এপ্রিল ১২, ২০১৯
২০১৯-এ কেন্দ্রে বিজেপি সরকারের সমাপ্তি হবেঃ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজগঞ্জ

আজ জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রের রাজগঞ্জে বেলাকোবা পাবলিক ক্লাব গ্রাউন্ডে এক জনসভায় তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
তাঁর বক্তব্যের কিছু অংশঃ-
আজকের সভায় যারা সমবেত হয়েছেন তাঁদের প্রত্যেককে আমি উষ্ণ অভিনন্দন জানাই।
ভোটটা আপনারা বিজয় চন্দ্র বর্মনকে দেবেন, কিন্তু এই ভোটটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিচ্ছেন। আমি বিশ্বাস রাখি, আগামী ২৫ শে মে ভোটের ফলাফলে, জলপাইগুড়ি থেকে বিজেপি ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাবে।
মাথায় রাখবেন ২০১৪ সালের নির্বাচন আর আজকের নির্বাচনের মধ্যে অনেক পার্থক্য। ২০১৪ সালে আমরা বলেছিলাম, দূর্নীতিগ্রস্থ কংগ্রেস, সাম্প্রদায়িক বিজেপি এবং সন্ত্রাসবাদী হার্মাদ সিপিএমের বিরুদ্ধে ভোট দিতে।
এখন, সারা দেশের সব রাজ্য বিজেপির কাছে বশ্যতাস্বীকার করেছে, বাংলা এই সাম্প্রদায়িক বিজেপির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে গেছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমাণ করেছেন, বাংলার মাটি দূর্জয় ঘাঁটি, স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় থেকে এই বাংলার মানুষ নতুন দিশা দেখিয়ে এসেছে। এই বাংলার মানুষ কোনওদিন মিথ্যে অপপ্রচারের কাছে মাথা নত করেনি।
যারা রাজনৈতিকভাবে লড়াই করতে পারেনা, তারা ধর্মের ভরসায় লড়াই করে।
আমি ধর্মের ভিত্তিতে মানুষে মানুষে বিভেদে বিশ্বাস করি না। আমি মনে করি আমি একজন হিন্দু, আমি স্বামী বিবেকানন্দের হিন্দুত্বে বিশ্বাস করি, কিন্তু নকল নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ এবং যোগী আদিত্যনাথের ভাঁওতা হিন্দুত্বে বিশ্বাস করি না।
আমি হিন্দু ধর্মের আচার অনুষ্ঠান পালন করি, মা দূর্গার আরাধনা করি এবং একই সাথে ঈদের সময় আমার সংখ্যালঘু ভাই-বোনেদের পাশে দাঁড়িয়ে আল্লার কাছে দোয়া করি।
একজন মানুষ হিসেবে আমি যে কোনও ভগবানের কাছে প্রার্থনা করতে পারি, কিন্তু মানুষ যখন আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন, তখন আমার একটাই ধর্ম তখন থাকবে মানব ধর্ম। রাজ্যের মানুষ যাতে উন্নয়নমূলক প্রকল্পের সুবিধা পায় সেটা সুনিশ্চিত করাই আমার একমাত্র কাজ।
আচ্ছে দিনের নাম করে পাঁচ বছর ধরে একটা সরকার মানুষকে বোকা বানিয়েছে।
গ্রামে-গঞ্জে একটাও উন্নয়ন কেন্দ্র সরকার করেনি। বিজেপি শুধু বিভাজনের রাজনীতি করতে ব্যস্ত থাকে।
স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন, “বহুরূপে সম্মুখে তোমার,ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর? জীবে প্রেম করে যেই জন,সেই সেবিছে ঈশ্বর”
পাঁচ বছর আগে নরেন্দ্র মোদীস্বামী বিবেকানন্দের নামে ভোট চেয়েছিলেন। যদি তিনি সত্যিকারের ধর্মের রক্ষাকর্তা বলে দাবী করেন, তাহলে তিনি বেলুড় মঠকে নূন্যতম স্বীকৃতি কেন দেন নি?
সারা দেশে বেকারত্ব এবং মানুষের হাতে টাকা নেই, কিন্তু বাংলায় আছে আর বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আছেন বলেই এ সব কিছু আছে
আমি বারবার বলবো, “চৌকিদার চোর হ্যায়”। মোদীর ক্ষমতা থাকলে আমাকে গ্রেফতার করে দেখাক!
সব ক্রিমিনালদের একটাই ঠিকানা ভারতীয় জনতা পার্টি। যেমন- কোচবিহারে বিজেপির প্রার্থী স্মাগলিং-এর সাথে জড়িত।
বিজেপি বলেছিল বাংলায় তারা ২২টা আসন পাবে কিন্তু আমি বেট লড়ছি আমরা ৪২ এ ৪২ পাবো, এবং ২৫শে মে সেটাই প্রমাণ হবে।
আমি বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ করছি একটা সিট জিতে দেখাক
আমি সবসময় তাদের পাশে থাকার মাধ্যমে জনগণের কল্যাণের জন্য কাজ করেছি, আর বিজেপি নেতাদের মতো না যারা শুধু এসির আরাম পছন্দ করে।
আমরা দেখেছি প্রধানমন্ত্রী না তো চা-ওয়ালা, না তো চৌকিদার- মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও খাঁটি আছেন। এখনও সেই পুরোনো বাড়িতে থাকেন ও ১০ কোটি মানুষের কল্যাণের চিন্তা করেন।
বিজেপি নিজেকে হিন্দুদের পরিত্রাতা মনে করে, কিন্তু ওরা কি হিন্দুদের জন্য ঠিক কি করেছে?
