September 27, 2017
কান্ডারির কলম

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
পুজো সংখ্যায় কিছু লিখতে হলে প্রথমেই মনে আসে পুজো সংখ্যার কথা, ‘জাগো বাংলা’র জন্য অন্তত ছোট্ট একটা লেখা। ‘জাগো বাংলা’ কাগজের Editor হিসাবে আমার অনেকদিন কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকার সুবাদে আমি ‘জাগো বাংলা’ পত্রিকার একজন নিয়মিত পাঠক। সেই অর্থে আর কাগজটা চালু করার ক্ষেত্রে আমি, পার্থদা ও সুব্রত বক্সি অনেকদিন একসঙ্গে লেখার কাজ ও লেখা সংগ্রহের অনেক কাজ করেছি। সুতরাং জাগো বাংলা পত্রিকার প্রতি একটা আবেগ তো বরাবরই আছে। আর আমার একটা বিশেষ আকর্ষণ ‘জাগো বাংলা’ এই ক্ষুদ্র পত্রিকাটির ক্ষেত্রে আছে ও থাকবেই।
‘জাগো বাংলা’ – এই নামটাও আমারই দেওয়া। আমার বেশ মনে পড়ে যখন বিরোধী দল করার জন্য প্রতিনিয়ত সিপিএম দলের ও অন্যান্য দলের পত্রিকার নাম শুনতাম ও বিভিন্ন খবরাখবর দেখতাম তখন মনে মনে ভাবতাম আমরাও যা বলতে চাই, যার ভেতর দিয়ে আমাদের আন্দোলনের কর্মসূচি মানুষের কাছে পৌঁছতে চাই তার জন্য যদি একটা ‘মুখপত্র’ থাকত তবে তো আমরাও আমাদের কথা লিপিবদ্ধ করতাম। সেইসব চিন্তা করতে করতে একদিন আমি, পার্থদা, বক্সিদা আলোচনা করে ঠিক করলাম আমরাও একটা চার পাতার ছোট পাক্ষিক বের করব। কোথায় হবে, কী করে হবে, কেমন করে হবে, কত খরচ হবে? এসব ভাবতে ভাবতে ঠিক হল প্রথমত একটা নিজেদের মুখপত্র, দ্বিতীয়ত নিজেরাই লিখব, যাতে কোনও বাড়তি পয়সা না লাগে, আর তৃতীয়ত, No Profit, No Loss. যা বিক্রি হবে তার থেকেই কাগজের দাম উঠে যাবে। চতুর্থত, বিজ্ঞাপন কেউ দিতে চাইলেও আমরা কারও কাছে মাথানত করে বিজ্ঞাপন নেব না।
এমনকী ছ’বছর বাংলার দায়িত্বে সরকার চালানোর সুযোগ পাওয়া স্বত্ত্বেও কিন্তু সরকারি কোনও বিজ্ঞাপন আমরা আমাদের ‘জাগো বাংলা’য় এখনও পর্যন্ত নিইনি। অথবা কোনও বেসরকারি বিজ্ঞাপন যা অনায়াসেই আমরা পেতে পারি তাও কারও কাছে নেওয়া হয় না।
কারণ, ‘জাগো বাংলা’ শুধু একটা ‘তৃণমূল কংগ্রেস’-এর মুখপত্র হিসাবে আমি বা আমরা দেখি না। ‘জাগো বাংলা’ নামটার সঙ্গে আমাদের বরাবর একটা আবেগ বিবেক-অনুভুতি যুক্ত থাকে। ‘জাগো বাংলা’র সঙ্গে ‘জাগো মা’, জাগো মা গো, জাগো বাংলা মা, জাগো বাংলার মা-মাটি-মানুষের কথা যেন একেবারে একত্রে সংযোজিত। ফলে জাগো বাংলাকে আমরা আমাদের একজন আপনজনের মতো করেই ভাবি। প্রতি সপ্তাহে আমার একটা রুটিন থাকে, বৃহস্পতিবার এখনও ‘জাগো বাংলা’ কাগজটা আমার হাতে প্রথম আসে। আমি একবার সবটাই চোখ বুলাই, তারপরেই ওটা গ্রাহকদের কাছে যায়।
