সাম্প্রতিক খবর

জুলাই ২১, ২০২৫

বাঙালিদের ওপর অত্যাচার বন্ধ না হলে এই লড়াই দিল্লি পর্যন্ত যাবে হুঁশিয়ারি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের

বাঙালিদের ওপর অত্যাচার বন্ধ না হলে এই লড়াই দিল্লি পর্যন্ত যাবে হুঁশিয়ারি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের

আজ ধর্মতলায় শহীদ মঞ্চে বক্তব্য রাখলেন তৃণমূল নেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভিনরাজ্যে বাঙালিদের আক্রান্ত হওয়া, নাগরিকত্ব, এনআরসি সহ একাধিক ইস্যু নিয়ে আজ সরব হয়েছেন তিনি। এই মঞ্চ থেকে বিজেপির ‘সর্বনাশা’ পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। কেন্দ্রের জারি করা ‘বাঙালি বিরোধী’ সার্কুলার আজ সকলের সামনে তুলে ধরে তিনি জানিয়েছেন বাঙালিদের ওপর অত্যাচার চললে আগামী দিনে দিল্লিতে গিয়ে এই লড়াই হবে।

একনজরে তাঁর বক্তব্যের কিছু অংশ:

১৯৯৩ সাল থেকে শুরু করে গত ৩৩ বছর ধরে আমরা শহীদ তর্পন করি, ও এইদিনটি গণতন্ত্র দিবস হিসেবে পালন করি।সেদিন এই রাস্তায় রক্ত ঝরেছিল, ১৩ টি প্রাণ চলে গেছিলো, সেদিন আমরা লড়াই না করলে আপনারা কেউ ভোটার আই কার্ড পেতেন না ।
সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ে টাকা খেয়ে বসে আছে কিছু কিছু লোক ।
নরকংকালের সরকার বাংলাকে শেষ করে দিয়েছিলো ।জগাই,মাধাই,গদাই – রাম বাম শ্যামের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চলছে, চলবে। অনেক অত্যাচার সহ্য করে আমরা এখানে এসেছি, এই সংগ্রাম চলবে যতদিন না দিল্লির সরকার পরিবর্তন হবে।
৪০% বেকারত্ব আমরা কমিয়েছি। ৮৩ কোটির বেশি শ্রমদিবস আমরা তৈরী করেছি।
আপনারা ১০০ দিনের কাজ বন্ধ করে দিয়ে কি ভেবেছিলেন বাংলা করতে পারে না? কিন্তু আমরা পেরেছি। বাংলার বাড়ি বন্ধ করে দিয়েছেন, গ্রামের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছেন।
কেন্দ্রের বঞ্চনার সত্ত্বেও আমরা বাংলার মানুষের জন্য নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছি। অনেক জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের কাজ আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। আবাস প্রকল্পে গরিবদের বাড়ি দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন ধর্মস্থানের উন্নতিতে কাজ করেছে তৃণমূল সরকার। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হয়েছে। রাজ্য সরকারের ৯৪টা সামাজিক স্কিম আছে মানুষের জন্য ।
বিজেপি চক্রান্ত করছে আর বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদছে। মানুষের কথা বলে না তারা। কী করে দিল্লিতে বিদ্যুতের সংযোগ কাটলেন? জলও খেতে দিচ্ছেন না?
একটা নোটিফিকেশন লুকিয়ে বানিয়ে বিজেপি শাসিত রাজ্যে পাঠিয়ে বলা হয়েছে যাকেই সন্দেহ হবে, বাংলায় কথা বলে, তাঁকে অ্যারেস্ট করবে, ডিটেনশন ক্যাম্পে রেখে দেবে এক মাস। হোল্ডিং এরিয়াতে পাঠিয়ে দেবে কেউ আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গেলেও এমন হচ্ছে। নির্বাচনের আগে প্রথম সার্কুলার ভারত সরকার পাঠিয়েছে। এক হাজারের উপর লোককে কাউকে মধ্যপ্রদেশ, কাউকে ওড়িশা তো কাউকে রাজস্থানের জেলে ভরা হয়েছে।
বাংলা ভাষার ওপর বিরাট সন্ত্রাস চলবে, বাংলা ভাষায় কথা বলা যাবে না, কে মাছ খাবে ডিম খাবে ওরা ঠিক করে, দিচ্ছে বাংলা এসব মানবে না, সব মানুষের অধিকার এখানে সুরক্ষিত করা হবে ।
বিজেপির এক নেতা বলছে, বাংলায় নাকি ১৭ লক্ষ রোহিঙ্গা আছে। সারা পৃথিবীতে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা কত? ইউএন বলছে দশ লক্ষ রোহিঙ্গা আছে। কোথায় পেলেন ১৭ লক্ষ?
এখানে দু’জন ছাত্রীর উপর অত্যাচার হয়েছে। আমরা অ্যাকশন নিয়েছি। বিজেপি নেতারা বলতে পারেন? ওড়িশায় সম্মান রক্ষায় ছাত্রীটি যখন দৌড়াচ্ছিল সেই সময় তাঁকে জ্যান্ত পুড়িয়েছেন। কেন? উত্তর দিন।
