সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৫
বিজেপি দেশের লজ্জা: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ বাংলা ভাষার উপর আক্রমণের বিরুদ্ধে বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যের কিছু অংশ :
বিজেপি সব সময় ধ্বংসাত্মক কথা বলে, বিধানসভাকে অসম্মান করে এবং বিধানসভার কার্যক্রম ব্যাহত করে। আমি বিজেপি বিধায়কদের কথা বলার জন্য আমার সময় কমিয়ে দিয়েছি। ওরা বাঙালি-বিরোধী। ওরা বাংলা বা বাঙালিকে ভালবাসে না। আমি শাসকপক্ষকে চুপ থাকতে বলেছি, কিন্তু সেটা দুই দিকেই হতে হবে। আপনারা আমাদের না শুনলেও, অন্তত স্পিকারের কথা শুনুন।
বিধানসভায় কাগজ ছুঁড়ছেন। এটা সংসদীয় নিয়মবহির্ভূত, অগণতান্ত্রিক এবং বেআইনি। ওরা ভালো করেই জানে, মানুষ আমার কথা শুনলে ওদের মুখোশ খুলে যাবে। ভোটচোর, গদিচোর! ওরাই সবচেয়ে বড় চোর, বাঙালিদের ওপর অত্যাচার করে। মানুষকে বিভ্রান্ত করে। বিজেপি দেশের লজ্জা। বাংলা ভাষার ওপর অত্যাচারের জন্য আমি ওদের নিন্দা করছি।
এমন একটা দিন আসবে যখন বাংলার মানুষ আর একজনও বিজেপি নেতাকে এখানে দেখতে চাইবে না। সবাই হারবে। অত্যাচার করে কেউ জিততে পারে না। আমাদের বিধায়ক-সাংসদদের সংসদে BSF আর CISF দিয়ে আক্রমণ করা হয়, কিন্তু আমরা এখানে তা করি না। মনে রাখবেন, স্বাধীনতার লড়াইয়ে বাংলা রক্ত দিয়েছিল। তখন তো বিজেপি জন্মই নেয়নি।
ওদের কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই। আর ক’টা দিনের ব্যাপার। এমন নির্লজ্জ, মূল্যহীন দল আমি জীবনে দেখিনি। ওরা যখন কথা বলবে, আমিও আমার বেঞ্চকে বলব ওদের কথা বলতে না দিতে।
ওরা সারা দেশে এবং বাংলায় মানুষকে অত্যাচার করে। বৈষম্য করে। বিধানসভায় নিজেদের দায়িত্ব পালন করে না। কোনো নিয়ম-কানুন মানে না। আমি গৃহের পক্ষ থেকে ওদের নিন্দা করছি। ইচ্ছে করেই আমার কণ্ঠরোধ করতে এটা করছে। সকালে তো ওরা ছিলই না। আমি আসার কয়েক মিনিট আগে এসে ঢুকেছে। নাম ডাকা হয়েছিল, তখন তো কিছু বলেনি। আমি স্পিকারকে অনুরোধ করেছিলাম ওদের বলার সুযোগ দিতে। আর ওরা কথা শেষ করে সঙ্গেসঙ্গে হট্টগোল শুরু করল। এটা বাংলা আর বাঙালির ব্যাপার। আমাকে চুপ করাতে পারবে না।
স্বাধীনতার আন্দোলনে এদের কোনো অবদান ছিল না। ওরাই সবচেয়ে বড় চোর। দেশ বিক্রি করছে। সাম্প্রদায়িক বিভেদ আর বৈষম্য ছড়াচ্ছে। মনে রাখা উচিত, স্বাধীনতার লড়াইয়ে বাংলার অবদান সবচেয়ে বেশি। ওরা দেশদ্রোহী, মানুষের কথা বলতে দেয় না।কেন্দ্রে ওদের ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই। আর ক’টা দিনের ব্যাপার। এমন নির্লজ্জ, মূল্যহীন দল আমি জীবনে দেখিনি।
