সাম্প্রতিক খবর

এপ্রিল ১৩, ২০১৯

প্রথম ভোট দেশের উন্নয়নের পক্ষে হোক, ধ্বংসের পক্ষে নয়ঃ শিলিগুড়িতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

প্রথম ভোট দেশের উন্নয়নের পক্ষে হোক, ধ্বংসের পক্ষে নয়ঃ শিলিগুড়িতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ শিলিগুড়িতে একটি জনসভা করেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখান থেকে নতুন ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান যাতে তারা তাদের প্রথম ভোট তা উন্নয়নের পক্ষে দেয়, বিজেপির ধ্বংসাত্মক রাজনীতির পক্ষে নয়।

ওনার বক্তব্যের কিছু অংশঃ

ধর্ম মানে যুদ্ধ নয়, হিংসে নয়, দানবিকতা নয়, ধর্ম মানে মানবিকতা

ইদানিং ধর্মের নামে কিছু সৃষ্টিছাড়া বাঁধনহারা, অত্যাচারী মানুষ এক নতুন ধর্মের আমদানি করেছে। এর সাথে কোন সম্প্রদায়ের কোন ধর্মের যুক্ত নেই, এর সঙ্গে বাংলার সংস্কৃতি মেলে না।

কিছু রাজনৈতিক দল এইসব মিথ্যে ধর্মের আমদানি করে একে অপরের ওপর অত্যাচার করছে, সন্ত্রাস করছে। এরা হল ফ্যাসিবাদী শক্তি, এরা মানবিক বা রাষ্ট্রীয় শক্তি নয়

এটা বাংলার নির্বাচন নয়। এটা কেন্দ্রের নির্বাচন বিজেপি ৫ বছর ক্ষমতায় ছিল, কি কাজ করেছে ওরা? কৈফিয়ত চাই। প্রত্যে ঘরে আজ আওয়াজ উঠেছে ওরা ৫ বছরে শুধু ভ্রষ্টাচার, অত্যাচার, দুরাচার করেছে, শুধু দেশটার সর্বনাশ করেছে।

শুধু ধর্মের পতাকা লাগিয়ে ধর্মকে বেচে খায়। আমরা ধর্মকে সম্মান করি, ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করার প্রয়োজন আমাদের হয় না

নির্বাচনী বিধির কিছু নিয়ম আছে, আমরা তা লঙ্ঘন করতে পারি না। কিন্তু কেউ কেউ তরোয়াল, গদা নিয়ে ভোট চাইতে বেরিয়ে পরছে, এসব করে বাংলায় ভোট হয় না মনে রাখবেন

গেরুয়া তারা পরে, যারা ত্যাগ করে, যাদের মধ্যে পবিত্রতা থাকবে আর এরা হল সৃষ্টিছাড়া, বাঁধনহারা, ধান্দাবাজ। এদের অন্তরে কালো আর বাইরে গেরুয়া

যে যার মতন ধর্ম পালন করে, সকলের নিজেদের উৎসব আছে এটাই ভারতবর্ষ, এটাই সংবিধান

আমি প্রতি বছর পয়লা বৈশাখে মা কালীর পুজো করি। এটা আমার চিরকালের অভ্যাস, গত ৩০ বছর ধরে করছি

কি করিনি আমি শিলিগুড়ি আর উত্তরবঙ্গের জন্য? এর আগে কেউ কোন কাজ করেনি এখানকার জন্য। আমি নিয়মিত উত্তরবঙ্গে আসি

রাস্তা, নতুন রেল লাইন, বেঙ্গল সাফারি পার্ক, তিস্তা থিম সিটি, ভোরের আলো, উত্তরকন্যা সহ উত্তরবঙ্গের জন্য অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়েছে

আমি আমার যুব সম্প্রদায়কে অভিনন্দন জানাতে চাই। রাষ্ট্রসংঘ ১৬০০টি প্রকল্পের মধ্যে আমাদের ‘উৎকর্ষ বাংলা’কে শ্রেষ্ঠ ঘোষণা করেছে

‘উৎকর্ষ বাংলা’ প্রকল্পের আওতায় আমরা প্রতি বছর ৬ লক্ষ ছেলে মেয়েকে প্রশিক্ষণ দিই। প্রশিক্ষণের পর তারা প্লেসমেন্টও পায়

২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে সারা দেশের ২ কোটি মানুষ বেকার হয়েছেন। আর আমরা বাংলায় ৪০% বেকারত্ব কমিয়েছি

কন্যাশ্রীর মতো উৎকর্ষ বাংলা-ও বিশ্বজয় করেছে। সবুজ সাথীও রাষ্ট্রসংঘের দ্বারা সম্মানিত হয়েছে।

নতুন ভোটারদের ওপর আমাদের অনেক আশা। তোমরা আগামীদিনে ভারত গড়বে।তোমরা দেশ গড়বে। ওড়াই ভারতবর্ষের নতুন ভিত্তি স্থাপন করবে।

যুব সমাজ কাল নতুন ভারত গড়বে। তোমরা এগিয়ে এসো দেশকে নতুন পথ দেখাও।ওড়াই আগামীদিনে নেতৃত্ব দেবে

আমি উৎকর্ষ বাংলার জয়কে এই রাজ্যের যুব সমাজকে সমর্পণ করছি। বাংলার কাজ আজ সারা বিশ্বে সেরা।

