সাম্প্রতিক খবর

এপ্রিল ১৫, ২০১৯

মুর্শিদাবাদে কংগ্রেসের হয়ে কাজ করছে আরএসএস: ভগবানগোলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

মুর্শিদাবাদে কংগ্রেসের হয়ে কাজ করছে আরএসএস: ভগবানগোলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলায় একটি জনসভা করেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি মুর্শিদাবাদের জনগনকে আহ্বান জানান যেন তারা বিজেপির দালালদের ভোট না দিয়ে তৃণমূলের পক্ষে ভোট দেন। তিনি বলেন যে মুর্শিদাবাদে কংগ্রেসের হয়ে কাজ করছে আরএসএস।

ওনার বক্তব্যের কিছু অংশ:

শুভ নববর্ষ। বাংলার ১৪২৬ সাল, নতুন বছর শুরু হল। আপনাদের সকলকে জানাই শুভ নববর্ষের প্রণাম ও সালাম ও ছোট ছোট ভাইবোনেদের অভিনন্দন। খুব ভালো থাকুন আপনারা।

আমরা কংগ্রেস ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিই কারণ সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেসের একটা বোঝাপড়া ছিল চিরকাল। সকাল বেলায় সিপিএম করে এরা, দুপুরবেলায় কংগ্রেস করে আর রাতের বেলায় বিজেপি করে।

বহরমপুরে কংগ্রেস ও অধীর চৌধুরীর হয়ে প্রচার করছে আরএসএস। তাই সিপিএম ও কংগ্রেসকে ভোট দেওয়া মানে বিজেপিকে ভোট দেওয়া। আপনাদের উচিত তৃণমূলকে ভোট দেওয়া।

বিজেপি সরকারের নীতির জন্যে বহু মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি, কৃষকের সমস্যা হল আসল সমস্যা।

এনআরসি ও নাগরিকত্ব বিলের নামে বৈধ ভারতীয়দের তাড়িয়ে দিতে চাইছে। আমরা সবাই নাগরিক। কিন্তু ওরা বলবে ছয় বছরের জন্য বিদেশী হয়ে যাও, তারপর ওরা নাগরিকত্ব দেওয়া নিয়ে ভাববে। কিন্তু ছয় বছরের জন্য এইসব নাগরিকদের কী হবে?

আপনারা যদি বিজেপির বিরুদ্ধে কিছু বলেন তাহলে আপনার বিরুদ্ধে তদন্ত হবে আর গ্রেফতার হবেন। বিজেপির বিরুদ্ধে বলার লোক কম। মোদীর বিরুদ্ধে বললে সিবিআই পাঠিয়ে দেবে, বিজেপির বিরুদ্ধে বললে ইডি পাঠিয়ে দেবে। সবাই ভয়ে বিরুদ্ধে বলতে চায় না। কিন্তু আমরা ভয় পাই না। ওদের প্রত্যেকটা পদক্ষেপ আমাদের উৎসাহ দেবে লড়াই করতে ও তাদের সাথে জিততে।

আমরা ২ কোটি সংখ্যালঘু ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তি দিয়েছি যাতে তারা উচ্চশিক্ষা পায়। এই সম্প্রদায়ের ৭৫,০০০ মানুষ এখন বিভিন্ন হাই-লেভেল কাজে যুক্ত।

হিন্দু ভাই-বোনেদের জন্যেও স্বামী বিবেকানন্দ মেরিট স্কলারশিপ আছে। এছাড়াও, শিক্ষাশ্রী ও কন্যাশ্রী প্রকল্প আছে সকলের জন্য। গরিব পরিবারের মেয়েদের বিয়ের জন্য আমরা রূপশ্রী প্রকল্প চালু করেছি।

আমরা কৃষকদের জমির খাজনা মকুব করে দিয়েছি আর কৃষিজমির মিউটেশনের ফি তুলে দিয়েছি। এমনকি সাধারণ মানুষ যদি তার সন্তানদের নামে সম্পত্তি হস্তান্তর করেন তার মিউটেশন ফি-ও আমরা মকুব করে দিয়েছি। কৃষকদের শস্যবীমার টাকা আমরা সরকার থেকে দিচ্ছি। আমরা কৃষক বন্ধু প্রকল্প করে দিয়েছি রাজ্যের সমস্ত কৃষকের জন্য।

