এপ্রিল ২৩, ২০১৯
দিল্লীতেও পরিবর্তন হবেঃ খানাকুলে বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ আরামবাগ লোকসভার খানাকুলে এক নির্বাচনী সভা করেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তিনি বিজেপিকে হুঁশিয়ার দিয়ে বলেন, যত বেশী দফায় ভোট করাবে বিজেপি, তত বেশী আসনে জিতবে তৃণমূল। তিনি বলেন, বিজেপির মৃত্যুঘন্টা বেজে গেছে, এবার দিল্লীতেও পরিবর্তন হবে।
তাঁর বক্তব্যের কিছু অংশঃ
- প্রতি বছর ডিভিসি জল ছেড়ে দেয় আমাদের না জানিয়ে এবং ওরা এত পরিমাণে জল ছাড়ে হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর, এদিকের খানাকুল, পুড়শুড়া পুরো জলে ভর্তি হয়ে থাকে। প্রতিবার আমি এসে উদ্ধারের ব্যবস্থা করি।
- আমরা আরামবাগের একটা মাস্টার প্ল্যান করছি, ৪০ কোটি টাকা দেওয়া হয়ে গেছে। এই প্রকল্প শেষ হলে, বন্যা নিয়ন্ত্রণে আসবে।
- আরেকটা প্রকল্প আমরা করছি – দামোদর বেসিন প্রকল্প। এই প্রকল্পও প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার। এই প্রকল্পে বাঁকুড়া, হুগলী, হাওড়া ও বর্ধমান জেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সেচের কাজ, কাল্ভার্ট উন্নয়ন হবে। ৩০ লক্ষ মানুষ উপকৃত হবেন।
- আরামবাগ মহকুমায় ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প করা হচ্ছে।
- একটি রাস্তার প্রকল্পে আমরা হাতে নিয়েছি যার মাধ্যমে দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে উত্তরবঙ্গ সমান্তরাল ভাবে যুক্ত হবে, এই প্রকল্পটি ৩২০০ কোটি টাকার প্রকল্প।
- আরামবাগে আপনাদের জন্য মেডিক্যাল কলেজ তৈরী করে দিচ্ছি। ১০০ জন এখানে ডাক্তারি পড়তে পারবে। এই কলেজে থাকবে ৫০০ শয্যা। এটা করতে আমাদের প্রায় ৩৫৭ কোটি টাকা খরচ হবে।
- আরামবাগ ও শ্রীরামপুরে ইতিমধ্যেই আমরা দুটো মাল্টি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল করে দিয়েছি। এছাড়া, গ্রামীণ হাসপাতালগুলোর উন্নয়ন করা হয়েছে। কামারপুকুর হাসপাতালের মানোন্নয়ন করতে আরও ৪.৫২ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।
- তারকেশ্বর ও সিঙ্গুরের মাঝামাঝি একটি জায়গায় রানী রাসমণি গ্রীন বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে।
- মগরা থেকে বড়জাগরী পর্যন্ত গঙ্গার ওপর ছয় লেনের সেতু করে দেওয়া হয়েছে। চার লেনের রাস্তা করে দেওয়া হয়েছে। ১৭০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।
- ব্যান্ডেল বিদ্যুৎ প্রকল্পকে ৬৫০ কোটি টাকা দিয়ে আধুনিকীকরণ করা হয়েছে। সাতটি নতুন বিদ্যুৎ সাব ষ্টেশন করা হচ্ছে।
- চন্দননগরে আলো হাব তৈরী করা হয়েছে।
