সাম্প্রতিক খবর

এপ্রিল ২০, ২০১৯

আমি কি করেছি জিজ্ঞেস করে, আপনারা ৫ বছরে কি করেছেন তার কৈফিয়ত দিনঃ বগুলায় বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আমি কি করেছি জিজ্ঞেস করে, আপনারা ৫ বছরে কি করেছেন তার কৈফিয়ত দিনঃ বগুলায় বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ নদিয়ার বগুলায় দ্বিতীয় নির্বাচনী সভা করেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

ওনার বক্তব্যের কিছু অংশঃ

প্রথমেই আমি আমার প্রিয় সহকর্মী সত্যজিৎ বিশ্বাসের পরিবারকে আমার সমবেদনা জানাই এবং যে নিষ্ঠুরভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে তাকে আমি ধিক্কার জানাই

নদিয়া শান্তির ধাম হিসেবে পরিচিত, এখানকার রাস মেলা, ইস্কনের মন্দির বিখ্যাত। এটি শ্রী চৈতন্যদেব, রাধাকৃষ্ণের জায়গা। এই জেলা সর্ব ধর্ম সমন্বয়ের এক বড় পীঠস্থান

এই নদিয়ার জন্য আমাদের সরকার অনেক কাজ করেছে। এখানে মেডিকেল ইন্সটিটিউট হচ্ছে, রাস্তা, বিদ্যুৎ সংযোগ, পানীয় জল প্রকল্প, জেলা হাসপাতাল, মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাব, বিশ্ববিদ্যালয়, এইমস, হ্যান্ডলুম টেকনোলজি, মসলিন তীর্থ করা হয়েছে। বিভিন্ন সম্প্রদায় যেমন মতুয়া, নমশূদ্র উন্নয়ন পর্ষদ করা হয়েছে। এছাড়া আইটিআই, নতুন কলেজ, পলিটেকনিক কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, সিসিইউ, এসএনসিইউ, এইচ ডি ইউ, কিষান মান্ডি, কৃষি তীর্থ তৈরি হয়েছে। নদিয়ার কৃষ্ণনগরের সরপুরিয়া বিখ্যাত

রাজ্যের সাড়ে ৮ কোটি মানুষ ২ টাকা কিলো দরে চাল পায়, সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা, এই ৮ বছরে ২৮০০০ বেড বেড়েছে সরকারি হাসপাতালে, ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান হয়েছে

স্বাস্থ্য সাথী কার্ড করে দেওয়া হচ্ছে, যার মাধ্যমে ৭ কোটি মানুষ উপকৃত হবেন। বাড়ির মহিলা অভিভাবকের নামে এই কার্ড হবে, এর মাধ্যমে ৫ লক্ষ টাকা প্রাইভেটে চিকিৎসা করাতে পারবেন

স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য ৬০ লক্ষ মেয়েরা কন্যাশ্রী স্কলারশিপ পাচ্ছে, সবাই পাচ্ছে কোন সিলিং নেই। তপশিলিরা শিক্ষাশ্রী স্কলারশিপ দেওয়া হচ্ছে, আদিবাসী, সংখ্যালঘুদের ও স্কলারশিপ দেওয়া হচ্ছে, সবুজ সাথী প্রকল্পে ১ কোটি ছেলেমেয়েকে বিনামূল্যে সাইকেল দেওয়া হয়েছে
মানুষ মারা গেলে তাঁর সৎকারের জন্য আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয় বৈতরিণী প্রকল্পে, শিশুর জন্মের পর সবুজ সাথী প্রকল্পে একটা করে গাছ দেওয়া হয়। মানুষ যাতে অসুবিধায় না পরে তার জন্য সব রকমের কাজ করা হচ্ছে

বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে, বন্যায় ফসলের ক্ষতি হলে কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঘর বাড়ি ভেঙে গেলে তাও তৈরি করে দেওয়া হয়

বাংলায় কৃষকদের জমির খাজনা ও মিউটেশন ফি মুকুব করে দেওয়া হয়েছে। কৃষকদের শস্য বীমার সব টাকা দেয় রাজ্য সরকার, কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে আমরা ভিক্ষা নিই না

‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্পে কৃষকদের বছরে ২ বার ২৫০০ টাকা করে মোট ৫০০০ টাকা দেওয়া হয়

কোন কৃষক মারা গেলে তার পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার।

তাঁতশিল্পী, লোকশিল্পী, আশা, আইসিডিএস, আশা কর্মীদের জন্য অনেক কাজ করেছে আমাদের সরকার

