সাম্প্রতিক খবর

এপ্রিল ১৫, ২০১৯

বিজেপির দালালদের ভোটটা দেবেন নাঃ বেলডাঙায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

বিজেপির দালালদের ভোটটা দেবেন নাঃ বেলডাঙায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় একটি জনসভা করেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি মুর্শিদাবাদের জনগনকে কংগ্রেস ও সিপিআই(এম)ও বিজেপির দালালদের না দিয়ে তৃণমূলের পক্ষে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।

ওনার বক্তব্যের কিছু অংশঃ

সবাইকে নতুন বছরের অনেক শুভেচ্ছা। শুভ নববর্ষ। সবাই ভালো থাকুন

আমাদের এখানকার প্রার্থী অপূর্ব সরকার, দীর্ঘ দিন কংগ্রেসের বিধায়ক ছিলেন। উনি সিপিএম, বিজেপির কাছে নিজের মাথা বিকিয়ে না দিয়ে নিজের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেছেন

আজ ভীষণ গরম। মানুষের খুব কষ্ট এত তাপমাত্রাতেও সকলে এসেছেন। আমরা এত গরমে নির্বাচন করতে চাই না। কিন্তু নির্বাচন কমিশন তারিখ ঠিক করে, সেখানে আমাদের কিছু করার থাকে না।

আমরা মুর্শিদাবাদ জেলার অনেক উন্নয়ন করেছি। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ তৈরি হচ্ছে

২১ টি কিষান মাণ্ডি, ৩টি মাল্টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, SNSU, মাদার ও চাইল্ড হাব তৈরি হয়েছে

এই জেলায় আমাদের ৪ জন বিধায়ক আছে, এই জেলা পরিষদ আমাদের। কিন্তু আমরা কখনো সাংসদ পাইনি

মুর্শিদাবাদে যখন বন্যা হয়েছিল তখন আমি এসেছিলাম। যখন বাস দুর্ঘটনা হয়েছিল, তখনও আমি এসেছিলাম

আমি প্রতি বছর প্রত্যেক জেলায় প্রশাসনিক বৈঠক করতে আসি

৪২ এ ৪২ যদি চাই তাহলে আমাদের বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ, জঙ্গিপুরও দরকার

বহরমপুরের কত বড় নেতা সব জানা আছে। উনি বহরমপুরে ক’দিন থাকেন?

উনি অন্যদের সম্পর্কে অনেক বড় বড় কথা বলে বেড়ান, ওনার উচিত আয়নায় একবার নিজের দিকে তাকানো

আমি পারিবারিক ব্যাপারে কথা বলি না। জোড়া খুন থেকে শুরু করে ওনার সব ঘটনা জানি। আমাকে আমার Pandora’s Box দয়া করে খুলতে বলবেন না

দিনের বেলা ওরা বিজেপি করে, দুপুরে কংগ্রেস আর রাতে সিপিএম করে

আরএসএস বাংলায় দু’টি জায়গায় বিজেপি আর কংগ্রেসের হয়ে কাজ করছে – জঙ্গিপুর আর বহরমপুরে। এটা জেনে রাখুন এটা সত্যি কথা।

দু’পাশে বাম আর রাম, আর মাঝে ঢুকেছে শ্যাম। দু’পাশে দুই কলাগাছ, মধ্যিখানে অধির রাজ – জগাই-মাধাই-গদাই।

কংগ্রেস-সিপিএম আঁতাতের জন্যই আমরা কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে এসে তৃণমূল কংগ্রেস গঠন করেছিলাম। আর আজ সেটা প্রমাণিত। কর্মীদের রক্ত নিয়ে রাজনীতি মানতে পারিনি তাই কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলাম। যদি তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি না করতাম, সিপিএম কে বাংলা থেকে সরানো যেত না

তৃণমূল কংগ্রেসের জোড়া ফুল, এক বৃন্তে দুটি কুসুম – হিন্দু আর মুসলমান, এটাই তৃণমূলের সদিচ্ছার চিহ্ন

এই নির্বাচনে বিজেপি হারবে, তাই আপনাদের এক একটি ভোট খুব গুরুত্বপূর্ণ

নোটবন্দি করে হঠাৎ করে টাকা উধাও, সব টাকা নিয়ে বিজেপি পালালো, ব্যাঙ্ক লুঠ হল, মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে মারা গেল, ১২০০০ কৃষক আত্মহত্যা করল। সংখ্যালঘু-দলিতদের ওপর অত্যাচার হল। উনি নোটবাতিল করলেন সন্ত্রাস কমে যাবে এই বলে আর ওনার আমলে সন্ত্রাসবাদ বেড়েছে ২৬০%।

আজ উনি সেনাদের নিয়ে রাজনীতি করছেন। সেনারা আমাদের গর্ব, দেশের সম্পদ। তাদের আমরা স্যালুট করি, তাদের নিজে রাজনীতি করি না। বলে বেড়াচ্ছে মোদী সেনা! কত বড় সাহস! কেন পুলওয়ামার ঘটনা ঘটেছিল?

