সাম্প্রতিক খবর

এপ্রিল ১৭, ২০১৯

বিজেপি যে এত হিন্দু হিন্দু করে অথচ আসামে যে ৪০ লক্ষ মানুষের নাম নাগরিকপঞ্জি থেকে বাদ গেছে তার মধ্যে ২২ লক্ষ হিন্দু বাঙালীঃ কান্দিতে বললেন মুখ্যমন্ত্রী

বিজেপি যে এত হিন্দু হিন্দু করে অথচ আসামে যে ৪০ লক্ষ মানুষের নাম নাগরিকপঞ্জি থেকে বাদ গেছে তার মধ্যে ২২ লক্ষ হিন্দু বাঙালীঃ কান্দিতে বললেন মুখ্যমন্ত্রী

আজ মুর্শিদাবাদের কান্দিতে একটি নির্বাচনী সভা করেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

তাঁর বক্তব্যের কিছু অংশঃ

সকলকে শুভ নববর্ষের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

১৯৯৮ সালে আমি কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলাম কারণ কংগ্রেস সিপিএমের কাছে নিজেদের তিন রঙা ঝাণ্ডা বিক্রী করে দিয়েছিল আমরা তা মেনে নিতে পারিনি।

তৃণমূল কংগ্রেস গঠন করেছিলাম, যার চিহ্ন জোড়াফুল – এক বৃন্তে দুটি কুসুম। সেদিন আমাদের অনেক্কে ব্যঙ্গ কটাক্ষ করেছিল। আজ ২১ বছর পর এই দল এক বটবৃক্ষে পরিণত হয়েছে, সে নিজে স্বাবলম্বী ও শক্তিশালী। আজ মানুষের আশীর্বাদ, সহযোগিতা নিয়ে সে বাংলাকে জয় করেছে।

তৃণমূল না করলে ৩৪ বছরের বাম সরকারকে হঠানো যেত না, ৩৪ বছর ধরে সিপিএম সন্ত্রাস চালিয়েছে।

অনেক বামপন্থী ও কংগ্রেসের লোক বেরিয়ে এসে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন তাদের আমার অভিনন্দন, ওরা শুধু বঞ্চনা লাঞ্ছনা পেয়েছেন, শুধু সন্ত্রাস দেখেছেন।

৩ টি দলের সঙ্গে কানাঘুষো করে কোন আদর্শ কখনো বাঁচে না, এই সত্যটা আজ প্রমাণিত। এখন সকলে আসল রহস্য বুঝতে পেরে তারা ঘুরে দাঁড়িয়েছেন।

আমাদের তৃণমূলের প্রার্থী কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ করে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন।

মুর্শিদাবাদের কত বছর ধরে আছেন এই কংগ্রেসের সাংসদ, কি কাজ করেছেন? শুধু বড় বড় কথা আর সারাক্ষণ তৃণমূলের নামে নালিশ করে আর বিজেপিকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে পালিশ করে। আরএসএস এখন ওনার হয়ে কাজ করছেন। সিপিএম-কংগ্রেস, বিজেপি একসাথে চলে।

আমি এই আরএসএস কে সমর্থন করিনা। যারা আগে হাফ প্যান্ট পরে প্যারেড করত তারা আজ ভোটের ইজারাদার হয়ে গেছে, যারা ক্ষমতার মাধুর্যে ভোগিত হয়ে গেছে।

আমি স্বামী বিবেকানন্দ নজরুল, নিবেদিতা, মহাত্মা গান্ধী, নেতাজির আদর্শে বিশ্বাস করি।

আমি বিজেপির ধামাধরা লোক নই, বিজেপি এখন এক নতুন ধর্ম আমদানি করছে।
কোনদিন শুনেছেন হিন্দু ধর্মের লোকেরা কাটাকাটি, ভাগাভগি, রক্ত, আগুনে বিশ্বাস করে? না। আমরা যে হিন্দু ধর্মে বিশ্বাস করি তা বেদ বেদান্ত গ্রন্থসাহেব, বাইবেল, ত্রিপিটক এর কথা বলে।

আমরা হিন্দু বলে অন্য ধর্মের লোকেদের ঘৃণা করতে শিখিনি।

আমি রবীন্দ্র নজরুলের বাংলার লোক। এই বাংলার মাটি সর্ব ধর্ম সমন্বয়ের ভূমি, এটাই আমাদের পরম্পরা।

আজ ভারতবর্ষে কি চলছে? আমরা এমন এক নেতা পেলাম যিনি নেতাজি, আম্বেদকর, গান্ধীজিকে মানেন না, উনি নিজেকে মানেন। যাদের হাতেখড়ি দাঙ্গা দিয়ে তারা আজ দেশ চালাচ্ছে।