- এখানে চারটি ১ হাজার টন ক্ষমতার ধানের গোডাউন কেন্দ্র করা হয়েছে। আরেকটি চাল গোডাউন কেন্দ্র করা হয়েছে। আলুর চাষিদের জন্য ট্রান্সপোর্ট-এর খরচ ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে।
- সাড়ে চার বছর মোদী বিদেশে ঘুরে বেরিয়েছেন। এখন মোদী বাবু যাতে ঘুরে ঘুরে প্রচার করতে পারে, তাই, তিন মাস ধরে ভোট হচ্ছে।
- তিনমাস ধরে সরকারের সব কাজ বন্ধ। সরকার কোনও উন্নয়ন বাবদ টাকা দিতে পারছে না। ১০০ দিনের কাজ, উন্নয়নের কাজ, সব বন্ধ।
- অন্য কোনও রাজ্যে ভয়ে যেতে পারছে না। তাই ভয়ে ভয়ে বাংলায় এসে ভাবছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একটু চমকাই। তোমরা যত বেশী পর্যায় ভোট করবে, আমরা তত বেশী ভোটে জিতব। খানাকুলের বন্যায় কোনও দিন নরেন্দ্র মোদী দেখতে এসেছে? বরঞ্চ কেন্দ্রের ডিভিসি জল ছেড়েছে। পাঁচ বছরে একবার বসন্তের কোকিলের মত আসবে ভোটের সময়।
- বিজেপি গান্ধীজিকে হত্যা করেছে, নেতাজীকে ভুলিয়ে দিয়েছে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে সম্মান করে না, নজরুলকে মানে না, বাবা সাহেব আম্বেদকরের সংবিধানের অনেক কিছু বাতিল করে দিচ্ছে।
- প্রধানমন্ত্রীর জ্ঞান না শুনলে সেখানে সিবিআই, ইডি পাঠিয়ে দেবে। এসব দিয়ে বাংলাকে ভয় দেখানো যাবেনা।
- কখনও দেখেছেন প্রধানমন্ত্রীকে মানুষ ভয় পায়? সবাই ভয়ে আছে। সবাই ওনার বিদায়ের অপেক্ষায় আছে।
- পাঁচ বছর আগে মোদী বললেন, পাঁচ বছরে ১০ কোটি বেকারের চাকরি দেব। একটাও চাকরি দেয়নি। উপরন্তু নোটবন্দীর ফলে ২ কোটি মানুষের চাকরি চলে গেছে।
- ১২ হাজার কৃষক বিচার না পেয়ে আত্মহত্যা করেছে মোদী বাবুর আমলে।
- হঠাত রাত্রিবেলা শুনলেন নোট বাতিল। পরের দিন বাজার যাবেন কি করে ভেবেছিলেন? লক্ষ্মীর ভাঁড়ের টাকা কি করে বদলাবো, সেটা নিয়ে চিন্তায় ঘুম নষ্ট হয়েছিল তো?
- বলেছিল নোটবন্দী করে সন্ত্রাস কমাবো। সেখানে সন্ত্রাস ২৬০% বেড়ে গেছে।
- মোদী নোট বাতিল করে নিজের ক্ষমতা দেখিয়েছিল, এবার আপনারা আপনাদের ভোটের মাধ্যমে ওনাকে বাতিল করুন। আপনাদের যে ক্ষমতা, সেটা টাকা দিয়ে হয় না।
- বিজেপির কোনও কাজ নেই ভাগাভাগি করা ছাড়া। অসমে এনআরসি করে ৪০ লক্ষ লোকের নাম বাদ দিয়ে দিয়েছে। তার মধ্যে ২২ লক্ষ হিন্দু বাঙালী।
- যারা গেরুয়া পরে, তাঁরা প্রচার করে না। বিজেপি হল ‘বকধার্মিক’। বিজেপি না হিন্দু, না মুসলমান। বিজেপি কোন ধর্মের আমদানি করেছে? বাংলায় এই সংস্কৃতি নেই। আমরা রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের, স্বামী বিবেকানন্দের, মা সারদার হিন্দুধর্ম মানি।
- বিজেপি বলছে গদাপুজো করতে। গদা তরোয়াল নিয়ে মসজিদের আশেপাশে মিছিল করছে।
- হিন্দূ হোক বা মুসলমান হোক, যেই দাঙ্গা করুক, আমি কাউকে সমর্থন করি না। আমি দাঙ্গার বিরুদ্ধে। কিন্তু, কেউ যদি মিথ্যে কথা বলে দাঙ্গা লাগাতে চেষ্টা করে, আমি তাকেও ছেড়ে কথা বলব না।
