সাম্প্রতিক খবর

এপ্রিল ২১, ২০১৯

বিজেপি-আরএসএসের মিথ্যে কথা বিশ্বাস করবেন নাঃ রানাঘাটে বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

বিজেপি-আরএসএসের মিথ্যে কথা বিশ্বাস করবেন নাঃ রানাঘাটে বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নদীয়ার রানাঘাটে আজ একটি নির্বাচনী সভা করেন। এদিন এটি তাঁর দ্বিতীয় সভা। সেখানে তিনি মানুষকে সাবধান করে বিজেপি- আরএসএসের মিথ্যে খবরের ফাঁদে পা না দিতে।

তাঁর বক্তব্যের কিছু অংশঃ

এখানে আমাদের প্রার্থী রূপালি বিশ্বাস, সবে মাত্র ২৫ বছর বয়স হয়েছে, ভারতের কনিষ্ঠতম প্রার্থী। আমি ওর সঙ্গে আপনাদের আলাপ করিয়ে দিই। ওর স্বামী আমাদের বিধায়ক ছিল। ওর স্বামীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ওদের একটা দেড় বছরের বাচ্চা আছে। পরিবার পুরো অসহায়। আমি আর এখানকার প্রাক্তন সাংসদ মিলে আলোচনা করে ঠিক করি এই অসহায় মেয়েটিকে তুলে ধরতে।

এই সভাতে যে পরিমাণ মা বোনেরা এসেছেন নিজেদের কাজকর্ম ছেড়ে, এটাই হল মঙ্গল সঙ্কেত। এটাই আমাদের একতা।

আগেও অনেক নির্বাচনে আপনারা ভোট দিয়েছেন, তৃণমূল কংগ্রেস পরিবার আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আপনারাই তৃণমূল কংগ্রেসের জন্ম দিয়েছেন। গতকাল সবে বরাত ও ইস্টার স্যাটারডে ছিল। আজ শ্রীলঙ্কায় অনেক চার্চ ও বাড়ি ভেঙেছে বোমা বিস্ফোরণে। আমরা তাদের পরিবারকে সমবেদনা জানাই।

এই অঞ্চলে অনেক চার্চ আছে। আমরা চার্চের ফাদার ও সিস্টারদের সম্মান জানাই।

বিজেপি পাঁচ বছরে বাংলার কোনও খবর রাখেনা। এখন ভোট পাখির মত এসে বলছে বাংলায় আসন চাই। পাঁচ বছর দিল্লীতে বিজেপি ক্ষমতায় ছিল। আজ তাদের জবাবদিহি করার দিন। গত পাঁচ বছর বিজেপি কি করেছে? পাঁচ বছরে সাড়ে চার বছর বিদেশে ঘুরে বেড়িয়েছে। আগের বার নির্বাচনের আগে বলেছিল বিদেশ থেকে কালো টাকা ফিরিয়ে এনে সকলকে ১৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে, আজ পর্যন্ত কেউ পেয়েছে? বলেছিল পাঁচ বছরে ১০ কোটি মানুষের চাকরি দেব, চাকরি তো দেয়ইনি, উপরন্তু, নোটবন্দীর ফলে এক বছরে ২ কোটি মানুষ বেকার হয়ে গেছে।

বিজেপির ছড়ানো মিথ্যা খবরে বিশ্বাস করবেন না। ওরা শিশুদের দিয়েও মিথ্যে খবর ছড়ায়। আমার এই কারণে ওদের বিষয়ে ভাবতেও লজ্জা করে।

উত্তর প্রদেশে কোনও ঘটনা ঘটলে ফেসবুকে ছড়াচ্ছে বাংলায় হয়েছে বলে। ভোজপুরি সিনেমার দৃশ্য দিয়ে বলছে বাংলায় হয়েছে। বাংলাদেশের ঘটনাকে বলেছে বাংলায় হয়েছে। এসব করছে মানুষে মানুষে বিভাজন করে দাঙ্গা লাগাতে।

আমরা মানুষের কথা ভাবি, তাদের জন্য কাজ করি। স্বাস্থ্য সাথী স্মার্ট কার্ড থেকে শুরু করে শস্যবীমা সবই আমাদের সরকার করেছে। যারা এখনও এইসব প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত করাননি, ভোট মিটে গেলে নথিভুক্ত করিয়ে নেবেন।

বিএসএনএল কর্মীরা মাইনে পাচ্ছে না। জেট এয়ারঅয়েজ বন্ধ হয়ে গেছে। তারা আমার কাছে এসেছিল সাহায্য চাইতে। আমরা তাদের বলেছি এই অপদার্থ সরকার গেলে আমি আপনাদের দেখব।

