সাম্প্রতিক খবর

এপ্রিল ১৭, ২০১৯

কেন্দ্রে প্রগতিশীল, ধর্মনিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দিনঃ নবদ্বীপে বললেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়

কেন্দ্রে প্রগতিশীল, ধর্মনিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দিনঃ নবদ্বীপে বললেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ নদীয়া জেলার নবদ্বীপে এক নির্বাচনী সভা করেন তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

তাঁর বক্তব্যের কিছু অংশঃ

এই রৌদ্রের তীব্র তাপদাহকে উপেক্ষা করে আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এখানে উপস্থিত হয়েছি।

আমি যেখানেই গিয়েছি, আমি সবাইকে অনুরোধ করেছি তিনটে কারণে মূলত আপনারা তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীদের জিতিয়ে কেন্দ্রে সরকার গঠনে সাহায্য করুন- রান্নার গ্যাস, পেট্রোল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি, সারা দেশজুড়ে বিভাজনের রাজনীতি, বাংলার সম্মান বজায় রাখা।

এর সাথে আজকে আরোও একটি কারণ রয়েছে, সদ্য সত্যজিৎ বিশ্বাসের খুনীকে জেলে ভরার জন্য ভোট দিন।

পাঁচ বছরের আগের সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতির উত্তর আমাদের চাই।

এই লড়াইটা সাম্প্রদায়িক মোদী আর অগ্নিকন্যা দিদির লড়াই।

বাংলার মানুষের জন্য আমরা যথাসম্ভব করেছি, আমরা কখনও নরেন্দ্র মোদী সরকারের কাছে মাথা নতো করব না।

রূপালী বিশ্বাসকে ভোট দেওয়া মানে, মনে রাখাবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্ত করার জন্য এবং কেন্দ্র থেকে নরেন্দ্র মোদীকে সরাতে তাঁকে সাহায্য করা।

নরেন্দ্র মোদীর প্রতিশ্রুতি মতো এখানে কি কেউ আচ্ছে দিন, প্রত্যেককে ১৫ লাখ টাকা, দুকোটি চাকরির সুবিধে পেয়েছেন? আমি সুনিশ্চিত ভাবে বলতে পারি, কেউ পায় নি।

কিন্তু অন্যদিকে, আপনারা তৃণমূল কংগ্রেসের সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের দ্বারা উপকৃত হয়েছেন।

বিজেপি হিন্দু ধর্মের রক্ষাকর্তা বলে দাবী করে। কিন্তু তাদের জন্য ওরা কি করেছে?

বিজেপি বলে থাকে ইমাম ভাতা ও মোয়াজ্জেম ভাতা দেওয়া হয় আপনাদের দেওয়া করের টাকা থেকে। কিন্তু তারা মিথ্যাচার ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে।

এই টাকা-টা ওয়াকফ বোর্ডের তহবিল থেকে দেওয়া হয় সুপ্রিম কোর্টের আদেশানুসারে। আর যে টাকাটা আপনারা কর হিসাবে দেন, খরচা হয় তৃণমূল সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলিতে।

রাজ্যজুড়ে দুর্গাপুজো কমিটিকে অনুদান হিসাবে ১০,০০০ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জি। আর আমরা কী দেখলাম? বিজেপি-সিপিএম-কংগ্রেস একসাথে পরেরদিনই আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দিলেন।

আমরা যদি হিন্দুদের জন্য কিছু করতে যাই, তাহলে আপনারা হাই করতে গিয়ে মামলা করবেন। আর যদি মুসলিমরা উপকৃত হয় তাহলে তাকে বলবে তোষণ।

মহারাষ্ট্রে গনেশ পুজো হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আয়কর লাগায় না, হনুমান জয়ন্তী হচ্ছে উত্তর প্রদেশে, তাদের বিরুদ্ধে আয়কর লাগায় না। আর বাঙালির জীবনের সর্ববৃহৎ উৎসব- দুর্গোৎসব কমিটিগুলোর পিছনে নরেন্দ্র মোদী- অমিত শাহের দল আজকে আয়কর দফতরকে লাগিয়ে দিয়েছে।

পাঁচ বছর আগে রান্নার গ্যাসের দাম কত ছিল- ৪০২ টাকা, আজকে রান্নার গ্যাসের দাম ৭৫০ টাকা। তিন মাস আগে রান্নার গ্যাসের দাম ছিল ৯৭০ টাকা,তাহলে হঠাৎ করে আজকের রান্নার গ্যাস ২২০ টাকা কমে গেল কারণ হল দুটো। এক, সামনে লোকসভা নির্বাচন তাই দাম কমছে। দুই, তিন রাজ্য- রাজস্থান, ছত্তিসগড় ও মধ্য প্রদেশে বিজেপি হেরে গেছে। মিজোরামে খাতা খুলতে পারেনি। তার মানে এটা প্রতিষ্ঠিত ভারতীয় জনতা পার্টি যত হেরেছে, রান্নার গ্যাসের দাম তত কমেছে। ভারতীয় জনতা পার্টি যত হেরেছে, পেট্রোলের দাম কমেছে। ভারতীয় জনতা পার্টি যত হেরেছে, ডিজেলের দাম কমেছে।

ভোট-টা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-কে দেবেন যাতে এমন একটি সরকার গঠন হবে কেন্দ্রে যা মূল্যবৃদ্ধি কমিয়ে আনবে ও যেটি হবে সাধারণ মানুষের জন্য সাশ্রয়ীএবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্যেও জিএসটির হার কমানো হবে।

আপনারা আপনাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে আমাদের ভোট দেওয়া নিশ্চিত করুন ও আমরাও আপনাদের উন্নয়ন করা নিশ্চিত করব।

তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দিন বাংলার যে মহান আদর্শ মেনে।

