এপ্রিল ৩, ২০১৯
মোদিবাবুকে এখন থেকে 'এক্সপায়ারি বাবু' বলে ডাকব: দিনহাটায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ কোচবিহারের দিনহাটা থেকে লোকসভা নির্বাচনের প্রচার শুরু করলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের কিছু অংশ:
- আমার সভা শুরু হতে দেরি হল কারণ বড় নেতা প্রধানমন্ত্রী যতক্ষণ না শিলিগুড়ি থেকে কলকাতা পৌঁছেছেন ততক্ষণ আমাদের প্লেন অপেক্ষা করছিল। আমরা বসে রইলাম ৪০ মিনিট কারণ ভারতবর্ষে একজনেরই নিরাপত্তা আছে। আমি কারো নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলি না, উনি যত খুশি নিরাপত্তা নিয়ে ঘুরে বেড়াক। কিন্তু পাবলিক যাতে হ্যারাস না হয় সেটা প্রয়োজনীয়।
- আপনি সিকিউরিটির সঙ্গেই ঘুরে বেড়ান কারণ মানুষের সঙ্গে আপনার যোগাযোগ নেই। কিন্তু একটা মিটিংকে কেন্দ্র করে রাস্তা, আকাশপথ, পরিষেবা সব বন্ধ হয়ে যাবে এটা ঠিক নয়।
- আমাদের সরকার এই কোচবিহারের ছিটমহলের বাসিন্দাদের জমি সমস্যার সমাধান করেছি, ১১০০ কোটি টাকা তাদের উন্নয়নের জন্য খরচ করা হচ্ছে।
- আগে কোচবিহারে কোন উন্নয়ন হয়নি, এখন এখানে রাস্তা, কিষান মাণ্ডি, পলিটেকনিক কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, মাদার–চাইল্ড হাব, সেতু, বিনা পয়সায় চিকিৎসা সব করা হয়েছে। একটা সরকার দেখান যে এই কাজ করতে পেরেছে।
- আমাদের সরকার আসার পর ২ কোটি ১০ লক্ষ সংখ্যালঘু ছেলেমেয়েকে স্কলারশিপ দিয়েছি, স্বনির্ভর প্রকল্পে ৪ লক্ষ ছেলেমেয়েকে সাহায্য করেছি, ৯৭% ওবিসি দের সংরক্ষণ করেছি এবং এর মাধ্যমে ৭০,০০০ ছেলে মেয়ে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হয়েছে। ৭০ বছরে ২.৫ লক্ষ তপশিলিরা শংসাপত্র পেয়েছে আর এই সাড়ে ৭ বছ্রে আমরা ৯ লক্ষ মানুষকে এই শংসাপত্র দিয়েছিকন্যাশ্রী সকলে পাচ্ছে, ১ কোটি ছেলেমেয়ে বিনা পয়সায় সবুজ সাথী সাইকেল পাচ্ছে, ৯৮% লোক ২ টাকা কিলো চাল পাচ্ছে, বিনামূল্যে চিকিৎসা, ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে
- এবার থেকে আমি আর মোদী বাবুকে প্রধানমন্ত্রী বলবো না, এক্সপায়ারি বাবু বলব কারণ ওনার সরকারের এক্সপায়ার হয়ে গেছে
- এক্সপায়ারি বাবু আজ শিলিগুড়িতে বলেছেন আমাদের সরকার গরীবের জন্য কাজ করে না, আর আপনি কি করেছেন ৫ বছরে? আমি কৈফিয়ত চাই। আপনি যদি মনে করেন আপনি ঠিক বলেছেন তাহলে আমার সাথে সরাসরি বিতর্কে আসুন, আপনি প্রশ্ন করবেন আমি উত্তর করবো।
- রোজ রোজ মিথ্যে কথা বলবেন না। প্রধানমন্ত্রী মিথ্যে কথা বলে না, প্রধানমন্ত্রীর শিষ্টাচার চৌকিদার আর মিথ্যচার নয়। ৫৬ ইঞ্চি চটি নিয়ে ৫৬০ ইঞ্চি মিথ্যে বলছেন , কুৎসা-অপপ্রচার করছেন। উনি জন্ম-মৃত্যু কিছুই জানেন না, আমার পঞ্চায়েত নির্বাচনের স্লোগান জগাই-মাধাই কপি করে বলে বেড়াচ্ছেন, নিজেরা তো কিছু তৈরী করুন।
- এক্সপায়ারি প্রধানমন্ত্রী হেরে যাবেন জেনে গায়ের জোরে, ভয় পেয়ে মিথ্যে কথা বলছেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখে মিথ্যে শোভা পায় না।
- আমি আপনাকে চ্যালেঞ্জ করে বলছি বাংলা ১০০ দিনের কাজের খরচে ১ নম্বরে, ৫ বার কৃষি কর্মন পুরস্কার দিয়েছে ওদের সরকার, গ্রামীণ আবাসনে ১ নম্বরে। ওনার সরকারী কাগজ খুলে দেখুন। GSDP বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি বাংলায়, বাংলাই পারে ভারতবর্ষকে বদলে দিতে। আপনি বাংলাকে চেনেন না।
- লজ্জা করে না মিথ্যে কথা বলতে? লজ্জা হয়, ঘৃণা হয় – এরকম লোককে মানুষ প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছে
- কয়েকটা গুন্ডা এনে তৃণমূলকে লুঠেরা বলছে। আগে উনি জবাব দিন যে উনি কাকে কোচবিহারে টিকিট দিয়েছেন? যাকে তৃণমূল তাড়িয়ে দিয়েছিল, আর এই নিশিথ প্রামানিককে সিবিআই চিঠি দিয়েছে, হিউম্যান ত্রাফিকিং বেনামি সম্পত্তি , অস্ত্র এইসবের সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগে
- উনি বলছেন চিটফান্ড তৃণমূল করেছে। আপনাকে প্রমাণ করতে হবে নাহলে মানুষ আপনাকে দড়ি বেঁধে জেলে নিয়ে যাবে।
তৃণমূলের আমলে একটাও চিটফান্ড হয়নি। আমরা গ্রেফতার করিয়েছি চিটফান্ড এর নেতাকে। আমরা মানুষের ৩০০ কোটি টাকা ফিরিয়ে দিয়েছি। সিপিএমের আমলে সারদা হয়েছে অথচ একজন সিপিএম, কংগ্রেসের নেতাকে ধরা হয়নি। - সারদার কাছ থেকে কত টাকা নিয়েছে সিপিএম? সাহারা ডায়েরি কোথায় গেল? চোরের মায়ের বড় গলা।
- আবার বাংলার উন্নয়ন নিয়ে কথা বলছেন? লজ্জা করে না? ক্ষমতা থাকলে বিতর্কে আসুন, নাহলে কোন জনসভার আয়োজন করুন। আমি, আপনি দুজনেই থাকবো। আমি রেকর্ড নিয়ে কথা বলি; আপনার মত মিথ্যে কথা বলি না, দাঙ্গা করি না।
- আমরা কৃষকের আয় ৩ গুন্ বাড়িয়েছি আর আপনার রাজত্বে ১২,০০০ কৃষক আত্মহত্যা করেছে।
- নতুন ভোটারদের আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি, আপনাদের ভোট যেন বিজেপিকে বদলায়, দিল্লিকে পাল্টায় আর দেশকে বদলায়।
- সবেচেয়ে বেশি বঞ্চিত হয়েছে যুব সম্প্রদায়। ২০১৭-১৮ সালে মোদী বাবুর আমলে ২ কোটি বেকার হয়েছে, আর আমরা বাংলায় ১৪৪ কোটি শ্রমদিবস তৈরি করেছি। ১ কোটি কর্মসংস্থান করেছি, তাই দয়া করে মানুষকে বোকা বানানোর জন্য এসব মিথ্যে বলে লাভ নেই
- মোদীবাবুর ‘আয়ুষ্মান’ প্রকল্প-তে আমাদের রাজ্য থেকে ৪০% টাকা দিতে হত। আমাদের রাজ্যে ‘স্বাস্থ্য সাথী’ প্রকল্পে ৭.৫ কোটি মানুষ সাহায্য পান, এমনকি যারা নতুন মা হতে যাচ্ছেন তারাও সাহায্য পান।
- বিজেপি-র মিটিং-এ এত নিরাপত্তা রক্ষী লাগে কারণ ওরা মানুষের আস্থা হারিয়ে ফেলেছে
- কেন্দ্রীয় সরকার কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারের জন্য কিছুই করেনি। আমরা সরকার গঠন করার পর ছিটমহল সহ অন্যান্য সমস্যার সমাধান করে দিয়েছি।
- ইলেকশন কমিশন বলেছে প্রচার করার সময় কোনও রাজনৈতিক দল দেশের সৈন্যদের কথা বলতে পারবে না, অথচ বিজেপির নেতারা বলে বেড়াচ্ছে ‘মোদীর সেনা’। এমনকি প্রধানমন্ত্রীও বলছেন। ওদের কি লজ্জা নেই?
- আমাকে ভয় পাওয়াতে যা ইচ্ছে করতে পার, আমি পরোয়া করি না, তোমরা আমার কিছু করতে পারবে না।
- এই দলটা কোথা থেকে এত টাকা পাচ্ছে? এখন তো যেখানে সেখানে টাকা বিলিয়ে ভোট চাইছে। আসলে মানুষের টাকা ওরা মেরে দিয়েছে।
- উনি তো নিজের প্রচার করতেই ব্যস্ত, প্রধানমন্ত্রী হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। ওনার নামে সিনেমা হচ্ছে, গায়ের জামা হচ্ছে, দোকান হচ্ছে।
- আমি তো ওদের বলেই দিয়েছি, “আগে দিল্লী সামলা, পরে আসবি বাংলা”
- দেশের মানুষ এবার দেখবে ‘ভোটার স্ট্রাইক’ যা ওদের তথাকথিত সার্জিকাল স্ট্রাইকের থেকে অনেক গ্রহণযোগ্য হবে
- আমরা সবাই নাকী দেশের শত্রু, দেশদ্রোহী আর উনি একা নাকি দেশপ্রেমী। ওনার কাছ থেকে আমরা দেশভক্তির সার্টিফিকেট চাইতে যাব না।
- আমি আজকে এই দিনহাটা থেকে নির্বাচনী প্রচার আরম্ভ করলাম। আমাদের এটা নিশ্চিত করতে হবে যে উত্তরবঙ্গের প্রতিটা জেলা থেকে মানুষ ভোট দিয়ে যেন বিজেপি তথা মোদীকে পরাজিত করে।