এপ্রিল ৬, ২০১৯
গণতন্ত্রের সুরক্ষার স্বার্থে নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ হতে হবে- মমতা ব্যানার্জি

আজ তৃণমূল চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি বাংলা টিভি চ্যানেল-কে সাক্ষাতকার দেন।
দেখে নিন তার নির্বাচিত অংশ:
প্রঃ আজ আপনি নির্বাচন কমিশনকে একটা জবাবি চিঠি দিয়েছেন তাতে শব্দ চয়ন ও ক্রোধের ব্যাপারটা খুব জোরালো, কেন?
উঃ এটা আপনার মন্তব্য, আমার নয়। ক্রোধের কোন জায়গায় নেই, আমরা কিছু সাংবিধানিক ভাষা ব্যবহার করেছি, জেটা করা উচিত বলে আমি মনে করি। নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক সংস্থা,আমি তাকে শ্রদ্ধা করি, আমরা চাই নির্বাচন কমিশন ভালো করে কাজ করুক। আমি যদি দেখি বিজেপি দলের লোকেরা বলছে কয়েকজন লোককে আমরা বদল করব আর নির্বাচন কমিশন তারা্ যা বলবে তাই করবে, ইতিমধ্যেই টুইটারে সেটা বেরিয়ে গেছে, আমাদের কাছে ক্যাসেট ও আছে। সুতরাং তার পরের দিন প্রধানমন্ত্রী এবিপি আনন্দে সাক্ষাতকারে বলছেন পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা খারাপ তাই আমরা ৭ দফায় নির্বাচন করছি
আর পরবর্তী পর্যায়ে যদি আমি দেখি আমার ৩ জন সুদক্ষ অফিসারকে কোন কারণ ছাড়াই বদল করে দেওয়া হয়, বিজেপির যে গদ্দার আমাদের তৃণমূলে ছিল সে যা বলছে তাই করা হচ্ছে। তাহলে আমি নিশ্চিত হয়ে বলব নির্বাচন কত দফায় হবে, কাকে কাকে বদল করা হবে সব ঠিক করে দিচ্ছে বিজেপি। কেন অন্ধ্রপ্রদেশের ১ নম্বর পুলিশকে সরান হবে? এটা প্রশাসনের হিউমিলিয়েশন নয়? কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্রসচিব কে বদল করুক আগে।
প্রঃ নির্বাচন কমিশনের তো বিশ্লেষণ অনুযায়ী বদল করার অধিকার আছে
উঃ যদি মনে করেন কেসটা সত্য তাহলে নিশ্চয়ই অধিকার আছে। আমি আজ কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনারের সাথে কোথা বলেছি। যদি কাউকে বদল করতে হয় তাহলে অদের রাজ্য সরকারকে বলবে ৩ জনের নামে একটা প্যানেল করতে এটাই প্রকৃত ঘটনা, এটাই নিয়ম, ওরা এই নিয়মের বাউরে গিয়ে বিজেপি জা বলছে তাই করছে, কি করবে ওরা আমার? কি করার কশমতা আছে? প্রধানমন্ত্রী প্রতিদিন সেনাবাহিনী নিয়ে কথা বলছে, কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে? নির্বাচনের নামে কোটি কোটি টাকা রাস্তায় উড়ছে, আমাদের পুলিশ সেগুলোই ধরছিল, যাতে নিজেদের পকেটের লোক বসান জায়, যাতে গদ্দার, হাওলাদের কেউ ধরতে না পারে, চুরির টাকা ধরতে না পারে। আমরা ছাড়বো না, মানুষকে বলব নজর রাখুন, জেখানেই এসব দেখবেন মোবাইলে ছবি তুলে পাঠাবেন।
প্রঃ এটা কি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কোন পদক্ষেপ?
উঃ পুরোপুরি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণদিত পদক্ষেপ. অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক ও বাংলায় একই অবস্থা। আমি খুব দুঃখিত।আমার পূর্ণ আস্থা আছে। নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন জানাব, দয়া করে কাজটা করুন, কোনরকম ইম্পারশিয়ালিটি করবেন না। আমরা দেখতে চাই যে আপনার নিরপেক্ষ ভাবে গণতন্ত্র এর সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন রাখুন ।
প্রঃ আপনি একটা অসম লড়াই লড়বেন বলে মনে হচ্ছে না?
