সাম্প্রতিক খবর

সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৮

বাংলাকে এক নম্বর করতেই এত খাটছি: মুখ্যমন্ত্রী

 বাংলাকে এক নম্বর করতেই এত খাটছি: মুখ্যমন্ত্রী

মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী আপনার এই সফরের উদ্দেশ্য কী ?

দেখুন, বাংলা আমাদের ঘর। সব সময় মনে হয় মানুষ যে দায়িত্ব দিয়েছেন তার মর্যাদা দিতে হবে। বলতে পারেন সেই কাজের স্রোতেই বাংলা বদলে গিয়েছে। এখন বিদেশ থেকে সারা বছর প্রচুর আমন্ত্রণ আসে। কিন্তু রাজ্যের কাজ নিয়ে আমাদের এত ব্যাস্ততা যে কোথাও যাওয়ার সময় হয় না। বছরে একবার মাত্র আসতে পারি। এই সফরে আমাদের মূল লক্ষ্য বাংলার শিল্পায়ন। বাম জমানায় বাংলা অনেক পিছিয়ে গিয়েছিল। শিল্প শেষ হয়ে গিয়েছিল। কোটি কোটি বেকার। আমাদের কাজটা তাই সোজা ছিল না। কিন্তু আজ বলতে পারি, অনেক চেষ্টা করে রাজ্যটাকয়ে ঘুরে দাঁড় করিয়েছি। ক্ষুদ্র শিল্পে ইতিমধ্যেই আমরা দেশের একনম্বর। বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলা সম্পর্কে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। লগ্নি করছে বড় বড় সংস্থা। রাজারহাটে বড় বড় সিলিকন ভ্যালি তৈরি হচ্ছে। আমাদের বাণিজ্য সম্মেলনে সবাই যোগ দেয়। ওরাও আমন্ত্রন করে। আমাকেও আসতে হয়।

কেমন হবে এই সফর?

ভালই হবে বলে আমাদের আশা। একসঙ্গে পাসাপাশি দুটো দেশ। এতে আমাদের এক ভাড়াতেই দুটো দেশ কভার হয়ে যাচ্ছে। জার্মানি ও ইতালি দু’টি দেশ অনেক এগিয়ে। ফ্রাঙ্কফুর্ট পর্ব মেটার পর আমরা ইতালির মিলন যাব। দুই জায়গাতেই শিল্প মহলের সঙ্গে আমাদের মত বিনিময় হবে। মিলানের গভর্নরের সঙ্গেও আমার মিট করার কথা। বাংলা থেকে আমাদের সঙ্গে শিল্পমহলের একটি উচ্চপর্যায়ের ডেলিগেশন টিম এসেছে। অনেকেই এইসব দেশে কাজ করছেন। আমরা জানি জার্মানিরা ম্যানুফ্যাকচারিংযে অনেক এগিয়ে। একসময় আমরাও ছিলাম। ওঁদের বাংলায় স্বাগত জানাব। ওঁদের সাফল্যের সুযোগ নিতে চাইছি। ক্ষুদ্রশিল্পে ওদের মতোই আমরা এগিয়ে। ইতালিতে চর্মশিল্প সহ আরও নানাদিক রয়েছে। আমরা তাঁদেরও সাহায্য চাই। মোটকথা আমরা চাই বাংলা আবার শিল্পায়নে হারিয়ে যাওয়া গৌরব ফিরে পাক। বাংলার যুবাদের কাজ দেওয়া ও তাঁরা যেন মাথা উচু করে চলতে পারেন সেটা দেখাই আমার উদ্দেশ্য।

রাজ্যের শিল্পায়নে বিশ্ববঙ্গে বাণিজ্য সম্মেলনের বিরাট গুরুত্ব রয়েছে। এই সফর কি গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দেবে ?

