সাম্প্রতিক খবর

এপ্রিল ২২, ২০১৯

বিজেপিকে হারাতে হবে, এটাই আমাদের ওয়ান পয়েন্ট কর্মসূচীঃ রায়নায় বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

বিজেপিকে হারাতে হবে, এটাই আমাদের ওয়ান পয়েন্ট কর্মসূচীঃ রায়নায় বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ পূর্ব বর্ধমানের রায়নাতে এক নির্বাচনী সভা করেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

তাঁর বক্তব্যের কিছু অংশঃ

গত কয়েক দিনে খুব ঝড়বৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে অনেক কৃষকের ক্ষতি হয়েছে। তাদের ফসল, ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে। কেউ মারা গেলে, আমরা তো সেই ক্ষতি পূরণ করতে পারি না। কিন্তু, তার পরিবার যাতে না খেতে পেয়ে মারা না যায়, সেই জন্য আমরা আর্থিক সাহায্য করি। এই ঝড়ে যাদের ক্ষতি হয়েছে, সরকার প্রশাসনিক ভাবে সমীক্ষা করে সময়মত উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেবে।

সারা দেশে ১২ হাজার কৃষক আত্মহত্যা করেছে আর বাংলায় কৃষকদের আয় তিনগুণ হয়েছে। দিল্লীর সরকার বলছে তাঁরা ২০২২ সালে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করবে।

বাংলা একমাত্র রাজ্য যেখানে কৃষিজমিতে খাজনা মুকুব করে দেওয়া হয়েছে। কৃষি জমিতে মিউটেশন ফি কাউকে দিতে হয় না।

শস্যবীমার প্রিমিয়ামের টাকা পুরোটাই রাজ্য সরকার দেয়। চাষিদের একর প্রতি ৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয় কৃষক বন্ধু প্রকল্পে। ১৮ বছর থেকে ৬০ বছরের মধ্যে কোনও কৃষক মারা গেলে তার পরিবারকে সরকার ২ লক্ষ টাকা দেবে।

বন্যা ও খরা রুখতে আমরা নতুন উদ্যোগ নিয়েছি লোয়ার দামোদর বেসিন স্কীম। আগামী দুই তিন বছরের মধ্যে এই প্রকল্প শেষ হলে, সকলে উপকৃত হবেন।

কালনা থেকে শান্তিপুর পর্যন্ত আমরা একটা সেতু তৈরী করে দিচ্ছি প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা খরচ করে।

কালনায় মাল্টি সুপার হাসপাতাল হয়েছে। অনেক কলেজ হয়েছে। চাষের জন্য বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আইটিআই, পলিটেকনিক কলেজ খোলা হয়েছে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়েছে, মাটি তীর্থ করা হয়েছে। এখানে পাইপের মাধ্যমে পানীয় জলের কাজ চলছে।

অনেক নতুন কোম্পানি এখানে বিনিয়োগ করছে। প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

দেওচা পাঁচামি কয়লা খনিতে ১২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প তৈরী হয়েছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিল্প নগর হবে এটা। প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ মিলিয়ে প্রায় ১ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। আগামী দিন এইসব জায়গা ফুলেফেঁপে উঠবে।

বর্ধমানে ইতিমধ্যেই অন্ডাল বিমানবন্দর হয়ে গেছে। মালদা এবং বালুরঘাটে, কোচবিহারেও বিমানবন্দর করে দিয়েছি।

এখন সব মেয়েরাই কন্যাশ্রী। প্রায় ৭০ লক্ষ মেয়ে কন্যাশ্রীর মধ্যে আছে। প্রায় ৭০ লক্ষ তপশিলি ও আদিবাসী ছেলে মেয়েরা পঞ্চম শ্রেণী থেকে শিক্ষাশ্রী বৃত্তি পায়।

উচ্চশিক্ষার জন্য স্বামী বিবেকানন্দ মেরিট স্কলারশিপ দেওয়া হচ্ছে। প্রায় ১ কোটি ছেলে মেয়েকে সবুজ সাথী প্রকল্পে বিনামূল্যে সাইকেল দেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য সাথী স্মার্ট কার্ড যাবে মহিলাদের কাছে। সাড়ে সাত কোটি মানুষ এই কার্ডটা পাবে। এই কার্ডটা পাবে বাড়ির মহিলারা। বেসরকারি হাসপাতালেও ৫ লক্ষ টাকার চিকিৎসা পাওয়া যাবে এই কার্ডে প্রতি বছর।

এবারের নির্বাচন বাংলার নির্বাচন নয়। এটা দিল্লীর নির্বাচন।

এখনও যারা বামপন্থায় বিশ্বাস করেন, দয়া করে নিজেদের বিজেপির কাছে বিক্রী করবেন না। সিপিএমের লোকরা অনেক অত্যাচার করেছে ৩৪ বছর, আমাদের শেখাতে আসবেন না। আমি ২০১১ সালে সিপিএমের অত্যাচারের বিরুদ্ধে এই রায়না থেকেই আওয়াজ তুলেছিলাম।

কাল যারা সিপিএমের হার্মাদ ছিল আজ তারা বিজেপির ওস্তাদ হয়েছে। এদের কোনও আদর্শ নেই, কোনও উদ্দেশ্য নেই।