৫ বছরে ১০ কোটি চাকরি দেবে বলেছিল, তার বদলে ২ কোটি বেকার হয়ে গেল।

মোদী বাবুর হুমকি – এয়ার ইন্ডিয়াতে বিজনেস ক্লাসে ও সবাইকে নিরামিষ খেতে হবে। কেন? কে কি খাবে, কি পরবে, কি করবে তা উনি ঠিক করে দেবেন? এভাবে দেশ চলতে পারে না

নোট বন্দী থেকে শুরু করে ওনার অনেক গুণ, ওনার আমলে ১২ হাজার কৃষক আত্মহত্যা করেছেন, মোদীবাবু তাদের দিকে ফিরেও তাকায়নি, শ্রমিকদের মেরে ফেলা হয়েছে।

এটা বাংলার নির্বাচন নয়, দেশের নির্বাচন। মোদীবাবুর আমলে মূল্যবৃদ্ধি লাগাম ছাড়া, পেট্রোল ডিজেলের দাম বেড়েছে, গ্যাসের দাম বেড়েছে।

নোট বন্দী করে জনগণের টাকা কোথায় গেল কেউ জানে না। জনধন যোজনা – জনগণের টাকা নিয়ে নেওয়ার যোজনা, কত যে কেলেঙ্কারি করছে তার শেষ নেই। সারা দেশে আজ হতাশা চলছে।

নেতাদের মানুষ ভালোবাসে সম্মান করে কিন্তু এই প্রথমবার দেখছি ওনাকে আর বিজেপিকে ভয় পাচ্ছে মানুষ, সকলের বাড়িতে ইডি সিবিআই, ইনকাম ট্যাক্স পাঠিয়ে দিচ্ছে, নানারকম ভাবে অত্যাচার করছে।

নির্বাচনের নামে সারা ভারত জুড়ে এখন তামাশা চলছে। অন্ধ্রপ্রদেশে চন্দ্রবাবু নাইডু কে হ্যারাস করছে গতকালও কানিমোঝির বাড়িতে রেড হয়েছে, মায়াবতী, কেজরিওয়াল সবার ওপর অত্যাচার করছে। লালুকে জেলে পাঠিয়ে দিয়েছে। বাংলার মানুষ এখনও ভালো আছে আমরা আছি বলে

অনেক হয়েছে বিজেপির ভাগাভগি আর হিন্দুত্বের খেলা, হিন্দু মুসলিম সকলে জোট বেঁধেছে কারণ কেউ ফ্যাসিস্ট সরকার, হিটলারি সরকার চায় না।

দেশের নেতা হবে গান্ধীজি সুভাষ, আবুল কালাম আজাদ এর মত, মীরজাফরের মত নয়।

সিপিএম-বিজেপি-কংগ্রেস একসাথে পঞ্চায়েত নির্বাচন করেছে, তাই এবার একটা ভোটও এইসব দালালদের দেবেন না।

সারদা নারদার সবচেয়ে বড় নায়ক সিপিএম, ওদের সাথে বিজেপির ভাব তাই ওদের কাউকে গ্রেফতার করেনি, এমনকি কংগ্রেসেরও কাউকে গ্রেফতার করেনি

আমরাই কাশ্মীর থেকে সারদার মালিককে গ্রেপ্তার করিয়েছি আর জনগণকে ৩০০ কোটি টাকা ফিরিয়ে দিয়েছি।

সারদা হয়েছে সিপিএমের আমলে। তাহলে সারদার তদন্ত ২০১১ সাল থেকে কেন শুরু হল? সিপিএমকে বাঁচানোর জন্য?

মুর্শিদাবাদের সাংসদ কদিন থাকেন এখানে? নির্বাচনের সময় এখানে আসে।

তৃণমূলের স্বচ্ছতার সার্টিফিকেট আমি সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপির থেকে নেব না।

নির্বাচনের সময় দিল্লির নেতারা উড়ে এসে উড়ে চলে যায়, কোন নদী ভাঙন হলে হলে টাকা দেয়? কান্দি মাস্টার প্ল্যান এর জন্য টাকা দেয়নি কেন্দ্র, আমাদের সরকার করছে।

মুর্শিদাবাদের জন্য অনেক কাজ করা হয়েছে, ঘাট, সেতু, আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়, মাল্টি সুপার হাসপাতাল, ৫০০ ইউনিটের বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ক্ষুদ্র শিল্পের জন্য ৪০০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে, এসএনএসইউ, কর্মতীর্থ, পলিটেকনিক, আইটিআই, রাস্তা, কিষান মান্ডি, ক্লাস্টার তৈরী সহ অনেক কাজ হচ্ছে ।

