February 1, 2021
আদ্যন্ত দিশাহীন ও বিভ্রান্তির বাজেট: অমিত মিত্র

যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গত বছরটা গেল, তাতে সাধারণ বাজেটে এরাজ্যের জন্য কিছু বিশেষ ঘোষণা শোনার আশা ছিল। কিন্তু বাজেটে মিলল না কিছুই। আদ্যন্ত দিশাহীন ও বিভ্রান্তির বাজেট।
আসা যাক রেল প্রকল্পের কথায়। এরাজ্যের জন্য যে প্রস্তাবিত বা নির্মীয়মান রেল প্রকল্পগুলি রয়েছে, তার বরাদ্দ সম্পর্কে কোনও আভাসই নেই বাজেটে। এমনকী রেলের কারখানা খোলার প্রস্তাবও নেই। মনে রাখতে হবে, কলকাতার মেট্রো প্রকল্প দেশের সবচেয়ে পুরনো মেট্রো প্রকল্প। সেই প্রকল্পের সম্প্রসারণের জন্য আমরা জমি দিয়েছি। দরকারে আরও জমি বরাদ্দ করা হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিষয়ে সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। অথচ নতুন করে মেট্রোর জন্য কোনও বরাদ্দ বা ঘোষণা এবারের বাজেটে চোখে পড়ল না।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রস্তাব দিয়েছেন, তাঁরা সাতটি বড় বন্দরকে পিপিপি মডেলে ব্যবসা করতে দেবেন। কিন্তু সেই সাতটি পোর্টের নাম বলেননি। সরকার সাধারণত বন্দরের বার্থ বরাদ্দ করে। কিন্তু মালিকানা নিজের হাতে রাখে। আমাদের আশঙ্কা, সরকার সেই মালিকানা না বেসরকারি হাতে তুলে দেয়। বাংলায় দু’টি বন্দর আছে। সাতটির মধ্যে এগুলিও থাকতে পারে বলে আমাদের ধারণা।
অন্যদিকে সরকার দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বেসরকারিকরণের কথা বলেছে। কিন্তু তাদের নাম বলেনি। আমাদের মনে রাখতে হবে, এখন যে বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলি এদেশে ব্যবসা করছে, তাদের মূলধন বা ইক্যুইটি আসছে মূলত বিদেশ থেকে। ফলে মালিকানা অনেকটাই বিদেশি হাতে। বেসরকারিকরণ মানে সেই ঘটনাই আবার ঘটবে। এরাজ্যে যে কোনও বড় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কেরই অনেক শাখা আছে ও প্রচুর গ্রাহক আছেন। প্রশ্ন উঠেছে, সাধারণ গ্রাহকের স্বার্থ কোনওভাবে বিঘ্নিত হবে না তো কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে?
কেন্দ্রীয় সরকার বলছে, তারা সাতটি টেক্সটাইল পার্ক গড়বে। কিন্তু কোথায় গড়বে, তা বলেনি। সরকারের এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর সম্পূর্ণ পরিপন্থী। আমাদের এখানে ইতিমধ্যেই সাড়ে পাঁচশো ক্লাস্টার ও অসংখ্য পার্ক রয়েছে। কয়েকটি ক্লাস্টারকে পার্কে রূপান্তিরিত করা হচ্ছে। কেন্দ্রের উচিত নিজেরা পার্ক না গড়ে রাজ্যকে সরাসরি টাকা দেওয়া। এতে রাজ্যগুলি নিজেদের মতো ব্যবস্থা করতে পারবে।
আমাদের দাবি ছিল, জিএসটি বাবদ রাজ্যগুলির যে ক্ষতিপূরণ হবে, তা মেটাতে পুরো টাকা কেন্দ্রীয় সরকার ধার নিক। কারণ কেন্দ্র ঋণ পাচ্ছে ৪.৫ শতাংশ হারে। অথচ আমাদের মেটাতে হয় ৬.৮ শতাংশ সুদ। আমাদের আশা ছিল, সরকার এবারের বাজেটে রাজ্যগুলিকে সেই সুরাহা দেবে। কারণ রাজ্যগুলিকে ৭২ হাজার কোটি টাকার বোঝা নিতে হচ্ছে। কিন্তু সেই সম্পর্কে একটি শব্দও খরচ করা হয়নি এবারের বাজেটে।
পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকল্প ঘোষণা করেছেন। ভিন রাজ্য থেকে রাজ্যে ফেরত আসা তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীদের জন্য আনা হয়েছে আলাদা স্কিম। সেখানে বিরাট সাফল্য মিলেছে। দু’মাসে ৩৫ হাজার কর্মী নাম নথিভুক্ত করেছেন। অনেকেই ভালো চাকরিও পেয়েছেন। অথচ পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্যই কেন্দ্র হাত উপুড় করেনি বাজেটে।
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এরাজ্যে করোনার জন্য চার হাজার কোটি টাকা খরচ করেছেন। অথচ কেন্দ্র দিয়েছে মাত্র ২৭৯ কোটি। কেন্দ্রের দেওয়ার কথা ১১ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা। কেন্দ্র এখন বলছে রাজ্যগুলিকে চিকিৎসাখাতে ৬৪ হাজার কোটি টাকা দেবে। কিন্তু তা দেওয়া হবে আগামী ছ’বছর ধরে! এখানেই বিভ্রান্তি আর সংশয় চরমে।
আসলে এই বাজেটে ধনী আরও ধনী হবে। কর্পোরেটদের হাতে যাবে সব নিয়ন্ত্রণ। মধ্যবিত্তের ঝুলি শূন্য। গরিবদের হাল আরও খারাপ হবে।