সাম্প্রতিক খবর

এপ্রিল ১৯, ২০১৯

আঞ্চলিক দলগুলোই দেশের সরকার গড়বেঃ বহরমপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আঞ্চলিক দলগুলোই দেশের সরকার গড়বেঃ বহরমপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরে এক নির্বাচনী সভা করেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

তাঁর বক্তব্যের কিছু অংশঃ

বহরমপুরে দায়িত্ব নিয়ে আমিই কংগ্রেসকে তৈরী করেছিলাম। তখন আমি রাজ্য যুব কংগ্রেসের সভাপতি ছিলাম। এখানে যখনই মানুষের ওপর কোনও অত্যাচার হয়েছে বা দুর্ঘটনা ঘটেছে, আমি বারবার ছুটে এসেছি।

১৯৯৮ সালে যখন তৃণমূল কংগ্রেস তৈরী হল, মাত্র এক মাস ২২ দিনের মধ্যে আমাদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করতে হয়েছিল। আমি সেই অল্প সময়ে আমাদের প্রতীক সব জায়গায় পৌঁছে দিতে পারিনি। আমার ছবি দেখিয়ে কংগ্রেস বলত, ও তো কংগ্রেসেই আছে।

আজ যখন দেখি আমাদের পুরনো কর্মীরা আবার তৃণমূলে ফিরে এসেছে, আমার খুব ভালো লাগছে দেখে। মনিরুল হাসান বামপন্থী, ও বিজেপির কাছে মাথানত না করে আমাদের সঙ্গে এসেছে।

আমি ছোট থেকে রাজনীতি করি, আমি মাটিকে যতটা চিনি, বুঝেছি মালদা ও মুর্শিদাবাদের সমস্ত আসন তৃণমূল পাবে।

ও সবসময় সবাইকে চোর বলে ডাকাত বলে, সবসময় সারদা নারদা দেখায়, কিন্তু, ও নিজে কত কিছুর সঙ্গে জড়িত আমি বলতে চাইনা। আমিও অনেক কিছু জানি, বৈদিক ভিলেজের কান্ড কি করে হল? জোড়া খুন কি করে হয়েছিল? আমি সবকিছু জানি। কিন্তু, আমি রাজনৈতিক সৌজন্যতা মানি। তাই, এসব নিয়ে কিছু বলিনা।

বুকের পাটা থাকলে সারদার তদন্ত ১৯৮০ সাল থেকে কর, সিপিএম কংগ্রেস সবাই জেলে যাবে। তোমরা সুপ্রীম কোর্টে গিয়ে অ্যাপিল করেছ ২০১১ সাল থেকে তদন্ত করতে। বিজেপি সিপিএমকে ছুঁয়েছে? বিজেপি কংগ্রেসকে ছুঁয়েছে? বিজেপি তৃণমূলকে গালাগাল দেয় কারণ, তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপির বিরুদ্ধে দিল্লী থেকে কলকাতা ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে লড়াই করে।

আমরা প্রাণ দিতে প্রস্তুত থাকি কিন্তু, বিশ্বাসঘাতকতা করিনা। সব থেকে বড় বিশ্বাসঘাতক কংগ্রেস। তেরঙা পতাকা হাতে নিয়ে সকালে সিপিএমের সঙ্গে ভাব করে, বিকেল বেলা বিজেপির সঙ্গে ভাব করে।

এখানে প্রচার করছে আরএসএস। আগে হাফ প্যান্ট পড়ে প্যারেড করত। বাইরে থেকে ওরা প্রচারক নিয়ে এসেছে। এদের কাজ একটাই, হিন্দু হিন্দুতে ঝামেলা লাগাও, হিন্দু মুসলমানে ঝামেলা লাগাও, মুসলমান আদিবাসীতে ঝামেলা লাগাও, আদিবাদী তপশিলিতে লাগিয়ে দাও, সাংবাদিকরা সত্যি কথা বললে তাদের গলা কেটে খুন কর, সবার ফোন ট্যাপ কর, সবার কম্পিউটার ট্যাপ কর। বিজেপির কাজ নোটবন্দী করা, ১২ হাজার কৃষকদের আত্মহত্যা করানো।

মোদী বাবু বলেছিলেন, প্রতি বছর ২ কোটি মানে পাঁচ বছরে ১০ কোটি বেকারকে চাকরি দেবে। সেখানে নোটবন্দীর ফলে এক বছরেই ২ কোটি মানুষ নতুন করে বেকার হয়ে গেল। জেট এয়ারওয়েজের কর্মীরা হাহাকার করছে, বিসিএনএলের কর্মীরা জানেনা তাদের কি করে চলবে। বাংলায় অনেক শিল্প বন্ধ হয়ে গেছে।

বাংলার ১০০% মানুষের কাছে কোনও না কোনও ভাবে একটা না একটা প্রকল্প পৌঁছে দিয়েছে রাজ্য সরকার।

