সাম্প্রতিক খবর

নভেম্বর ২৬, ২০২৫

আমি ভারতের গণতন্ত্র রক্ষা করার শপথ নিচ্ছি : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আমি ভারতের গণতন্ত্র রক্ষা করার শপথ নিচ্ছি : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ, ২৬ নভেম্বর সংবিধান দিবসে রেড রোডে ড. বি আর অম্বেদকরের মূর্তিতে মাল্যদান করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সেখানে ওনার বক্তব্যের কিছু অংশ :

আজ সংবিধান দিবস এবং ড. বি.আর.আম্বেদকর ছিলেন সংবিধানের খসড়া কমিটির চেয়ারম্যান। আপনাদের জানা উচিত যে তিনি অবিভক্ত বাংলা থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন—এটা আমাদের জন্য গর্বের, কারণ এই ইতিহাস অনেকেই জানেন না। আজ যখন গণতন্ত্র ও ধর্মীয় মূল্যবোধ আক্রমণের মুখে, নাগরিকত্ব ও ভোটাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে—তখন আমাদের নিজেদেরই প্রশ্ন করতে হয়: এখন কি আমাদের নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হবে? এর পেছনে এনআরসি কাজ করছে। আমরা এতে স্তম্ভিত ও দুঃখিত। তাই আজ আমি এখানে দাঁড়িয়ে ভারতের গণতন্ত্র রক্ষা করার শপথ নিচ্ছি, যেটা সর্ববৃহৎ।

আজ যারা ক্ষমতায় আছে (বিজেপি) তাদের দয়ায় আমরা স্বাধীনতা পাইনি; আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জন্য। স্বাধীনতার জন্য যারা লড়েছিলেন তাদের ৯০% ছিলেন বাঙালি, আর পাঞ্জাবও সবচেয়ে বড় অবদানকারী রাজ্যগুলোর একটি। ভারতকে নবজাগরণ ও বিপ্লব উপহার দিয়েছিল এই বাংলা। এখন আমি প্রস্তাবনাটা (Preamble) পড়ছি।

আমি দেখছি সংবাদ মাধ্যমে বলা হচ্ছে যে, আমরা সংসদে ‘জয় হিন্দ’ এবং ‘বন্দে মাতরম’ বলতে পারব না—যদিও এটা সত্য কিনা আমি জানি না এবং আমি এবিষয়ে সাংসদের সঙ্গে কথা বলব। তারা কি বাংলার পরিচয় মুছে দিতে চাইছে? আমরা ভারতের অংশ এবং আমরা গর্বিত যে বাংলা বরাবরই লড়েছে গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের জন্য। আজ আমরা মর্মাহত যে, গণতান্ত্রিক অধিকার মানুষের থেকে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে এবং ধর্মের ভিত্তিতে দেশজুড়ে বিভাজন বাড়ছে। মানুষ অত্যাচারিত হচ্ছে—তপশিলি, দলিত, আদিবাসী, সংখ্যালঘু বা হিন্দু ভোটার—সকলেই। যারা (SIR-এর কারণে) মারা গেছেন, তাদের বেশিরভাগই হিন্দু। আমরা সবাই এক, এটা মনে রাখতে হবে।

নাগরিকত্বের প্রশ্নে (CAA–SIR) মানুষকে মৃত্যুর দোরগোড়ায় ঠেলে দিয়েছে। যারা কালও ঢাক বাজাচ্ছিল (বনগাঁয়), তারা কাঁদতে কাঁদতে আমাকে বলছে—আমি যেন তাদের বাঁচাই। যারা এই ইস্যু নিয়ে রাজনীতি করছে, সেটা লজ্জার! বিহারে মানুষের বাড়িঘর ভেঙে ফেলা হয়েছে। এটা বিজেপির কৌশল, ভোটের পর লুট করা। আমাদের এসবের বিরুদ্ধে একজোট হতে হবে।

আমরা যদি ‘জয় হিন্দ’ এবং ‘বন্দে মাতরম’ বলতে না পারি এবং ওরা যদি রাজা রামমোহন রায়কে অসম্মান করে—এটা কি মেনে নেওয়া যায়? আপনারা আমাদের মাটিকে অসম্মান করছেন! একজন নেতা তিনিই, যিনি জনগণকে বোঝেন এবং সম্মান করেন। সব এজেন্সি এতে জড়িত! আমি সাংবাদিকদের দোষ দিচ্ছি না, তাদের কেনা হয়েছে।কারণ তাদের মালিকদের এই এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

একটি কাজ করুন (বিজেপি)—চার কোটি নোটিশ পাঠান, তবুও আমরা আপনাদের বিরুদ্ধে লড়ব! আমার কিছু নেই, কিন্তু আমি ওদের ধিক্কার জানাই—যা ওরা করছে তার জন্য। ওরা দেশকে এত নিচে নামিয়ে দিয়েছে। নিরপেক্ষতা কোথায়? সর্বত্র অন্যায় ও পক্ষপাত। আপনারা আর ক্ষমতায় থাকবেন না। আমি বলে দিচ্ছি—আপনাদের সরকার ২০২৯ সালে পড়ে যাবে। তারও আগে হতে পারে! সর্বত্র বিএলও-রা মারা যাচ্ছেন। তাদের দাবি ন্যায়সঙ্গত। ভাবুন, শুধু একটি মিটিংয়ের জন্য তাদের ৪৮ ঘণ্টা বসে থাকতে হয়েছে!

যখন আমি গতকাল ফিরছিলাম (বনগাঁ থেকে), কিছু মানুষ আমার সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন। আমি তাদের কথা শুনেছি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি। কিন্তু কেন বিএলও-দের ৪৮ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে শুধু নিজেদের কথা বলার জন্য? এটা কেমন ঔদ্ধত্য? ওরা (নির্বাচন কমিশন) আমাদের পক্ষ থেকে চারজনের বেশি প্রতিনিধির সঙ্গে দেখা করছে না। আমরা বলেছি, আমরা ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল পাঠাব। কেন? এখন কি ওরা ঠিক করবে কার কার সঙ্গে দেখা যাবে?

তিন বছরের কাজ দু’মাসে কীভাবে করবেন? এখন চাষাবাদের মরসুম। সাংবাদিকরাও সারাদিন বাড়িতে থাকেন না। এমনকি গণনা ফর্ম বিতরণের যে তথ্য দেওয়া হচ্ছে, তাও ভুল। আমরা সংবিধান মানব এবং তার হিসেবেই কাজ করব। স্বাধীনতা সংগ্রামীরা যে নির্দেশ দিয়ে গেছেন, আমরা তা-ই অনুসরণ করব—বিজেপির নির্দেশ নয়।

(বিএলও-দের উদ্দেশে) আপনারা আত্মহত্যা করবেন না—জীবন খুব মূল্যবান। অথচ ওদের কোনও দয়া নেই—বিএলও-দের কথা শোনার জন্য ৪৮ ঘণ্টা লাগাল! দেখুন, এক ছোটখাটো নেতার (রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক) ঔদ্ধত্য!

সব মৃত্যুর রেকর্ড আমাদের কাছে আছে। গুজরাত ও মধ্যপ্রদেশে বিএলও মৃত্যুর দায় কার? সেখানে বিজেপি ক্ষমতায়। তারা এত তাড়াহুড়ো করে SIR চালাচ্ছে কেন? তারা কি সাধু? তারা বিএলও-দের চাকরি কেড়ে নেওয়ার ভয় দেখাচ্ছে। যখন আপনারা অন্যদের ভয় দেখাচ্ছেন—তখন আপনাদের চাকরি বাঁচাবে কে?