মে ১৩, ২০২০
অর্থনৈতিক প্যাকেজ, টোটালটাই বিগ জিরো: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

অর্থমন্ত্রী যে আর্থিক প্যাকেজের ঘোষণা করেছেন, তা আসলে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ বিকেলে নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি বলেন, ‘প্যাকেজ নিয়ে টোটালটাই বিগ জিরো। ভেবেছিলাম রাজ্যগুলি কিছু পাবে। কেন্দ্রের প্যাকেজ আদতে অশ্বডিম্ব। রাজ্যগুলিকে কিছুই দেয়নি কেন্দ্র। বিপদে পড়া মানুষকে নগদ দেওয়া হল না।
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের কিছু অংশ:
দশ লক্ষ কোটি টাকা অলরেডি ঘোষণা ছিলই, কিছুই দেয়নি রাজ্যগুলোকে, চলবে কী করে? আমরা তো বাংলার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য ৯০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছি।
অসংগঠিত ক্ষেত্রে কিছু নেই, করোনা মোকাবিলায় কিছু নেই। ধোঁকা দেওয়া হল মানুষের দুর্দিনে।
রিজার্ভ ব্যাংক থেকে রাজ্যের জন্যে ঋণের ব্যবস্থাও তো করা যেতে পারতো। কৃষকদের ঋণ মকুব করতে পারতেন।
পাবলিক স্পেনডিং, বিভিন্ন কাজে কোনও টাকা বরাদ্দ করা হয়নি, কোভিড মোকাবিলায় স্পেশ্যাল প্যাকেজ নেই। এমএসএমই-র জন্য কোনও টাকা নেই।
ভুয়ো তথ্য দেওয়া হল, ইনকাম ট্যাক্সের সময় বাড়ালাম-এটা তে কী হয়?
একটাও পয়সাও দেওয়া হল না, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে নষ্ট করা হল, লকডাউনের নামে রাজ্যগুলোকে লকআউট করে দিল। গণতন্ত্র থমকে গেছে। মানুষের বাঁচার অধিকার থমকে গেছে। আমরা এখনও ১০০% বেতন দিয়ে যাচ্ছি।
ভিক্ষা নয়, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রাজ্যের প্রাপ্য টাকা চাইছি। তবে পাচ্ছি কোথায়?
স্থানীয় উৎপাদনের মাধ্য়মে আমরা ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ টাকা বাঁচিয়েছি।
দেশকে এ ভাবে ভাঁওতা দেওয়ার অর্থ কী?
এত কিছুর মধ্যেও আমরা উৎসব বোনাস দিচ্ছি।
গোটা দেশ যখন বিদেশে অর্ডার দিয়েছে আমাদের এখানে এমএসএমই-র মাধ্যমে ৪৫ লক্ষ মাস্ক, ৭.৫ লক্ষ পিপিই, ২.৬ লক্ষ লিটার স্যানিটাইজার বানানো হয়েছে। এখন আত্মনির্ভর করার কথা বলা হচ্ছে, আমরা আগে থেকেই আত্মনির্ভর। আমরা কথা বলি না, কাজে করে দেখাই।
এই পরিস্থিতিতে আমরা ১৩.২ লক্ষ কর্মদিবস তৈরি করেছি এবং আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ৮.৫ লক্ষ কর্মদিবস তৈরি করা সম্ভব হবে।
মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে ১০০ দিনের কাজে লাগানো হবে। এই প্রকল্প গ্রামীণ অর্থনীতি মজবুত করবে।
রমজান মাস চলছে, কেউ কেউ আছে ফেক নিউজ আর মিথ্যে কথা বলে দাঙ্গা আর হিংসা বাধানোর চেষ্টা করবে। যারা হিংসা বাধাচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিতে হবে ।পাশাপাশি, জেলাশাসকদের সোশ্যাল মিডিয়ায় নজরদারি বাড়াতে হবে।
