এপ্রিল ২৯, ২০১৯
মোদীবাবুর রাজনৈতিক সৌজন্যতা নেইঃ স্বরূপনগরে বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
আজ উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগরে এক নির্বাচনী সভা করেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তিনি বলেন, তিনি এরকম দাঙ্গায় প্ররোচনা দেওয়া প্রধানমন্ত্রী এর আগে দেখেননি যিনি উস্কানিমূলক বক্তব্য দেন। আমি সৌজন্যতা পালন করি। প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সৌজন্যতা নেই। আমি শুধু প্রধানমন্ত্রীকে নয়, অনেককে উপহার পাঠাই। ওটা আমি না, বাংলা থেকে দেওয়া হয়। আমরা বাংলায় প্রত্যেকে প্রত্যেককে উপহার পাঠাই। এটা বাংলার সংস্কৃতি।
তাঁর বক্তব্যের কিছু অংশঃ
আমাদের সরকার যেমন কৃষকদের জমি জোর করে দখল করতে দেয় না, তেমনই আমাদের সরকার জনগণের ওপর জোর করে করও বসায় না।
আমি সৌজন্যতা পালন করি। আমি শুধু প্রধানমন্ত্রীকে নয়, অনেককে উপহার পাঠাই। ওটা আমি না, বাংলা থেকে দেওয়া হয়। আমরা বাংলায় প্রত্যেকে প্রত্যেককে উপহার পাঠাই। এটা বাংলার সংস্কৃতি। আমাকে যদি বাড়িতে ডেকে কেউ এক কাপ চা খাওয়ায়, আপনি সেটা নিয়ে প্রচার করে বেড়াবেন? কি ধরণের মানুষ এরা?
আমি রাজনীতি করলেও, আমার যদি কেউ চিরশত্রুও হয়, তাঁর সঙ্গে দেখা হলে আমি আমার বসার জায়গা ছেড়ে তাঁকে বসতে বলি। এটা আমাদের সংস্কৃতি। আপনারা জানেন সিপিএম আমার ওপর কত অত্যাচার করেছে, তা সত্ত্বেও বুদ্ধদেব বাবু যখন অসুস্থ, আমি অনেকবার তাঁর বাড়ি গেছি। আমি নিয়মিত খোঁজ নিয়েছি। জ্যোতি বসুর শেষ দিনেও আমি তাঁকে অনেকবার দেখতে গেছি। সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতেও আমি গেছি। আমি এই সংস্কৃতিতেই বিশ্বাসী। আমি সিপিএম নই, আমি বিজেপি নই, এটা বাংলার সংস্কৃতি, এটা আমার সংস্কৃতি, এটা আমার দলের সংস্কৃতি। ভালো ফল হলেও আমরা পাঠাই, এতে চাটুকারিতার কিছু নেই।
পাঁচ বছর কেন্দ্রে ক্ষমতায় ছিল বিজেপি। আপনারা দেখেছেন ওরা কি ভয়ঙ্কর।
পাঁচ বছর আগে নরেন্দ্র মোদী গরম গরম কথা বলেছিল মানুষকে, বাইরে থেকে কালো টাকা ফেরত নিয়ে এসে সবাইকে ১৫ লক্ষ টাকা করে দেবে। এক পয়সাও কারোকে দিয়েছে? বরঞ্চ নোটবন্দী করে আপনাদের পকেট মেরেছে।
