সাম্প্রতিক খবর

সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৫

বাংলাই বাংলা চালাবে, দিল্লি নয় : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

বাংলাই বাংলা চালাবে, দিল্লি নয় : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জলপাইগুড়িতে একটি সরকারি পরিষেবা প্রদান কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে ওনার বক্তব্যের কিছু অংশ

ঠাকুর পঞ্চানন বর্মাকে আমার প্রণাম। আমরা ওনার নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি, ওনার বাড়িটিও সংস্কার করেছি। আমরা বহু ভাষাকে স্বীকৃতি দিয়েছি। আমাদের প্রতিবেশী দেশে এখন সমস্যা চলছে, আমি চাই সেখানে শান্তি ফিরুক। আমি গতকাল সারা রাত উত্তরণকন্যায় ছিলাম যাতে কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটলে তা মোকাবিলা করা যায় এবং আপনারা নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন।

২০১১ সাল থেকে আমরা মোট ৬.৫৬ লক্ষ পাট্টা দিয়েছি – ৩.১৭ লক্ষ গৃহ পাট্টা, ১.৯৩ লক্ষ কৃষি পাট্টা, ৫৯ হাজার শরণার্থী পাট্টা, ৪৭ হাজার অরণ্য পাট্টা এবং ৩৯ হাজার চা-বাগান পাট্টা। ২৪শে আগস্ট উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় আমরা ৭,০০০-এরও বেশি পাট্টা বিতরণ করেছি। আজ আমরা ১১,৬০০ পাট্টা দিচ্ছি। আলিপুরদুয়ারে এই বিতরণের জন্য দুইজন মন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন।

আপনারা জানেন, ২০২৩ সালে আকস্মিক বন্যার কারণে বহু বাড়িঘর ভেসে গিয়েছিল। প্রায় ৯৮টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, আজ তাদেরও আমরা পাট্টা দিয়েছি। জলপাইগুড়িতে ৪০০ কোটি টাকার প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়েছে। আজকের এই কর্মসূচি থেকে ১.৫৫ লক্ষ মানুষ সরকারি পরিষেবা পাবেন।

‘চা সুন্দরী’ প্রকল্পে আলিপুরদুয়ারে ১১০৬ পরিবার তাদের কাগজপত্র পেয়েছে। জলপাইগুড়িতে ১০৫৩ পরিবার উপকৃত হয়েছে এবং আলিপুরদুয়ারে ইতিমধ্যেই ২,৯৬৯টি বাড়ি নির্মিত হয়েছে।

চা বাগানগুলিতে ২০% হারে বোনাস নির্ধারণ করা হয়েছে। আমি আশা করি মুখ্যসচিব এই বিষয়ে নজর রাখবেন যাতে শ্রমিকরা বোনাস পেতে কোনো সমস্যায় না পড়ে।

আমরা ইতিমধ্যেই ২৪,০০০ জন পরিযায়ী শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারকে ফিরিয়ে এনেছি। অন্য রাজ্যে যাবেন কেন? এখানে তো আমাদেরই কাজ আছে। আমাদের রাজ্যে অন্য রাজ্য থেকে ১.৫ কোটি শ্রমিক কাজ করেন। আমরা তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করি না, তারা সব ধরনের সুবিধা পান। কিন্তু আমাদের শ্রমিকদের কেন মারধর করে, তাড়িয়ে দেয় তথাকথিত ডবল-ইঞ্জিন রাজ্যগুলোতে?

যে সব পরিযায়ী শ্রমিক ফিরে আসছেন, তারা সব রকমের সুবিধা পাবেন। তারা এক বছরের জন্য মাসে ৫,০০০ টাকা করে পাবেন। আমরা ১২ লক্ষ বাড়ি দিয়েছি এবং ডিসেম্বর মাসে ১৬ লক্ষ মানুষ বাড়ি পাবেন। কেন্দ্র আমাদের সমস্ত টাকা আটকে দিয়েছে। তারা বলে বাংলা কিছু করে না, অথচ আপনারাই তো আমাদের টাকা আটকে রেখেছেন। এটা আমাদের প্রাপ্য অধিকার। গত চার বছর ধরে রাস্তার জন্য বরাদ্দ টাকা বন্ধ রেখেছেন। আমাদের দিল্লির দয়া দরকার নেই।

আসাম থেকে আমাদের আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার ও জলপাইগুড়ির বাসিন্দাদের নোটিস পাঠানো হচ্ছে। এমনকি আদিবাসী মহিলাদেরও ছেড়ে দিচ্ছে না। আমরা আমাদের মাতৃভাষায় কথা বলব কিন্তু অন্য ভাষাও শিখব। আমরা কোনো ভাষাকে অসম্মান করি না। যে ভাষায় ইচ্ছে কথা বলুন। আমি কেন বাংলায় কথা বলব না? বাংলাই বাংলা চালাবে, দিল্লি নয়।

আমরা বাংলার জন্য গর্বিত। ওরা MGNREGA স্কিমের টাকাও বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু আমাদের মহিলারা তাঁদের সংসার চালাতে সক্ষম। আমরা কর্মশ্রী প্রকল্প শুরু করেছি। এর আওতায় ৭৩.২৭ লক্ষ জব-কার্ডধারী কাজ পেয়েছেন এবং ১৯,৭৭৭ কোটি টাকা খরচ করে ৯৭.৬১ কোটি কর্মদিবস তৈরি করা হয়েছে।

আমরা বেকারত্ব ৪০ শতাংশ কমিয়েছি। ২০২৪ সালে বাংলায় ১৯ কোটি পর্যটক এসেছেন। পুরো বিশ্ব জ্বলছে। আমরা এটা পছন্দ করি না। আমরা মানবতা ও শান্তির পক্ষপাতী। আমরা দুর্গা অঙ্গন গড়ে তুলব ঠিক যেমন জগন্নাথ ধাম।

উত্তরবঙ্গে ২৬৫টি চা-বাগানে ২.৭০ লক্ষ শ্রমিক কাজ করেন। যখনই ভোট আসে তখনই বলা হয় বাগান খোলা হবে। এই বছর আমরা ২০টি চা-বাগান খুলেছি এবং এর আগে ৫৯টি খুলেছিলাম, সবই রাজ্য সরকারের উদ্যোগে।

আমি প্রতিদিন অপমানিত হই কারণ আমি বাংলার মানুষ। কিন্তু আমি সহ্য করি, কারণ আমি জানি আমি যদি আগামীকাল না থাকি, তবে চোরেরা সবকিছু লুটে নেবে। ওরা বাংলাকে আরেকটা গুজরাট বানিয়ে দেবে।