এপ্রিল ১৬, ২০১৯
দেশের প্রয়োজন মানুষের সরকারঃ ইটাহারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ ইটাহারে একটি জনসভা করেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ওনার বক্তব্যের কিছু অংশঃ
সবাইকে নতুন বছরের অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। শুভ নববর্ষ
যে কোন দুর্ঘটনায় – বন্যা বা অন্য কোনরকম দুর্ঘটনায় আমাদের মা মাটি মানুষের সরকার মানুষের পাশে থাকে। আমাদের কাছে কোন খবর এলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিই। এটাই আমাদের সরকারের মাহাত্ম
এই সরকার আসার পর আইটিআই, কিষান মান্ডি, ধান উৎপাদন কেন্দ্র সহ অনেক কাজ হয়েছে এই জেলায়।
রেলমন্ত্রী থাকাকালীন আমি এখানে একলাখি-বালুরঘাট লাইন চালু করেছি। পাশাপাশি গাজোল-ইটাহার, রাজগঞ্জ-ইটাহার, ইটাহার-বুনিয়াদপুর এই লাইনগুলিও sanction করে দিয়েছিলাম। কিন্তু বিজেপি সরকার কিছু করেনি, বাংলাকে কিছু দেয়নি, না নতুন প্রকল্প, না কোন নতুন ট্রেন। আমাদের সরকার কেন্দ্রে ক্ষমতায় এলে আমরা সব প্রজেক্টের কাজ শেষ করব
আমি অনেক নতুন ট্রেন চালু করেছিলাম – জন্মভূমি, রাজা-রানি, পদাতিক, কাঞ্চনকন্যা ইত্যাদি
আমাদের সরকার ক্ষমতায় আসার পর উত্তরবঙ্গের মানুষের সুবিধার জন্য নতুন সচিবালয় উত্তরকন্যা তৈরি করেছে
আমরা জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চ তৈরি করেছি। এখন আর এখানকার মানুষকে কলকাতা ছুটে যেতে হয় না
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, ২৭টি কর্মতীর্থ, ক্ষুদ্র শিল্পে ৪০০০ হাজার কোটি টাকা লোন, ২০০০ কোটি টাকা সাবসিডি দেওয়া হয়েছে
উত্তর দিনাজপুরের বিখ্যাত তুলাইপাঞ্জি চাল বাইরে বিক্রি করার ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার। এখানকার পাটশিল্প বিখ্যাত। ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্লাস্টার তৈরি করা হয়েছে
লোকপ্রসার প্রকল্পে ২ লক্ষ শিল্পীর নাম নথিভুক্ত করা হয়েছে
কন্যাশ্রী প্রকল্পে এখন আর ইনকামের কোন লিমিটেশন নেই। এখন সব সরকারি স্কুলের প্রায় ৬০ লক্ষ মেয়েরা এই স্কলারশিপ পাচ্ছে
আমরা ৬৮ লক্ষ SC/ST ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাশ্রী স্কলারশিপ দিয়েছি। এখন এক মাসের মধ্যে জাতি শংসাপত্র দিয়ে দেওয়া হয়
৫০ সালের কাগজপত্র না দেখালে জাতি শংসাপত্র পাওয়া যায় না – এটা মানুষের দীর্ঘ দিনের সমস্যা। এটা দিল্লির সংসদের আইন আমাদের নয়, যদি কখনো সুযোগ আসে আমি এই প্রক্রিয়া রিভিউ করব
২ কোটি সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীদের স্কলারশিপ দেওয়া হয়েছে। উচ্চ শিক্ষার জন্য ৭০০০০ সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীদের সাহায্য করা হয়েছে
গরিব মেয়েদের বিয়ের জন্য রূপশ্রী প্রকল্পের আওতায় ২৫০০০ টাকা আর্থিক সাহায্য দেয় রাজ্য সরকার