নিজেরা পাঁচ বছরে কি করেছে না বলে, এখানে এসে বলছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি করেছে? এটা দিল্লীর নির্বাচন। বাংলার নির্বাচন হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জবাব দেবে সে কি করেছে বাংলায়। বাংলার মানুষকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কৈফয়েত দেবে, তোমাদের না। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রকল্প করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আমাদের প্রকল্পগুলোকে ওরা স্বীকৃতি না দিলেও আন্তর্জাতিক স্তরে প্রকল্পগুলো পুরষ্কার পেয়েছে।

আমরা সব ভাষাকে স্বীকৃতি দিয়েছি। সমস্ত সংস্কৃতি, সব পরম্পরাকে সম্মান জানিয়েছি। তাঁরা এখন অনেক সুযোগ সুবিধা পেয়েছে। মোদীবাবু কি এসব করতে পারবে?

বিজেপির রাজনীতি দেশের পক্ষে ক্ষতিকারক। নোটবন্দী এবং জিএসটি সারা দেশের অসংখ্য মানুষের ক্ষতি করেছে। কোটি কোটি মানুষ কাজ হারিয়েছে। কৃষকরা মোদীর আমলে আত্মহত্যা করেছে। সেই বিজেপি আমাদের থেকে জানতে চায় আমরা বাংলার জন্য কি করেছি?

আপনারা উন্নয়ন এবং নিজেদের ভালো ভবিষ্যৎ চাইলে বিজেপিকে একটাও ভোট দেবেন না। ওরা মিথ্যে কথা বলে আর মানুষকে বিভ্রান্ত করে।

মোদী বাবু সব কিছু নিজের নামে করছে। টুপি থেকে কোট সবেতে নিজের নাম দিচ্ছে। তিনি প্রচণ্ড অহঙ্কারী।

ওরা যদি ফিরে আসে তাহলে আর নির্বাচন হবে না। ওরা এমনভাবে কায়দা করবে যে কোনও সংস্কৃতি থাকবে না, কোনও ঐতিহ্য থাকবে না।সমস্ত স্বাধীনতা হ্রাস করা হবে।

ওরা আসামে কী করেছে? লাখ লাখ মানুষের নাম ওরা এনারসি লাগু করে কেটে দিয়েছে। এবার চেষ্টা করছে বাংলায় তা করতে। আমরা তা করতে দেব না।

একজন গদ্দার ওদের সাহায্য করছে। কিন্তু এটা চলবে না। ওরা বাংলায় কিছু পাবে না। অন্যান্য রাজ্য থেকেও পাবে না। দক্ষিণ থেকে পাবে না মহারাষ্ট্র, উত্তর প্রদেশ থেকে পাবে না, পূর্ব ভারত থেকে পাবে না।

ওরা ওদের খারাপ অবস্থার কথা জানে আর তাই এখন টাকা ছড়াচ্ছে। ওদের ফাঁদে পা দেবেন না।

ওরা সিটিজেনশিপ বিল নিয়ে কী করেছে? আপনাকে ছ-বছরের জন্য বিদেশী বানিয়ে দেবে- কিন্তু এই ছ-বছর আপনারা কী করবেন? আপনি সুযোগ সুবিধা কী করে পাবেন? বাঁচবেন কী ভাবে?

এই সব কিছুর জন্যে আমরা ওদের এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে রাজী নই।
আমি ওদের সম্পর্কে ভাবতে রাজী নই। শুধু মিথ্যে কথা বলে আর ছড়িয়ে বেড়ায়। বিহারে কিছু হলে সেটা বাংলার বলে চালিয়ে দেয়। শুধু মানুষে-মানুষে বিভেদ ছড়ানোর জন্য-

তার বদলে আমরা বরং যা ভাল কাজ করেছি বা করা যায় তা নিয়ে ভাবব। হেলথ কার্ড থেকে শুরু করে কৃষকদের বীমা-র কার্ড থেকে শিল্পী ও কারিগরদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া। যারা এখনও পাননি তারা নির্বাচনের পরে নাম ভরে নেবেন।

আমরা আমাদের সমস্ত অনুষ্ঠান একই রকম উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে পালন করি। ওদের মতো গদা-তলোয়ার নিয়ে নেচে বেড়াই না।আমরা আমাদের ধর্মগুরুদের দেখানো পথে আমাদের ধর্ম মানি। আমাদের সর্বধর্মের প্রতি ভালবাসতে শেখানো হয়েছিল।

এর পরে আমার শান্তিপুরে আরেকটা পদযাত্রা আছে তাই আমি আজ এখানেই শেষ করছি। আমি মা-বোনেদের কাছে বলব উলু দিতে আর ভাইদের বলব হাততালি দিতে যাতে দিকে দিকে জোড়াফুলের প্রার্থীরা জয়লাভ করেন।