ওরা সারা দেশে এবং বাংলায় মানুষকে অত্যাচার করে। বৈষম্য করে। বিধানসভায় নিজেদের দায়িত্ব পালন করে না। কোনো নিয়ম-কানুন মানে না। আমি আমাদের পক্ষ থেকে ওদের নিন্দা করছি। ইচ্ছে করেই আমার কণ্ঠরোধ করতে এটা করছে। সকালে তো ওরা ছিলই না। আমি আসার কয়েক মিনিট আগে এসে ঢুকেছে। নাম ডাকা হয়েছিল, তখন তো কিছু বলেনি। আমি স্পিকারকে অনুরোধ করেছিলাম ওদের বলার সুযোগ দিতে। আর ওরা কথা শেষ করে সঙ্গেসঙ্গে হট্টগোল শুরু করল। এটা বাংলা আর বাঙালির ব্যাপার। আমাকে চুপ করাতে পারবে না।
স্বাধীনতার আন্দোলনে এদের কোনো অবদান ছিল না। ওরাই সবচেয়ে বড় চোর। দেশ বিক্রি করছে। সাম্প্রদায়িক বিভেদ আর বৈষম্য ছড়াচ্ছে। মনে রাখা উচিত, স্বাধীনতার লড়াইয়ে বাংলার অবদান সবচেয়ে বেশি। ওরা দেশদ্রোহী, কাউকে কথা বলতে দেয় না।
ওরা বাংলাকে চেনে না, বাংলার ইতিহাস জানে না। বাংলার মহাপুরুষদের ভালোবাসে না। স্বৈরাচারী শক্তি, মানুষের ওপর অত্যাচার চালায়। আন্দামান সেলুলার জেলে সবচেয়ে বেশি বন্দি ছিল বাংলার, তারপর পাঞ্জাবের। তখন ওরা কোথায় ছিল? তখন তো জন্মই নেয়নি। ব্রিটিশদের দালালি করছিল।
বিজেপি সবথেকে বড় চোর! বাংলাকে, বাঙালিকে, বাংলার ভাষাকে অপমান করে কেউ জিততে পারবে না। একটাও ভোট পাবে না। লজ্জা হয় না? পেশিশক্তি, টাকার জোর, আর নির্বাচন কমিশনকে কাজে লাগিয়ে জেতো। এখন ভয় পাচ্ছ? বাংলার মানুষকে হয়রানি করছো বলে ভয়েই কাঁপছো।
আপনারা চোরের দল, আর যে নিজেকে সবচেয়ে বড় নেতা বলে, সে চারবার দল পাল্টেছে— প্রথমে কংগ্রেস, তারপর অন্য কোনো দল, তারপর তৃণমূল, আর এখন বিজেপি। চারবার দল পাল্টে আমাদের জ্ঞান দিতে এসো না। এই পার্টি পুরো দলবদলু লোকেদের। আমি বাংলার মানুষের শক্তিতে বিজেপিকে বড় শূন্য করে দেব।
আপনারা বাঙালি-বিরোধী, আর আপনাদের নেতারা চোর। নির্বাচন এলেই সিএএ-এনআরসি নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন। পাঁচ বছর হয়ে গেল। ২০১৯ সালে বলেছিলেন সিএএ আনবেন, সবাই নাগরিকত্ব পাবে। হলো কী? দেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত পার্টি
বিজেপি বাংলা-বিরোধী আর জনবিরোধী। সাম্প্রদায়িক। কোনোদিন ক্ষমতায় আসবে না। যে বড় বড় কথা বলছে সে-ই আসলে দলবদলু। ওর কথা শুনে ভুল করবেন না। আমার গলা কেটে দিলেও ও আমি বাংলায় কথা বলব। অন্য ভাষাকেও সম্মান করি, কিন্তু বাংলাকে অসম্মান করলে বরদাস্ত করব না। আমি আপনাদের বলার সময় দিয়েছি। এটাই গণতন্ত্র। কিন্তু আপনারা কী করছেন?
