জুলাই ২৮, ২০২৫
ভাষার ওপর সন্ত্রাস মানছি না, মানব না: বোলপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

রবিঠাকুরের লাল মাটির শহর বীরভূম থেকেই বাংলা ভাষা রক্ষায় আন্দোলন শুরু করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ বোলপুরে প্রায় ৪ কিলোমিটার পদযাত্রা করেন তিনি। দুপুর ২টো নাগাদ বোলপুরের টুরিস্ট লজ মোড় থেকে মিছিল শুরু করে শেষ হয় জামবনি বাসস্ট্যান্ডে। মিছিলে নেতা নেত্রীদের হাতে ছিল রবি ঠাকুরের ছবি, বাংলা বর্ণমালা আর নেপথ্যে প্রয়াত প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের অবিস্মরণীয় গান ‘আমি বাংলায় গান গাই।’ মিছিলের শেষে মঞ্চে বক্তব্য রাখেন তৃণমূল সুপ্রিমো।
তাঁর বক্তব্যের কিছু অংশ:
- যারা মিছিলে অংশ নিয়েছেন তাদের সকলকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাই, আপনাদের ভালোবাসায় আমি আপ্লুত।
- বাংলায় জন্মগ্রহণ করে আমি আজ গর্বিত। আমি যেন মাটির মানুষ থাকতে পারি।সবাইকে নিয়ে যেন একসাথে পথ চলতে পারি, সকলের কথা বলতে পারি।
- স্বাধীনতা আন্দোলনে বাংলা, বাংলার মানুষ পথ দেখিয়েছিলো, আর সেই বাংলাকেই আপনারা ভুলে গেলেন? আমি কারও নাম নেবো না। যার যা বোঝার বুঝে নেবেন। বাংলার অবদান কি করে ভুলে গেলেন?
- দ্বারকানাথ ঠাকুরের বাড়ি ভেঙে দিয়েছে, এটা কি ঠিক? বোলপুর ডেভেলপমেন্ট অথরিটি কে বলবো ওখানে যাতে একটা ফলক লাগানো থাকে।
আমি শান্তিনিকেতন, বিশ্বভারতী, জোড়াসাঁকোর কালচার জানি। - আমরা যদি সবাইকে আশ্রয় দিতে পারি, তোমরা কেন পারবে না? বাইরে আমাদের ২২ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক বাইরে কাজ করে।
- যাকে তাকে বাংলাদেশী বলছে, রোহিঙ্গা বলছে , পুশব্যাক করছে বাংলাদেশে। সব নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও কেন এই অত্যাচার?
- ইতিহাস ভুলে যাবেন না, বাংলার গুরুত্ব ভুলে যাবেন না।
- যখন সৌদি আরব, আবু ধাবি, মালদ্বীপ গিয়ে জড়িয়ে ধরে টাকা দিয়ে আসেন তখন দেখেন হিন্দু না মুসলমান?
- দিল্লিতে একটা পরিবারকে বিভিন্নই থানায় নিয়ে গিয়ে হেনস্থা করা হচ্ছে, বাঙালি কলোনিতে গিয়ে বলছে রাজ্য ছেড়ে দিতে। মহারাষ্ট্রে সংখ্যালঘুকে খুন করে বস্তায় ভরেছে। এই হল ডবল ইঞ্জিন সরকার।
- বিরাট বড় গেম প্ল্যান চলছে, SIR এর নাম মানুষকে ব্ল্যাকলিস্টে করে NRC করতে চায়।
- অন্য রাজ্যের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার অধিকার আমার নেই, আমি করিও না।
- গুজরাতে বসে বাংলার মানুষের লিস্ট তৈরী করছে। রোহিঙ্গা বলে কোটি কোটি নাম বাদ দিচ্ছে, কোথা থেকে এলো এতো রোহিঙ্গা?
- সবাই কি একই ভাষায় কথা বলে? বলে না। বীরভূমের গ্রামে চলে যান। মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান, রাজবংশীদের, মতুয়াদের একটা টিপিক্যাল ভাষা রয়েছে। আমি কোনও ভাষার বিরোধী নই। কিন্তু, যে কোনও বিভেদকামী পলিসির বিরোধী আমি। আমি দেশের ঐক্য চাই। বিবিধের মাঝে মিলন আমাদের মধ্যেই রয়েছে।
- বাংলাদেশের মানুষরা যাঁরা স্বাধীনতার পরে আইনত বাংলায় এসেছেন ১৯৭১ সালের মার্চ মাস অবধি তাঁদের কথার টানে এখনও বাংলাদেশের ভাষা রয়ে গিয়েছে। কারণ, আগে ইউনাইটেড ইন্ডিয়া ছিল, দেশটা আলাদা ছিল না। এখন বাংলাদেশ আলাদা, পাকিস্তান আলাদা, ভারতবর্ষ আলাদা। আমরা ভারতবর্ষের নাগরিক।
- আমি কোন বিভাজন চাই না, দেশ ওদের জমিদারি নয়, দেশ মানুষের।
- বাংলায় একবার নাম বাদ দিয়ে দেখুন, দামামা বাজিয়ে দেব।
- অসমে ৭ লক্ষ মানুষের নাম বাদ দিয়ে দিয়েছিলো। মানুষকে হেনস্থা করবেন না, এখানে আমি বেঁচে থাকতে NRC, ডিটেনশন ক্যাম্প করতে দেব না।
- অন্যদের বদনাম করে নিজেরা টাকা কামাচ্ছে, অন্যদের চোর বলছে। কেন্দ্রে সরকারে বসে এজেন্সি দিয়ে যা ইচ্ছে তাই করছে।
- দরকার হলে জীবন দেব, কিন্তু বাংলা ভাষা কেড়ে নিতে দেব না। এই ভাষা আমাদের সস্কৃতির মেরুদন্ড।
- লড়াই হচ্ছে, লড়াই হবে। যারা বাইরে অত্যাচারিত হচ্ছেন, আমি বলবো তারা বাংলায় ফিরে আসুন। পুলিশের হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করুন, আমি আপনাদের ট্রেনে করে ফিরিয়ে আনবো, আপনাদের বাঁচার সুযোগ করে দেব।
- আমাদের মধ্যে কোন ভেদাভেদ নেই, আমরা সম্প্রীতি, সংহতি নিয়ে এক হয়ে চলি।
- ওদের এই অপদার্থ নীতির জন্য দেশ ভেঙে যাবে। এই সরকার ২০২৯ পর্যন্ত চলবে না। ক্ষমতায় না থাকলে কোথায় যাবেন জায়গাটা দেখে রেখেছেন তো? নির্বাচন কমিশনকে নিয়ন্ত্রণ করছে কেন্দ্র।
- বাংলা বলার জন্য বিভিন্ন রাজ্যে আমাদের লোকেরা অত্যাচারিত হচ্ছেন। ভাষার ওপর সন্ত্রাস মানছি না, মানব না।