নরেন্দ্র মোদীর কোন লজ্জা নেই, উনি মিথ্যে বলার ওস্তাদ

আজও উনি বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন কোন কাজ করেনি। উনি বেশি কথা বললে ওনার মুখে লিউকো প্লাস্ট লাগিয়ে দেব।
৫ বছরে ওনার সরকার বাংলায় একটাও নতুন ট্রেন দেয়নি, বাংলায় কোন কাজ করেনি। সেই বালুরঘাটে দাঁড়িয়ে উনি আমার নামে মিথ্যে কথা বলছেন যেখানে একলাখি- বালুরঘাট যে রেল লাইন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করেছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মিথ্যে কথা বললে রাজনীতি ছেড়ে দেবে আর নরেন্দ্র মোদী মিথ্যে বললে ওনাকে জনগণের কাছে কান ধরে ওঠবোস করতে হবে

সব ব্রডগেজ, মেট্রো রেলের ২০০০ কোটি টাকার প্রজেক্ট, বড়গাছিয়া-মুন্সেরঘাট রেল লাইন, দিঘা – তমলুক রেল লাইন করেছি আমি। সব পেন্দিং প্রজেক্ত করে দিয়েছিলাম রেলমন্ত্রী থাকাকালীন। রাজা-রানি, জন্মভূমি, কর্মভূমি, মাতৃভূমি, উপাসনা, বন্দনা অনেক ট্রেন দিয়েছিলাম, ওনার কোন ধারণাই নেই

কয়েকটা ক্যাডার ওনার কানে কানে কিছু কথা বলছে আর উনি সেইসব শুনছেন। একটা প্রধানমন্ত্রীর ক্রস চেক করে কথা বলা উচিত, না হলে মিথ্যে কথা বলার দায় প্রধানমন্ত্রীকে নিতে হবে। নরেন্দ্র মোদী নিজের কাজের কথা বলছেন না, শুধু মিথ্যে কথা বলছেন

৫ বছরে উনি শুধু বিদেশে ঘুরে বেড়িয়েছে, নোটবন্দি করেছেন, ওনার দল মানুষকে মেরেছে, ২ কোটি বেকার যুবকের চাকরি কেড়ে নিয়েছ, ব্যাঙ্কের টাকা লুঠেছে, আরবিআই থেকে সিবিআই সকলে বলছে বাই বাই

এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচন নয় যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার নিজের কাজের হিসেব দেবে, এটা দিল্লির নির্বাচন তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আপনার থেকে কৈফিয়ত চাইবে যে কি কি কাজ আপনি করেছেন এই ৫ বছরে। দেশটাকে ওরা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দিল, দেশের সর্বনাশ করে দিল, আর আজ বড় বড় কথা বলছেন

একজন বুড়ো খোকা যখন দেশ আর মানুষ ভাঙে, তখন তাকে জবাব দিতে হয় গণতন্ত্রের মাধ্যমে – ভোটের থাপ্পরের মাধ্যমে
হঠাৎ করে মহম্মদ বিন তুঘলকের কায়দায় নোটবন্দি করে দিলেন, অনেক বাতিল করেছ, জনগণ এবার তোমায় বাতিল করবে
আর এস এস ওনাকে বলেছে তাই উনি এখন বাংলায় ঘুরে বেরাতে এসেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কন্ট্রোল করতে হবে কারণ আর কেউ ভয়ে কিছু এক্মাত্রমমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই প্রতিবাদ করে তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলা স্তব্ধ করতে হবে।
আমি মার খেয়ে বেঁচে আছি, সিপিএম আমায় কম মারেনি আর মোদী বাবু আমায় ভয় দেখাচ্ছে, চমকাচ্ছে, ধমকাচ্ছে তাই আমি বলি আগে দিল্লি সামলা তারপর ভাবিস বাংলা

বাংলার মাটি সর্ব ধর্ম সমন্বয়ের মাটি, জনগণের মাটি, এই মাটি দাঙ্গার আকাল সহ্য করে না, এই মাটির এক ইঞ্চিও আমরা কাউকে ছাড়বো না

দলিত, তপশিলি, আদিবাসীদের ওপর এত অত্যাচার আগে কখনো হয়নি। এমনকি সাংবাদিকরা যারা ওনার বিরুদ্ধে লিখেছে তাদের মেরে ফেলছেন