অবশ্যই। আগে তো এভাবে এসব হত না। এই গ্লোবাল বিজনেস সামিটের জন্য আমাদের প্রায় ন’হাজার কোটি টাকা ইনভেস্ট হয়েছে। বহু শিল্প হয়েছে। লক্ষ লক্ষ ছেলের চাকরি হয়েছে। ৩৫-৪০ টি দেশ বিজিবিএসে অংশ এমনি নেয় না। এবারও দেখবেন, আরও ভাল হবে।

আপনি এতো পরিশ্রম করছেন, এতো উদ্যোগ নিচ্ছেন তারপরও বিরোধীরা বলছে কিছুই হচ্ছে না। এই সফরও নাকি নিষ্ফলা হবে।

বলতে দিন। আমাদের বিরোধীরা সবসময় নেগেটিভ। কোনও ইতিবাচক কাজে সাহায্য করেন না। আমি মানুষের ওপর ভরসা রাখি। তারা কীবলছীন সেটা আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ |যত দিন বাঁচব মানুষের কথা শুনে চলব। তাঁদের জন্য আমার লড়াই। কিছু পেতে এই চেয়ারে বসিনি। বাংলায় যে সর্বস্তরে পরিবর্তন হয়েছে তা চোখ থাকলেই দেখা যাবে। তাই ওরা কী বলছেন তা নিয়ে আমার কিছুই বলার নেই। আমি বাংলাকে আবার শিল্পায়নে এক নম্বরে নিয়ে যাব। এটা আমার চ্যালেঞ্জ।

আপনি মানুষের কথা বললেন। এত দেনা ঘাড়ে নিয়ে কীভাবে কাজ করছেন?

আমরা মানুষের রক্ষাকবচ। হাজার হাজার কোটি টাকা দেনা করে গিয়েছে বামফ্রন্ট। কেন্দ্র এই রাজ্যের দিকে তাকায় না। অর্থ দেয় না। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যকে ঘুরে দাঁড় করিয়ে কাজ করা মোটেও সোজা ছিল না। কিন্তু আমরা করেছি। অথচ আমরা এসে থেকে কোনও কিছুর দাম বাড়ায়নি। সামাজিক প্রকল্পের খরচ নিজেরা বহন করছি। বিকল্প পথে চলেছি। এই যে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে চলেছে কেন্দ্রের কোনও হুঁশ নেই। আমরা কিন্তু এক টাকা দাম কমালাম। আমাদের সরকার জন্ম থেকে মৃত্যু মানুষের জন্য সামাজিক প্রকল্প করেছে। দু’টাকা কেজি চাল, ফ্রিতে চিকিৎসা কোন রাজ্যে আছে বলতে পারেন। এক কোটি সাইকেল দেওয়া হয়ে গেল। মেয়েরা আমার লক্ষ্মী। তাদের পড়াশুনার দায়িত্ব শুধু নয়, বিয়েও দিয়ে দিচ্ছি রুপশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে। আসলে কী জানেন সকাল থেকে রাত মানুষের কথা ভাবি। যে সব মানুষের ক্ষমতা নেই তাঁরা জানেন এই সরকারটা তাঁদের জন্য রয়েছে। সরকার হল জনগণের সরকার আমাদের তাই কাজ হল জনগণকে রক্ষা করা।

আর কেন্দ্রের?

পুরোপুরি জনবিরোধী সরকার। মানুষের কল্যাণে এই সরকার কিছু করেনা। শুধু কোটি কোটি টাকা খরচ করে নিজেদের ছবি আর মিথ্যা প্রচার। স্বাভাবতই আজ দেশের সব মানুষ এই সরকারের বিরুদ্ধে। ভোট হলে বিজেপি গোহারা হেরে যাবে।

আপনি নিশ্চিত?

অবশ্যই। এবার গণভোট হবে। কারণ পাঁচ বছর মানুষ ওদের দেখেছে। তারা জানে আবার যদি বিজেপি আসে তবে দেশের সবচেয়ে বড় সর্বনাশ হয়ে যাবে। এরা থাকলে দেশটা যে আর অখন্ড থাকবে না, তাও সবাই বুঝে গেছে।

গণভোট?

হ্যাঁ গণভোট হবে। যে যেখানে পরবে বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দেবে। এত সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার করেছে যে দেশের প্রতিটা শ্রেণীর মানুষ ওদের বিপক্ষে চলে গিয়েছে। কেউ বিরোধিতা করলে তার ওপর প্রতিহিংসার রাজনীতি নামিয়ে আনা হচ্ছে। দেশের মানুষ একজোট। বলতে পারেন দু;হাজার উনিশ সালে ভারতের মাটিতে একটা বিপ্লব হতে যাচ্ছে গণবিপ্লব। ভোট বাক্সে হবে গণপ্লাবন। ডিফিট বিজেপি। মনে রাখবেন, আমি দীর্ঘদিন মানুষকে সঙ্গে নিয়ে রাজনীতি করি। ফলে মানুষ কী চাইছে সেটা বোঝার ক্ষমতা আমার আছে।

কিন্তু সেই মিলিজুলি সরকার স্থায়ী হবে?