এখানে কংগ্রেস বিজেপির সমর্থনে জেতে। ক্ষমতা থাকলে নিজে একা লড়ে জিতত।

তৃণমূল কংগ্রেস বাঘের বাচ্চা। আমাদের বিরুদ্ধে সিপিএম লড়ছে, কংগ্রেস লড়ছে, বিজেপি লড়ছে। কিন্তু, আমাদের তাতে কিছু এসে যায় না। যে পাঁচটা আসনে নির্বাচন হয়েছে, সেগুলোতেও জিতব। আগামীদিনও জিতব।

যেখানে তৃণমূল কংগ্রেস শক্তিশালী, সেখানে কংগ্রেস নয়। যে দল যেখানে শক্তিশালী, সেখানে তাকে ভোট দিন। আমরা ভোট ভাগাভাগি করবনা, তাতে বিজেপি শক্তিশালী হবে।

সালটা ১৪২৬, বাংলা চায় ৪২ শে ৪২। তৃণমূল কংগ্রেস সকলকে নিয়ে দিলীর সরকার গড়বে।

মোদীর বিরুদ্ধে কংগ্রেস ভয়ে মিউ মিউ করে। এবারে বিজেপি আসছে না।

মোদী যদি ফের ক্ষমতায় আসে, আগামী দিন আর ভোট হবেনা। বিজেপির নেতারা ইতিমধ্যেই বলা শুরু করে দিয়েছে, এটাই শেষ ভোট। বিজেপি ফিরলে আর সংবিধানও থাকবে না, গণতন্ত্রও থাকবে না। মানুষকে বাঁচতে দেবে না, এনআরসি করে তাড়িয়ে দেবে। অসমে ২২ লক্ষ হিন্দু বাঙালী এবং ২০ লক্ষ মুসলমান বাঙালীর নাম বাদ দিয়েছে এনআরসি করে। বিজেপি অনেক ঐতিহাসিক জায়গার নাম বদল করে দিয়েছে।

বিজেপি ভারতবর্ষের চেহারা পাল্টে দিচ্ছে। আমি এই ভারতবর্ষকে চিনিনা। আমরা যে ভারতবর্ষ চিনি সেই ভারতবর্ষ রামকৃষ্ণের ভারতবর্ষ, স্বামী বিবেকানন্দের ভারতবর্ষ, নেতাজীর ভারতবর্ষ, রবীন্দ্রনাথের ভারতবর্ষ, আম্বেদকরের ভারতবর্ষ, আবুল কালাম আজাদের ভারতবর্ষ।

বাংলায় এসে বলছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলায় দুর্গা পুজো, কালী পুজো করতে দেয়না। আপনারা বলুন এখানে হয় কি হয় না?

NRCর বদলা আমরা নেব বিজেপিকে ভোটে হারিয়ে NBC (জাতীয় বিদায় শংসাপত্র) হাতে ধরিয়ে দিয়ে। নাগরিকত্ব সংশোধন বিল আনবে বলছে। আজ আপনি নাগরিক আছে, এই বিল আনলে ছবছর আপনাকে বিদেশী করে দেওয়া হবে। আপনাদের সমস্ত অধিকার কেড়ে নেওয়া হবে। তারপর আপনাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে কিনা কোনও ঠিক নেই।

বিজেপি ক্ষমতায় এলে একদিন হয়ত বলবে আপনার নাগরিকত্ব বাতিল, হয়ত বলবে সংখ্যালঘু ভাতা বাতিল। শুধু চালু করবে গদা ও তরোয়াল। এটা কোনও রাজনৈতিক দলে কাজ? বিজেপির গদা আর তরোয়াল হিন্দু ধর্ম নয়।

বিজেপির বিরুদ্ধে জবাব দেওয়ার এই সুযোগ যদি হারান, আগামী দিন আর কারোর কোনও অধিকার থাকবে না।

আমরা তো কৃষকদের খাজনা মুকুব করে দিয়েছি, কৃষি জমির মিউটেশন ফি মুকুব করে দিয়েছি। কৃষকদের প্রতি একরে ৫ হাজার টাকা করে দিচ্ছি। আমরা বিনা পয়সায় শস্যবীমা করে দিয়েছি। কোনও কৃষক মারা গেলে তার পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে সরকার দেয়।

রাজ্যের সাড়ে ৭ কোটি রাজ্যবাসীর জন্য আমরা স্বাস্থ্যসাথী স্মার্ট কার্ড করছি। বাড়ির মহিলাদের নামে এই কার্ড হবে। কোনও প্রয়োজন হলে ঐ মহিলা তাঁর বাবা মার চিকিৎসাও করাতে পারবে এই কার্ডে।

আমরা ৪২টা আসন পেলে দিল্লী দখল করবই। আমাদের প্রার্থী অপূর্ব সরকারকে আপনারা জয়ী করুন। বসন্তের কোকিলদের ভোট দেবেন না। জোড়াফুলে ভোট দিন।

দেশ বাঁচাতে তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দিন। আগামী দিন বিজেপিকে আর অধির চৌধুরীকে করতে হবে খালি।

২৯শে এপ্রিল আসছে দিন, জোড়াফুলে ভোট দিন আর কংগ্রেস, সিপিএম, বিজেপি মানে জগাই মাধাই গদাইকে গণতান্ত্রিকভাবে কবর দিন।