মতুয়া ভাইদের উপর অত্যাচার হচ্ছে। কী জবাব দেবে বিজেপি? যখন ওড়িশায় ছাত্রীর সম্মান নষ্ট হল, যখন ওড়িশার রাস্তায় ছাত্রীর গায়ে আগুন ধরানো হয়, তার উত্তর কে দেবে? উত্তর দিতে হবে। নির্বাচন এলে মতুয়া রাজবংশীদের থেকে ভোট চাই, আর নির্বাচনের পর ওদের ওপর অত্যাচার করছেন আপনারা। আসাম সরকার এনআরসি নোটিস পাঠিয়েছে আমাদের কোচবিহারের বাঙালিকে।
দিল্লিতে ১১ বছর আছেন, কি উন্নয়ন করেছেন? কালো টাকা ফিরিয়ে আনবেন, মানুষকে মিথ্যে বলে ভোট চেয়ে নিয়েছেন। কোথায় গেল দুই কোটি চাকরি? কালো টাকা ফিরলো? ১৫ লক্ষ টাকা এল?
আপনি খালি মিসরুলের কথা বলেন ওটা তো আপনার সরকার করছে। খেলোয়ারের উপর অত্যাচার হল। যে অত্যাচার করল তাঁকে এমপি টিকিট দিল। বিজেপির কথায় ব্রিজভূষণ সিং নাকি ভারত রত্নের অধিকারী।
আমি নির্বাচন কমিশনকে সম্মান করি। SIR এর নামে বিহারের ৪০ লক্ষ মানুষের নাম বাদ দিয়েছে, এরপর বাংলাতেও করার কথা ভাবছে। বাংলায় এসব করলে, ঘেরাও কর্মসূচি করবো আমরা, আন্দোলন করব আমরা। আমরা এসব মানব না।
বাংলার সব টাকা বন্ধ করে বলছে বাংলায় কাজ নেই তাই সব বাইরে চলে গেছে।
বাংলা স্বাধীনতা সংগ্রামে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছে, নবজাগরণ ঘটিয়েছে। আর বাংলায় কথা বলতে ভয় পান আপনারা। বাংলা রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্র, নজরুলের জন্ম দিয়েছে। বাংলা থেকেই লেখা হয়েছে জাতীয় সঙ্গীত।
ভাঙো বিজেপির দিল্লি রাজ, ভাঙো ডবল ইঞ্জিন সরকার। বাংলা ও বাঙালির ওপর অত্যাচার হলে এই লড়াই দিল্লি পর্যন্ত যাবে। বাংলার মাটি দুর্বৃত্তদের হবে না। বাংলার মানুষকে যদি বাংলা বলার জন্য বাইরে গ্রেফতার করা হয় এই লড়াই কিন্তু দিল্লিতে হবে। আমি কিন্তু ছাড়ার লোক নেই। মনে আছে, নিশ্চই সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের আন্দোলনের কথা?
তৃণমূল অনেক লড়াইয়ের ফসল। সবচেয়ে বড় ডাকাত, সবচেয়ে বেশি কাটমানি খায় সিপিএম, রাস্তাটা ওরা এখন বিজেপিকে দেখিয়ে দিয়েছে।
২০২৬ আরও বেশি সিট নিয়ে জিততে হবে, তারপর আমাদের লক্ষ্য হবে দিল্লি। চক্রান্ত রুখতে বিজেপিকে দিল্লি থেকে হঠাতে হবে।
আপনি আসাম সামলাতে পারছেন না, আর বাংলায় নাক গলাচ্ছেন? নাক গোলানো বন্ধ করুন নাহলে আমরা সবাই যাব আন্দোলন করতে দেখি কত ডিটেনশন ক্যাম্পে আমাদের ভরতে পারেন?
দরকার হলে আবার ভাষা আন্দোলন হবে। বাঙালিদের গ্রেপ্তার করবেন আর টেলিপ্রম্পটারে বাংলা লিখে এনে দু লাইন বলে বাঙালিদের মন জয় করবেন?হবে না।
তৃণমূলকে শেষ করা ওতো সহজ না। কী ভেবেছো? ইডি-সিবিআই দিয়ে শেষ করবেন? চ্যালেঞ্জ রইল।
১১ জুলাই কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক আমাদের চিঠি দিয়ে বলেছে সেন্ট্রাল ফোর্স দিয়ে ভোট হবে, কেন? রাজ্যের ভোট স্টেট ফোর্স কাজ করবে।
গুজরাটে বসে বাংলার মানুষের নাম কাটছে কত সাহস। ড্যামেজ ম্যানেজ করা যায় না। আমি দেখবো আপনারা কত জনকে জেলে জায়গা দেবেন?
আমরা মরতে রাজি আছি, কিন্তু বাংলা বা যে কোনো ভাষার ওপর অত্যাচার বা অপমান আমরা মানব না।
জগন্নাথ ধামের মতন একটা দুর্গা অঙ্গন করে দেব।
মানুষ আজ ভালো আছে তাই ওরা জ্বলছে।
বাংলা ভাষার ওপর সন্ত্রাস, অপমানের বিরুদ্ধে আগামী ২৭ জুলাই নানুর দিবস থেকে প্রতি শনি ও রবিবার সব ভাষা-ভাষীরর লোকদের নিয়ে আমরা মিছিল করব।
যত কুৎসা করবেন তৃণমূল তত শক্তিশালী হবে। এবার রেকর্ড ভিড় হয়েছে। একটা নয়, ১০ টা ব্রিগেড হয়ে যাবে এই ভিড় নিয়ে।
আমাদের আজকের শপথ জীবন থাকতে আমরা ভাষার ওপর সন্ত্রাস হতে দেব না, অনৈক্য মানব না।
আজ শহীদ মঞ্চে শপথ করলাম, তোমরা যতক্ষণ না বিদায় নিচ্ছ আমাদের লড়াই থামবে না।
কথায়-কথায় নবান্ন অভিযান, আমার বাড়ির সামনে যাওয়া? তাহলে কথায় কথায় এবার আপনাদের বাড়ির সামনে যাওয়া হবে। আগেরবার বলেছিলাম বদলা নয় বদল চাই। এবারের স্লোগান, জব্দ হবে স্তব্ধ হবে। আমাদের দর্শন, তোমাদের বিসর্জন।