বারবার বলা সত্ত্বেও এই ঘটনার পর একটাও সর্বদল বৈঠক করেননি মোদী বাবু। কাউকে সত্য ঘটনা জানাননি উনি

সরকারের কাছে এই আক্রমনের খবর থাকা সত্ত্বেও কেন জওয়ানদের বাঁচালেন না মোদী বাবু? শুধু ভোটের সময় সেনা নিয়ে রাজনীতি করছেন

বিজেপি এখন হিন্দুস্তান পাকিস্তান করে ভোট চাইছে। ভোট মিটলেই দেশকে মোদীস্তান করে দেবে। ফ্যাসীবাদী কায়দায়, হিটলারি কায়দায় দেশ চালাচ্ছেন মোদীবাবু।

কখনও বলছে এনআরসি করে সকলকে তাড়িয়ে দেব। অসমে যখন এনআরসি হোল, কোনও দল সেদিন প্রতিবাদ করেনি।

২০ লক্ষ হিন্দু বাঙালী আর ২০ লক্ষ মুসলিম বাঙালীর নাম এনআরসি করে বাদ দেওয়া হল। আমি তৃণমূলের প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছিলাম, তাদের অসমে ঢুকতে দেয়নি। এয়ারপোর্টে মারধোর করেছে।

বাংলায় এনআরসির এন করতে পারবে না। বিজেপি কি জমিদার? সবাইকে তাড়িয়ে দেবে?

বলছে সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল করবে। আমরা তো নাগরিক। এই বিলে আপনাদের ছবছরের জন্য বিদেশী করে দেওয়া হবে।

আমাদের পার্টি খুব শক্তিশালী। আমরা ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে লড়াই করি। ওদের খারাপ কাজের আমরা বিরোধীতা করি। প্রতিদিন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি থেকে শুরু করে সব জনবিরোধী কাজের বিরোধীতা আমরা করি।

নোটবন্দী করার ফলে এক বছরে দেশের ২ কোটি মানুষ বেকার হয়েছে। আমরা বাংলায় ৪০ শতাংশ বেকারত্ব কমিয়েছি।

বিজেপি বলেছিল পাঁচ বছরে ১০ কোটি বেকারের চাকরি দেবে, একটাও দিয়েছে? বলেছিল ১৫ লক্ষ টাকা করে সকলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দেবে, দিয়েছে?

কিছু নেতা দেশটাকে ছিন্ন ভিন্ন করতে চাইছে। বিজেপি আবার ক্ষমতায় এলে, নিজের ব্যাঙ্কে রাখা টাকা ব্যাঙ্ক থেকে তুলতে পারবেন না। দেশে আর নির্বাচন হবে না। দেশে ডিক্টেটরশিপ চলবে।

এখন মিডিয়াদের কিনে নিয়েছে, তারা ভয়ে আর কিছু বলে না। গণতান্ত্রিক সংস্থাগুলো ভয়ে একটা কথা বলতে পারেনা।

রাজনৈতিক নেতারা ভয়ে মুখ খুলতে পারেনা। আমি ভয় পাইনা। যতক্ষণ বেঁচে থাকব, তোমাদের ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করব।

আমরা স্বামী বিবেকানন্দ, রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের হিন্দুধর্মে বিশ্বাস করি। আমরা বিজেপির হিন্দুত্বে বিশ্বাস করিনা।

বিজেপির হিন্দুত্বে ভাগাভাগি খুনোখুনি আছে। আমার হিন্দুধর্ম উদার। আমরা সর্বধর্ম সমন্বয়ে বিশ্বাসী।

আমরা জমির খাজনা মুকুব করেছি, মিউটেশন ফি মুকুব করেছি। কৃষকদের শস্যবীমার টাকাও আমরা দিই।

কৃষক বন্ধু প্রকল্পে আমরা কৃষকদের প্রতি একর জমি পিছু ৫ হাজার টাকা করে বছরে দিচ্ছি। কোনও কৃষক মারা গেলে ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিচ্ছি।

মনে রাখবেন তৃণমূল কংগ্রেসও সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দল। সকলকে একসঙ্গে নিয়ে কাজ করি আমরা।

ওদের বিরুদ্ধে একটা করে ভোট দেবেন আর বলবেন, আর নোটবন্দী করবে? আর সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার করবে? আর মূল্যবৃদ্ধি করবে?

গত সাড়ে চার বছর বিদেশে ঘুরে বেড়িয়ে এখন এসেছে দেশমাতৃকার কথা বলতে। উনি ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসেন। ওদের দেশ চালানোর দরকার নেই।

বিজেপির দালালদের ভোটটা দেবেন না।

নির্বাচন মিটে গেলে আমরা সকলে একসঙ্গে বসে কমন মিনিমাম অ্যাজেন্ডার ভিত্তিতে আমরা সরকার গড়ব।