সাম্প্রতিক খবর

এপ্রিল ৫, ২০১৯

উন্নয়নে ভারতকে টেক্কা দিয়েছে বাংলা, তথ্যের ঝুলি নিয়ে মুখর অমিত মিত্র

উন্নয়নে ভারতকে টেক্কা দিয়েছে বাংলা, তথ্যের ঝুলি নিয়ে মুখর অমিত মিত্র

সাংবাদিক বৈঠক করে বাংলার সার্বিক অগ্রগতির পরিসংখ্যান তুলে ধরলেন রাজ্যের অর্থ ও শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্র। মোদীকে ‘ডিরেলমেন্ট মাস্টার’ তকমা দিয়ে পাঁচ বছরে ভারতের অগ্রগতি লাইনচ্যুত হওয়ার যাবতীয় পরিসংখ্যান তুলে ধরেছেন অর্থমন্ত্রী। সেই সব দাবির স্বপক্ষে কেন্দ্রীয় সরকারেরই অধীনস্থ নানা সংস্থার তথ্য পেশ করেছেন তিনি।

দু’হাজার কোটির উপর খরচ করে ৫৫ মাসে ৯২টি দেশ সফর করা নরেন্দ্র মোদীর জমানায় ভারতে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ ২৩ শতাংশ থেকে মাইনাস দশে চলে গেছে বলে তীব্র কটাক্ষ করেছেন অর্থমন্ত্রী। আর্থিক বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান-বেকারত্ব দূরীকরণ, শিল্পবৃদ্ধি — সবেতেই মমতার বাংলা কী ভাবে মোদীর ভারতকে টেক্কা দিয়েছে, তারও অনুপুঙ্খ বিবরণ তথ্য পেশ করা হয়েছে সাংবাদিক বৈঠকে।

অমিত মিত্র বলেন, ‘এক্সপায়ারিবাবু মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছেন স্পিডব্রেকার। ইয়ার্কি হচ্ছে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফ থেকে আমি মোদীকে চ্যালেঞ্জ করছি। আমি বলব, উনি ডিরেল মাস্টার। ট্রেনটা চলছিল লাইনের উপরে। মোদী সেটাকে লাইনচ্যুত করে দিলেন। প্রধানমন্ত্রী ৫৫ মাসে ৯২টা দেশ সফর করেছেন। কোথাও আবার একাধিক সফর করেছেন। তাঁর ঘুরে বেড়ানোর জন্য জনসাধারণের টাকা থেকে খরচ হয়েছে ২ হাজার ২১ কোটি। অথচ, প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ কি হয়েছে? ২০১৪ সালে প্রায় তেইশ শতাংশ হারে বাড়ছিল। ২০১৭-তে এফডিআইয়ের হার মাইনাস ১০.২৬ শতাংশ।’ তাঁর আরও দাবি, কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের অধীনস্থ সংস্থা ফিনানশিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিটের সদ্যপ্রকাশিত তথ্য বলছে ব্যাঙ্কগুলিতে ১৪ লক্ষ সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে।

তাঁর কথায়, ‘২০১৫-১৬- অর্থবর্ষে দেশের জিডিপি বাড়ছিল ৮ শতাংশ হারে। নির্মম, স্বৈরাচারী নোটবন্দির জন্য ১৭-১৮ সালে সেটা ৬.৭ শতাংশে নেমে যায়। মোদী বলছেন মেক-ইন-ইন্ডিয়া। শিল্প বাড়ছিল প্রায় দশ শতাংশ হারে। নোটবন্দির ফলে সেই হার ১৭-১৮ অর্থবর্ষে নেমে এল ৫.৯৫ শতাংশে। উৎপাদন শিল্পে বৃদ্ধির হার ২০১৫-১৬ তে ছিল ১৩ শতাংশের উপর। নোটবন্দির পর সেই হার ৫.৯৩ শতাংশ নেমে যায়।’

অর্থমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মোদী জমানায় ব্যাঙ্কগুলির অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ ২ লক্ষ কোটি টাকা থেকে ১৭-১৮ অর্থবর্ষে বেড়ে হয়েছে ১০ লক্ষ কোটি। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘পালিয়ে যাওয়া ঋণখেলাপিরা হিমশৈলের চূড়া মাত্র। এই রকম হাজার হাজার মানুষ আছে যারা ঋণ সুদ বা আসল শোধ দিতে পারছে না। তাঁদের মধ্যে যাঁরা সৎ তাঁরাও আর্থিক বৃদ্ধি, শিল্পবৃদ্ধির হার পড়ে যাওয়ায় ঋণ শোধ করতে পারছেন না। মোদী সরকার জবাব দাও।’

মোদী জমানায় বেকার সমস্যার ‘ভয়াবহ’ রূপ তুলে ধরতে অমিত বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সংস্থা ন্যাশন্যাল স্যাম্পল সার্ভে অর্গানাইজেশনই বলছে দেশে বেকারত্বের হার গত ৪৫ বছরে সর্বাধিক। ২ কোটি মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। সিএমআইইর মতো নিরপেক্ষ গবেষণা সংস্থাও বলেছে, ২০১৮ সালে ১ কোটির উপর কর্মসংস্থান নষ্ট হয়েছে। মোদী সরকার এর জবাব দাও।’ আর বাংলার ছবিটা? অর্থমন্ত্রীর কথায়, ‘বাংলায় ৪০ শতাংশ বেকারত্ব কমেছে। গোটা দেশে যখন ২ কোটি চাকরি নষ্ট হয়েছে, এ রাজ্যে ১ কোটি চাকরি তৈরি হয়েছে। আমি বিধানসভাতেও তথ্য দিয়েছি। কেউ বিরোধিতা করেননি। রাজ্যে শিল্পবৃদ্ধির হার ১৬.২৯ শতাংশ।’

আর্থিক বৃদ্ধির হারে গোটা দেশের থেকে বাংলা কতটা এগিয়ে তা বোঝাতে অমিত বলেন, ‘২০১৭-১৮-তে পশ্চিমবঙ্গে আর্থিক বৃদ্ধির হার ৯.১৫ শতাংশ। ২০১৮-১৯ এ ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার একটু বেড়ে ৭.২৩ শতাংশ। গতকালই এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক বলেছে এটা আরও নীচে নেমে এসে ৭ শতাংশে ঠেকবে। সে জায়গায় বাংলার জিডিপি বাড়ছে প্রায় ১১ শতাংশের উপর।’ রাজ্যের পরিকল্পনা খাতে ব্যয় বাম জমানার শেষ বছরের তুলনায় ৬ গুণ বেড়ে ৮৫ হাজার ৩২৮ কোটি টাকা হয়েছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। মূলধনী ব্যয়ও (যা দিয়ে রাজ্যের সম্পদ তৈরি হয়) বাম আমলের শেষ বছরের তুলনায় অনেক বেড়ে ২ হাজার ২২ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। ২৬ হাজার কিলোমিটার নতুন গ্রামীণ রাস্তা হয়েছে এবং ২২ হাজার কিলোমিটার রাজ্য সড়ক মেরামত করা হয়েছে বলে হিসেব দিয়েছেন মন্ত্রী।

সদ্য হাতে আসা তথ্য অনুযায়ী রাজ্যের নিজস্ব রাজস্ব আদায় প্রায় ৬৩ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছে গেছে।