আমার সঙ্গে রাজনৈতিক ভাবে লড়াই কর, উন্নয়ন নিয়ে লড়াই কর, দিশা নিয়ে লড়াই কর, পারছে না। তাই, আমার বিরুদ্ধে কংগ্রেস, সিপিএম ও বিজেপি এক হয়েছে যাতে মোদী বাবুকে প্রধানমন্ত্রী করা যায়। আর আমরা এখানে মানুষকে নিয়ে এক হয়েছি, মোদী বাবুকে দেশ থেকে বিদায় দিতে হবে।

বিজেপিকে হারাতে হবে, এটাই আমাদের ওয়ান পয়েন্ট কর্মসূচী।

আমি হিন্দু ধর্মের সকলকে ভালোবাসি। আমি বিজেপি নই। কোন ধর্মের আমদানি করেছে বিজেপি? হঠাৎ করে বিজেপি বলছে, আমি হিন্দু, আমায় ভোট দাও। বিজেপি রামকৃষ্ণ, স্বামী বিবেকানন্দকে মানেনা।

একটা বাড়িতে মা যখন ভাত রান্না করে, একার নিজের জন্য করেনা। মা এটাও করেনা যে এক ছেলেকে খাওয়াবো আরেক ছেলেকে খাওয়াবো না। আপনারা যখন আমাকে দায়িত্ব দিয়ে কোনও চেয়ারে বসাবেন, আমি এটা করতে পারবনা যে আমি হিন্দুকে সাপোর্ট করব, মুসলমানকে করব না। আমি এটাও করতে পারবনা যে আমি তপশিলিকে সাপোর্ট করব, আদিবাসীকে করব না।

কেন্দ্রের অপদার্থ সরকার জ্ঞান দিচ্ছে বলছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি করেছে? বাংলার নির্বাচন হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মা মাটি মানুষকে জবাব দেবে। কেন্দ্র কি করেছে পাঁচ বছরে, নিজেরা সেটার জবাব দিক।

সিপিএমের লোকরা ৩৪ বছর বাংলাকে জালিয়ে খেয়েছ, এখনও লজ্জা নেই? সিপিএমকে একটাও ভোট দেবেন না।

নরেন্দ্র মোদী বলেছিল বিদেশ থেকে কালো টাকা ফেরত এনে সকলকে ১৫ লক্ষ টাকা করে দেবে। কেউ এক টাকাও পেয়েছেন?

১০ কোটি বেকার ছেলেমেয়েদের চাকরি দেব বলেছিল, কেউ পেয়েছেন? বরং নোটবন্দী করে এক বছরে ২ কোটি মানুষ আরও বেকার হয়েছে।

নোটবন্দীর কথা মনে আছে? হঠাৎ ৫০০ টাকা বাতিল, ১০০০ টাকা বাতিল, মায়ের লক্ষীর ভাঁড় বাতিল, সেই মোদীকে আপনারা বাতিল করবেন না কেন? এই তো সুযোগ পেয়েছেন, একদম বাতিল করে দিন।

কাজ নেই কর্ম নেই বিজেপির। এখানে বলে বেড়াচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখানে দুর্গা পুজো করতে দেয়না। এখানে দুর্গা পুজো হয়না? এই মিথ্যেবাদীদের মুখে একটা করে লিউকোপ্লাস্টার লাগিয়ে দেওয়া উচিৎ যাতে কোনোদিন মিথ্যে কথা বলে ভোট চাইতে না পারে।

আপনারা আপনার ভোটের মাধ্যমে এদের মুখে লিউকোপ্লাস্টার লাগিয়ে দিন।

আমি সর্ব ধর্ম সমন্বয়ের পক্ষে। আমি সব ধর্মকে ভালোবাসি। আমার দুর্গা পুজোর উদ্বোধনে গিয়ে চন্ডী পাঠ করে করে গলা ব্যাথা হয়ে যায়, তাও করি। আমি ঈদেও যাই, বড়দিনেও যাই, আমায় যে ডাকে আমি সেখানে যাই। কারণ, আমার ধর্মের নাম মানবিকতা।

বিজেপির মত মাথায় ফেট্টি বেঁধে গদা, তরোয়াল নিয়ে বাইক কিনে আমরা রাস্তায় নামি না। মিছিলের পর আবার টাকা নিচ্ছে। এই করে বলছে আমরা বাংলা নেব।

বিজেপি আগে দিল্লী সামলা, পরে ভাবিস বাংলা। ভোটের সময় বসন্তের কোকিলের মত বিজেপির দেখা মেলে, আর সারা বছর দেখা পাওয়া যায়না।

২০১৪র ভোটের আগে বলত আমি চাওয়ালা। পাঁচ বছরের মধ্যে সাড়ে চার বছর বিদেশে ঘুরে বেড়াল। তিন মাস ধরে নির্বাচন করছে যাতে উনি ঘুরে প্রচার করতে পারেন আর সাধারণ মানুষ গরমে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে কষ্ট পায়। এখন বলছে আমি চাওয়ালা না, আমি চৌকিদার। চৌকিদার দেশ চালাতে পারবে? সব মানুষ বলছে চৌকিদার চোর। আসল চৌকিদাররা মাইনে পাচ্ছে না, খেতে পাচ্ছে না।

এখন বিজেপি বলছে আরেকবার ‘দিল্লী কা লাড্ডু’ দাও। অনেক হয়েছে আর হবেনা।

বাংলাই সবাইকে নিয়ে আগামী দিন ইউনাইটেড ইন্ডিয়া সরকার গঠন করবে। সেই জন্য ৪২ শে ৪২ চাই।