে তারা। পুষ্টির লক্ষ্যে নার্সারী প্রোটোকল এবং মিডিয়া ও পরিবেশ প্রোটোকলও তৈরী করেছে এই শাখা।

আরাবাড়ি ও সারুগাড়াতে নার্সারি সংস্কার, সারুগাড়া এবং মেদিনীপুরে ভূমি পরীক্ষা কেন্দ্রগুলি সংস্কার, দার্জিলিঙে লয়েড বোটানিক্যাল গার্ডেন এবং ঝাড়গ্রামের আমলাচতিতে এক্স সিটু ঔষুধী গাছের জার্মপ্লাসম সংরক্ষণ কেন্দ্রটিও সংস্কার করেছে এই শাখা। দক্ষিণবঙ্গে এক্স সিটু সংরক্ষণ এর জন্য জয়েন্ট ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট কমিটিগুলির সহযোগিতায় ৪৩৫ হেক্টর ঔষুধী গাছ, গাছড়া ও গুল্ম লাগানো হয়েছে । আপাতত, টল সিডিং নার্সারির প্রোটোকল তৈরী করছে শাখা এবং বন ডিভিশন ভিত্তিক সয়েল ম্যাপিং এর কাজ করা হচ্ছে। এই শাখা দক্ষিণবঙ্গের ৬০০টি ঔষুধী গাছের ওপর একটি গবেষণার বইও প্রকাশ করেছে।

ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ফরেস্ট ডেভেলপমেন্ট এজেন্সিঃ ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ফরেস্ট ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি তৈরী করা হয় ২০১৪ সালে। ন্যাশানাল অ্যাফরেস্টেশন প্রোগ্রাম ও রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনা রেমুনারেটিভ অ্যাপ্রচেস ফর এগ্রিকালচার অ্যান্ড অ্যালায়েড সেক্টর রেজুভেনেশনের জন্য নতুন প্রক্রিয়া তৈরী করছে এই এজেন্সি। এছাড়াও রাজ্যের ইকো ট্যুরিজমের উদ্যোগে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে তারা (১৯টি ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্রের সমস্ত অনলাইন বুকিং দেখা এই কাজগুলির একটি)।

জিআইএস নির্ভর বন ব্যবস্থাপনাঃ বন পরিচালকমণ্ডলী রাজ্যের বনাঞ্চল ব্যাবস্থাপনা করে জিআইএস পদ্ধতির মাধ্যমে। বন দপ্তর অত্যাধুনিক প্রযুক্তি – যেমন এআরসিজিআইএস, ইআরডিএএস – ব্যবহার করছে অটোক্যাড ২০০০ মানচিত্রে এবং জিও মিডিয়া প্রফেশানাল সফটওয়্যার তৈরী হচ্ছে ন্যাশানাল ওয়ার্কিং প্ল্যান কোড ২০১৪ অনুযায়ী পরিকল্পনা তৈরী করতে।

এর থেকেই স্পষ্ট যে বাংলার ববনাঞ্চলের কার্যকরী পরিচালনার জন্য রাজ্য সরকার অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। ফলস্বরূপ, রাজ্যের বনাঞ্চলের আয়তন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বন সংরক্ষণে দেশকে পথ দেখাচ্ছে বাংলা।