মুর্শিদাবাদে সংখ্যালঘু স্কলারশিপ, কন্যাশ্রী, শিক্ষাশ্রী, উচ্চ শিক্ষার জন্য স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপ, সবুজ সাথী সাইকেল, ২ টাকা কিলো চাল, বিনা পয়সায় চিকিৎসা, ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান, স্বাস্থ্য সাথী – মহিলাদের নামে স্মার্ট কার্ড, ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালু হয়েছে।

একমাত্র বাংলায় কৃষকদের জমির খাজনা ও মিউটেশন ফি মুকুব করে দেওয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষের সম্পত্তি হস্তান্তর করার জন্য মিউটেশন ফি মুকুব করে দেওয়া হয়েছে। কৃষকদের শস্য বীমার সব টাকা দেয় রাজ্য সরকার।

কোন কৃষক মারা গেলে তার পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার।

কৃষক বন্ধু প্রকল্পে কৃষকদের বছরে ২ বার ২৫০০ টাকা করে মোট ৫০০০ টাকা দেওয়া হচ্ছে, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষি যাদের এক একরের কম জমি আছে তাদের ১০০০ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে।

মানুষ মারা গেলে তাদের সৎকারের জন্য বৈতরিণী প্রকল্পে ২০০০ টাকা আর্থিক সাহায্য দেয় রাজ্য সরকার।

জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রকল্প চালু করেছে রাজ্য সরকার। আমাদের সরকার গত সাড়ে ৭ বছরে যা কাজ করেছে সারা পৃথিবীতে কেউ তা করতে পারবে না

যারা বারবার অনাচার অত্যাচার সন্ত্রাস করে তাদের আর ভোট দেবেন না, বাংলায় অন্য দলকে ভোট দিয়ে নিজের ভোট নষ্ট করবেন না।

আমাদের স্লোগান ২০১৯, বিজেপি ফিনিশ। আর এবার মানুষ বলছে ১৪২৬, ৪২ এ চাই ৪২

ওরা সারা ভারতে হারবে। তাই বাংলায় বড় বড় ভাষণ দিয়ে বলে বেড়াচ্ছে এখানে অনেক সিট পাবে। সিট পেলে হিন্দু মুসলমানের মধ্যে দাঙ্গা লাগাবে।

ওরা যে এত হিন্দু হিন্দু করে তাহলে আসামে যে ৪০ লক্ষ মানুষের নাম ওরা নাগরিকপঞ্জি থেকে বাদ দিয়েছে তার মধ্যে ২২ লক্ষ হিন্দু বাঙালী এছাড়া মুসলিম, বিহারী ও পাহাড়েরও কিছু মানুষ রয়েছে

মোদী বাবুর দল বাংলায় এসে মিথ্যে কথা বলে যে এখানে দুর্গাপুজো সরস্বতী পুজো হয় না। আমরা সব ধর্ম ভালোবাসি, সব ধর্মকে নিয়ে চলাই বাংলার সংস্কৃতি, আমরা সবাই মিলেমিশে সব উৎসব পালন করি এটাই আমাদের বিশেষত্ব

কোন ভাগাভাগি নয়, আমরা ঐক্যবদ্ধ। আমি যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন বাংলার কোন মানুষের ওপর অত্যাচার হতে দেব না, কারো সম্মানহানি হতে দেব না। ৫ বছরে মানুষকে ওরা অনেক কষ্ট দিয়েছে

তৃণমূল কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে কেন্দ্রের সরকার গঠন হবে না। বাংলা ও ইউপি আগামিদিনের সরকার তৈরী করবে। সব আঞ্চলিক দল একসাথে ক্ষমতায় এসে জোট সরকার গঠন করবে যারা মানুষের জন্য কাজ করবে

৫ বছর আগে মোদী বাবু ছিলেন চা ওয়ালা, এখন হয়েছেন চৌকিদার। আসল চৌকিদার কে সম্মান করি। কিন্তু আমরা চৌকিদার নয় দেশের নেতা চাই।

বিজেপির কাজ মানুষকে তাড়িয়ে দেওয়া, NRC-র নামে সকলের নাম বাতিল করে দেওয়া, মানুষ দুখে আত্মহত্যা করছে, তৃণমূল কংগ্রেস ছাড়া কেউ তাদের পাশে দাঁড়ায়নি

বিজেপি নাগরিক বিল আনছে যার মাধ্যমে ৬ বছরের জন্য ওরা মানুষকে বিদেশী বানিয়ে দেবে, যারা আসল নাগরিক সবাইকে তাড়িয়ে দিয়ে ওরা একাই বাস করবে এই দেশে

কোন চক্রান্ত-কুৎসা-অপপ্রচারের কাছে মাথা নত করবেন না।

মোদী বাবুরা ঘুরে বেড়াবেন বলে নিজেদের ইচ্ছেমতো ২ মাস ধরে নির্বাচনের তালিকা বানিয়েছেন