উঃ মিডিয়া যদি বিক্রি হয়ে যায় কি করব? গণতন্ত্রের ধারক ও বাহক সেই সব প্রতিষ্ঠানগুলো যদি মোদী, অমিত শাহ কিনে নেয়, সব যদি গুণ্ডাদের হাতে চলে জায় তাহলে আমাদের মত সাধারণ মানুষ যারা মানুশকে বিশ্বাস করে রাজনীতি করে তাহলে তখন মনে হয় লড়াই করতে পারব তো?কিন্তু আমি বিস্বাশ করি যত এই লড়াই হবে, তত মানুষ আমাদের পাশে আসবে, তত মানুষ এদের বিরুদ্ধে রায় দেবে। মানুষের মখ জর করে বন্ধ করা যায় না। কাউকে তো প্রতিবাদ করতেই হবে। আমরাই না হয় সারা দেশের হয়ে সেই কাজটা করলাম।
কারণ আমি অদের কাছে অনেক বড় শত্রু যেহেতু আমরা বলছি বাংলা ঠিক করে দেবে কে সরকার গঠন করবে তাই জেন তেন প্রকারে ওরা বাংলাকে অপমান করছে, হিউমিলিয়েট করছে। মনে রাখবেন এক জন অফিসারের গায়ে হাত দিলে অন্য অফিসাররা হিউমিলিয়েটেড হয়, কোন সাংবাদিকের গায়ে হাত দেওয়া হলে সব সাংবাদিকরা মিছিল করেন। আমি পূর্ণ শ্রদ্ধা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন জানাব, যে দোয়া করে বিজেপির কথা শুনবেনা না। আপনারা ইমপার্শিয়ালি করুন, আমরা সব রকম সহযোগিতা করব।
প্র: বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বরা মনে করেন যে তারা ক্ষমতায় আসছেন তখন তো সেই ছাপ টা আপনাকে আবার সহ্য করতে হবে
উঃ ওরা ক্ষমতায় আসবেনা, কোথা থেকে আসবে? অঙ্ক টা এবার জিরো হয়ে গেছে। হাই টাইমে জা সিট পেয়েছিল তার ১০% ও এবার পাবে না, ১০০ ই ক্রস করবেনা। মেজরিটি পেলে তো জিতবে। ১০০ ক্রস করবে না। গো হারা হারবে, মোদীর চেয়ার এবার টলমল। হিন্দু মুসলিম, শিখ, খ্রীষ্টান সবাই জোট বেধে এবার মোদীকে বিদায় দেবে, তবেই দেশ ভালো থাকবে, শান্তিতে থাকবে, গণতন্ত্রের জয় হোক।
প্রঃ কালচিনির একটা সভায় আপনি খুব কনফিডেন্টলি বললেন যে তৃণমূল এবার সরকার গড়বে
উঃ বাংলা গড়বে, তৃণমূল মানে তৃণমূলের জন্ম বাংলায়। বাংলার মাটি জাগরণের মাটি। বাংলার মাটি স্বাধীনতার মাটি। বাংলার মাটি পথ দেখানোর মাটি। বাংলার মা মাটি মানুষ, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ, বাংলার প্রজন্ম, বাংলার ছাত্র, বাংলার যৌবন, বাংলার তপশিলি, বাংলার আদিবাসী, বাংলার হিন্দু মুসলমান শিখ ইশাই, বিহারী রাজস্থানী। আমি মনে করি বাংলাই পথ দেখাবে। বাংলার এই ৪২টা আসনই ভারতবর্ষের সরকার গঠন করে দেবে।
প্রঃ বিজেপি ২৩টা পাবে বলছে
উঃ একটাও পাবে না, জিরো পাবে। তার কারণ, ছিল দুটো পাবে কি করে ১০ টা? সিপিএমের সাপোর্টে না কংগ্রেসের সাপোর্টে? একজনের যদি ৯ থাকে, আপনি ১০ করতে পারেন। একজনের যদি দুই থাকে, তাকে আপনি ১০ করতে পারেন না। আপনাদের চ্যানেল গুলো পাবলিসিটি করে যতই ওদের নাম্বার দিন, মানুষ ওদের নাম্বারটা জিরো বানিয়ে দেবে। আমি কনফিডেন্ট। আমি মানুষকে ভরসা করি। মানুষই আমার ভরসার জায়গা। মানুষের মুখ চোখ দেখলে আমি বুঝতে পারি, কি হতে যাচ্ছে। মানুষই আমার বিশ্বাসের জায়গা।