যে লোক চারবার দল পাল্টেছে, তার কথা শুনব কেন? নীতি নেই, আদর্শ নেই। আপনাদের কাজ একটাই— বাংলাবিরোধী কাজ। আমরা অন্য ভাষার বিরোধী নই। কিন্তু আপনারা বাংলাকে নিচে নামাতে চাইছেন। মোদি আর অমিত শাহ সবচেয়ে বড় চোর। বিজেপি হটাও, দেশ বাঁচাও! আজ যারা চিৎকার করছিল, তারা একসময় তৃণমূলেই ছিল। টাকা জমাতে আর সিবিআই-ইডির হাত থেকে বাঁচতে বিজেপিতে গেছে। বাংলার মানুষ গণতান্ত্রিক পথে এর জবাব দেবে। আমরা গণতন্ত্রকে সম্মান করি, তাই এখনও আপনাদের হট্টগোল সহ্য করছি।
কখনও আমেরিকার পায়ে, কখনও রাশিয়া-চীন-ইজ়রায়েলের পায়ে লুটিয়ে পড়ে এরা দেশ বিক্রি করছে। স্বাধীনতার লড়াইয়ের মূলমন্ত্র ঐক্য আর বৈচিত্র্যকে এরা ধ্বংস করেছে। দেশ চালাবে কীভাবে? মানুষকে ঘৃণা করে, বিভাজনের রাজনীতি করে। ষড়যন্ত্র করে।
আপনারা ব্রিটিশদের সঙ্গে মিলে দেশ ভাগ করেছিলেন, আর ভারতের রাজধানী কলকাতা থেকে সরিয়েছিলেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে সম্মান করি, তাই ‘মোদি চোর’ বলি না। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমরা ওনাকে সম্মান করি, বিজেপির প্রধান হিসেবে নয়।
আপনারা আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সম্মান করেন না। আজ বলছেন বাংলা নাকি বিদেশি ভাষা! বাংলা এশিয়ার দ্বিতীয় এবং বিশ্বের পঞ্চম সর্বাধিক কথ্য ভাষা। বাংলা কোনো বিদেশি ভাষা নয়। যারা বাংলাকে ঘৃণা করে তারা বাঙালি-বিরোধী আর দেশদ্রোহী।
বাংলার পাওনা ১.৯৫ লাখ কোটি টাকা আটকে রেখেছেন। আমাদের তহবিল দিচ্ছেন না। স্বাস্থ্য বিমা থেকে জীবনবিমা পর্যন্ত জিএসটি অব্যাহতির দাবি প্রথম আমরা তুলেছিলাম। আজ আপনারা মানতে বাধ্য হয়েছেন। জনগণবিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। করের বোঝা বাড়িয়েছিলেন।
আমরা সৌজন্য দেখিয়ে আপনাদের কথা বলতে দিই, কিন্তু আপনারা আমাকে বলতে দিচ্ছেন না। সংসদে আমাদের সাংসদদের কথা বলতে দিচ্ছেন না। এই হলো পার্থক্য। আমরা ওদের মতো হবো না। শৃঙ্খলাবদ্ধ হতে হবে।
আসলে আপনাদের কোনো রাজনৈতিক শিক্ষা নেই। শুধু শিখেছেন কীভাবে গেরুয়া রঙে রাঙাতে হয়। আজ আপনারা যা করলেন, এটা বাংলার বিধানসভার ইতিহাসে কালো দিন। আমি আপনাদের বলার সুযোগ দিয়েছিলাম। আমি যদি আপনাদের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা করি, তবে আমার অধিকার কেড়ে নেবেন কেন? কখনও এজেন্সি ব্যবহার করে, কখনও ভুয়ো খবর ছড়িয়ে আমার গলা চেপে ধরেছেন। এটা অন্যায়।
জাতীয় সঙ্গীত আর জাতীয় গান বাংলাতে। আমাদের জওয়ানরা ‘জয় হিন্দ’ বললে আমরা গর্ব করি। আলিপুরে আমরা আন্দামান সেলুলার জেলের প্রতিরূপ বানিয়েছি। বাংলার অবদান ভুলিয়ে দিতে পারবেন না। আপনারা ক্ষমতায় কয়েক বছরের জন্য আছেন বলে সব মুছে যাবে না। একদল মন দিয়ে বাংলা আর দেশের গৌরব শুনছে, আরেকদল হট্টগোল করছে। আপনারা শুধু বাংলা-বিরোধী নন, দেশবিরোধীও।