- আরএসএসের লোকরা এখন শপিং মলের ব্যাগে করে টাকা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। টাকা দিয়ে বলছে বিজেপিকে ভোট দিতে। বাংলার সংস্কৃতি ওরা বদলে দেবে।
- এখানে এসে বলছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলায় দুর্গা পুজো করতে দেয়না। আমি আপনাদের পুজো করতে দিই না? জগাই মাধাই এসে এসব মিথ্যে কথা বলছে। ওদের মুখে লিউকোপ্লাস্টার লাগিয়ে দেওয়া উচিৎ। ওদের থোঁতা মুখ ভোঁতা করে দেওয়া উচিৎ।
- একটা বাচ্চা ছেলে মিথ্যে বললে বোঝা যায় বাচ্চাতা হয়ত ভুল করে বলেছে, সেখানে এই প্রধানমন্ত্রী ন্মিথ্যে কথা বলছে। এরকম আর কোথাও দেখিনি।
- ৩৪ বছর অনেক লড়াই করেছি। সিপিএম কম মারেনি। তাতেও পরিবর্তন করেছি। বিজেপি নাকি বাংলা দখল নেবে। দিল্লীতেও পরিবর্তন হবে। বিজেপির মৃত্যুঘন্টা বেজে গেছে আজকের তৃতীয় পর্যায়ের পর।
- কৃষকদের জন্য এক বছর আগে থেকে জমির খাজনা মুকুব করে দেওয়া হয়েছে। কৃষি জমির মিউটেশন ফিও মুকুব করে দেওয়া হয়েছে। প্রতি একরে দু দফায় মোট পাঁচ হাজার টাকা পাবেন চাষ করার জন্য। আপনাদের শস্য বীমার টাকা সম্পূর্ণ রাজ্য সরকার দেয়। ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে কোনও কৃষক মারা গেলে, তার পরিবারকে সরকারের তরফে ২ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে।
- পরিবারের মেয়েরা স্বাস্থ্য সাথী স্মার্ট কার্ড পাবে। রাজ্যের সাড়ে ৭ কোটি মানুষকে এই প্রকল্পে আনা হয়েছে। সেই মহিলা নিজের বাবা মা কেও এই কার্ডের সুবিধা দিতে পারবেন।
- রাজ্যে এখন অনেক কাজের সুযোগ। বছরে ৬ লক্ষ ছেলে মেয়েকে প্রশিক্ষণ দিয়ে চাকরির সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। এই প্রকল্পের জন্য কন্যাশ্রীর পর উৎকর্ষ বাংলাও সারা বিশ্বে প্রথম হয়েছে।
- আমি নিজেও হিন্দু বাড়ির মেয়ে। আমার গুরুজন বা শিক্ষকরা আমায় শেখায়নি আমি হিন্দু বলে আমায় অন্য ধর্মকে অশ্রদ্ধা করতে।
- এনআরসির জন্য বিভিন্ন নথি চাইছে। ৫০ বা ৬০ সালের জন্মের শংসাপত্র অনেকের কাছেই নেই। আমার নিজের মায়ের জন্মের তারিখ আমিও জানি না।
- বিজেপির কোনও পায়ের ছাপ যেন বাংলার কোথাও না পড়ে।
- নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে বলছে আপনাদের নাগরিকত্ব দেবে। কিসের নাগরিকত্ব দেবে? আমরা তো ইতিমধ্যেই নাগরিক। এই বিলে আপনাদের ৬ বছরের জন্য বিদেশী করে দেবে। আপনার সব অধিকার কেড়ে নেবে।
- আমি ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরে গেছিলাম পুজো দিতে। সেখানে আমায় জিজ্ঞেস করল আমার গোত্র কি? আমি বললাম আমার ধর্ম মা মাটি মানুষ গোত্র।