একমাত্র বাংলায় কৃষকদের জমির খাজনা ও মিউটেশন ফি মুকুব করে দেওয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষের সম্পত্তি হস্তান্তর করার জন্য মিউটেশন ফি মুকুব করে দেওয়া হয়েছে। কৃষকদের ফসল নষ্ট হলে তারা যাতে ক্ষতিপূরণ পায় সেজন্য কৃষকদের শস্য বীমার সব টাকা দেয় রাজ্য সরকার
আমরা কৃষক বন্ধু প্রকল্প চালু করেছি। এই প্রকল্পে কৃষকদের বছরে ২ বার ২৫০০ টাকা করে মোট ৫০০০ টাকা দেওয়া হচ্ছে, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষি যাদের এক একরের কম জমি আছে তাদের ১০০০ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে
কোন কৃষক মারা গেলে তার পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার
জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রকল্প চালু করা হয়েছে। শিশুর জন্মের পর সবুজশ্রী প্রকল্পে একটা করে চারাগাছ দেওয়া হয়, শিশুদের বিনামূল্যে হার্ট অপারেশন, গর্ভবতী মায়েদের চিকিৎসার জন্য ৫০০০ টাকা তাদের জন্য মাতৃযান সব কিছুর ব্যবস্থা করে দিয়েছে রাজ্য সরকার
বিনামূল্যে চিকিৎসা, শিক্ষা, ২ টাকা কিলো দরে চাল দেওয়া হয়। এমনকি মৃত্যুর পর সৎকারের জন্য আর্থিক সাহায্য করা হয়। শ্মশান ঘাট, কবর স্থানগুলির সংস্কার করা হয়েছে
বাংলার সব তীর্থ স্থানগুলির সংস্কার ও উন্নয়ন করা হয়েছে, পাখিরালয় থেকে শুরু করে অনেক উন্নয়ন হয়েছে
আমাদের সরকার সর্ব ধর্ম সমন্বয়ের সরকার। আমরা ভাগাভাগি করি না, আমারা সকলের জন্যই আছি
এই নির্বাচন বাংলার নয়, দিল্লির নির্বাচন। কে প্রধানমন্ত্রী হবেন তার নির্বাচন
মানুষ জিজ্ঞেস করতেই পারে যে ৫ বছরে অর্পিতা ঘোষ কি কাজ করেছেন? আমাদের সাংসদরা প্রতিদিন সংসদে NRC, নোটবন্দি, মূল্যবৃদ্ধি, নাগরিক বিল সহ একাধিক ইস্যু নিয়ে লড়াই করেছেন
মাঝে হিলিতে অর্পিতার একটা বড় অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিল। ওর বাঁচার কথা ছিল না। প্রায় বছর খানেক হাসপাতালে ছিল।
অর্পিতা নাট্য জগতের একটি পরিচিত নাম। নাটক সঙ্গীত সবকিছু ভালোবাসে। ও খুব লড়াকু মেয়ে। আমি যা বলি তাই শোনে এবং তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে সংসদে সোচ্চার হয়। বালুরঘাটের জন্য আমার কাছে প্রায় প্রতিদিন কিছু না কিছু দাবী করে।
পাঁচ বছরে বিজেপির সরকার মানুষের জন্য কোনও কাজ করেনি। একটা সরকারের কাজ রোটি, কাপড়া, মকান, কর্মসংস্থান। বিজেপি না দিয়েছে রুটি, না দিয়েছে কাপড়, না দিয়েছে কর্মসংস্থান।
বিজেপি বলেছিল বছরে ২ কোটি করে পাঁচ বছরে ১০ কোটি বেকারকে চাকরি দেবে। বরঞ্চ ২কোটি ছেলে বেকার হয়ে গেছে।
এয়ার ইন্ডিয়া বিক্রী করে দিতে চেয়েছিল বিজেপি। আমরা লড়াই করে বাঁচিয়েছি। বিএসএনএল-এর প্রায় ৫০ হাজার ছেলে মেয়ে মাইনে পাচ্ছে না। জেট এয়ার ওয়েজের ছেলে মেয়েরা বলছে আমাদের চাকরি চলে যাবে।
আমরা রাজ্য সরকারের ক্যাজুয়াল ও কন্ট্রাকচুয়ালদের চাকরির মেয়াদ ৬০ বছর করে দিয়েছি। প্রফেসরদের চাকরির সময়সীমা ৬৫ করে দেওয়া হয়েছে।