অবশ্যই হবে। স্থায়ী ও মজবুত সরকার উপহার পাবে দেশ। কারণ জনরায়ে এই সরকার মানুষের জন্য তৈরি হবে। সব দল মিলেই একজোট হয়ে দেশ গড়বে। ভোট হবে বিজেপি বনাম সাধারণ মানুষের। তাই সেই জনগণের সরকারের কে প্রধানমন্ত্রী হবেন তাও ঠিক হবে ভোট জেতার পর।

অন্য প্রসঙ্গে আসি। এই যে বাগরি মার্কেটে আগুন লাগল, ব্রিজ ভেঙে পড়ল মাঝেরহাটে। এর মোকাবিলায় আপনার সরকার কী ব্যাবস্থা নিচ্ছে?

দেখুন আমরা বিপদের সময় রাজনীতি করিনা। সবার আগে বিপর্যয় মোকাবিলা। সেটা মানবিক কর্তব্য। একটা প্রশাসকের যথার্থ কাজ। কিন্তু আপনি বলুন, আমাদের আমলে তো এই সব বাজার, ব্রিজ হয়নি। আগে যা খুশি তাই হয়েছে। কোনও কাজ ঠিক আইন মেনে হয়নি। পঞ্চায়েতকেও ব্রিজ বানাতে দেওয়া হয়েছে। ভাবা যায়। আমরা এ ধরণের কাজ করিনা। এই যে আগুন লাগল। দাহ্য ভর্তি। বেআইনিভাবে বাড়িগুলি নির্মাণ। যা খুশি তাই করা হয়েছে। দমকলের ইঞ্জিন ঢোকানোর জায়গা নেই। কিছু ব্যাবস্থা নিলে কোর্টে চলে যায়। বাথরুম বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। কেন হবে। টাকাই কি সব? আমাদের আমলে যা নির্মান হচ্ছে সব দমকলের পারমিশন নিয়ে। তাও আমরা সব কিছুর মোকাবিলা করছি। মাঝের হাটে ব্রিজ নতুন করে হবে।

এ কথা আজ কারও অস্বীকার করার উপায় যে নেই কলকাতাকে আপনি বদলে দিয়েছেন। বলতে পারেন সৌন্দর্যায়নের জেরে বদলে গিয়েছে লুক। কিন্তু এই যে নদীর পাড়ে আপনি হাঁটছেন, এতটুকু অপরিচ্ছন্নতা নেই এই শহরে। এমন লুক কলকাতার কেন হবে না?

দেখুন, এর দুটো উত্তর। প্রথমত এই ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরে সাত লক্ষ মানুষ বাস করেন। আমাদের কলকাতার ১৪১ ওয়ার্ডের সবকটিতে এর চেয়ে বেশি লোক বাস করে। শুধু ৬৬ নম্বরে বোধহয় এক লক্ষ। তা ছাড়া এদের দেশে আবহাওয়া কতো ভাল। আমাদের তা নয়। তবে আমি মিডিয়া, ছাত্র-যুব সবার সাহায্য চাই। যেখানে সেখানে দখল করা, পিক ফেলা, ময়লা ফেলা বন্ধ করতে হবে। যে করবে তার বিরুদ্ধে কড়া ব্যাবস্থা হবে। সবাই মিলে এগিয়ে এসে একে একটা আন্দোলনের রুপ দিন। আমার শহর আমার পাড়া আমার গ্রামকে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখতে হবে। আমি আছি এই লড়াইয়ে সামনে।

এতো কিছু ভাবনা আপনার। নিজের জন্য কি কিছুই চাওয়ার নেই?

না, নিজের কথা কখনও ভাবিনি। ভাবতে চাই না। শুধু চাই বাংলা সব কিছুতেই একনম্বর হোক। দেশকে নেতৃত্বদিক আগের মতো। এই স্বপ্ন নিয়ে লড়াই করে যাচ্ছি। আর, মানুষের পাশে আছি সবসময়।

এই সাক্ষাৎকারটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় ‘সংবাদ প্রতিদিন’ এ