এপ্রিল ১৮, ২০১৯
আচ্ছে দিনের নামে দেশকে সর্বস্বান্ত করে দিয়েছে বিজেপিঃ কালিগঞ্জে বললেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ নদীয়ার কালিগঞ্জে এক নির্বাচনী সভা করেন তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
তাঁর বক্তব্যের কিছু অংশঃ
এখানে উপস্থিত প্রত্যেককে ধন্যবাদ, প্রণাম, সালাম জানাচ্ছি।
২০০৯ বা ২০১৪-র নির্বাচন আর ২০১৯-এর নির্বাচনের মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ।
আমাদের এই লড়াইটা এমন একটা শক্তির বিরুদ্ধে যে ভারতবর্ষের সবাইকে সিবিআই আর ইডি-র নামে ধমকে, চমকে রেখেছে। একমাত্র অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাকে ধমকে চমকে বশ্যতা স্বীকার করানো যায়নি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নরেন্দ্র মোদীকে উৎখাত করার ডাক দিয়েছেন এই বাংলা থেকে।
যে বাংলা নবজাগরণের মাটি, যে বাংলা স্বাধীনতা সংগ্রামের পথ দেখিয়েছিল, যে বাংলা ২১ শে জুলাইয়ের আন্দোলনের স্বাক্ষী রয়েছে, যে বাংলা নেতাই, সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, বানতলা, ধানতলা, কেশপুরের মতো গণ-আন্দোলনকে পথ দেখিয়েছে, যে বাংলা বিভাজনের রাজনীতিকে কোনওদিন মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে দেয়নি, যে বাংলা নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর মতো বীরযোদ্ধা সৈনিকদের জন্ম দিয়েছে, যে বাংলা স্বামী বিবেকানন্দের জন্মভূমি, যে বাংলা ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর, রামমোহন রায়ের মতো বিশিষ্ট দার্শনিকদের জন্মদিয়েছে। আমি মনে করি এই বাংলার মানুষকে আজকের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে।
আমরা উন্নয়নমূলক একাধিক কাজ করেছি।
আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি ৫ বছর মোদী বনাম ৫ বছর দিদির উন্নয়নমূলক কাজ পরিসংখ্যান নিয়ে লড়াই করতে এলে ওরা হেরে যাবে।
৫ বছর আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, আচ্ছে দিন আসবে, কিন্তু আসেনি।
জিএসটি আর নোটবন্দীর নামে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে ভারতবর্ষের মাটিকে, ২% জিডিপি কমেছে। ভারতবর্ষকে অর্থনৈতিক দেউলিয়া করে চলে গেছে।
ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী সেনার নামে ভোট চাইছে, ধর্মের নামে ভোট চাইছে। বাংলার সম্মান নিয়ে ছেলেখেলা করছে, নোটবন্দী করে গরীব মানুষের টাকা কেড়ে নেয়, আপনাদের টাকায় দিল্লীতে ফাইভস্টার পার্টি অফিস করেছে, আমি প্রশ্ন করতে চাই যুবসমাজকে এই বিজেপিকে কি ভোট দেওয়া উচিত।
আচ্ছে দিনের নামে সমস্তও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়িয়েছে।
সব সমীক্ষা দেখাচ্ছে যে বিজেপি আগামীদিন হারতে চলেছে। বিজেপি যত হেরেছে তত পেট্রোলের দাম কমেছে, বিজেপি যত হেরেছে ডিজেলের তত দাম কমেছে, আটার দাম, কেরোসিনের দাম, রান্নার গ্যাসের দাম কমেছে।
আমরা কোনওদিন ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রীকে কেটলি হাতে চা বিক্রী করতে দেখিনি। আবার এখন বলছে চৌকিদার! আমরা কেউ নরেন্দ্র মোদীকে মাথায় টুপি পরে, হাতে লাঠি নিয়ে চৌকিদারি করতে দেখিনি। কিন্তু, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ক্ষমতায় আসার পর ১০ কোটি মানুষের উন্নয়নের জীবনযাত্রা পর্যবেক্ষন এবং পরিচালনা করতে দেখেছি। এটাই হচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি ইমাম ভাতা, মোয়াজ্জেম ভাতা দিলে ওরা বলছে সংখ্যালঘু তোষণ আর হিন্দুদের সব থেকে বড় উৎসব দূর্গোৎসব উপলক্ষ্যে ২৮ হাজার ক্লাবকে ১০ হাজার টাকা করে অনুদান দিলে সিপিএম বিজেপি আর কংগ্রেস হাইকোর্টে গিয়ে মামলা করছে।
আগে যারা সিপিএম করত, একই লোক এখন বিজেপি করছে। তার কারণ নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখবে বলে। আমার হিন্দু-মুসলমান ভাইয়েরা আছে। আমরা একইভাবে ঈশ্বর-আল্লাহকে পুজো করি, প্রার্থনা করি। আমাদের ঠাকুরঘরে ঠাকুরের সিংহাসনে ঠাকুরকে রাখি।