আমরা সাড়ে সাত কোটি মানুষকে স্বাস্থ্য সাথী কার্ড দিচ্ছি। এর জন্য দরখাস্ত করতে হবে। এই কার্ডটা বাড়ির মেয়েদের নামে হবে। বছরে পাঁচ লক্ষ টাকা করে প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে পারবেন। এই স্বাস্থ্য কার্ড যে মহিলার নামে হবে, তিনি তাঁর বাবা মার চিকিৎসাও করাতে পারবেন ঐ কার্ডে।
সারা দেশে ১২ হাজার কৃষক আত্মহত্যা করেছে। বিজেপি সরকার সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার করেছে, দলিতদের ওপর অত্যাচার করেছে।
জনগণের দরকার জনগণের সরকার। বাংলা এবং উত্তর প্রদেশ সিদ্ধান্ত নেবে আগামী দিন সরকার কে গঠন করবে।
আপনাদের প্রতিটা ভোটের দাম আছে। কংগ্রেসকে ভোট দিয়ে নিজেদের ভোট নষ্ট করবেন না। কারণ, বিজেপি বা কংগ্রেস কেউই একক ভাবে ক্ষমতায় আসতে পারবে না। সিপিএমকেও ভোট দেবেন না।
বহরমপুর, জঙ্গিপুর আরও কিছু কিছু জায়গায় কংগ্রেস বিজেপির সঙ্গে অ্যাডজাস্ট করে চলছে।
মোদী যখন প্রথম এলেন, বললেন আমি চাওয়ালা, এখন বলছেন আমি চৌকিদার। উনি সাড়ে চার বছর বিদেশ ঘুরে বেড়িয়েছেন। আমরা দেশ চালাতে দেশনেতা চাই, দেশ ভাগাভাগি করা চৌকিদার চাই না।
আমরা সেই চৌকিদার চাই না যে দেশ বেচে দেয়, যারা গদা নিয়ে তরোয়াল নিয়ে মিছিল করে।
আমিও হিন্দু। আমরা স্বামী বিবেকানন্দ এবং রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের হিন্দু ধর্মে বিশ্বাস করি।
আমি মা দুর্গাকে মানি। মা দুর্গার হাতে যে অস্ত্র সাজে, তোমাদের হাতে সাজে না। ওইখানেই দেবদেবীদের সঙ্গে মানুষের তফাৎ। এটা ইলেকশন কোডে আছে?
হিন্দু ধর্ম অনেক বড়। হিন্দু ধর্ম মানবিকতার কথা বলে। হিন্দু ধর্ম ভাগাভাগি করে না।
ইসলাম ধর্মও পবিত্র ধর্ম। আমরা নিজের ধর্মকেও শ্রদ্ধা করি, অন্যের ধর্মকেও সম্মান করি। এটাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি।
আমি দুর্গা পুজোতেও যাই, ঈদেও যাই, বড়দিনেও যাই, গুরুদ্বারে যাই, ছটপূজোতেও যাই, বৌদ্ধদের কাছেও যাই, জৈনদের কাছেও যাই। এটাই বাংলার কৃষ্টি।
জীবন দিয়ে হলেও ভাগাভাগির রাজনীতি করতে দেবনা।
দুই জমজ ভাই, জগাই মাধাই বলছে বাংলায় এনআরসি করব। অসমে হিন্দু বাঙালীদের তারিয়েছ কেন? বিহারী, নেপালীদের তাড়িয়েছ কেন?
এনআরসি হওয়ার পর আমি প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছিলাম। তাদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি, মেরে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তাও আমরা দমে না গিয়ে রোজ লড়াই করছি।
আবার বলছে নাগরিকত্ব বিল আনবে। আপনি নাগরিক আছেন কিন্তু এই বিলে আপনাদের ছবছর বিদেশী করে দেওয়া হবে। এর পর কি গ্যারান্টি আছে আপনি নাগরিক বিল পাবেন? ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে এদেশে যারা এসেছে তারা সবাই নাগরিক।
বিজেপি ক্ষমতায় এলে বাবা সাহেব আম্বেদকরের তৈরী সংবিধান ধ্বংস করে দেবে। দেশে স্বাধীনতা থাকবেনা, গণতন্ত্র থাকবেনা।
আগামী দিন দাঙ্গাবাজকে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ার থেকে করতে হবে খালি। এদেশের মানুষকে ভালো রাখতে কাজ করতে হবে।