মনে রাখবেন, আমরা নাগরিক কোনো দয়ার দান হিসেবে হইনি। স্বাধীনতা সংগ্রামীরাই আমাদের নাগরিক বানিয়েছে। তখন আপনারা কোথায় ছিলেন? এখন আপনারা ঠিক করবেন কে দেশে থাকবে আর কে থাকবে না? বাংলায় কথা বললেই মানুষকে দেশদ্রোহী বা বাংলাদেশি বলছেন? মনে রাখবেন, একদিন মানুষই আপনাদের জবাব দেবে।
আমরা মোদি জিকে আক্রমণ করি না, কিন্তু আপনারা সৌজন্য দেখান না। দেশকেও চেনেন না। মানুষের আত্মত্যাগ জানেন না। গান্ধীজির ছবি নিচে রেখে অন্য কারও ছবি উপরে রাখেন। আমাকে গালি দেন, কিন্তু বাংলা বা বাংলার মানুষকে গালি দেবেন না।
আপনারা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে গুরুত্ব দেন না। আমরা কিন্তু রামকৃষ্ণ পরমহংসের শেখানো সব ধর্মের মিলনের পথ মেনে চলি। আপনারা শুধু গোলমাল করেন।
আমরা ২৪ হাজার শ্রমিককে বাংলায় ফিরিয়েছি। ওদের দোষ কী ছিল? শুধু বাংলায় কথা বলা? আমি বলব, আরও বাংলায় কথা বলুক! আপনারা দুর্নীতি করলে কোনো এজেন্সিকে দেখা যায় না। আমরা কারও ওপর নির্ভরশীল হতে চাই না। তাই ‘শ্রমশ্রী’ প্রকল্প চালু করেছি। এর আওতায়, আমাদের বাংলার শ্রমিকরা ফিরলে এক বছরের জন্য ৫ হাজার টাকা এবং অন্যান্য সব স্কিম পাবেন।
আপনারা গান্ধীজিকে ভুলে গেছেন। শুধু নিজের ক্ষমতা নিয়েই ব্যস্ত। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ভয় পান, মনে করেন ওদের স্মরণ করলে নিজের পদ যাবে। আপনাদের অন্য কোনো পরিচয় নেই, শুধু এইটুকুই— আপনারা নাথুরাম গডসের দল। কেউ গান্ধীজির হত্যাকারীদের ক্ষমা করবে না।
যারা আজ সিএএ নিয়ে চিৎকার করছে, তারা কী করল? কাউকে নাগরিকত্ব দিল? সবই ২০২৬ সালের ভোটের খেলা। বলছে ২০২৪ পর্যন্ত যারা এসেছে, মুসলমান বাদে, তাদের কোনো সমস্যা হবে না। অথচ আপনারা কোচবিহার আর আলিপুরদুয়ারে রাজবংশীদের গ্রেপ্তার করেছেন! মুম্বইয়ে মতুয়াদের ওপর অত্যাচার করেছেন! আমাদের আদিবাসী ভাইবোনদের ওপর নির্যাতন করেছেন!
কোথাও আইনে লেখা নেই নাগরিকত্বের কথা। যাদের ২০২৪ পর্যন্ত নাগরিকত্ব দেওয়া হবে, তাদের ভোটাধিকার আর রেশন কার্ডও দেবেন কি? কোথাও কিছু লেখা নেই। সব মিথ্যা আর প্রতারণা। ২০১৯-এ দেওয়া হয়নি, ২০২৪-এ দেওয়া। আসলে বনগাঁয় আপনাদের সভা ছিল, তাই হঠাৎ করে এই ঘোষণা। সংসদে কোনো আলোচনা হয়নি। কোনো সিলেক্ট, স্ট্যান্ডিং বা সংসদীয় কমিটির মতামত নেয়নি। একতরফা পাশ করিয়েছেন। যারা ২০২৪ পর্যন্ত এসেছে, তাদের ভোটার তালিকায় নাম তুলবেনই বা কীভাবে? এখন আপনাদের ভরসা ওদের ভোটের ওপর? কেউ আপনাদের ভোট দেবে না।