স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পে ইতিমধ্যেই প্রায় ৭.৪ কোটি মানুষের নাম লেখানো হয়েছে। আমরা প্রত্যেক পরিবারের মা-বোনেদের নামে একটি করে স্মার্ট কার্ড করে দেব, তারাই হেড অফ দ্য ফ্যামিলি হিসেবে গণ্য হবেন।

উৎকর্ষ বাংলা প্রকল্পে বছরে প্রায় ৬ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রীদের স্কিল-ট্রেনিং দেওয়া হয়। এই প্রকল্প কিছুদিন আগে বিশ্বের অন্যতম সেরা প্রকল্প বলে পুরস্কার পেয়েছে।

আমরা এই জেলায় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছি। নতুন সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল তৈরি করেছি এবং নতুন অ্যামবুলেন্স পরিষেবা শুরু হয়েছে। সাংবাদিক বন্ধুদের জন্য মাভৈই প্রকল্প শুরু করা হয়েছি।

আজকে রাজ্যে প্রায় প্রত্যেকটির মানুষের জন্য কিছু না কিছু প্রকল্প আছে। কিন্তু মোদী সরকার রাজ্যের জন্য কি করেছে? ওরা শুধু মিথ্যে কথা বলেছে, ডাকাতি করেছে আর বড় বড় কথা বলেছে।

এবার প্রত্যেকটি ভোট গুরুত্বপূর্ণ। আপনি ভোট দিন সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে অত্যাচার করার জন্যে, বিশ্বাসঘাতকতার বিরুদ্ধে, মানুষকে ঠকানোর বিরুদ্ধে।

আমি যখন বাগডোগরা থেকে ফিরছিলাম ওখানকার জেট এয়ারওয়েজের কর্মীরা আমার সাথে দেখা করতে এসেছিল। ওদের চাকরী চলে যাচ্ছে।দেশে বেকারত্ব ও এবং অসন্তোষ ক্রমে বৃদ্ধি পেয়েছে।

আপনার কি এই চাওয়ালা কে চৌকিদার হিসেবে দেখতে চান? এই চৌকিদার চোর ছাড়া আর কিছু নয়। এবং ডাহা মিথ্যেবাদী।

আমি একজন হিন্দু কিন্তু আমি বিজেপি-র হিন্দুত্বে বিশ্বাস করি না। ওটা মিথ্যে, ওটা বিভ্রান্তিকর। আমি স্বামী বিবেকানন্দ আর রামকৃষ্ণ পরমহংসের হিন্দু ধর্মে বিশ্বাস করি।

আমরা যেমন মা কালীর পুজা করি তেমন ইদ উৎসবে যোগ দেই। বড়দিনের সময় তেমন চার্চে যাই এবং গুরু পরবের সময় গুরুদ্বারে যাই।

আপনারা সিপিএম-কে ভোট দেবেন না, তাহলে বিজেপি শক্তিশালী হবে। উন্নয়ন ও অগ্রগতি নিশ্চিত করতে শুধুমাত্র তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দিন।

বিজেপি আবার ক্ষমতায় এলে কোনও সংবিধান থাকবে না, কোনও স্বাধীনতা থাকবে না। সবকিছুই মোদীর নামে হবে আর এমন অনেক কিছু হবে যেটা আমার-আপনাদের কারুর ভালো লাগবে না।

আজ শুভ নববর্ষের দিনে আমি নতুন ভোটারদের কাছে আবেদন করব যে তারা যেন ভবিষ্যতের অগ্রগতির কথা ভেবে ন্যায়সঙ্গত ভাবে তাদের ভোট দেন। ঘৃণা ও হিংসার প্রচার করে এমন সরকার আমরা কেউ চাই না।

আমরা আরএসএস-এর গুন্ডাগিরি বরদাস্ত করি না। আমাদের এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে এবং লড়াই করতে হবে। এবং তার জন্যে প্রথমে আমাদের দিল্লী থেকে মোদী সরকারকে সরাতে হবে।

এবার আমাদের মুর্শিদাবাদ, জঙ্গিপুর এবং বহরমপুর কেন্দ্রতে জিততেই হবে। মনে রাখবেন এটা আমার-আপনার কল্যাণের জন্যে, রাজ্যের কল্যাণের এবং দেশের কল্যাণের জন্য।