রাজ্য সরকারি কর্মীদের জন্য বোনাস ঘোষণা: চলতি অর্থবর্ষে রাজ্য সরকারি কর্মীদের ৪২০০ টাকা বোনাস দেওয়া হবে। এবছর বোনাস পাওয়ার ক্ষেত্রে বেতনের ঊর্ধ্বসীমা ৩০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৪,২৫০ টাকা করা হচ্ছে। অর্থাৎ ৩৪,২৫০ টাকা পর্যন্ত যাঁদের বেতন, তাঁরা সবাই এই বোনাস পাবেন। এর ফলে ১০ লক্ষ মানুষ উপকৃত হবেন বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। একইসঙ্গে তিনি আরও জানান, বোনাস দেওয়ার জন্য সরকারের ৪০০ কোটি টাকা খরচ হবে। এর পাশাপাশি, যাঁদের বেতন বেশি, যাঁরা বোনাস পান না, তাঁদের জন্যও অগ্রিম ঘোষণা করেছেন মমতা। তিনি বলেন, ৩৪,২৫০ টাকার পর থেকে ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত যাঁদের বেতন, সেইসব রাজ্য সরকারি কর্মীদের ১০ হাজার টাকা করে অগ্রিম দেওয়া হবে। এটা পরে বেতন থেকে কেটে নেওয়া হবে। এখন ইদের সময় মুসলিম সরকারি কর্মীদের ও পরে দুর্গাপুজোর সময় হিন্দু সরকারি কর্মীদের এই বোনাস ও অগ্রিম দেওয়া হবে।
‘নতুন কর্মসূচি:
‘মাটির সৃষ্টি’ প্রকল্প: আমরা একটি নতুন পরিবেশ বান্ধব প্রকল্প শুরু করছি যার নাম ‘মাটির সৃষ্টি’। যে সকল অনুর্বর জমি আছে সেগুলিকে কৃষির উপযোগী করে তোলা হবে। এরকম প্রায় ৫০ হাজার একর জমিতে রয়েছে। ইতিমধ্যে ৬৫০০ একর জমিতে প্রাথমিক স্তরে কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে আড়াই লক্ষের বেশি মানুষ এতে উপকৃত হবে। পশ্চিমাঞ্চলের ৬ টি জেলা – বাঁকুড়া, বীরভূম, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর ও পশ্চিম বর্ধমানে এই কাজ হবে। এই প্রকল্প সারা দেশের জন্য মডেল হবে।
সেন্টিনাল সার্ভে: জনসাধারণের গতিপ্রকৃতি জানার জন্য বাংলার সব জেলায় একটি সমীক্ষা হবে যার নাম সেন্টিনাল সার্ভে। বাংলায় প্রথম রাজ্য যারা এই সার্ভে করবে।
অমিত মিত্রের বক্তব্য:
• গতকাল যে ২০ লক্ষ কোটির প্যাকেজ বলা হয়েছিল তার সত্যতা কোথায়?
• রিজার্ভ ব্যঙ্ক অফ ইন্ডিয়া ৮ লক্ষ কোটি দিয়েছে। ওই টাকা ২০ লক্ষ কোটির মধ্যে লুকিয়ে আছে।
• ২০ লক্ষ কোটির মধ্যে ১০ লক্ষ কোটি টাকার ঘোষণা আগেই হয়ে গিয়েছে।
• এই ১০ লক্ষ কোটির মধ্যেও রাজ্য সরকার ঋণ নিতে পারবে ৪.২ কোটি টাকা, মানে একটা লিমিট বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এটা কার্যত বিভ্রান্তিমূলক।
• প্রধানমন্ত্রী সারা দেশের সামনে ২০ লক্ষ কোটি টাকার কথা ঘোষণা করলেন। কিন্তু আসল প্যাকেজ জিডিপির ২ শতাংশ মাত্র।
সবশেষে তিনি বলেন, ওরা আমাদের ভুল পথে চালনা করছে, তাই এই কয়েকটি তথ্যের মাধ্যমে আমি জনগণকে সত্যিটা জানানোর চেষ্টা করলাম।