যখন কোনও কেউ বা কারও কাছে আন্দোলনের কোনও সমর্থন আমরা পাইনি তখন প্রতি সপ্তাহে ‘জাগো বাংলা’ কাগজে আমরা আমাদের মতামত লিখতাম।
কংগ্রেস যখন আগে করতাম, তখন খুব ইচ্ছে ছিল দলের কথা মানুষকে জানাব। তখন তো আর নিজেদের ইচ্ছামতো সবকিছু স্বাধীনভাবে করতে পারতাম না। আজ তৃণমূল কংগ্রেস যে দলটার সঙ্গে আমরা যুক্ত, সেই দলটাতে মুক্ত ও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারি। ফলে ‘জাগো বাংলা’কে আমরা মানুষের মুখপত্র হিসাবে ও মা-মাটি-মানুষের মুখপত্র হিসাবে দেখি। ফলে তৃণমূল কংগ্রেস ও জাগো বাংলার বেড়ে ওঠা প্রায় ‘যমজ বোন’-এর মতো।
আগে ‘জাগো বাংলা’ চার পাতার ট্যাবলয়েড Type-এর ছিল। এখন তো সম্পূর্ণ কাগজের মতোই বের হয়। এখনও সাপ্তাহিক বের হয়।
যদিও ‘জাগো বাংলা’ এখন মানুষের কাছে ও আমাদের কাছে খুব জনপ্রিয় হিসাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। প্রতিদিন কিন্তু ‘জাগো বাংলা’ বের করলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, ‘জাগো বাংলা’ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। ‘জাগো বাংলা’র একটা নিজস্ব বাজারও তৈরি আছে। তবু আমরা আজও তাকে দিন দিন রোজকার করতে পারিনি চাহিদা থাকা সত্ত্বেও। তবে যদি ভবিষ্যতে Infrastructure তৈরি করতে পারি তবে নিশ্চয়ই ভাবব।
প্রতিবার ‘জাগো বাংলা’র পুজো সংখ্যা ও বইমেলার সময় বইমেলা সংখ্যা আমরা বের করে থাকি।
যেদিন সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম আন্দোলন ছিল, সেদিন Major Media House আমাদের সে আন্দোলন সমর্থন করতে পারেনি বলে অনেক কুৎসা ও অপপ্রচারের পথ আমাদের পেরোতে হত। তখন কিন্তু আন্দোলন মঞ্চে বসে, বসে, অনশন মঞ্চে বসে বসে, আমি আমাদের আন্দোলনের কথা ‘জাগো বাংলা’তেই সম্পাদকীয় কলমে নিয়মিত লিখতাম আর লেখার অভ্যাসটা তো বরাবরই কিছু লেখা ও কিছু আঁকিবুঁকি করতে ভালই লাগত।
বাংলার দায়িত্ব নেওয়ার পর Office of Profit-এ যাতে না পড়ে, তার জন্য আমি ও পার্থদা Editorial সামলাতে পারি না, তবে কলম তো লেখার জন্য ছটফটই করে। তবুও তার মধ্যেই পুজোর লেখার জন্য বা Cover Page করবার জন্য নিয়মিত যখন কাজের ভার বর্তায় তখন ‘জাগো বাংলা’র জন্য জাগো বাংলাকে একটা স্মৃতির স্মরণি থেকে তুলে আনলে ক্ষতি কী, ভাবতে ভাবতেই একটু ভাবলাম, কলম-লেখার মধ্যে দিয়ে জায়গা করে নিল একটা জাগো বাংলাকে।
শারদীয়ার সর্বোচ্চ অভিনন্দন মা-মাটি-মানুষকে জানিয়ে আবার বলি আমার প্রাণের ভাষায়-
“জাগো বাংলা
জাগো মা
জাগো মা-মাটি-মানুষ
জাগো-জাগো-জাগো”
সবাই ভাল ও সুস্থ