জানুয়ারী ১১, ২০২০
কেন্দ্রীয় সরকারের নোটিফিকেশন কাগজে কলমেই থাকবেঃ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

গতকাল থেকে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নাগরিকত্ব আইন প্রত্যাহারের দাবী এবং জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের হওয়া বর্বরতা নিয়ে ধর্না দিচ্ছে রানী রাসমণি রোডে। আজ সেখানে প্রতিবাদীদের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছাত্র যুবকে তিনি এই প্রতিবাদে আরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।সেখানে তিনি বলেনঃ-
ছাত্ররা সিএএর বিরুদ্ধে এনআরসির বিরুদ্ধে এনপিআরের বিরুদ্ধে লাগাতার শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ধর্না কর্মসূচী নিয়ে এখানে যুক্ত হয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা দেশ ও জাতির গর্ব। ছাত্র যুবরা যে আন্দোলন গড়ে তোলে, সেই আন্দোলন সারা দেশকে পথ দেখায়। বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষকে মুক্তির পথ দেখায়।
বাংলা থেকে আমরা এই বিষয়ে প্রথম আন্দোলন শুরু করেছি এবং শেষ দিন পর্যন্ত লড়ব। আমরা দেখিয়ে দেব যে আমরাই পারি। সমস্ত ছাত্রছাত্রীকে এই মঞ্চ থেকে সংহতি জানাই ও এই আন্দোলনে তাঁদের পাশে থাকার বার্তা দিতে চাই। সকলকে এই আন্দোলনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই। স্কুলের ছেলেমেয়েরাও এর প্রতিবাদ জানাচ্ছে। ইতিমধ্যেই এই প্রতিবাদে অনেক নতুন অরাজনৈতিক মুখ দেখা যাচ্ছে।
গতকাল জেদ করে কেন্দ্রীয় সরকার যে নোটিফিকেশন প্রকাশ করেছে, তা কাগজে কলমেই থাকবে, ওটা লাগু হবে না। আমরা লাগু করবই না। আমরা ওই নোটিফিকেশন মানিনা। বাংলায় এনআরসি, এনপিআর হবে না।
আমাদের ছাত্ররা ওই নোটিফিকেশনের কপি কেটে দিয়েছে। গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ দেশে ধর্মের ভিত্তিতে, বর্ণের ভিত্তিতে,জাতির ভিত্তিতে, সংকীর্ণতার ভিত্তিতে অমানবিকতার ভিত্তিতে কিছু করা যায় না। এটা অমানবিক, এটা অসাংবিধানিক, এটা বেআইনি বলে আমরা মনে করি। সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে বলে আমরা যা ইচ্ছে করব, এটা মানা যায় না।
যারা এখনও বুঝতে পারছে না, তাদের বলি, আপনাদের ঘুম মানুষ ভাঙাবেই। আপনারা জেগে ঘুমিয়ে আছেন। আমরা নতুন ভোর আনবোই। আমাদের দেশে বহু মনীষী জন্মেছেন।
আগামী কাল স্বামীজির জন্মদিবস। দিল্লী থেকে কেউ কেউ ছুটে আসে এইসব উৎসবে নিজেদের উজ্জ্বল করার জন্য। আর আমরা ৩৬৫ দিন ওনার নাম উচ্চারণ করে ঘুম থেকে উঠি আর ঘুমোতে যাই। এটাই আমাদের তফাৎ। ১০ থেকে ১২ জানুয়ারি যুব উৎসব চলছে রাজ্য জুড়ে।
স্বামী বিবেকানন্দ এক মহান হিন্দু ছিলেন। বেলুড় মঠেও একটা দরগা আছে। বাংলায় সম্প্রীতি চিরকাল চলে আসছে। সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে চলতে হয়। কাউকে বাদ দিয়ে চলা যায়না। ভারতের মানবধর্মে হিন্দু, মুসলিম, খৃস্টান, শিখ, পারসি সবাই থাকবে।
কাউকে গরীবের অধিকার ছিনিয়ে নিয়ে, দাঙ্গা লাগাতে দেবনা। মানুষ ভোট দিয়ে সরকার গড়ে। এখন জেতার পর তাদের বলছে তোমাদের দরকার নেই। সংবিধানের সম্মান রক্ষা করতে হবে।
এগুলো যদি ভালো আইন হয়, তাহলে অসম, উত্তর পূর্ব ভারতে কেন চালু করলোনা? বাংলা, বিহার কি সস্তা যে এখানে যা ইচ্ছে করা যাবে? আমাদের এখানে শান্তিতে সব আন্দোলন হয়।
যারা বিজেপির সঙ্গে মিলে গণ্ডগোল করছে এখানে, আমরা তাদের বিরুদ্ধে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সফল আন্দোলন। যারা ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছে, তারা বিজেপির সব থেকে বড় দালাল। আমরা সিঙ্গুরেও আন্দোলন করে জমি ফিরিয়ে দেখিয়েছি।
যতক্ষণ দেহে প্রাণ আছে, আমরা এগুলো করতে দেবনা। প্রধানমন্ত্রীকে বলে এসেছি আমরা সিএএ, এনপিআর, এনআরসি মানতে পারছি না। অন্যান্য দলকে নিয়ে এই লড়াই চালাবে তৃণমূল। কর্ণাটকেও আমরা ক্ষতিপূরণ দিয়ে এসেছি। বাসে আগুন লাগালে আন্দোলন নষ্ট হয়।