আমি ধর্ম করলে বাড়িতে নিশ্চিতভাবে ধর্ম করব। কিন্তু মানুষ যখন আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে, আমার একটাই ধর্ম- মানবধর্ম। কে কোথায় কন্যাশ্রী-যুবশ্রী-গতিধারা পাচ্ছে, কোথায় রাস্তা হচ্ছে, জল হচ্ছে- এটাই দেখা একমাত্র আমার কাজ।
ভারতীয় জনতা পার্টি হচ্ছে শ্যামা পোকা। কালীপুজোর পর যেমন শ্যামা পোকাদের পাওয়া যায় না, ভোটের পর বিজেপিদেরও পাওয়া যায় না।
তৃণমূল কংগ্রেস সবসময় মানুষের পাশে আছে, নতুন ওরে আমাদের প্রমান করার দরকার নেই।
যারা বলেছিল আচ্ছে দিন আসবে, কোথায় আচ্ছে দিন? মানুষকে সর্বস্বান্ত করে দিয়ে ১২০০ কোটি টাকার অফিস দিল্লীর বুকে নরেন্দ্র মোদী বানিয়েছে। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের ছেলে ব্যবসা করছে। এক বছরে আয় ৫০ হাজার থেকে বেড়ে হয়েছে ৮০ কোটি টাকা। যেখানে মানুষ আজকে নোটবন্দীর কারণে জর্জরিত হয়ে গেছে, মানুষ আজ বীতশ্রদ্ধ, মানুষ আজ সর্বশান্ত। এরা মানুষের টাকা নিজেদের পকেটে ভরে নিয়েছে।
আপনারা বলুন নোটবন্দীতে কোনও ধনী মানুষের কালোটাকা ধ্বংস হয়েছে? উত্তর হবে না। আপনারা সকলে লাইনে দাঁড়িয়েছেন, আমরাও লাইনে দাঁড়িয়েছি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মানুষকে নোটবন্দীর নামে লাইনে দাঁড় করিয়েছে। আর ২০১৯ শে আগামী ২৯ তারিখ ভারতীয় জনতা পার্টিকে ভোটবন্দী করে লাইনে দাঁড় করান, এটাই এই সভা থেকে শপথ নিয়ে যেতে হবে।
যারা চৌকিদার বলে নিজেদের দাবী করছেন, তারা কেমন চৌকিদারি যে চৌকিদার থাকতে নীরব মোদী, মেহুল চোকসি, বিজয় মালিয়ার মতো লোকেরা কেউ ১০ হাজার কোটি, কেউ ১২ হাজার কোটি, কেউ ১৪ হাজার কোটি মেরে দিয়ে ভারতবর্ষ থেকে পালিয়ে গিয়ে বিদেশে বসে ফুর্তি করছে। এই হচ্ছে নরেন্দ্র মোদীর অবস্থা।
নরেন্দ্র মোদী বলছেন মেক ইন ইন্ডিয়া, মানে ভারতবর্ষে বানাও আর যে গাড়ি চড়ছে সেটা এসেছে জার্মানি থেকে, রাফালের জেট আসছে ফ্রান্স থেকে। ৩০০০ কোটি টাকার মূর্তি, তার সামগ্রী আসছে চীন থেকে, বুলেট ট্রেন আসছে জাপান থেকে। রাস্তা তৈরীর টাকা দেওয়ার সময় টাকা নেই, কন্যাশ্রীতে টাকা দেওয়ার সময় টাকা নেই, মানুষের সেবার জন্য টাকা নেই। কিন্তু নিজের প্রচার করছে ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী খরচ করছে ৫০০০ কোটি টাকা। মানুষ এই দ্বিচারিতা আর মেনে নিচ্ছে না।
ভারতবর্ষের সেনার নামে যে প্রধানমন্ত্রী ভোট চায়, তাকে ভোট দেওয়া উচিত কী উচিত নয়? জিএসটি করে যারা অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে তাদের ভোট দেওয়া উচিত কী উচিত নয়? নদীয়াতে সন্ত্রাস করে যারা দুর্নীতিতে নিজেদেরকে লিপ্ত করে সন্ত্রাসের মুক্তাঞ্চলে পরিণত করতে চাইছে তাদের ভোট দেওয়া উচিত কী উচিত না? হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে সাম্প্রদায়িক অশান্তি সৃষ্টি করতে চায়, তাদের ভোট দেওয়া উচিত কী উচিত না?
কেউ বলে হিন্দু বিপদে আছে, কেউ বলে মুসলমান বিপদে আছে. আমি বলি ধর্মের চশমা খুলে দেখুন, পুরো ভারত বিপদে আছে।
স্বামী বিবেকানন্দের ছবি টাঙিয়ে ২০১৪ সালে ক্ষমতা দখল করল নরেন্দ্র মোদী কিন্তু হিন্দু ধর্মের পীঠস্থান বেলুড় মঠকে নূন্যতম সম্মান ওরা দেয়নি।
হিন্দু এলাকায় গিয়ে বলছে মুসলমান হঠাও, মুসলমান এলাকায় গিয়ে বলছে হিন্দু খেদাও। অসমে গিয়ে বলছে বাঙালী খেদাও, গুজরাটে গিয়ে বলছে বিহারি খেদাও আর বিহারে গিয়ে বলছে বাঙালী খেদাও। এই হয়ে গেছে আমাদের প্রধানমন্ত্রী।
আমাদের এই প্রধানমন্ত্রী আমাদের দেশকে এমন এক জায়গায় নিয়ে গেছে যেখানে আমরা ২০০ বছর পিছিয়ে গেছি। মহুয়া মৈত্রকে ভোট দিয়ে মমতা ব্যানার্জির হাত শক্ত না করেন তাহলে আগামীদিন এই দেশ বাঁচবে না।
যারা যেখানে শক্তিশালী তাদের ভোট দিলে নরেন্দ্র মোদী আর ক্ষমতায় ফিরে আসতে পারবে না।
ভোটটা মহুয়া মৈত্রকে নয়, ভোটটা মমতা ব্যানার্জিকে দিন।