আর এখন নেতারা এখন গদা আর তরোয়াল নিয়ে বেরিয়ে পরেছে, এসব নিয়ে এরা রক্তের খেলা করে

সিপিএম ৩৪ বছর অত্যাচার করেছেন আর এখন বিজেপিকে সমর্থন করছে। সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেসের আঁতাতের কারণে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি করেছিলাম তাই বাংলায় পরিবর্তন এসেছিল

আপনারাই (মানুষই) তৃণমূলের জন্মদাত্রী মা

এত অত্যাচারী, ফ্যাসিস্ট, হিটলারি শাসক, এত শোষণ, এত বঞ্চনা, এত লাঞ্ছনা আমরা আগে কখনো দেখিনি

বাংলা একমাত্র জায়গা যেখানে আমরা ৪০% বেকারত্ব কমিয়েছি। বাংলা আজ অনেক এগিয়ে গেছে। স্কিল ডেভেলপমেন্ট, কন্যাশ্রীতে বাংলা এক নম্বরে, পরপর ৫ বছর কৃষি কর্মন পুরস্কার পেয়েছে বাংলা

আগামিদিনে বাংলাই পথ দেখাবে, বাংলাই জয় করবে, দিল্লী দখল করবে কে? তৃণমূল আবার কে

যারা উত্তেজনামূলক দাঙ্গা ছড়ায়, যারা দেশকে ভেঙে দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ভোট দিতে হবে

আমি হিন্দু ঘরের মেয়ে, আমি সব ধর্মের পুজো করি, তাই বলে আমি অন্য ধর্মের মানুষকে আমরা অশ্রদ্ধা করি না

মোদী এসে বলছে বাংলায় দুর্গা পুজো হয় না, আজও এসে বলে গেছে, কত বড় মিথ্যেবাদী, মিথ্যে কথা বলার জন্য কোন পুরস্কার থাকলে সেটা মোদীবাবু পেতেন। বাংলায় লক্ষ লক্ষ ঘরে দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী পুজো হয়, মিথ্যে কথা বলার একটা লিমিট আছে

নির্বাচন এলে বলবে উনি একা হিন্দু বাকি সব শত্রু। আগে বলত মিত্রো, এখন বলছে সব শত্রু। ৫ বছর আগে নিজেকে চা-ওয়ালা বলতেন আর এখন উনি চৌকিদার। আমি মাটির চৌকিদার পছন্দ করি, মোদী চৌকিদারকে নয় যে কথায় কোথায় মিথ্যে বলে। দেশটাকেই এখনও চেনে না ভালভাবে কি করে উনি দেশ সামলাবেন?

নতুন ভোটারদের আমার অনেক অভিনন্দন, আপনাদের প্রথম ভোট হোক মোদী বাবুকে ফেলার পক্ষে, আপনাদের ভোট হোক নতুন সকালের

মোদীবাবু ফিরে এলে দেশে অধিকার গণতন্ত্র বলে কিছু থাকবে না, মানুষের কোন স্বাধীনতা থাকবে না। ওরা সকলের ফোন ট্যাপ করছে

বিজেপি বাংলায় ক্ষমতায় না থেকেই বলছে বাংলায় এনআরসি করবে, আসামে এনআরসি করে ৪০ লক্ষ লোকের নাম বাদ দিয়ে দিয়েছে,এর মধ্যে ২২ লক্ষ হিন্দু বাঙালী, বাকি মুসলমান, বিহারী সহ অন্য সম্প্রদায়ের মানুষও আছে। কারো বাবার, কারো মায়ের, কারো স্বামীর নাম বাদ গেছে, অনেক মানুষ আত্মহত্যা করেছে। ওরা ঠিক করবে কার নাম রাখবে আর রাখবে না। কিন্তু আমরা কোনদিন বাংলায় এন আর সি করতে দেব না। সবাই আমরা একসাথে থাকতে চাই

নাগরিক বিল করে আপনাদের সব অধিকার কেড়ে নেবে, আপনাকে ৬ বছরের জন্য বিদেশি বানিয়ে দেবে তারপর নতুন করে নাগরিক অধিকার দেবে, যারা already নাগরিক আছে তাদের আবার নতুন করে নাগরিক বানাবে – নতুন করে নাটক শুরু করেছে

বিজেপিকে দেশ থেকে বিতাড়িত করতে হবে, তাই এই নির্বাচনে বিজেপিকে গণতান্ত্রিকভাবে কবর দিন