বিজেপি বলেছিল আচ্ছে দিন নিয়ে আসবে। আপনারা পাঁচ বছরে কি আচ্ছে দিন দেখলেন? নরেন্দ্র মোদীর আচ্ছে দিন ১২ হাজার কৃষকের আত্মহত্যা করার দিন, নরেন্দ্র মোদীর আচ্ছে দিন ৩ কোটি মানুষের বেকার হওয়ার দিন, নরেন্দ্র মোদীর আচ্ছে দিন পেট্রোলের দাম বাড়িয়ে দিন, নরেন্দ্র মোদীর আচ্ছে দিন গ্যাসের দাম বাড়িয়ে দিন, নরেন্দ্র মোদীর আচ্ছে দিন ডিজেলের দাম বাড়িয়ে দিন, নরেন্দ্র মোদীর আচ্ছে দিন তপশিলিদের মেরে দিন, নরেন্দ্র মোদীর আচ্ছে দিন সংখ্যালঘুদের খুন করে দিন, নরেন্দ্র মোদীর আচ্ছে দিন সাংবাদিক হত্যা করার দিন।
সাড়ে চার বছর মোদী বিদেশে ঘুরে বেড়িয়েছে। বন্যায় মানুষের কাছে এসেছে? কোনও বিপদে মানুষের কাছে এসেছে? বাংলায় এক পয়সাও দিয়েছে? এমনকি শুধু বাংলা নামটাও এতোবার বিধানসভায় পাশ করে পাঠানোর পর অনুমোদন দিচ্ছে না। এদের বাংলা নামটাতেই হিংসা, ঈর্ষা। বাংলায় এসে দুটোই কাজ করে মা মাটি মানুষকে গালাগাল দেওয়া আর চিট ফান্ডের বিষয়ে কথা বলা। আমি বলি, চিট ফান্ড চিটিংবাজরা করে, আমাদের দলে চিটিংবাজ নেই। আপনার বিজেপি দলে চিটিংবাজ আছে। তাই এক একটা মীটিং করতে আপনারা কোটি কোটি টাকা খরচ করেন।
আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি, আমাদের আমলে একটাও চিটফান্ড হয়নি। সিপিএমের আমলে হয়েছে। আমরা গ্রেপ্তার করেছি, ৩০০ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছি। কিন্তু, মোদী সিপিএমের একজনকেও গ্রেপ্তার করলেন না কেন?
২০১৪ সালে চিট ফান্ড কেস শুরু হয়েছে, আজ ২০১৯ সাল। পাঁচ বছরেও কেসের সমাধান হল না কেন? এখনও এই কেসে কিছু প্রমাণিত হয়নি। এখনও কোর্টে কেস চলছে। আপনার বিরুদ্ধে মামলা করা উচিৎ।
সব থেকে বড় চিটার তারা যারা ভারতবর্ষকে চিট করে। পিএসিএল এর বিরুদ্ধে কোনও অনুসন্ধান হয়েছে? তাকে বিদেশে যেতে দিলেন কেন? সাহারা কোম্পানিকে তো আপ্নারাই সাহায্য করেছিলেন।
আপনাদের দল মিটিঙে লোক আনে টাকা দিয়ে, এজেন্সি দিয়ে।
আমি বিএসএফ কে অনুরোধ করব, আপনারা দয়া করে গ্রামের লোকদের বলবেন না, বিজেপিকে ভোট দাও। আজ সেন্ট্রাল ফোর্স দুবরাজপুরে বুথের মধ্যে গুলি চালিয়েছে। এটা সিআরপিএফের কাজ নয়, আইন শৃঙ্খলা রাজ্যের বিষয়। সারা বছর রাজ্য পুলিশ আপনাদের পাহারা দেয়। পুলিশ গুলি চালাক, তান্ডব করুন, লোক মারুক, এটাও আমি চাই না। বিজেপিকে বলব, এই নোংরা রাজনীতি করবেন না। বাংলায় এই নোংরা রাজনীতির জায়গা নেই।
একটা প্রধানমন্ত্রী এতো মিথ্যে কথা বলে আপনারা কল্পনাও করতে পারবেন না। এখানে এসে বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলায় দুর্গা পুজো করতে দেয়না। এখানে দুর্গা পুজো হয়? ঈদ হয়? বড়দিন হয়?