আমরা বলতাম কংগ্রেস আকাশ থেকে মাটি পর্যন্ত দূষিত- ২জি কেলেঙ্কারি ও কয়লা কেলেঙ্কারি। এটা বিজেপির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য- রাফাল কেলেঙ্কারি থেকে নমামী গঙ্গা কেলেঙ্কারি, এবং আরও এইগুলোর মধ্যে।
আপনারা মমতা ব্যানার্জিকে সবসময় সমর্থন করে গেছেন এবং তিনিও আপনাদের অনেক কিছু দিয়েছেন- জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চ, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং মেডিকেল কলেজ, আইটিআই, ও আরও অনেক সুবিধা দিয়েছেন একার কৃতিত্বে।
আমি এখানে ৩০,০০০ লোক দেখছি- কেউ কি বলতে পারবে আপনারা কেউ ১৫ লক্ষ ব্যাঙ্ক একাউন্টে পেয়েছেন কিনা? কেউ না।
কিন্তু আপনারা সবাই বলতে পারবেন কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, সবুজ সাথী, রূপশ্রী, সবুজশ্ৰী, বৈতরণী, ও অন্যান্য প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছেন- এটাই মমতা ব্যানার্জির সরকার করেছে।
এপ্রিলের ১৮ তারিখে আপনারা যখন ভোট দিতে যাবেন মনে রাখবেন ভোটটা ঠিক ব্যক্তিকেই দেবেন, ভোট দিন বাংলার সম্মান ও সংস্কৃতির জন্য।
মোদীর রাজ্য গুজরাতে ২৬ টার মধ্যে ২৬ টা লোকসভা আসন জিতেছিল ২০১৪ সালে, কিন্তু ২০১৭ সালে অনেক বিধানসভার আসন হারিয়েছে বিজেপি।যদি গুজরাত পারে, আপনারাও পারবেন।
নেতাজি বলেছিলেন- তোমরা আমায় রক্ত দাও,আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব। এখন মমতা ব্যানার্জি ডাক দিয়েছেন বাংলার জন্য- তোমরা আমাকে ৪২ শে ৪২ টি লোকসভা আসন দাও, আমি তোমাদের প্রগতিশীল ও ধর্মনিরপেক্ষ ভারতবর্ষ দেব.
মনে রাখবেন সিপিআইএম বা কংগ্রেসকে ভোট দিয়ে নিজের ভোট নষ্ট করবেন না, কারণ এই লড়াইটা অগ্নিকন্যা দিদি ও সাম্প্রদায়িক মোদীর মধ্যে।
সব সমীক্ষা বলছে মোদী আর ক্ষমতায় ফেরত আসছে না।
রান্নার গ্যাস, কেরোসিন, পেট্রল ও ডিজেলের দাম বেড়েছে অনেকবার বিগত কয়েকমাস ধরে। কিন্তু দুই মাস ধরে যত বিজেপি হেরেছে বিভিন্ন রাজ্যের নির্বাচনে, তত দাম কমছে। প্লাটফর্মের টিকিটের দামও ২ টাকা থেকে বেড়ে ২০ টাকা হয়েছে।
মে মাসে নতুন সরকার গঠনের পর, ১লা জুন থেকে এই সবের দাম আরও কমে যাবে এবং সাধারণ মানুষের জন্য সহজলভ্য হয়ে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী নির্লজ্জের মতো সেনাদের ব্যবহার করছেন ভোটে জেতার জন্য। কিছুদিন আগে, উনি মানুষকে বিজেপিকে ভোট দিতে বলছেন যাতে সেনাকে ওনারা সুরক্ষা দিতে পারে। উনি নির্লজ্জের মতো সেনাদের মৃত্যুকে ব্যবহার করছেন পুলওয়ামা ঘটনার নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য।
আপনারা কি জানেন কে মোদির বিরুদ্ধে লড়ছেন ওনার লোকসভায়? জানেন না, কারণ মিডিয়া ভয়ে এটা নিয়ে সংবাদ করেনি।
আমি আপনাদের বলি কে মোদীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। একই ব্যক্তি, সেই বিএসফ জওয়ান যে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছিল যেটা ছড়িয়েছিল, যেটা দেখিয়েছিল খাবারের গুণমান কতটা খারাপ যেটা দেওয়া হয় তাদের। এর পরিণতিতে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। যিনি সেই ব্যক্তি যিনি মোদীর বিরুদ্ধে লড়াই করছেন।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, ইমরান খান বলেছেন উনি মোদীকে চান। আর পাকিস্তান আমাদের শত্রু দেশ। তাহলে আমাদের শত্রু মোদীকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে চায়। আইএসআই, নীরব মোদী, ললিত মোদী, বিজয় মালিয়া, দাঙ্গাবাজ ও পাচারকারী- সবাই মোদীকে চায় প্রধানমন্ত্রী হিসাবে।