বিজেপি হিন্দুত্ব নিয়ে কথা বলে। কিন্তু সেখানেও বাংলার অবদান বিরাট কারণ স্বামী বিবেকানন্দ ছাড়া হিন্দুত্ব অসম্পূর্ণ

সতীদাহ প্রথা তুলে দেওয়া, নারী শিক্ষা ও বহু সামাজিক পরিবর্তন নিয়ে এসেছিল বাঙালিরাই। স্বামী বিবেকানন্দ, রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও অন্যান্য ব্যক্তিদের জন্যেই আমরা সমাজ হিসাবে যা তাই রয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী আগে বলতেন চা-ওয়ালা, এখন বলেন চৌকিদার কিন্তু উনি কোনওটাই নয়। আর অপরদিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগের মতোই বিনীত,সেই টালির বাড়িতেই থেকে ১০ কোটি লোকের উন্নয়নের কথা চিন্তা করেন।

এনআরসির জন্য ৪০ লক্ষ বাঙালির নাম সরানো হয়েছে নাগরিকপঞ্জী থেকে অসমে । এটা যদি এখানে লাগু হয় তাহলে নবদ্বীপের বাসিন্দারা অনেক ক্ষতি হবে। এই বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে আপনাদের জবাব দিতে হবে।

আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলছেন পাকিস্তানকে জবাব দিয়েছেন, আর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলছে আমরা মোদীকে চাই। ,যাকে আমরা শত্রু বলে চিহ্নিত করেছি, তারা চায় মোদী বার ক্ষমতায় ফিরে আসুক, যেমন চায় বিজয় মালিয়া, নীরব মোদী ও অন্যান্য অপরাধীরা।

মোদী এমন এক চৌকিদার যে নীরব মোদী, মেহুল চোকসি বিজয় মালিয়া হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যাচ্ছে।

আপনারা কী এমন এক দলকে ভোট দেবেন? ভারতীয় সেনার নামে যারা ভোট চায় তাদের ভোট দেওয়া উচিত? হিন্দু-মুসলমানের নামে ভোট চায় যে, তাকে ভোট দেওয়া উচিত? যারা শান্তির অঞ্চল নদীয়াকে সন্ত্রাসের মুক্তাঞ্চলে পরিণত করতে চায়, তাদের কী ভোট দেওয়া উচিত? যারা সত্যজিৎ বিশ্বাসকে খুন করেছে, তাদের ভোট দেওয়া উচিত? যারা বাংলাকে বঞ্চিত করেছে, তাদের ভোট দেওয়া উচিত? তাহলে আগামীদিন জোড়াফুলে ভোট দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্ত করুন।

গর্বের সাথে আমিও বলি ‘ব্যাহৃত মাতা কী জয়’, কিন্তু আমরা এই স্লোগানের প্রকৃত তাৎপর্য জানি, আর সাম্প্রদায়িক বিজেপির কাছে কিছু শিখতে চাই না।

তৃণমূল কংগ্রেস আপনার পাশে সবসময় আছে- দুর্ঘটনা থেকে শুরু করে অসুস্থতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প পেতে সাহায্য করা ও অন্যান্য বিষয়েও।

বিজেপিকে কোনওদিন দেখা যায়নি কোনও রক্তদান শিবিরের আয়োজন করতে বা কোনও সামাজিক কাজ করতে।

বিজেপি বাংলায় অন্য এক সংস্কৃতি আমদানি করতে চায়- উত্তর প্রদেশের সংস্কৃতি। আপনারা বিজেপিকে হারিয়ে দিন ও মমতা ব্যানার্জিকে ৪২ শে ৪২ টা লোকসভা আসন জেতান রাজ্যে।

আপনাদের ভোট আমাদের জন্য মূল্যবান। কংগ্রেস ও সিপিএমকে ভোট দিয়ে তা নষ্ট করবেন না। আমাদের ভোট দিন কারণ একমাত্র আমরাই বিজেপিকে হারাতে পারব। আর ২৩শে মে তে আপনাদের ভোটের ক্ষমতা বুঝতে পারবেন।

আপনাদের সকলকে অনুরোধ করছি রুপালি বিশ্বাসকে ভোট দিতে যাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধর্মনিরপেক্ষ, প্রগতিশীল সরকারের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয় কেন্দ্রে।

বাংলাই পথ দেখিয়েছিল ‘পরিবর্তন’-এর, এবং কেন্দ্রেও সেই পথ দেখাবে বাংলা।

প্রধানমন্ত্রী এবং তার দল সব কিছুকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, এমনকি কে কি তাদের ঘরে খাবে, তার খবরটাও উনি রাখেন, কিন্তু সন্ত্রাসবাদীরা আরডিএক্স আনছে এবং দেশের জওয়ানদের খুন করছে তার খবর ওনার কাছে থাকেনা।

তারা ধর্মের নামে রাজনীতি করে। এমনকি কৃষকরা আত্মহত্যা করছে, উত্তরপ্রেদেশের গোরখপুরের হাসপাতালে যে সমস্ত শিশুরা মারা গেছেন তাদের বেশিরভাগ ছিল হিন্দু। তারা ভাব দেখায় হিন্দু ধর্মের রক্ষাকর্তা হিসেবে, কিন্তু হিন্দু ধর্মের পীঠস্থান বেলুড়মঠকে নূন্যতম স্বীকৃতি ওরা দেয় নি।

আমিও হিন্দু, হিন্দু ধর্মের আচার-অনুষ্ঠান পালন করি কিন্তু আমি নরেন্দ্র মোদী এবং যোগী আদিত্বনাথের ভন্ড হিন্দুত্বে বিশ্বাস করি না।

মোদী হঠাও, দেশ বাঁচাও

বন্দেমাতরম, জয় হিন্দ