অখিলেষ যাদবজী বলেছেন কাল বাংলা আর উত্তর প্রদেশ দেশকে নেতৃত্ব দেবে।আমি তার বিবৃতিকে স্বাগত জানাই ও তাঁকে অভিনন্দন জানাই।

এই বার সিপিএম কেরালা ছাড়া কোথাও জিততে পারবে না। কংগ্রেসের একার পক্ষে সরকার গঠন করা সম্ভব হবে না। প্রাদেশিক দলগুলি অনেক গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা পালন করবে।

নিজেদের ভোট নষ্ট করবেন না। যেখানে যেখানে প্রাদেশিক দলগুলি শক্তিশালী তাদের জেতাতে হবে।

এবার কেন্দ্রে সরকার গড়তে তৃণমূল গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা নেবে।

বিজেপি দিকে দিকে ঘৃণা ও হিংস্রতা ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে আর এখন সেনাবাহিনীর নাম করে ভোট চাইছে? এটা দুঃখ্যজনক।

নোটবন্দী আমাদের মা-বোনেদের সারা জীবনের সঞ্চয় নষ্ট করে দিয়েছে। ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন জিএস্টি লাগু হওয়ার পরে।

এখন একজন পাক্কা ফ্যাসিস্ট কায়দায় নিজের মর্জিমতো দেশ চালাচ্ছেন।

আমরা কি খাব না খাব সেটা আমাদের ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু এখন ওরা এয়ার ইন্ডিয়া থেকে আমিষ খাবার বন্ধ করে দিয়েছে। আমি জানতে চাই, কেন?

কিছু কিছু বিজেপি নেতা বলছে বাংলায় নাকি দুর্গা পুজা হয়না। এরা বলে এ রাজ্যে নাকি সরস্বতী পুজা বন্ধ হয়ে গেছে।ওরা কি দুর্গা পুজা আর সরস্বতী পুজার মন্ত্র জানে?

গত পাঁচ বছরে দলিত আর সংখ্যালঘুদের প্রচুর অত্যাচার হয়েছে। এবার প্রত্যেকটা ভোট মোদীর হার নিশ্চিত করবে।

আমার সঙ্গে তো রোজ লড়াই হয়, বাড়ির লোকেদের যে বলব আজ এটা বাজার হবে, সেটা পর্যন্ত ট্যাপ করে।

বিজেপির রাজত্বে কোনও মানুসের কোন গণতান্ত্রিক অধিকার নেই। সমস্ত গণতান্ত্রিক সংস্থাকে ভয় দেখিয়ে কিনে নিয়েছে।

সমস্ত বিরোধীদের কাউকে সিবিআই দেখিয়ে, কাউকে ইডি দেখিয়ে চুপ করিয়ে রেখেছে।

আমি বিজেপির বিরুদ্ধে কথা বলি কারণ, আমি জীবনে অনেক লড়াই করেছি। সিপিএম আমার ওপর অনেক বার গুলি চালিয়েছে। সারা শরীরে আমার চোট আছে। আমি লড়াই করে বেঁচে ছিলাম, আছি, থাকব। আমি সিপিএমকে ভয় পাইনি তো বিজেপিকে কি ভয় পাব?

সিপিএম কংগ্রেস বিজেপির কত খেলা চলছে। পঞ্চায়েতে রামধনু রঙের খেলা দেখেননি?

বিজেপি বলছে বাংলায় ক্ষমতায় এলে এনআরসি করবে। বাংলায় এনআরসির এন হবে না, আরসি কথা থেকে আসবে?

সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট কেন হবে? ঐ অ্যাক্টে বলছে প্রথম ছ বছর আপনাকে বিদেশী করে দেবে, আপনার সব অধিকার আছে চলে যাবে। তারপর ওদের ইচ্ছে হলে আপনাকে নাগরিকত্ব দেবে, ছ বছর পর তো ওরাই থাকবে না, আপনাকে কিকরে নাগরিকত্ব দেবে?

টাকা খরচ করে সোশ্যাল মিডিয়াতে খালি মিথ্যে খবর রটাচ্ছে। বাংলাদেশের ঘটনাকে বাংলার বলে ছড়াচ্ছে। ভোজপুরি সিনেমার ছবি দেখিয়ে বলছে এখানে হয়েছে। ফেসবুককে ফেকবুক করে দিয়েছে।

সাড়ে চার বছর বিদেশে ঘুরে বেড়ালো। নির্বাচনের আগে বলছে আমি চৌকিদার।

এখন বলছে সেনাবাহিনীর জন্য মোদীকে ভোট দিতে। সেনাবাহিনী তো নিরপেক্ষ, দেশের হয়ে লড়ে। সেনাবাহিনীকে মোদীর সেনা, বিজেপির সেনা বলার আগে তাঁদের ত্যাগ, বলিদানের কথা ভাবুন।

যারা প্রথম ভোট দেবেন, তাঁদের অনুরোধ দেশের উন্নতির জন্য, একতার জন্য ভোট দিন। দেশকে ধ্বংস করার জন্য মোদীকে ভোট দেবেন না।

আমাদের প্রার্থী অমর সিং রাই পাহাড়ের মানুষ, ভদ্র মানুষ। উনি পাহাড় ও সমতলের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তুলবেন।

দেশ বাঁচাতে, মানুষের অধিকার বাঁচাতে তৃণমূলকে ভোট দিন।