আর সব পরিশ্রমী মানুষরা চান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে। এটাই তাদের মধ্যে পার্থক্য ।
জলপাইগুড়ির প্রথম বারের ভোটাররা ভোট দিন উন্নত বাংলা গড়তে, উন্নত জলপাইগুড়ি ও বাংলার ঐক্য ও সংস্কৃতির জন্য
মমতা ব্যানার্জি একটা টাকা অতিরিক্ত খাজনা নেয় না কারণ গরিবদের কথা বোঝেন উনি।
মোদী গরীবদের জন্য একদমই চিন্তা করে না। ওনার জনসভায় মন্ত্রের মত ‘গরীব’ শব্দ উচ্চারণ করেন যেমন ‘সেনা’ বারবার উচ্চারণ করেন অথচ একবারও ওদের জন্য ভাবেন না।
আমাদের বায়ু ও জল দরকার বেঁচে থাকার জন্য। অপরদিকে বিজেপির বেঁচে থাকার জন্য দরকার বিভাজন সৃষ্টি, দাঙ্গার উস্কানি, সাম্প্রদায়িক সমস্যা।
বিজেপি বুঝতে পেরেছে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান আর কাজ করছে না ওদের পক্ষে।
নিজেদের রামভক্ত বলে বিজেপি আসলে রামের অপমান করছে। আসল রাম অনেক ত্যাগ করেছিলেন, ১৪ বছর বনবাসও।
গত বছর সরকার রাজ্যের ২৮,০০০ দুর্গাপুজো কমিটিকে ১০,০০০ টাকা করে প্রদান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এই সিদ্ধান্ত, বিজেপি সিপিআইএম ও কংগ্রেস আদালতে গেছিল পরেরদিন, ঘটনাটা কে হিন্দু তোষণ বলে। এই ধরণের চিন্তাভাবনা তাদের রাজ্যের মানুষের প্রতি।
আমি বারবার বলব, চৌকিদার চোর হয়ে। সাহস থাকে তো মোদী আমায় গ্রেফতার করুক।
আমরা ইমাম ভাতা ও মোয়াজ্জেম ভাতা দিই ওয়াকফ বোর্ড থেকে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, আপনাদের করের টাকায় নয়।
যে টাকা আপনি ট্যাক্স হিসেবে দেন, আমরা আপনার নিজের কল্যাণের জন্য ব্যয় করি বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে যা আপনাদের জীবন বদলে দিয়েছে।
বিজেপি দুর্গাপুজো উপলক্ষ্যে একবারের জন্যেও রাজ্যের মানুষের কাছে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠায়নি যে দুর্গাপুজো বাঙালিদের জীবনে সব থেকে বড় পুজো।
আপনাদের যদি রাম থাকে, আমাদের আছে দুর্গা। কিন্তু আপনাদের রাম এখন একা, পাশে আছে শুধু সিবিআই আর ইডি, আর আমাদের দুর্গার পাশে সমগ্র দেশ, কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী। তোমার রাম বেরিয়ে পড়েছে, আমাদের দুর্গা তাকে তাড়া করছে।
কেন্দ্রে বিজেপি সরকারের শেষ দেখবে ২০১৯ এ।
বাংলায় যে দুটো সিট বিজেপি জিতেছিল ২০১৪ তে, সেই দুটোও এবারে তারা হারাবে।
দার্জিলিং ও আসানসোল বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করবে। সত্যি কথা বলতে, বিজেপি দার্জিলিং ও আসানসোল দুই জায়গাতেই অশান্ত করে রেখেছে।
বিজেপিকে হারিয়ে প্রমাণ করুন আপনারা সবাই ঐক্যবদ্ধ বাংলা দেখতে চান। বিরোধীদের এক ইঞ্চি জমিও ছাড়বেন না।
বিজেপির মত আমিও ‘ভারত মাতা কি জয়’ বলি, কিন্তু আমি বলি এটা আমার দেশের জন্য গর্বের কারণে, , সঙ্কীর্ণ সাম্প্রদায়িকতা অর্জনের জন্য নয়।
বিজয় চন্দ্র বর্মনকে ভোট দিন কিন্তু মনে রাখবেন আপনারা ভোট দিচ্ছেন মমতা ব্যানার্জিকে জলপাইগুড়ি তথা বাংলার উন্নয়নের জন্য।
আমি সবাইকে অনুরোধ করছি, ১৮ এপ্রিলে সকাল সকাল বুথে গিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দিন।
আমি আমার বক্তব্য এখানেই শেষ করছি সকলকে প্রণাম জানিয়ে- বড়দের,যুবদের,দলের কর্মীদের, মায়েদের ও বোনেদের।
জয় হিন্দ, বন্দে মতরম, তৃণমূল কংগ্রেস জিন্দাবাদ, মমতা ব্যানার্জি জিন্দাবাদ, জয় জলপাইগুড়ি, জয় বাংলা।