এই নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। আগে অনেক নির্বাচন দেখেছেন। কিন্তু, আপনারা কখনও মোদীবাবুর মত এতো অহঙ্কারী, ঔধত্যপূর্ণ, ঈর্ষাকারী, দাঙ্গাকারী প্রধানমন্ত্রী দেখেননি। মোদী যখন প্রধানমন্ত্রী হল, আমাদের খুব খারাপ লেগেছিল। কারণ, গুজরাটের দাঙ্গার রক্ত আজও ওর হাতে লেগে আছে।
নোটবন্দীর আধ ঘণ্টার মধ্যে আমি বিবৃতি দিয়েছিলাম যে এটা খারাপ হচ্ছে। আমাকে অনেকে জিজ্ঞেস করে আপনি এতো তাড়াতাড়ি কি করে বুঝলেন নোতবাতিল দেশের জন্য খারাপ হবে? আমি তাদের বলেছিলাম, মেয়ে আর বাচ্ছারা যখন কিছু বলে, একদম ঠিক বলে। কতদিন চাষিরা চাষ করতে পারেনি, দোকানদাররা দোকান চালাতে পারেনি, মা বোনেদের কষ্ট করে জমানো সব টাকা বাতিল হয়ে গেছে।
মোদী বাবু, এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচন নয় যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আপনাকে জবাব দেবে। এটা আপনার নির্বাচন। আপনি পাঁচ বছর দিল্লীতে কি করেছে, তার কৈফয়েত দিন।
এক মনীষী বলেছেন, আপনি কিছু মানুষকে সব সময় বোকা বানাতে পারেন, আপনি অনেক মানুষকে কিছু সময় বোকা বানাতে পারেন। কিন্তু, আপনি কখনও সব মানুষকে সবসময় বোকা বানাতে পারবেন না।
নির্বাচনের সময় আরএসএসকে পাঠিয়ে দিয়েছে। এরা লুকিয়ে থাকে, কোনও মানুষ এদের চেনেনা। মোদী বাবু, বারানসী আপনার কেন্দ্র, সেখানকার গঙ্গা আজ পর্যন্ত পরিষ্কার করতে পারলেন না কেন? পাঁচ বছর হিন্দু ধর্ম দেখিয়েছেন, একটা রাম মন্দির তৈরী করতে পেরেছেন? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবাইকে নিয়ে চলে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি করেছে, তারাপীঠের মন্দির দেখে এসো, দক্ষিণেশ্বরের স্কাইওয়াকে হেঁটে এসো, তারকেশ্বরের মন্দির দেখে এসো, অনুকূল ঠাকুরের মন্দির দেখে এসো, ইস্কনের মন্দির দেখে এসো মায়াপুরে, বেলুড়ে দেখে এসো, বক্রেশ্বর দেখে এসো, কঙ্কালিতলা দেখে এসো, ফুরফুরা শরীফ দেখে এসো, পাথরচাপরি দেখে এসো।
আমরা দাঙ্গাবাজদের হিন্দুত্বে বিশ্বাস করিনা।
অসমে এনআরসি করে ২২ লক্ষ হিন্দু বাঙালী ও ২০ লক্ষ মুসলমান বাঙালীর নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। বাঙালীদের গুলি করে মারা হয়েছে, ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। প্রতিদিন তাদের তাড়ানোর হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমরা ছাড়া কোনও দল ওদের পাশে দাঁড়ায়নি। আমি আমার দলের মন্ত্রী, সাংসদদের পাঠিয়েছিলাম। এদের ওখানে মেরেছিল, তাও ওরা দমে যায়নি।
এখানে এসে মোদী বলছে বাংলায় এনআরসি করব। এনআরসির এন করে দেখাও, মানুষ তোমায় কি করে দেখ। তোমায় চিরকালের জন্য বিদায় দিয়ে দেবে। কি সাহস ওদের। এখানে কোনও এনআরসি করতে দেওয়া হবেনা।
নাগরিকত্ব বিলে প্রথম ছবছর আপনাকে বিদেশী করে দেবে। আপনার সমস্তও কাজকর্ম, অধিকার চলে যাবে। আপনারা তো নাগরিক।
বিজেপির ভয়ঙ্কর মাকড়সার জাল ছিঁড়ে ফেলে দিতে হবে।